কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণে রাজধানী ঢাকা ও খুলনায় তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীতে আশুরা উপলক্ষে সবচেয়ে বড় আয়োজন ছিল পুরান ঢাকায় হোসেনি দালান থেকে বের হওয়া তাজিয়া মিছিল। এছাড়া, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশীবাজার, লালবাগ, পল্টন, তেজগাঁও এবং মগবাজার থেকেও আশুরার মিছিল বের হয়।
আজ (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল বের হয়। কারবালার স্মরণে কালো চাঁদোয়ার নিচে কয়েকজন বহন করেন ইমাম হোসেন (আ.)এর প্রতীকী কফিন।
মিছিলের সামনে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন (আ.)এর দুটি প্রতীকি ঘোড়া। দ্বিতীয় ঘোড়ার জিন রক্তের লালে রাঙানো ছিল।
অন্যান্য বছরের মতো কারবালার রক্তপাতের স্মরণে মিছিলের মধ্যে ছুরি বা শেকল দিয়ে আঘাত করে নিজেদের দেহ থেকে রক্ত ঝরানোর দৃশ্য এ বছর অনুপস্থিত ছিল। মহানগর পুলিশ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল মিছিলে কোনো ছুরি কাঁচি বা কোন ধারালো অস্ত্র এবং লম্বা লাঠি বহন করা যাবে না। আতশবাজি ও পটকা ফোটানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গতবছর হোসেনি দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে জঙ্গি বোমা হামলায় দুজনের মৃত্যু ও শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার কারণে এ বছর ব্যাপক নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করে হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সাইয়্যেদ বাকের রেজা রেডিও তেহরানকে জানান, নিরাপত্তার কারণে তাদের কর্মসূচিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা সেটা মেনে নিয়েই তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছেন।
এবারের আশুরা পালনের কর্মসূচি সম্পর্কে সাইয়েদ বাকের রেজা জানান, তাজিয়া মিছিল শেষে তারা ফাঁকা শিকানী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এরপর সন্ধ্যায় পালিত হচ্ছে শামে গারিবা।
ওদিকে, পবিত্র আশুরা উপলক্ষে খুলনা মহানগরীতে তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল পৌনে ১১টায় মহানগরীর আলতাপোল লেন এলাকার আঞ্জুমান-এ-পাঞ্জাতানী ট্রাস্ট ইমাম বাড়ি থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলে অংশ নিয়ে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই একত্রে মাতম করতে থাকেন। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের ইমাম বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়।
শোক মিছিলের আগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ইসলামকে রক্ষা করতে গিয়ে নবীর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (আ.) পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী নিয়ে ৬১ হিজরিতে কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করে যে মহান আত্মত্যাগের নিদর্শন রেখে গেছেন, সেই মহান আত্মত্যাগ থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সব মানুষের কাছে সত্য দ্বীনকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই ইমাম হোসেইন (আ.)-এর মহান ত্যাগ সার্থকতা লাভ করবে।