IQNA

কিভাবে ক্রোধ নিবারণ করবেন?

1:27 - November 25, 2016
সংবাদ: 2602024
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মানুষকে ধোকাদান ও প্রতারণার ক্ষেত্রে ক্রোধ তথা রাগ হচ্ছে অভিশপ্ত শয়তানের অস্ত্র। শয়তান মানুষকে ক্রোধের বশবর্তী করে বিচ্যুতির ফাঁদে ফেলে এবং বিপথগামীর দিকে নিয়ে যায়।
কিভাবে ক্রোধ নিবারণ করবেন?
শাবিস্তানের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা: রাগ বা ক্রোধ মানব জীবনে সবচেয়ে ভয়ানক শত্রু। মানুষ যখন রাগান্বিত হয় তখন তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে কাজ করতে পারে না এবং তার জ্ঞান লোপ পায়; ফলে সে যে কোন অঘটনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পারে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার নিমিত্তে মনস্তাত্বিকবিদরা নানাবিধ উপায়ের কথা বলেছেন। কিন্তু আজ আমরা পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে রাগ নিবারণের কার্যকর পন্থা সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করব।

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে রাগ নিবারণের উপায়ের পদ্ধতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, এখানে আমরা উক্ত পদ্ধতিসমূহের কিছু অংশ তুলে ধরছি-

১- অন্যের ভুল-ভ্রান্তিকে মার্জনার দৃষ্টিতে দেখা-

পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে,

وَ الَّذینَ یَجْتَنِبُونَ کَبائِرَ الْإِثْمِ وَ الْفَواحِشَ وَ إِذا ما غَضِبُوا هُمْ یَغْفِرُون

"যারা অন্যায় ও পাপকর্ম থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখে, তারা যখন ক্রোধান্বিত হয় তখন আত্মসংবরণ (তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়) করে।‌‍ সূরা শুরা, আয়াত নং ৩৭

২- তাকওয়া ও পরহেজগারিতা-

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তাদেরকে তাকওয়া ও পরহেজগারি হিসেবে অভিহিত করেছেন যারা ক্রোধকে দমন করতে পারে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে যে, ক্রোধকে দমনের সক্ষমতাই তাকওয়া ও পরহেজগারিতার পরিচয়।

কোরআনের ভাষায়,

وَ سارِعُوا إِلى‏ مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّکُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّماواتُ وَ الْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقین.الَّذینَ یُنْفِقُونَ فِی السَّرَّاءِ وَ الضَّرَّاءِ وَ الْکاظِمینَ الْغَیْظَ وَ الْعافینَ عَنِ النَّاسِ وَ اللَّهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنینَ

অর্থাৎ- আর তোমাদের প্রতিপালকের মার্জনা ও বেহেশতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার বিস্তৃতি আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর সমান; যা তাকওয়াধারীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আর সৎকর্মশীলদের আল্লাহ ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৩৩ ও ১৩৪)

আমরা প্রত্যক্ষ করি যে, মানুষ যখন জীবন চলার পথে কোন বাধা কিংবা বিপত্তির শিকার হয়, তখন যদি সে ধৈর্য অবলম্বন না করে তাহলে ক্রোধের বশবর্তী হতে পারে।

ক্রোধ থেকে মুক্তির আরও উপায়-

৩- ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাযিম’ (আমি অভিশপ্ত শয়তানের হাত থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) এ জিকিরটি পাঠ করা।

নি:সন্দেহে অভিশপ্ত শয়তানই মানুষের অন্তরে ক্রোধের আগুন প্রজ্বলিত করে। কাজেই ক্রোধের আগুন থেকে বাচার অন্যতম কার্যকর পন্থা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা; যাতে শয়তানের প্ররোচনা হতে নিরাপদ থাকা যায়।

৪- ‘লা হাওলা ওয়ালা কুউওতা ইল্লা বিল্লাহে আল আলীউল আজীম’ এ জিকির পাঠ করা।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, লা হাওলা ওয়ালা কুউওতা ইল্লা বিল্লাহে আল আলীউল আজীম’ এ জিকির পাঠের মাধ্যমে ক্রোধ নির্বাপিত হয়।

৫- অধিক দরুদ শরীফ পাঠ করা।

মহানবী (সা.) ও তার আহলে বাইতের (আ.) দরুদ শরীফ পাঠ মানুষের আত্মাকে প্রশান্ত এবং ক্রোধ নিবারণ করে।

৬- সিজদা করা

রাগ ও ক্রোধ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে মানুষ যখন রাগান্বিত হয়, তখন তার উচিত সিজদাবনত হওয়া। কেননা সিজদা ক্রোধের আগুনকে নির্বাপিত করে। এ সম্পর্কে রাসূলের (সা.) উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আবু সাঈদ খুদরী বর্ণনা করেছেন: ক্রোধ হচ্ছে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের ন্যায় যা মানুষের মন ও মানসিকতার উপর (নেতিবাচক) প্রভাব ফেলে। এ অবস্থাতে দেখবে যে, ক্রোধান্বিত ব্যক্তির চোখ রক্ত বর্ণ হয়ে যায়। কাজেই যদি কারও মধ্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে তার উচিত সেজদাবনত হওয়া। নি:সন্দেহে যে ব্যক্তি ক্রোধান্বিত অবস্থায় সেজদাবনত হবে, আল্লাহ তাকে শয়তানের প্রজ্বলিত আগুন থেকে রক্ষা করবেন এবং তার অন্তরে প্রশান্তির সৃষ্টি হবে।

৭- অবস্থার পরিবর্তন সাধন

মাসুমগণ (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যদি কেউ বসা অবস্থাতে ক্রোধান্বিত হয় তাহলে উঠে দাঁড়ান, যদি দাঁড়ান অবস্থাতে ক্রোধের শিকার হয় তাহলে বসা; কিংবা নিজের স্থান পরিবর্তন করা অথবা কিছুটা হাটাহাটি করা, এমতাবস্থায় ক্রোধের আগুন প্রশমিত হয়।

৮- ওযু কিংবা গোসল করা

ক্রোধের আগুন নিবারণের জন্য হাত-পা ধৌত করা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাজেই ওযু কিংবা গোসল এক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর প্রভাব ফেলবে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে,

(اذا غضب احدکم فلیتوضا و الیغتسل فان الغضب من النار).

‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ ক্রোধান্বিত হও; তখন ওযু ও গোসল করবে। কেননা ক্রোধ হচ্ছে অগ্নি।(আর পানি অগ্নিকে নির্বাপিত করে)
captcha