
বার্তা সংস্থা ইকনা: গতকাল (শনিবার) দুপুরে নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চুক্তিগুলো সই হয়। এর আগে হায়দ্রাবাদ হাউজে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গতকাল দুই নেতা প্রথমে নিজেদের মধ্যে একান্ত বৈঠক করেন। এরপর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট নেতা ও কর্মকর্তাদের নিয়ে শীর্ষ বৈঠক করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে প্রতিরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা, পরমাণু বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ঋণ সহযোগিতা, বর্ডার হাট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতান ক্ষেত্রে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চারটি চুক্তি বিনিময় করেন এতে স্বাক্ষর করা কর্মকর্তারা। বিনিময় হওয়া চারটি চুক্তি হলো- তৃতীয় দফা ঋণ সহায়তা (এলওসি) ৪.৫ বিলিয়ন ডলার, দ্বিপাক্ষিক বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা, আউটার স্পেসের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও পেসেঞ্জার ক্রু সার্ভিস প্রটোকল আইন। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি বা সমঝোতা হয়নি।
বিজেপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তিস্তার সমাধান: মোদিবৈঠক ও চুক্তি সইয়ের পর আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে অংশ নেন নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা। তিস্তা ইস্যুকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'ভারতের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বিজেপি সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই তিস্তা নিয়ে সমাধানে পৌঁছনো সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।'
তিনি বলেন, 'দুদেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন আরও শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি রয়েছে। এ নিয়ে আমার আহ্বানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (মমতা ব্যানার্জি) এখানে এসেছেন। আমি খুবই খুশি হয়েছি। আশা করছি, এ সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও খুব শিগগিরই এটি চুক্তি সম্পন্ন হবে।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের এক নয়া অধ্যায় শুরু হয়ে গেছে। আমরা বাংলাদেশের সমৃদ্ধি চাই। দুই দেশ একসঙ্গে মিলে সন্ত্রাস দমন করা জরুরি।’
মোদি বলেন, ‘ভারত সকল প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়। কিন্তু কিছু দেশ আছে যাদের মানবতার পথ পছন্দ নয়। ১৯৭১ সালে ভারতের পক্ষ থেকে দেখানো মানবতা গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম।’
তিনি আরও বলেন, ভারত সবসময় একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য বন্ধুর মতো বাংলাদেশকে সমস্ত প্রকারের সহযোগিতা দেয়ার জন্য তৈরি আছে এবং থাকবে।
ভারতের ওপর আমাদের আস্থা আছে: শেখ হাসিনাপরে নিজ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের নদীগুলোর পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে ভারতের ওপর আমাদের আস্থা আছে।'
তিনি আরও বলেছেন, 'এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগির সমাধান আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।'
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী দেশ ভারত। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সাহায্য করেছে। যুদ্ধে অবদান রাখা ভারতীয়দের সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।
এসময় তিনি আরও বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। নয়াদিল্লির একটি সড়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করায় মোদিকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
তার আগে হিন্দি ভাষায় অনূদিত 'বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে নয়াদিল্লিতে বিমানবাহিনীর পালাম স্টেশনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বাগত জানান। গত সাত বছরের মধ্যে এটাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভারত ভ্রমণ। এর আগে ২০১০ সালে দেশটিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সূত্র: parstoday