IQNA

ইমাম হুসাইন বিন আলী(আ.) হলেন, খোদা প্রেমিকদের অলঙ্কার

23:41 - May 03, 2017
সংবাদ: 2603007
নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা যেন তাঁর অনুপম চরিত্র এবং উচ্চতর খোদায়ী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার যাদুময় ছোঁয়ায় পেয়েছে চিরন্তন সৌন্দর্য ও অনির্বাণ প্রাণ। ৫ই শাবান ৩৮ হিজরিতে পবিত্র মদীনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হযরত হুসাইন বিন আলী (আ.) ।

শাবিস্তানের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: বিশ্ব ইতিহাস নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রসহ মানবীয় মূল্যবোধের সবক্ষেত্রেই  যাঁদের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী তাঁদের মধ্যে  হযরত আলী বিন হুসাইন  (আ.) তথা ইমাম সাজ্জাদের অবস্থান অত্যন্ত প্রজ্জ্বোল ও শীর্ষস্থানীয়।

সত্যিকারের ও উন্নত মানুষ গড়ার এই মহান সাধক ইমাম 'জয়নুল আবেদিন' বা 'খোদা প্রেমিকদের অলঙ্কার' হিসেবেও খ্যাত। মহান আল্লাহর দরবারে অত্যধিক সিজদায় মগ্ন থাকতেন বলে ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.)-কে বলা হত সাজ্জাদ।

কারবালার  বিশ্বনন্দিত মহাবিপ্লবের ঘটনায়  ইমাম হুসাইন (আ.)’র একমাত্র যে পুত্র বেঁচেছিলেন তিনি হলেন ইমাম সাজ্জাদ (আ.)। অর্থাত তিনিই ছিলেন বিশ্বনবী (স.)'র পবিত্র বংশধারার বা আহলে বাইতের একমাত্র পুরুষ সদস্য যিনি কারবালার ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। অসুস্থ ছিলেন বলে তিনি ওই জিহাদে সরাসরি যোগ দিতে পারেননি। আসলে মহান আল্লাহ অলৌকিকভাবেই তাঁকে রক্ষা করেছিলেন মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এবং ইসলামের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভিত্তি রচনার জন্য।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) তাঁর কাজ ও আচরণ ছাড়াও  বেশ কিছু অনুপম দোয়ার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন গভীর খোদা-প্রেম, নৈতিকতা ও উন্নত আত্মার সৌন্দর্য।

মানুষের মধ্যে অনেকেই এই অস্থিরতায় ভোগেন যে, এই যে এত দোয়া করছি তা কেন কবুল হয় না?  ইমামের কাছে ঠিক এমনই এক প্রশ্ন করেছিলেন বার বার প্রার্থনার পরও দোয়া কবুল না হওয়ার ফলে হতাশ হয়ে পড়া এক ব্যক্তি এবং ওই ব্যক্তির বন্ধু।  জবাবে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছিলেন, তোমরা কি সময় মত নামাজ আদায় কর, না দেরি করে নামাজ পড়? তোমরা কি সত কাজের মাধ্যমে ও দরিদ্রদের দান-সদকা দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করছ? তোমরা কি বন্ধুদের সঙ্গে (ভেতরে-বাইরে) একই রূপ বজায় রাখ ও তাদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ কর না?  তোমরা কি কথা বলার সময় অশালীন ভাষা ব্যবহার কর না? তোমরা কি জাকাত দাও ও ঋণ শোধ কর? তোমরা কি কঠোর হৃদয় নিয়ে ফকিরদেরকে বিমুখ করে দাও না? তোমরা কি ইয়াতিমদের সাহায্যে এগিয়ে যাও?

এভাবে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) যখন একের পর এক প্রশ্ন করে চললেন তখন নিরাশ হয়ে পড়া ওই ব্যক্তি লজ্জিত হয়ে বললেন, হে ইমাম, এসব ভালকাজের কিছুই আমি করি না। তখন  ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মুচকি হেসে বললেন, তাহলে আল্লাহর কাছে কি আশা করছ? তোমাদের এই অবস্থা পরকালে তোমাদের জন্য সংকটের কারণ হওয়ার পাশাপাশি এই দুনিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে যে কারণে তোমাদের দোয়াগুলো কবুল হয় না। তোমরা যদি আল্লাহর কথা শোন, তাহলে আল্লাহও তোমাদের কথা শুনবেন।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) তাঁর বিভিন্ন দোয়ায় মানুষকে এটা শেখাতে চেয়েছেন যে জীবনের সব পর্যায়েই আল্লাহর ওপর নির্ভরতা জরুরী। আল্লাহই যেন মানুষের সব ততপরতার মূল অক্ষে বা কেন্দ্রে থাকেন। আল্লাহর প্রতি হৃদয়ে গভীর প্রেম বা ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অবশ্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাঁকে চেনাও জরুরি। আল্লাহকে চেনা ও জানার মধ্য দিয়েই খোদা-প্রেমিকের যাত্রা শুরু হয়।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করার উপায় হল, মানুষকে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, সব সময় আল্লাহ যে আমাদের দেখছেন তা মনে রাখা ও নোংরা কাজ না করা এবং নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা।
captcha