IQNA

মধ্যপ্রাচ্যের তেল ক্ষেত্রের জন্য ব্রিটেনের গোপন স্নায়ুযুদ্ধের পরিকল্পনা

21:51 - January 30, 2018
সংবাদ: 2604924
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১৯৫০-এর দশকের ‘আইরন কার্টেন’ এর উভয় পাশেই উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে এর পরিনতি হিসেবে অশোধিত তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ব্রিটিশ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত আক্রমণ প্রতিহত করতে কোনো সময় নষ্ট করেনি।

 মধ্যপ্রাচ্যের তেল ক্ষেত্রের জন্য ব্রিটেনের গোপন স্নায়ুযুদ্ধের পরিকল্পনা
বার্তা সংস্থা ইকনা: এই ঘটনা অনেকের কাছেই, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি হয়তো অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যারা উভয় পক্ষের স্নায়ু যুদ্ধ এবং মানসিক বৈকল্যকে স্মরণ করতে পারেন- তাদের জন্য এটি কোনো অদ্ভুত ঘটনা নয়।

৫০-এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের আরো সম্প্রসারণের ব্যাপারে ব্রিটিশ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রকৃতপক্ষে বেশ উদ্বিগ্ন ছিল। ওই সময়ে উভয় দেশের জন্যই অশোধিত তেলের প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্য ছিল। এটা আশ্চর্যের নয় যে, উভয় দেশই মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ইস্যুটিকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছিল।

যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অশ্রেণিবদ্ধ ডকুমেন্টসকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘স্পুটনিক’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্রুম্যান প্রথম তেল নিষেধাজ্ঞার ফন্দিটি আঁটেন।

তেল নিষেধাজ্ঞার এই পরিকল্পনায় মধ্যপ্রাচ্যের তেল কোম্পানিগুলোর কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সোভিয়েত আগ্রাসন মোকাবেলায় তারা নিজেদের তেল ক্ষেত্র এবং রিফাইনারিগুলো ধ্বংস করে দেয়। মূল্যবান এই পণ্যের ওপর রুশদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেই এটি করা হয়েছিল।

নিজেদের মধ্যে মতবিরোধে তেল নিষেধাজ্ঞার এই পরিকল্পনায় ব্রিটেন সমস্যার সম্মুখীন হয়। ওই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাবের পতন ঘটেছিল। অশ্রেণিবদ্ধ ডকুমেন্টস অনুযায়ী, ইরান ও ইরাকের সরকারকে এটি বিশ্বাস করানো হয়েছিল যে, তাদের নিজস্ব তেল শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য তেল কোম্পানিগুলো্র সঙ্গে সহযোগিতা করা অসম্ভব হবে।

এর কারণ ছিল এই দুই দেশের ওপর ব্রিটেনের আর একচেটিয়া আধিপত্য বজায় ছিল না। ১৯৫৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বে ইরানে অভ্যুত্থান সত্ত্বেও ব্রিটেন তার একক আধিপত্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। ওই অভ্যত্থানের মাধ্যমে ইরানের শাহ’কে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল এবং ইরানের তেল শিল্পের হাল ধরেন ব্রিটেনের তেল কোম্পানি ‘বিপি’।

তেল শিল্পের কর্তৃত্ব বিপি’র হাতে থাকলেও ইরান সরকার রিফাইনারিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করত এবং আরো অধিক রিফাইনারি নির্মাণ করত। সোভিয়েত আগ্রাসনের ঘটনা শুধু তেল ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং রিফাইনারিগুলোতেও সম্প্রসারিত হয়েছিল।

ইরাকি ও ইরানি সরকারের ভয়ে ধ্বংস পরিকল্পনায় ব্রিটেন সম্ভবত অনিচ্ছুক ছিল। সোভিয়েতকে তেল থেকে বিরত রাখার জন্য ব্রিটেনের অল্প কয়েকটি বিকল্প ছিল। বিমান হামলা ছিল সবচেয়ে লজিক্যাল বিকল্প। কিন্তু সেখানেও একটি সমস্যা ছিল। আক্রমণের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রয়োজনীয় হামলা চালানোর জন্য তাদের যথেষ্ট যুদ্ধবিমান ছিল না। ফলস্বরূপ, ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ‘যৌথ চীফ অফ স্টাফ কমিটি’ কর্তৃক পারমাণবিক বিকল্পটি টেবিলে রাখা হয়েছিল।

ইরাক ও ইরানে সরকার-নিয়ন্ত্রিত শোধনাগারগুলোতে যৌথ পারমাণবিক হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক পরিকল্পনাটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। যাইহোক, শাহ পশ্চিমাপন্থী থাকা সত্ত্বেও ইরানের তেলের সুবিধার ওপর আমেরিকান পারমাণবিক হামলাকে তেল নিষেধাজ্ঞার একমাত্র সম্ভাব্য উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।

পরে আরো অধিক আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত পারমানবিক হামলার বিষয়টি টেবিলটি সরিয়ে নেয়া হয়। এজন্য সিআইএ’র অপারেশন কর্মকর্তা জর্জ প্রুসিং ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তেল নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা সফল করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সর্বোত্তম উপায়ে কাজ করার জন্য প্রুসিংকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

প্রুসিং তেল ক্ষেত্রসমূহ এবং এর সুযোগ-সুবিধায় এটির গ্রাউন্ড ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেন। এখনো পর্যন্ত এটা ভাল যে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার নিজেকে কখনোই মধ্যপ্রাচ্যে প্রসারিত করার চেষ্টা করেনি।

তাই হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে হামলার পর ‘চূড়ান্ত সমস্যা সমাধানকারী’ হিসেবে খুব শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র খুবই জনপ্রিয়তা পায় এবং আজো অব্যাহত আছে।

লেখক পরিচিতি: ইরিনা স্লাভ যুক্তরাষ্ট ভিত্তিক তেল-গ্যাস কোম্পানির একজন লেখক। অয়েল প্রাইজ ডটকম অবলম্বনে

captcha