বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ৪৬ বছর বয়সী এই মুসলিম নারী সম্প্রতি ‘নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘আরোগ্য লাভের জন্য আমাকে বিভিন্ন ধরনের নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং এখন আমি তা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম আছি।’
গত ছয় মাস ধরে নিজের হাতের রান্না করা খাবার অকল্যান্ডের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিতরণ করছেন এই নারী। এ কাজে তাকে সাহায্য করছে তার প্রতিষ্ঠিত ‘হোমলেস নো-মোর অটেরোয়া’। মাওরি ভাষায় নিউজিল্যান্ডকে অটেরোয়া বলা হয়ে থাকে।
মোহামেদী একজন মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করার পর ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। গৃহহীন শিশুরা যেভাবে নির্যাতনের শিকার হয়, শিশু বয়সে তাকেও সেরকম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
মোহামেদী বলেন, ‘আমি নিজেকে তাদের মতোই একজন মনে করি। আমি তাদেরকে ভালোবাসি। আমি তাদের মুখে হাসি দেখে আনন্দিত হই। খারাপ আবহাওয়া বা পরিস্তিতিতে আমি তাদের সম্পর্কে উদ্বিগ্ন থাকি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকেই যদি সামান্য কিছু করতে পারি, তবে তা গৃহহীনতা দূর করতে সাহায্য করবে।’
মোহাম্মদী মূলত দেশটির ইসলামিক সেন্টারের একজন স্বেচ্ছাসেবক। সংস্থাটি গৃহহীন ও শরণার্থীদের সাহায্য করে থাকে।
মাওরিরা হচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী। দেশটির ২০১৩ সালের জাতীয় আদমশুমারি অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডে প্রায় ৬,০০,০০০ মাওরি জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে; যার মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ।
বর্তমানে ইউরোপীয়ানদের পরেই তারা হচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। এছাড়াও, প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ায় ১,৪০,০০০ এরও বেশি মাওরি মানুষ রয়েছে।
২০১৩ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ৪৮.৪ শতাংশ মাওরি হচ্ছেন খ্রিস্টান এবং ৪৬.৬ শতাংশ কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করে না। বাকিরা প্রচলিত মাওরি ধর্ম ও ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মের অনুসরণ করে।
‘পিপি স্যাঙচুয়ারি পাইলট প্রোগ্রাম’ নামে গৃহহীনদের জন্য পরিবশে বান্ধব একটি নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে মোহামেদী ধীরে ধীরে তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি দেশটির বিখ্যাত স্থাপত্য ডিজাইনার লিজাদি রেনাল্টকে বেছে নিয়েছেন।
৬৪টি স্বতন্ত্র কেবিনযুক্ত ভবনটি নির্মাণের জন্য চার হেক্টর জমির প্রয়োজন। মাওরির সংস্কৃতিকে ফোকাস করার মাধ্যমে এতে মাদক ও অ্যালকোহল আসক্তদের পুনর্বাসন, বাজেটিং, আত্ম-বিকাশ, কর্মসংস্থান ও পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি সামগ্রিক প্রোগ্রাম থাকবে।
মোহামেদী বলেন, ‘পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রটিতে তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে, বিশেষজ্ঞদের একটি টিম দ্বারা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হবে এবং এই অনুযায়ী তাদের জন্য একটি উপযুক্ত প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে আত্ম-বিকাশ এবং কর্মজীবনের জন্য হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়ার উপর নজর রাখা দেয়া হবে। তৃতীয় ধাপ হলো- একটি সমষ্টিগত পর্যটন সংস্থা স্থাপন করা; যা ক্লায়েন্টদের কাছে তাদের কারুশিল্পগুলো বিক্রি করার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে।’
মোহামেদী বলেন, ‘এই আশ্রয়কেন্দ্রটি হবে একজন ডাক্তার, একজন শিক্ষক; যেখানে সমস্যাগ্রস্তরা বিকশিত হবে ও নিজেদের জীবনকে উজ্জ্বল করতে পারে।’ অ্যাবাউট ইসলাম