IQNA

‘একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম হিসেবে আমার প্রথম সপ্তাহ’

18:21 - February 08, 2018
সংবাদ: 2604998
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।

‘একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম হিসেবে আমার প্রথম সপ্তাহ’

 
বার্তা সংস্থা ইকনা: আমি শ্যানন। আমি প্রত্যেকের উদ্দেশ্য (মুসলিম কনভার্টস ডটকম) বলতে চাই যে, আমি এক সপ্তাহ আগে ইসলামে ধর্মান্তর হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের সমর্থন ও পরামর্শের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আমি আমার সাত দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো লিখে রেখেছিলাম এবং আমি আশা করি এটি তাদের জন্য উপকারী হবে- যারা এখনো ধর্মাস্তরিত হয়নি কিংবা হয়েছে কিন্তু বিষয়টি তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে বলতে সংগ্রাম করছেন। ইনশাআল্লাহ এটি আপনাদের সাহায্য করবে। আপনাদের মুসলিম বোন।

শ্যানন।

ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে আমার মনেও নানা ভাবনা উঁকি দিত এবং আমি খুব বেশি ধর্মপরায়ণ ছিলাম না। আমার জন্ম একটি ক্যাথলিক পরিবারে এবং আমার দাদীমা আমাকে নিয়মিত চার্চে নিয়ে যেতেন। কিন্তু চার বছর আগে তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে আমার পরিবার চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রায় এক বছর আগে আমি ‘স্যাম ক্লাবে’ কাজ করেছি। সেখানে আমি একজন মুসলিম বোনের দেখা পাই এবং আমরা পরস্পর বন্ধুতে পরিণত হয়ে যাই। আমি ইসলাম সম্পর্কে তাকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতাম এবং তার জবাব আমাকে অনেক বেশি পুলকিত করত।

আমি কুরআনের ইংরাজী অনুবাদ পড়তে শুরু করলাম এবং চার মাস আগে আমি হিজাব পরতে শুরু করি এবং এই সময়ে আমি প্রার্থনা করার রীতিও কিছুটা শিখেছি। আমি যেটা করেছি সেটি আসলেই আমার কাছে ছিল ধর্মান্তরের মতোই। আমি বিশ্বাস করি, কেবল একজনই সত্য ঈশ্বর রয়েছেন আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ সুবাহানা ওয়া তা’আলা এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার রাসূল।

এক সপ্তাহ আগে আমি প্রকৃত ধর্মান্তরিত হই এবং তারপর থেকে এটি আমার অন্তরে আনন্দের অনুভূত জাগিয়ে তুলেছে এবং আমার ইসলাম আবিষ্কারের পর থেকে আমার ব্যক্তিত্ব শান্ত হয়ে যায় এবং অনেক বেশি স্বস্তি অনুভব করছি। আমি মনে করি যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের জন্য এটা সত্যিই অসাধারণ। আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ সুবাহানা তা’আলা আমাকে ইসলামের দিকে পরিচালিত করেছে।

সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮।

এদিনটিতে আমি কালেমা শাহাদা পাঠ করি। আমি ও আমার মুসলিম বোন যখন মসজিদে পৌঁছলাম, তখন সেখানে আমার অন্য মুসলিম বোনেরা আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। তারা ছিল সত্যিকার অর্থে খুবই হেল্পফুল যা আগে আমি কখনো দেখিনি।

প্রথমে, আমি আমার বোনদের সঙ্গে একত্রে মাগরিবের প্রার্থনায় অংশ নিলাম এবং তারপর কোরআন শেখা একটি ক্লাসে অংশ নেয়ার জন্য আমি ও আমার বন্ধু রেজিস্ট্রেশন করি। আমার মুসলিম বন্ধুটি আগে থেকেই কোরআন পড়তেন। কিন্তু তিনি তার উচ্চারণ শুদ্ধ করার জন্য আমার সঙ্গে একেবারে শুরু থেকে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কোরআন শেখার প্রারম্ভিক ক্লাসটি ছিল ৫/৬ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য, তাই ১৯ বছর বয়সে তাদের সঙ্গে আমাকে বেমানান দেখাচ্ছিল।

কিন্তু আমি এতে কিছুই মনে করিনি, কারণ মেয়েগুলো আসলেই খুব কিউট ছিল। আমার শিক্ষকও ছিলেন খুবই যত্নশীল এবং তিনি আমার বয়সের কাছাকাছি ছিলেন। আমি ওই দিন ধর্মান্তরিত হতে এসেছি তা শুনে তিনি খুবই আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে সব বোনেরাই খুব স্নেহপরায়ণ ছিলেন এবং তারা সবাই আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল।

এরপর এশা’র সালাতের সময় ঘনিয়ে এলো এবং এশার আগে আমার ধর্মান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা। ক্লাস শেষে শিক্ষক আমাকে তার পাশে বসিয়ে মোনাজাত করলেন এবং মসজিদের ভিতর আমি কেবল আনন্দের অনুভূতি অনুভব করছিলাম।

যখন আমার ধর্মান্তের সময় ঘনিয়ে এলো, তখন সবাইকে খুবই আনন্দিত দেখাচ্ছিল। ইসরাক নামে একজন বোন আমাকে ইমামের কাছে নিয়ে গেলেন এবং আমি ইমামের সঙ্গে শাহাদা পাঠ করলাম, আলহামদুলিল্লাহ। যখন আমি পুনরায় ক্লাসে ফিরে আসি, তখন সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল এবং আমি এতটাই আনন্দিত ছিলাম যে আমি সুন্দর ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছি। আমি ইতোমধ্যেই নামাজ আদায় করা শিখেছি, হিজাব পরিধান করছি এবং নিয়মিত কোরআনের ইংরাজি অনুবাদ পড়ি। ধর্মান্তরটি ছিল আমার শেষ পদক্ষেপ এবং আমি ব্যাখ্যা করতে পারছি না যে আমি কতটা সুখ অনুভব করছি।

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮।

আমি আমার কর্মস্থলে এদিন প্রথমবারের মতো সালাত আদায় করি। যদিও সেখানকার মেয়েরা মুসলিম ছিল না, তারপরেও আমি তাদের কাছ থেকে অনেক সহায়তা পাই। সেখানে আমার দু’জন মুসলিম বন্ধু রয়েছে। তারাও আমাকে নানাভাবে সমর্থন করেছে। এদিন তাদের একজন আমাকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা আমার জন্য একটি নতুন হিজাব এনেছিল। তাদের সমর্থন আমাকে খুব বেশি কৃতজ্ঞ করেছে।

এমনকি আমি আমার বন্ধুদের কাছ থেকে, আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে এবং মসজিদ থেকে অনেক সহায়তা পেয়েছি। তবে, আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে এটি হয়ত পাইনি। আমার বাবা মনে হচ্ছে বিষয়টি মেনে নিয়েছেন এবং তিনি আমাকে বলেছেন, যাইহোক তিনি আমাকে ভালবাসেন।

অন্যদিকে, আমার মা আমাকে অনেক ধারণা দিচ্ছেন এবং বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে তিনি এতে খুশি নন। ইসলাম নিয়ে পূর্বে তার সঙ্গে আমি অনেক আলোচনা করেছি এবং মাঝে মাঝে তিনি এই বুঝতে পারতেন এবং মনে হতো তিনি এটি সহজেই মেনে নেবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তিনি আশা করছেন যে আমি যেন আমার মনকে পরিবর্তন করতে পারি। আমি তাকে বুঝানোর জন্য আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং ইসলাম আমাকে যেমনটি শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি করেই তার সঙ্গে ব্যবহার করবো। ইনশা আল্লাহ তিনি আমার এই পথটি গ্রহণ করবেন। আমি জানি তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন।

আমি জানি সামনের প্রতিটি দিন খুব সহজ হবে না এবং এও জানি ইসলাম গ্রহণ করা নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেও তার পরিবারের মধ্যে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমি কেবল প্রার্থনা করি যে আমার পরিবার একদিন ইসলাম গ্রহণ করবে এবং সঠিক পথের দিকে পরিচালিত হবে।

বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮

এদিন মনে হয়েছিল যে আমার পরিবারের সদস্যরা আমার সঙ্গে কিছুটা ভাল আচরণ করছে। আমার বোন আমাকে বুঝাতে পারে নি, সে আমাকে উপহাস করতে থাকে। কিন্তু আমার মাকে মনে হল যে তিনি বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।

এদিন আমি আমার শিক্ষকের কাছ থেকে পুনরায় অভিনন্দন সূচক একটি ইমেল পেয়েছিলাম এবং এতে তিনি লিখেছিল যে আমার জন্য তিনি কতটা আনন্দিত। এছাড়াও এখানে একজন মুসলিম যুবক আছেন; যিনি আমাকে অনেক সমর্থন করেছে। ইনশাআল্লাহ আমি তাকে একদিন বিয়ে করবো। আমি তার পরিবার সম্পর্কে জানি না, কিন্তু তার মা আমাকে একটি জায়নামাজ পাঠিয়েছেন এবং তার ভাই আমাকে অ্যারাবিক শিক্ষা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার ভাইয়ের সহায়তা এবং নিয়মিত ক্লাস করার মাধ্যমে ইনশাল্লাহ আমি খুব শিগগিরই তা শিখতে পারব।

বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮।

এদিনটিতে আমি অনেক আনন্দ অনুভব করেছিলাম। আমার বন্ধু আমাকে ডিনারের জন্য তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং আমি তার ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই। তার বাবা-মা আমাকে একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবে তৈরি করতে চায়। তার মা ইসলাম সম্পর্কে আমার চেয়ে আরো বেশি জানেন, কিন্তু তিনি আমেরিকান জীবন যাপনে অভ্যস্ত। ইনশাআল্লাহ একদিন তিনি আরো ভাল করে ইসলামকে বুঝবেন এবং হিজাব পরিধান করবেন এবং আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।

শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮।

এদিন আমি বেশ সুন্দরি কিছু মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। এদিন ছিল মেয়েদের মধ্যে একজনের জন্মদিন। তাই আমরা সকলেই মজার মজার সব খাবার খেয়েছি এবং এটা আমার জন্য আরো আনন্দের ছিল কারণ দীর্ঘ দিন পর আমি তাদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছিলাম। তারা সবাই জানত যে আমি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছি, তাই আমার হিজাবে তারা কোনো দুঃখ অনুভব করেনি। আমি আমার বন্ধু অ্যাশলে’র কাছ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছিলাম। সে বলেছিল সে আমার জন্য অনেক খুশি। আমার প্রত্যাশা-আমার বন্ধুরাও একদিন ইসলামে ধর্মান্ততি হবে।

শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮।

এদিন আমি বুঝতে পারি আমার মা আমাকে মেনে নিয়েছে। কর্মস্থল থেকে আমি ঘরে ফিরেই বুঝতে পারলাম সবকিছু ভালোভাবেই চলছে। তারপর আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন সে আমার সঙ্গে খুব কম কথা বলত। সে আমাকে বলেছিল যে সে অনুভব করত যে আমি আর তার পরিবারের সদস্য নেই এবং আমি আমার পারিবারিক ঐতিহ্যকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি। যদিও তিনি ইসলাম সম্পর্কে এখন কোনো কিছু বোঝার চেষ্টা করছেন না এবং আমি এ সম্পর্কে পূর্বে যা বলেছিলাম তা এখন এড়িয়ে যাচ্ছে। আমার পরিবারের সঙ্গে এই সব সমস্যাগুলো আমাকে সত্যিই আবেগপ্রবণ করেছে। কিন্তু ইনশা আল্লাহ শিগগিরই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাকে সঠিক পথে রাখেন এবং আমাকে যেন ধৈর্য ধরার শক্তি দেন।

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮।

এদিন আমি ও আমার বন্ধুরা মিলে মসজিদে ধর্মীয় আলোচনা শুনতে যাই। নারীর অধিকার সম্পর্কে এটি ছিল একটি চমৎকার আলোচনা এবং তারা অন্য ধর্মের সঙ্গে ইসলামের তুলনা করেছিল। আমি কখনই বুঝতে পারিনি- নারীদের সম্পর্কে অন্য ধর্মগুলো কি খারাপ চিন্তা করে। মসজিদে অন্য বোনদের সঙ্গে সময় কাটানো সত্যি খুব আনন্দের। তারা সবাই অনেক ভাল, মাশাআল্লাহ।

এদিন আমি আমার মায়ের সঙ্গেও খুব সুন্দর দিন কাটিয়েছি। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনগুলোও একই রকম হবে।

আমি ইসলামের দিকে পরিচালিত হতে পেরে আমি নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে করছি এবং আমি আশা করি আমার মতো অন্য ধর্মান্তরিতরাও একই রকম সুখ অনুভব করবে। আল্লাহ যেন সকল মানব সম্প্রদায়কে ইসলামের দিকে পরিচালিত করেন। আমীন।

আপনারদের মুসলিম বোন, শ্যানন।

মুসলিম কনভার্টস ডটকম

captcha