IQNA

জাকির নায়েককে হস্তান্তরের অনুরোধ ভারতের: মালয়েশিয়ার 'না'

23:30 - July 06, 2018
সংবাদ: 2606145
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, জাকির নায়েককে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে না। আজ (শুক্রবার) তিনি ওই ঘোষণা দিয়েছেন।

 

বার্তা সংস্থা ইকনা: তিনি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত জাকির নায়েক আমাদের দেশে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবেন না ততদিন তাকে ফেরত পাঠানো হবে না। কারণ, তাকে মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে।

এর আগে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার বলেছিলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় বাস করা ভারতীয় নাগরিক জাকির নায়েককে হস্তান্তর করার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ওই আবেদন জানানো হয়েছে। এই পর্যায়ে বলা যায়, মালয়েশিয়ার কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কুয়ালালামপুরে আমাদের হাইকমিশনার একনাগাড়ে সংশ্লিষ্ট মালয়েশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের এরকম মন্তব্যের পরেই মালয়েশিয়ার খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি প্রকাশ্যে আসায় কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তা ভারতের জন্য 'বড় ধাক্কা' বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে মহারাষ্ট্রের ধর্মপ্রচারক ডা. জাকির নায়েক দেশে ফিরছেন বলে খবর ছড়ায়। কিন্তু গত (বুধবার) জাকির নায়েকের আইনজীবী দাতো সাহারুদ্দিনের মাধ্যমে এক বিবৃতিতে জাকির বলেন, ‘আমার দেশে ফেরার খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং ভুয়ো। যতদিন না ভারত আমার জন্য সুরক্ষিত বলে মনে করব ততদিন দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

২০১৬ সালে বাংলাদেশের ঢাকার গুলশানে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের কয়েকজন জাকির নায়েকের প্রচারে প্রভাবিত হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেসময় তিনি ওই অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ‘আমি শান্তির দূত, কখনো সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করিনি।’ তিনি সন্ত্রাসবাদকে নিন্দা করেন এবং 'ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই' বলে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে তিনি 'মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার' হচ্ছেন বলেও জাকির নায়েক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। জাকির নায়েক সেই থেকেই বিদেশে আছেন এবং বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।

২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ইউএপিএ ও ফৌজদারি দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। তার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনকেও সরকার নিষিদ্ধ করে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদে উসকানি দেয়ার অভিয়োগ করা হয়েছে।

ভারত ২০১৭ সালে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারির আবেদন জানায়। কিন্তু সেবারও ওই প্রচেষ্টাকে ধাক্কা দিয়ে ইন্টারপোল জানিয়ে দেয়, জাকিরের বিরুদ্ধে ভারত সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। ভারত আইনি প্রক্রিয়াও সঠিকভাবে অনুসরণ করেনি বলেও সংস্থাটি জানায়। তাছাড়া ইন্টারপোল কমিশন জাকিরের বিরুদ্ধে করা আবেদনে ‘রাজনৈতিক’ ও ‘ধর্মীয়’ বৈষম্যের গন্ধ পাওয়াসহ এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বার্থও তেমন নেই বলে জানায়।

এসব বিষয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট সিনিয়র অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আজ (শুক্রবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘এটাকে আমি সরাসরি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা এটা বলব না। কেননা, যদি সত্যিই তাদের সঙ্গে চুক্তি থেকে থাকে, নিয়ম অনুযায়ী তারা চাচ্ছেন, তারা ফেরত না দিতে পারেন, সেটা তাদের যুক্তি। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় হয়ে উঠছে যেটা, এরকম একজন ব্যক্তিত্ব যাকে মালয়েশিয়া সরকার বলছে আমরা তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছি। এইখানেই বোধহয় ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের একটু ভেবে দরকার আছে, আমি যাকে অপরাধী করতে চাচ্ছি, কিন্তু অন্য দেশ তাকে নাগরিকত্ব দিতে চাচ্ছে, এরমধ্যে বোধহয় একটু সমস্যা আছে। সেই সমস্যার জায়গাটাকে আমাদের পররাষ্ট্র দফতর যথাযথভাবে উপলব্ধি করে পদক্ষেপ নিত তাহলে বিদেশের কাছে আমাদের এভাবে মুখ পুড়ত না। এখানেই পররাষ্ট্র দফতরের ব্যর্থতা। কিন্তু অফিসিয়াল ব্যর্থতা হয়তো নয়। তারা চেয়েছেন, ওরা দেবেন না বলছেন। এই চাওয়া এবং না দেয়ার মাঝখানে যে একটা ইতিহাস আছে, সত্য আছে এবং সেটাই প্রকৃত সত্য। সেই সত্যের অনুসন্ধান করতে চাইলে, বা করা হলে এভাবে পররাষ্ট্র দফতরের অসম্মান হতো না। আমার মনে হয় আমাদের পররাষ্ট্র দফতর এই বিষয়ে আগামীদিনে আরো সদর্থক ভূমিকা নেবে তাহলেই ভারতে সম্মান এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মান রক্ষিত হবে।’

ড. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘কেন এটা ঘটছে? যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অভিযোগের কোথাও একটা অসত্য দানা বেধে আছে বলেই এভাবে প্রত্যাখ্যাত হতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে। সুতরাং, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আগে, অভিযোগের যথার্থতা বিচার করার দায়িত্ব পররাষ্ট্র দফতরের। তারা তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করছেন না বলেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের এই অসম্মানজনক অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’ পার্সটুডে

captcha