বার্তা সংস্থা ইকনা: এসময় তার দুই বছরবয়সী ছেলে ইয়াহিয়া তার পিছু নেয় এবং তাকে সৈন্যদের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল।
অন্ধকারের মধ্যে বাড়ির বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা জীপে তোলার জন্য সৈন্যরা লামা খাতারকে হাঁটিয়ে নেয়ার সময় তিনি থেমে যান, তারপর হাঁটু গেড়ে বসে তার আদরের শিশুকে জড়িয়ে ধরেন এবং অনবরত তার গালে চুমো খেতে থাকেন।
তার মা তাকে ছাড়া চলে যাচ্ছে দেখে ইয়াহিয়া কাঁদতে শুরু করে এবং তার বড় বোন বীসান তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করে।
১৮ বছর বয়সী বীসান আল জাজিরাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত প্রায় দেড়টার সময় আমরা আমাদের বাড়ির বাইরে বিশাল গোলমাল শুনতে পাই।’
ইসরাইলি সৈন্যবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য ওই দিন রাতে তাদের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর সৈন্যরা ওই পরিবারকে জানিয়ে দেয় যে তারা লামা খাতারকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে এসেছে। ১৪ বছরের ইয়ামান ছাড়া তাদের পরিবার সব সদস্যকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। ব্যাগ গুছিয়ে দেয়ার জন্য ইয়ামানকে তার মায়ের কাছে থাকার অনুমতি দেয়া হয়।
বীসান বলেন, ‘মাকে নিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সবাইকে চুমো খান এবং আমাদের একে অপরে যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন। আমাদের বলেছে, সে খুব শিগরিই ফিরে আসবে।’
পাঁচ সন্তানের জননী ৪২ বছর বয়সী লামা খাতার একজন লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। ইসরাইলি দখলদারিত্বের অধীনে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ ও লঙ্ঘনের বিষয়ে ‘নুন পোস্ট’ ওয়েবসাইট তার একাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করে।
দুই বছর আগে ইয়াহিয়ার জন্ম দেওয়ার এক মাস পর তিনি আরো একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং একই দিনে মুক্তি পাওয়ার আগে তার লেখা সম্পর্কে তাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তার স্বামী হাজেম আল-ফারুকি মঙ্গলবার আল জাজিরাকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিন আগে তাকে ইসরাইলি বাহিনী ডেকে নিয়েছিল। ওই সময় ইসরাইলি বাহিনী তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তিনি যদি তার স্ত্রীকে লেখালেখি বন্ধ করতে চাপ না দেন, তবে খাতারকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমার ভাবতে পারিনি যে দখলদার শক্তি তাদের হুমকি সত্যি সত্যি বাস্তবায়ন করবে। কোনো কারণ ছাড়াই লামাকে গ্রেপ্তারের জন্য মধ্য রাতে ইসরাইলি সৈন্যরা আমাদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এটি আমাকে এবং আমার সন্তানদের অবাক করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সে (লামা) এই ঘর-বাড়ি, আমাদের পরিবারে ভিত্তি এবং আমরা সবাই তার ওপর নির্ভরশীল। আমরা জানি না কিভাবে এখন আমরা আমাদের জীবন চালিয়ে যাব।’
হাজেম জানান, তার স্ত্রী রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন এবং এজন্য তাকে ওষুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার গ্রহণ করতে হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা লামা সম্পর্কে খুবই উদ্বিগ্ন। ইসরাইলিরা তার ওষুধ কাছে রাখতে এবং তা নিয়মিত গ্রহণের অনুমতি দেকে কিনা তা আমরা জানি না।’
বীসান চলতি বছর উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশুনা সম্পন্ন করেছেন এবং হেব্রোনের উত্তরে রামাল্লার কাছাকাছি বিরাজিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই অবস্থায় সে এখন তার পড়াশোনার বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছেন। সে এখন নার্সিং করার পরিকল্পনা করছে এবং বাড়িতে তার ভাইবোনদের দেখভালের দায়িত্ব নিতে চান।
তিনি বলেন, ‘যতদিন আমার মা নেই ততদিন পর্যন্ত আমি বাড়ি থেকে দূরে থাকতে পারব না। আমাকে বাড়িতে থাকতে হবে এবং আমার ভাই ও বোনদের যত্ন নিতে হবে। এটা এখন আমার দায়িত্ব।’
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে গ্রেপ্তার আ আটক হওয়া লামা খাতারই একমাত্র নারী সাংবাদিক নয়। গত মাসে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সুজান ওউইভি (৩৯) কে হেব্রোনে তার বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। আল জাজিরা