IQNA

ইসরাইলের অবরোধে গাজার ক্ষতি সাড়ে ১৬শ’ কোটি মার্কিন ডলার

0:01 - November 30, 2020
সংবাদ: 2611885
তেহরান (ইকনা): জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের অবরোধের কারণে গাজার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ১৬শ’ কোটি মার্কিন ডলার। বিশাল এ আর্থিক ক্ষতির কারণে উপত্যকার অর্থনীতি ভঙুর হয়ে গেছে। দরিদ্রতার নিচে বসবাস করছেন অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা।

বুধবার জাতিসংঘের কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হিসেব করা হয়েছে।

ইউএনসিটিএডি ইসরাইলের প্রতি দ্রুত অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। বলা হয়, অবরোধের কারণে গাজার আর্থিক কর্মকাণ্ড ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ৫৬ শতাংশ গাজার বাসিন্দা দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে।

ইউএনসিটিএডি’র ফিলিস্তিন বিষয়ক সমন্বয়ক মাহমুদ ইলখাফিফ বলেন, অবরোধ অব্যাহত থাকলে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।

তিনি বলেন, অবৈধ অবরোধের কারণে গাজার ২০ লাখ বাসিন্দা বন্দি জীবনযাপন করছে। যা দ্রুত প্রত্যাহার জরুরি। গাজারবাসীকে মুক্তভাবে চলাফেরা, বিশ্বের সাথে বাণিজ্য এবং উপত্যকার বাইরে তাদের যে পরিবার-আত্মীয় স্বজন আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

২০০৭ সাল থেকে গাজার স্থল, আকাশ এবং সমুদ্র পথে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরাইল। চিকিৎসার মতো জরুরি সেবার জন্যও কোথাও যেতে পারছেন না গাজার বাসিন্দারা।

ভয়াবহ এ অবরোধের মধ্যে গাজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশ আরও সীমিত করেছে ইসরাইল। খুবই ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবধনের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে দখলদার ইহুদিরা।

প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়, গাজার বাসিন্দারা খুবই সীমিত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত। সঠিক পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই বলেও উল্লেখ করা হয়।

গাজার বাসিন্দারের বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না গেলে উপত্যকার বাসিন্দাদের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইউএনসিটিএডি এর গ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড ভেলেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজিসের পরিচালক রিচার্ড কোজুল রাইট।

বলেন, ২১ শতকে এসে ২০ লাখ মানুষকে এভাবে অবরুদ্ধে জীবন যাপন করতে হচ্ছে এটা রীতিমত বিস্ময়কর।

ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া তিনটি যুদ্ধে ৩ হাজার ৭৯৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৮ হাজারের মতো। গাজার অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এগুলো ছাড়া, অববোধের মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো যুদ্ধে জড়িয়েছে ইসরাইল।

যুদ্ধে দেড় হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেড় লাখের বেশি ঘরবাড়ি, জ্বালানি, পানি, পয়নিষ্কাশন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।

২০০৭ সালে গাজার দরিদ্রতার হার ছির ৪০ শতাংশ। ২০১৭ সালে অবরোধের কারণে এ হার দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে। তার অর্থ হলো গাজার ১০ লাখের বেশি বাসিন্দা দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী গাজার বাসিন্দাদের এর থেকে মুক্ত করতে ৮৩ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। যা ২০০৭ সালের তুলনায় চারগুণ বেশি।

২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গাজার অর্থনীতি বেড়েছে ৫ শতাংশেরও কম। ফিলিস্তিনের অর্থনীতিতে উপত্যকার অংশগ্রহণ ৩১ থেকে ১৮ শতাংশে নেমেছে। মাথাপিছু আয় কমেছে ২৭ শতাংশ। বেকারত্ব বেড়েছে ৪৯ শতাংশ।

গাজার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে ইউএনসিটিএডি’র প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনি সরকারকে উপত্যকার উপকূলে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদের বিকাশের আহ্বানসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র:somoynews

captcha