IQNA

পশ্চিমা দেশগুলোর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করোনা ভ্যাক্সিন কি নিরাপদ?

20:45 - January 17, 2021
সংবাদ: 2612120
তেহরান (ইকনা):  চলতি বছরের ৩রা জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে বসবাসকারী চিকিৎসক গ্রেগরি মাইকেল ( বয়স : 56 বছর ) ফাইজারের তৈরি টিকা নেওয়ার পর ইডিওপ্যাথিক থ্রোম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা ( আইটিপি ) জনিত রোগ অর্থাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে টিকা নেওয়ার দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। 
এসময় তার রক্তে 'প্লাটিলেটস' এর ঘাটতিও দেখা দেয় । ওই চিকিৎসকের স্ত্রী হিদি নিকোলম্যানের দাবি , এই টিকার কারণেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে । এই মৃত্যুর পেছনে আর কোনো কারণ থাকতে পারে না ।
 
ফাইজার কোম্পানির বিশ্বাস টিকা নেওয়ার সাথে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই । এ বিষয়ে তারা তদন্ত করছে ।
 
ডা: গ্রেগোরি মাইকেল বাহ্যত : সুস্থ ছিলেন যা তার স্ত্রীও দাবি করেছেন । তবে হয়তো তিনি অজান্তে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন যা তার শারীরিক রোগ প্রতিরোধ শক্তি ও ক্ষমতা দুর্বল করে দিয়ে থাকতে পারে । আর টিকা নেওয়ার কারণে সেগুলো তীব্র হয়ে গিয়ে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ( ইডিওপ্যাথিক থ্রোম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা জনিত স্ট্রোক ) ঘটিয়ে থাকতে পারে । অথবা তার দেহে এ ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সুপ্ত জিন ছিল যা টিকা নেয়ার কারণে অ্যাক্টিভ ( জাগ্রত ও ক্রিয়াশীল ) হয়ে ওই চিকিৎসকের স্ট্রোক ঘটিয়েছে । সুতরাং যারা এ ধরনের বা এতদ সদৃশ্য শারীরিক অসুবিধা ও জটিলতার অধিকারী তাদের জন্য ফাইজার , মডার্না , অক্সফোর্ড - এস্ট্রোজেনেকার mRNA করোনা ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য কোভিড ভ্যাক্সিন নিরাপদ নাও হতে পারে । 
 
নরওয়েতে করোনা টিকা নেয়ার পর বেশ কিছু বয়স্ক বৃদ্ধ মানুষ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হলে এবং তাদের মধ্য থেকে ২৩ জনের মৃত্যু হলে চীনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বয়স্ক ও বিভিন্ন ধরণের  শারীরিক জটিল সমস্যা ও ব্যাকগ্রাউন্ড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ফাইজারের কোভিড ( করোনা ) ভ্যাক্সিন দেয়া স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ।
 
Chinese health experts called on Norway & other countries to suspend the use of mRNA based COVID - 19 vaccines produced by companies such as Pfizer , especially among elderly people , due to vaccines' safety uncertainties following the deaths of 23 elderly Norwegian people who recieved the vaccines .
 
 
একজন চীনা ইমিউনোজোলিস্ট বলেছেন : " নতুন mRNA ( এম আর এন এ ) ভ্যাক্সিন তাড়াহুড়ো করে উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং তা ব্যাপক ও বিশাল সংখ্যক মানুষের সংক্রামক ব্যাধি রোধ করার জন্য কখনো প্রয়োগ ও ব্যবহৃত হয় নি এবং ব্যাপক বিশাল সংখ্যক জনগণের উপর প্রয়োগের জন্য এ ভ্যাক্সিনটি নিরাপদ হওয়ার ( safety ) বিষয়টি সুনিশ্চিত করাও হয় নি।"
 
আর এ ধরনের টিকা নেয়ার পর বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে যাদের এ ধরনের শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা (প্রবলেম) ও জটিলতা রয়েছে এবং বেশি বয়স ( বার্ধক্য ) ও বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড রোগ জনিত কারণে যাদের বডি ইমিউনিটি সিস্টেম ( দৈহিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা )ও দুর্বল অথবা ভবিষ্যতে বিশ্বের মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ এ ধরনের টিকা নেয়ার কারণে বহু মারাত্মক অজানা শারীরিক জটিলতা , অসুবিধা , ক্যান্সার ও অটো ইমিউন রোগে আক্রান্ত হবে যা করোনা ভ্যাকসিন তৈরিকারি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সহজেই অস্বীকার ( ইনকার ) করে বসবে এবং তারা এগুলোর কোনো দায় দায়িত্বও নেবে না । কারণ বহু ওষুধের সিরিয়াস সিভিয়ার ( তীব্র মারাত্মক ) পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বহু বছর পরেই জানা গেছে বা জানা যায় । ঠিক তদ্রুপ এসব করোনা টিকার মারাত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সমূহ এত অল্প সময়ের মধ্যে জানা যাবে না বরং সেগুলো প্রকাশিত হতে হয়তো বহু বছর সময় লেগে যাবে । আর এ কারণেই একটা টিকা নিরাপদ' হওয়ার বিষয়টি নিরূপণ করতে সময়ের প্রয়োজন বা এটা একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । তাই চট করে হুট করে অল্প সময়ের মধ্যে তাড়াহুড়া করে  করোনা ভ্যাকসিন নিরাপদ হওয়ার দাবিতে কিভাবে আস্থা স্থাপন করা যায় ?! আর এভাবে ডা: গ্রেগোরি মাইকেল এবং নরওয়ের ২৩ জন বয়স্ক বৃদ্ধের মত যদি বহু মানুষের মৃত্যু হয় করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে এবং তা যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যু বরণকারি রোগীদের  সংখ্যার কাছাকাছি , সমান বা বেশি হয় তাহলে ( এম আর এন এ করোনা ) ভ্যাক্সিন  নিরাপদ হবার বিষয়টি নিশ্চিত না করে বরং তাড়াহুড়ো করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি  করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার গুরুত্ব আর থাকে কি ?!!
 
চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ইয়াং ঝাঙ্ক্বিউ শুক্রবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন : "এম আর এন এ ভ্যাক্সিন মানব দেহের কোষগুলোকে ইমিউন রেসপন্স ( রোগ প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সাড়াদান ) জোরদার করণ সংক্রান্ত একটা সুরক্ষা গঠন করার শিক্ষা দেয় । তখন দেহে প্রকৃত ভাইরাস প্রবেশ করলে  ইমিউন রেসপন্স মানুষকে সংক্রামিত হওয়া থেকে রক্ষা করে । ইত্যবসরে এই এম আর এন টিকাদান ( ভ্যক্সিনেশন ) প্রক্রিয়া জুড়ে দেহের অভ্যন্তরে টক্সিক( বিষাক্ত ) দ্রব্য তৈরি হতে পারে ; আর এ কারণেই ভ্যাক্সিন নিরাপদ হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না । "
 
বেজিং ভিত্তিক একজন ইমিউনিটি বিশেষজ্ঞ গ্লোবাল টাইমসকে শুক্রবার বলেছেন যে বিশ্বের উচিত নতুন টেকনোলজি হিসেবে ফাইজার উদ্ভাবিত এম আর এন এ কোভিড - ১৯ ভ্যাক্সিন দান স্থগিত করা । কারণ ব্যাপক বিশাল পরিসরে অথবা যে কোনো সংক্রামক রোগ ব্যাধি প্রতিরোধ ও তা থেকে সুরক্ষা বিধানের ক্ষেত্রে এই ভ্যাক্সিন নিরাপদ হওয়ার বিষয়টি (এখনও) প্রমাণিত হয় নি । বয়স্ক যারা বিশেষ করে  ৮০ বছরের উর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের কে যেন কোনো কোভিড - ১৯ ভ্যাক্সিন অবশ্যই দেয়া না হয় । 
 
তিনি বলেন : ৮০ বছর বয়স্ক ব্যক্তিদের ইমিউন সিস্টেম অধিকতর দুর্বল এবং তারা যে কোনো বিরূপ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার শিকার হবেন সবচেয়ে বেশি । তাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার জন্য তাদেরকে অবশ্যই ওষুধ সেবন করতে হবে।
 
তাই বয়স্ক বৃদ্ধরা  দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত অল্প বয়স্ক ( বৃদ্ধ নয় এমন ) ব্যক্তিরাও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার জন্য এম আর এন এ ভ্যাক্সিন নিলে এমনকি মৃত্যু সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভার্স এফেক্টের শিকার হতে পারে ! আবার সুস্থ সবল নীরোগ ব্যক্তিরা সহজে  কোভিড - ১৯ এ আক্রান্ত হবে না এবং হলেও সহজে ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ( এদের মৃত্যু হারও হবে অতি নগণ্য ) । তাই এদের টিকা দেয়ার তেমন একটা প্রয়োজন নেই । আর এম আর এন এ করোনা ভ্যাক্সিনের মতো যে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত ভালোভাবে জানা যায় নি সেই টিকা বিশাল ব্যাপক পরিসরে দেয়া কি নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে যুক্তিসংগত ও যৌক্তিক ? এ ভাবে সন্দেহজনক গণ টিকা দান কর্মসূচি বিশ্ব ব্যাপী ব্যাপক মারাত্মক বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ এক বিশাল সংখ্যক মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হলে তার দায় দায়িত্ব কে নেবে ? 
 
এ যেন ঠিক যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়াতে হবে সেই সরিষায় ভূত থাকার মতই !! অতএব এ ব্যাপারে খুব ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ।  
 
এতো গেল পাশ্চাত্যের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের মত কোম্পানিসমূহের কোভিড ভ্যাকসিন বা করোনা টিকার কথা । এসব পশ্চিমা কোম্পানি সমূহের তৈরি টিকাগুলোর সেফটি ( safety ) অর্থাৎ নিরাপদ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যেন ' দিল্লি হানূয্ দূর্ হাস্ত্ ( দিল্লি এখনো দূরে ) - এ প্রবাদ বাক্যের অর্থেরর মতো । তবে পশ্চিমা বলয়ের বাইরের দেশ যেমন : ইরান যাতে নিরাপদ করোনা টিকা তৈরি করতে না পারে সে জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । গত 26 নভেম্বর 2020 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যৌথ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ পরমাণু , প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক ও বায়ো ডিফেন্স বিজ্ঞানী জেনারেল ডঃ মুহসিন ফাখরীযাদেহকে শহীদ করে যিনি ইরানের করোনা ভ্যাকসিন গবেষণা ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত ছিলেন ।
 
আর ট্রাম্প প্রশাসন বিদায় নেয়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগে এই গত পরশু দিন (14 - 1 - 2021) করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদন , গবেষণা ও তৈরি কারী বিজ্ঞান ভিত্তিক ( knowledge-based ) ইরানি প্রতিষ্ঠান বারাকাত ফাউন্ডেশন এবং এই কোভিড ভ্যাকসিন উদ্ভাবন , গবেষণা ও তৈরীর সাথে সংশ্লিষ্ট আরো 16 টি ইরানি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করেছে । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যে ইরান যেন তার জনগণের জন্য নিরাপদ কোভিড ( করোনা ) ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ও উৎপাদন করতে না পারে । আর ঠিক এটাই হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথা পাশ্চাত্যের কালো কুৎসিত , বুনো অসভ্য ভয়ঙ্কর চেহারা ও রূপ । 
 
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
১৬ - ১ - ২০২১
captcha