IQNA

ইমাম বাক্বির ( আ:) এর শাহাদাত

19:26 - July 18, 2021
সংবাদ: 3470341
ইমাম বাক্বির ( আ:) ৩রা সফর ৫৭ হিজরী মতান্তরে পহেলা রজব জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা মহানবীর ( সা:) আহলুল্ বাইতের ( আ:) চতুর্থ মাসূম ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীন (আ:) যিনি ছিলেন মহানবীর(সা:)দৌহিত্র  সাইয়েদুশ শুহাদা ( শহীদদের নেতা ) বেহেশতের যুবকদের সর্দার ( নেতা ) আহলুল বাইতের ৩য় নিষ্পাপ ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ:) পুত্র । মাত্র ৪ বছর বয়সে ইমাম বাক্বির ( আ:) পিতা ইমাম যাইনুল আবেদীন ( আ:) , দাদা ইমাম হুসাইন (আ :) এবং আহলুল বাইতের ( আ:) সাথে কারবালায় উপস্থিত ছিলেন এবং স্বচক্ষে পিতামহ ইমাম হুসাইন ( আ:) ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের মজলূম অবস্থায় শাহাদাত বরণের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন ।

৭ যিল হজ্জ ( যুল হিজ্জাহ ) মহানবীর ( সা:) পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ:) ৫ম নিষ্পাপ ইমাম মুহাম্মদ আল বাক্বির ইবনে আলী ইবনুল হুসাইন  ( আ:) এর শাহাদাত বার্ষিকী । স্মর্তব্য যে , ৫ম ইমাম আবূ জাফার মুহাম্মদ আল বাক্বির ( আ:) সাইয়েদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইন ( আ: ) পৌত্র । ইব্রাহীম ইবনে ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক ইমাম বাক্বিরকে ( আ:) বিষ প্রয়োগ করলে তিনি ১১৪ হিজরীর ৭ যিল হজ্জ  ৫৭ বছর বয়সে পবিত্র মদীনা নগরীতে উমাইয়া খলীফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালেকের শাসনামলে শাহাদাত বরণ করেন । তাঁকে জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে পিতা ইমাম যাইনুল আবেদীন ( আ:) এবং চাচা ইমাম হাসান মুজতাবা ( আ:) এর কবরের পাশে দাফন করা হয়।

ইমাম বাক্বির ( আ:) ৩রা সফর ৫৭ হিজরী মতান্তরে পহেলা রজব জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা মহানবীর ( সা:) আহলুল্ বাইতের ( আ:) চতুর্থ মাসূম ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীন (আ:) যিনি ছিলেন মহানবীর(সা:)দৌহিত্র  সাইয়েদুশ শুহাদা ( শহীদদের নেতা ) বেহেশতের যুবকদের সর্দার ( নেতা ) আহলুল বাইতের ৩য় নিষ্পাপ ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ:) পুত্র । মাত্র ৪ বছর বয়সে ইমাম বাক্বির ( আ:) পিতা ইমাম যাইনুল আবেদীন ( আ:) , দাদা ইমাম হুসাইন (আ :) এবং আহলুল বাইতের ( আ:) সাথে কারবালায় উপস্থিত ছিলেন এবং স্বচক্ষে পিতামহ ইমাম হুসাইন ( আ:) ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের মজলূম অবস্থায় শাহাদাত বরণের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন ।

আমরা এই নিষ্পাপ মাসূম ইমাম -ই হুমামের শাহাদাত দিবসে তাঁর আখলাক , সীরাত ও কর্মকাণ্ডের কিছু নমুনা উল্লেখ করব যাতে আমরা সেগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি :

ইমাম বাক্বির ( আ: ) এর ইবাদৎ বন্দেগী :
বর্ণিত আছে যে : একদা হজ্জ ব্রত পালনের জন্য ইমাম বাক্বির (আ:) মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন ।  তিনি মক্কায় মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন এবং কাবা শরীফের দিকে তাকিয়ে উচ্চ:স্বরে অত্যন্ত কাঁদলেন , অত:পর তিনি কাবা শরীফ তাওয়াফ শেষ করে মাকামে ইব্রাহীমে নামায পড়লেন ।


তিনি যখন সিজদা থেকে মাথা উঠালেন তখন দেখা গেল যে তাঁর সিজদাস্থল তাঁর চোখের জলে  ভিজে গেছে  । যখন তিনি হাসতেন তখনও তিনি মহান আল্লাহকে  স্মরণ করতেন এবং বলতেন : হে আল্লাহ , আমার উপর আপনি রাগম্বিত হয়েন না । মধ্যরাত্রিতে মহান আল্লাহর কাছে তিনি মুনাজাত ও ক্বাযা- ই হাজত প্রার্থনা কালে বলতেন : হে আল্লাহ , আপনি আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন আ্মি তা পালন করিনি এবং আপনি আমাকে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু আমি (তা থেকে) বিরত থাকিনি । হে আল্লাহ আমি আপনার বান্দা ; আপনার সান্নিধ্যে হাযির ( উপস্থিত ) আমি। ( যদিও আমার কর্তব্য হচ্ছে ক্ষমা প্রার্থনা করা কিন্তু আমি এতটা দুর্ভাগা যে ) আমি ( এখনও ) ক্ষমা প্রার্থনা করছি না।
  

 ইমাম সাদিক ( আ:) বলেন : যখন কোনো বিষয় আমার পিতাকে ( ইমাম বাক্বির আ: ) দু:খ দিত তখন তিনি পরিবারের সকল নারী ও শিশুকে একত্রিত হওয়ার আদেশ দিতেন । অত:পর তিনি প্রার্থনা ( দুআ ) করতেন এবং তারা সবাই আমীন বলতেন ।

ইমাম সাদিক (আ:) বলেন : আমার পিতা মহান আল্লাহর অনেক যিকর করতেন । কখনো কখনো আমি তার সাথে যেতাম । তখনও ( আমি দেখতাম যে ) তিনি মহান আল্লাহর যিকর করতেন । এমকি যখন তিনি জনগণের সাথে কথা বলতেন তখনও তিনি মহান আল্লাহর যিকর ( স্মরণ ) করা থেকে গাফেল ( অমনোযোগী ) থাকতেন না । আমি সবসময় দেখতাম যে তাঁর জিহ্বা নড়ছে এবং তিনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ - এর যিকর করছেন । তিনি ( আ:) আমাদেরকে জমা ( একত্রিত ) করে সূর্য্যোদয় পর্যন্ত মহান আল্লাহর যিকর করার নির্দেশ দিতেন । আর আমাদের মধ্য থেকে যে কেউ পবিত্র কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতে পারত তাকে তিনি আয়াত তিলাওয়াত করার আদেশ দিতেন এবং যারা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতে পারত না তাদেরকে তিনি যিকর করার নির্দেশ দিতেন । ( দ্র : নিগাহী বার যিন্দিগীয়ে চাহর দাহ মাসূম (আ:) , পৃ: ২১৪ - ২১৫ )

হালাল রিযক ও রূযী ( বৈধ জীবিকা নির্বাহ ও আয় উপার্জন )  ইমাম বাক্বিরের (আ:) দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর আনুগত্য করার শামিল ।

একদা ইমাম বাক্বির ( আ:) কৃষি কাজ তদারক করার জন্যে এমন এক সময় পবিত্র মদীনার আশেপাশে যাচ্ছিলেন তখন তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি এবং আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গরম ।  পথিমধ্যে ইমাম বাক্বিরের ( আ:) সাথে মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদিরের সাক্ষাৎ হয় । তখন সে নিজেকে নিজে বলল : কুরাইশী বংশীয় একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ( ( ইমাম বাক্বির ( আ:) )এই তপ্ত গরম আবহাওয়ায় পার্থিব সম্পদ আহরণ ও অর্থ উপার্জনের জন্য বের হয়েছেন !!  তাই সে মনে মনে ইমামকে নসিহত ( উপদেশ ) করার সিদ্ধান্ত নেয় !! এ জন্য সে ইমামের নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে সালাম দেয় । ইমাম ও  টানা নি:শ্বাস প্রশ্বাস নিতে নিতে এবং ঘর্মাক্ত অবস্থায়  তাকে সালামের জবাব দেন । তখন  মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির বলল :  মহান আল্লাহ আপনার কাজ কর্ম  ঠিকঠাক করে দিক । কুরাইশ বংশের এক গণ্যমান্য ব্যক্তি এই গরম আবহাওয়ায় দুনিয়া অন্বেষণের জন্য বের হয়েছেন । এমতাবস্থায় যদি আপনার মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আপনি কী করবেন ?  

তখন ইমাম বাক্বির ( আ :) বললেন : মহান আল্লাহর শপথ , এই অবস্থায় যদি আমার কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয় তাহলে তা আমার কাছে এমন এক অবস্থায় উপস্থিত হলো যে আমি তখন মহান আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল রয়েছি । কারণ আমি এ কাজের ( কৃষি ) মাধ্যমে  তোমার ও তোমার মতো লোকদের প্রতি নিজেকে মুখাপেক্ষী করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হচ্ছি । নিশ্চয়ই  তখন আমি মৃত্যু বরণ করতে ভয় পাব যখন আমি মহান আল্লাহর কোনো না কোনো নাফরমানি ও বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত থাকব ।


যখন মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির ইমাম বাক্বির (আ:) এর কাছ থেকে এ জবাবটা শুনল তখন সে বলল: মহান আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুক । আমি আপনাকে নসিহত করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু আপনি আমাকে হিতোপদেশ দিলেন । ( দ্র : প্রাগুক্ত , পৃ : ২১৩ - ২১৪ )

মহান আল্লাহ আমাদের জীবনে  আমাদেরকে ইমাম বাক্বিরের (আ:) সিরৎ , শিক্ষা ও আদর্শের অনুসরণ করার তৌফিক দিন।

ইসলামি চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

captcha