IQNA

মার্কিন নিষেজ্ঞার আওতায় এবার বাংলাদেশ

20:23 - December 11, 2021
সংবাদ: 3471120
তেহরান (ইকনা): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে । যেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেশা ও পেশা । কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর তার মানবতাবিরোধী অপরাধ ও অপকর্মের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কে ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও  নিষেধাজ্ঞা দিল ।

ইরানকে তো গত ৪২ ধরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েই রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ! আর প্রায়ই ইরানের বিরুদ্ধে নিত্য নতুন বিচিত্র ধরণের আজব আজব নিষেধাজ্ঞা ঠুকতে থাকে । এই দুই তিন দিন আগেও ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে কিছু নিষেধাজ্ঞা  আরোপ করেছে !

 

ঠুনকো অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তার যে কোনো প্রতিপক্ষের উপর। তথাকথিত মানবাধিকার লংঘনের ধোঁয়া তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জঘন্য এ কাজটা করছে ! এখন সময় এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লংঘনের জন্য দেশটির বিরুদ্ধে সকল দেশের উচিৎ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া । প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হাজার হাজার আদিবাসী নারী ও শিশু মেয়ে গুম , উধাও ও নিখোঁজ হয়ে যায় যাদের আর কোনো দিন হদিস ও সন্ধান পাওয়া যায় না । মার্কিন পুলিশ , এফবিআই , এন এস এ , নিরাপত্তা  ও গোয়েন্দা বাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করতে পারে না । তাই এ সব হতভাগ্য অপহৃত ও নিখোঁজ  আদিবাসী নারী ও শিশু মেয়েদের সন্ধান পাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যজুড়ে বিলবোর্ড স্থাপন করে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নারী ও শিশু মেয়েদের ছবিসহ হারানো ও নিখোঁজ হওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে ।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ সব হতভাগ্য আদিবাসী নারী ও শিশু মেয়েদেরকে বর্ণ বৈষম্য বাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গোপণ নির্দেশেই নিখোঁজ ও গুম করা হয়। বিগত তিন দশক ধরে কানাডা সরকারের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনী যে ১২০০ - ১৩০০ আদিবাসী নারী ও মেয়েকে অপহরণ করে গুম করেছে তা ট্রুডো গত ২০১৯ সালের জুন - জুলাই মাসে স্বীকার করেছিল এবং এ জন্য শুধু মৌখিক ক্ষমা চেয়েই ক্ষান্ত থেকেছে । তবে আদিবাসীদের দাবি : নিখোঁজ হওয়া আদিবাসী নারী ও মেয়েদের সংখ্যা ১২০০ নয় বরং কয়েক হাজার । আর এ ছাড়া গত ১৩৬ বছর ধরে আদিবাসী শিশু দেরকে তাদের মা-বাবা ও জ্ঞাতি গোত্রের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনে চার্চ পরিচালিত কসাই খানা সম বিদ্যালয়ে এনে জোর করে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করা ও আদিবাসীদের মাতৃভাষায় কথোপকথন নিষিদ্ধ করে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে বাধ্য করা , নানা প্রকার শারীরিক নির্যাতন এবং হাজার হাজার হতভাগ্য শিশুকে হত্যা করে স্কুলের প্রাঙ্গণে গোপণ গণকবরসমূহে মাটি চাপা দিয়েছে এ সব দুর্বৃত্ত চরিত্রের অপরাধী স্কুল কর্তৃপক্ষ ।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই একই জঘন্য মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ যেমন চালানো হয়েছে এবং বর্তমানের তা অব্যাহত আছে । এই কিছু দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নেব্রাস্কার এক পরিত্যক্ত স্কুলে এক গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং মার্কিন মুলুকের আনাচে কানাচে নিহত ও গণ হত্যার শিকার আদিবাসীদের এ ধরণের আরো অগণিত গোপন গণ কবরের সন্ধান পাওয়া যাবে অনুসন্ধান চালালেই ।

 

মার্কিন মুলুকে পুলিশই নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে প্রতিবছর সন্দেহভাজন অসংখ্য ব্যক্তিকে । কই বিশ্বের কোনো দেশের সাহস হয় না এ ধরণের মানবতাবিরোধী ও মানবাধিকার লংঘনকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পুলিশের বিরুদ্ধে স্যাংকশন ( নিষেধাজ্ঞা ) আরোপ করার !!! সিআইএ পরিচালিত ক্যুদেতার মাধ্যমে বহু দেশের গণতান্ত্রিক সরকার সমূহের পতন ঘটানোর অপরাধে কোনো দেশ এ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নি । অথচ মানবাধিকার লংঘন কারী এ রাষ্ট্রটি ধৃষ্টতার সাথে সকল দেশকে শাস্তি দেয় ও শাসিয়ে থাকে । আফগানিস্তানে , ইরাকে , লিবিয়ায় , সিরিয়ায় সামরিক হামলা ও আগ্রাসন চালিয়ে ও গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ।

 

কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের (আইসিস) প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন যা ট্রাম্প নিজেও বলেছে । আর ২০ বছর আগে হিলারি ক্লিনটন নিজেও স্বীকার করে বলেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য আলকায়দার মতো উগ্রবাদী সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী ও সংগঠন তৈরি করেছিল !!! আফগানিস্তানে ও পাকিস্তানে গত দশ বছরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালিয়ে হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক নারী পুরুষ ও শিশু হত্যা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। আর গত সাত বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের সার্বিক মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত ইয়েমেনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে যারফলে ইয়েমেনে লক্ষাধিক মানুষ নিহত ও শহীদ হয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সকল পশ্চিমা রাষ্ট্র এ যুদ্ধের সুযোগে আগ্রাসী সৌদি সরকারের কাছে শত শত বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করেছে ।

 

এ সব কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লংঘন নয় ? এ জন্য কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংকশন , নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তি পাওয়ার যোগ্য নয় ? ২০১৬ - ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সূচি সরকার ও সেনাবাহিনী আরাকানে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লংঘন করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এ দেশে ঠেলে পাঠালো তখন তো আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমার সরকার ও রক্ত পিপাসু সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিতে দেখিনি । খালি হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা - বলেই ক্ষান্ত থেকেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো । কিন্তু এ বার ( ২০২১ ) দেখা গেল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সমেত বাংলাদেশের উপরও স্যাংকশন ও নিষেধাজ্ঞা ঠুকে দিল । অবশ্যই এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও দূরভিসন্ধি আছে । আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে বঙ্গোপসাগর , চট্টগ্রাম বন্দর ও সেন্ট্ মার্টিন দ্বীপের উপর তো বহু আগে থেকেই । এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম , আরাকান ও আকিয়াব বন্দর এবং ভারতের সাত কন্যা নিয়েও প্রচুর স্বপ্ন দেখে থাকতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । আর  ট্রাম্পের উক্তি : " বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভের " ব্যাপারে যেন আমরা বিন্দুমাত্র গাফেল ( অমনোযোগী ) না থাকি।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া যার করিডোর বা গেটওয়ে হচ্ছে বাংলাদেশ তা , উত্তর পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ পশ্চিম চীনে প্রভাব বিস্তারের জন্য বাংলাদেশকে কুরুক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করার সাধ ও স্বপ্ন দেখছে বহু দিন ধরে । আর বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সেই লক্ষ্যেই ঘটিয়ে থাকবে । আর আজ পর্যন্ত এ রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের নেপথ্যে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কখনোই কেউ অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করে নি । বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরণের বহু অপরাধ ও অপকর্মের বহু নজীর বিদ্যমান আছে । আর এ সব অপকর্মের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শাস্তির যোগ্য ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের উপযুক্ত । কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না বলেই এ দেশটির স্পর্ধা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।

 

তাই কথায় কথায় যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য এ ধরণের অমানবিক পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিয়ে সফল না হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্র সমূহকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ও সতর্ক থাকতে হবে।

 

মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান

captcha