IQNA

পবিত্র কুরআনের আলোকে মুসলিম উম্মাহর ইমাম ও মাওলা হওয়ার একমাত্র দুটো প্রধান অপরিহার্য শর্ত

16:51 - July 23, 2022
সংবাদ: 3472163
তেহরান (ইকনা): মহান আল্লাহর কাছে শাসনকর্তা মনোনয়ন ও নিযুক্তির শর্ত হচ্ছে মাত্র দুটো : ১.জ্ঞানে প্রসারতা ( সবার চেয়ে জ্ঞানী হওয়া ) এবং ২. দৈহিক শক্তিতে প্রসারতা ( সবার চেয়ে বেশি দৈহিক শক্তির অধিকারী হওয়া ) । তবে অঢেল ধন-দৌলতের অধিকারী ও বয়স্ক (বয়োজ্যেষ্ঠ) হওয়া শর্ত নয় । ঠিক তেমনি বিশেষ সামাজিক পদ মর্যাদার অধিকারী হওয়াও শর্ত নয় । মহান আল্লাহ সূরা- ই বাকারায় ( ২৪৬-২৪৮ ) তালূতকে বনী ইসরাইলের বাদশাহ নিযুক্ত করার ঘটনা উল্লেখ করেছেন । 

 (নবী ) বললেন: তোমাদের ( বনী ইসরাইল )ওপর যুদ্ধ বাধ্যতামূলক করা হলে এমন কি হতে পারে যে তোমরা যুদ্ধ নাও করতে পার ? তারা ( বনী ইসরাইল ) বলল : আমরা কেন যুদ্ধ করব না অথচ আমরা নিজেদের গৃহসমূহ এবং আমাদের সন্তানদের হতে বহিষ্কৃত হয়েছি ? অত:পর যখন তাদের ওপর যুদ্ধ (জিহাদ) আবশ্যিক ( ফরয ও বাধ্যতামূলক) করা হল তখন তাদের মধ্য থেকে অল্প কিছু লোক ব্যতীত সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিল । আর আল্লাহ তো জালিমদের সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞাত আছেনই ( বাকারা : ২৪৬) । তাদের নবী তাদেরকে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ ( মনোনীত ও ) নিযুক্ত করেছেন ( তোমাদের কাছে তাকে তোমাদের বাদশাহ হিসেবে প্রেরণ করেছেন ) ( বাকারা: ২৪৭)। তারা বলল : কিভাবে আমাদের ওপর তার রাজত্ব (ও শাসনকর্তৃত্ব ) চলতে পারে ( কার্যকর হবে ) ? অথচ আমরা ( বনী ইসরাইলের মালা বা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ) তার চেয়ে রাজত্বের অধিক হকদার এবং সে অঢেল ধন-দৌলতও প্রাপ্ত হয় নি ( সে অঢেল ধন-দৌলতের অধিকারী নয় ) ? তিনি ( নবী ) বললেন : নিশ্চয় আল্লাহ তাঁকে তোমাদের ওপর মনোনীত করেছেন এবং জ্ঞানে ও দৈহিক শক্তিতে প্রসারতা দিয়েছেন । আর আল্লাহ তাঁর রাজত্ব যাকে ইচ্ছা ( ও উপযুক্ত মনে করেন এবং বাস্তবেও উপযুক্ত ) তাকেই দেন  এবং আল্লাহ অতিশয় প্রাচুর্য দাতা , সর্বজ্ঞানী ( বাকারা : ২৪৭ ) ।
এবং তাদের নবী তাদেরকে বলল : তার রাজত্ব ও বাদশাহীর নিদর্শন হল যে তোমাদের কাছে একটি তাবূত ( সিন্দুক ) আসবে যাতে থাকবে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রশান্তি ( সাকীনাহ ) এবং সে সব ( বরকতময় ) বস্তু যা মূসা ও হারূনের বংশধররা অবশিষ্ট রূপে রেখে গেছে ; ফেরেশতারা তা (উক্ত তাবূত বা সিন্দুকটি ) বহন করে নিয়ে আসবে । নিশ্চয় এতে রয়েছে তোমাদের জন্য নিদর্শন যদি তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাক ( বাকারা : ২৪৮) ।
 
152235314615168132243807712690647311999
 
( এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আলে মূসা ( মূসার বংশধররা ) ও আলে হারূনের ( হারূনের বংশধররা ) রেখে যাওয়া বস্তু , সামগ্রী ও স্মৃতিচিহ্নসমূহ  যদি বনী ইসরাইলের জন্য  নিদর্শন ও তাদের আত্মিক প্রশান্তির কারণ এবং ঈমানের আয়াত ও নিদর্শন হয় তাহলে সকল নবী ও রাসূলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদের ( সা ) পবিত্র ইতরাৎ ( অতিনিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ) আহলুল বাইতের (আ) স্মৃতিচিহ্ন, মাযার, রেখে যাওয়া বস্তু , সামগ্রী ও জিনিস পত্র কেন মুসলিম উম্মাহর জন্য নিদর্শন ( আয়াত ) ও রূহানী ফয়য , বরকত ও আত্মিক - আধ্যাত্মিক প্রশান্তির কারণ হবে না ? সালাফী ওয়াহহাবীরা কি পবিত্র কুরআনের চেয়েও বেশি তৌহিদ বাদী হয়ে গেছে ?! যদি মহানবীর (সা) পবিত্র ইতরাৎ আহলু বাইতের (আ) পূণ্য ও বরকতময় স্মৃতিচিহ্ন সমূহ তা'যীম ( সম্মান প্রদর্শন ) এবং এগুলো থেকে রূহানী সাকীনা ( প্রশান্তি ) , ফয়য ও বরকত নেওয়াকে এ সব সালাফী - ওয়াহহাবীরা শিরক , বিদ'আত ও হারাম বলে মনে করে তাহলে তারা কি ঔদ্ধত্য ও স্পর্ধা সহকারে বলবে যে তাবূত বা সিন্দুকের মধ্যকার সাকীনা ও আলে মূসা ও আলে হারূনের রেখে যাওয়া অবশশিষ্ট জিনিস ও স্মৃতিচিহ্নসমূহকে বনী ইসরাইলের ঈমানের আয়াত বা নিদর্শন বলার জন্য পবিত্র কুরআনে শিরক ও বিদ'আত বিদ্যমান রয়েছে এবং এ গ্রন্থ এ কারণে বিশুদ্ধ নির্ভেজাল তৌহিদের গ্রন্থ বলে আর বিবেচিত হবে না ?!!! বরং বিশুদ্ধ নির্ভেজাল খাঁটি তৌহিদের গ্রন্থ হবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদী বিরচিত গ্রন্থ কিতাব আল্ - তৌহিদ !!!!? নাঊযু বিল্লাহী মিন যালিক !!!
এটা কত বড় ধৃষ্টতা !!!!
ঠিক যেমন আলে মূসা ও আলে হারূনের রেখে যাওয়া অবশিষ্ট বস্তু ও স্মৃতিচিহ্ন সমূহ যদি বনী ইসরাইলের ঈমানের নিদর্শন হয় তাহলে আলে মুহাম্মদের রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন , অবশিষ্ট বস্তু সামগ্রী , মাযার ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য ঈমান ও দ্বীনের নিদর্শন এবং তাদের আত্মিক প্রশান্তি ( সাকীনা ) হবে না ? ! এ কেমন বিচার ?!!!
যেহেতু রাসূলের (সা) পরে উম্মতের মধ্যে সবার চেয়ে হযরত আলী অধিক জ্ঞান ও সর্বাধিক দৈহিক শক্তির অধিকারী ছিলেন যে সম্পর্কে শিআ সুন্নী নির্বিশেষে সকল মুসলিম উম্মাহর মাঝে ঐকমত্য ( ইজমা ও ইত্তেফাক ) আছে এবং এ বিষয়টি ( হযরত আলীর সবচেয়ে জ্ঞানী ও দৈহিক ভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া ) অকাট্য মুতাওয়াতির সূত্রে প্রতিষ্ঠিত সেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আলীকেই (আ) ১৮ যিল হজ্জ গাদীরে খুমে উম্মতের মাওলা ( অভিভাবক , শাসন কর্তা, নেতা , কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ ,গার্জিয়ান ও পথপ্রদর্শক ) নিযুক্ত করেন মহান আল্লাহর আদেশে এবং সে দিন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবী (সা) কর্তৃক হযরত আলীর ইমামত ও বেলায়তের ঘোষণা দানের মাধ্যমে দ্বীনে ইসলাম ও ইলাহী নেয়ামতের পূর্ণতা বিধান এবং মুসলমানদের জন্য মনোনীত ধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কারণ মহানবীর (সা) পরে মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যত ইমাম ও হাদী ( পথপ্রদর্শক ) নিয়োগের মাধ্যমে কাফির মুশরিককুল হতাশ ও নিরাশ হয়ে যায় ইসলামের ব্যাপারে । তাই পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: আজ ( ১৮ যিল্ হজ্জ্ গাদীরে খুমে মহান আল্লাহর আদেশে মহানবী -সা- কর্তৃক হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর মাওলা ঘোষণা দানের মাধ্যমে ) কাফিররা তোমাদের ধর্ম হতে নিরাশ হয়ে গেছে [[ কারণ আলীর মতো শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও সর্বশ্রেষ্ঠ বীর রাসূলের পরে মুসলিম উম্মাহর মাওলা ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ ) , ওয়ালী ( অভিভাবক ) , শাসনকর্তা , নেতা ( ইমাম ) , হাদী ( পথপ্রদর্শক) নিযুক্ত হয়েছেন]] , সুতরাং তোমরা ( মুসলমানরা ) তাদের ভয় কর না; বরং আমাকেই ভয় কর । আজ আমি ( আলীকে তোমাদের মাওলা নিযুক্ত করার মাধ্যমে ) তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট হলাম ( সূরা -ই মায়েদা : ৩ ) । 
     তাই ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের নীতিমালা ও শর্তাবলীর আলোকে হযরত আলী (আ)কে মহানবী (সা) মহান আল্লাহর আদেশে মুসলিম উম্মাহর মাওলা নিযুক্ত করেন । আর মুসলিম উম্মাহর মাওলা অর্থাৎ প্রশাসক ও নেতা হবার যে দুই প্রধান শর্ত পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে তা কেবল হযরত আলীর (আ) মাঝেই বিদ্যমান ছিল অন্য কোনো সাহাবীর মাঝে তা বিদ্যমান ছিল না । আর এ বিষয়টা ( উম্মাহর মাঝে হযরত আলীর সবচেয়ে জ্ঞানী ও দৈহিক ভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী বীর হওয়া ) অকাট্য মুতাওয়াতির সূত্রে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত এবং এ ব্যাপারে উম্মতেরও সার্বিক ঐকমত্য ( ইজমা ও ইত্তেফাক ) আছে । 
     অতএব আলীই মুসলিম উম্মাহর মাওলা । আলীর পথই মহান রাসূলুল্লাহর (সা) পথ যা আমরা দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে ধরব ।
 
 ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

 

captcha