IQNA

আশুরার দিবসে ইমাম হুসাইনের ( আ :) শাহাদাত , গাদ্দার বিশ্বাস ঘাতকদের থেকে প্রকৃত মুসলিম উম্মাহকে শনাক্ত করার মাপকাঠি ।।

15:44 - August 03, 2022
সংবাদ: 3472227
তেহরান (ইকনা): আবূ আব্দিল্লাহ ইমাম হুসাইনের ( আ:) উপর সালাম ; আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীনের ( আ:) উপর সালাম ; ইমাম হুসাইনের ( আ:) আওলাদে কিরামের( আ:) উপর সালাম ; ইমাম হুসাইনের ( আ:) আসহাবের ( সঙ্গী সাথীগণ ) উপর সালাম যাঁরা সবাই নিজেদের বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেছেন ইমাম হুসাইনের ( আ:) সান্নিধ্যে এবং তাঁকে কভু করেন নি ত্যাগ  কারবালার মরু প্রান্তরে ;

মুহাররমের উপর সালাম ; কারবালার উপর সালাম ; দাশতে নেইনাভার ( নেইনাভার মরুপ্রান্তর ) উপর সালাম ; যাইনাবের ( আ:) উপর সালাম ; আহলুল বাইতের ( আ:) উপর সালাম ; ক্বামার - ই - বনী হাশেম ( বনী হাশেমের চাঁদ ) আব্বাস - ই আলমদারের ( আ:) ( ইমাম হুসাইনের আ: মহাপতাকাবাহী আব্বাস ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব ) উপর সালাম ; শিবহে পয়গম্বর সীরাতান ওয়া সূরাতান খালকান ওয়া খুলুকান (রাসূলুল্লাহর সা. চেহারা মুবারক ও চরিত্র সদৃশ ) আলী আকবরের ( আ:) উপর সালাম ; ক্বাসিম ইবনুল হাসানের ( আ:) উপর সালাম ; ( ইমাম হুসাইনের ) ছয় মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান হযরত আলী আসগারের ( আ:) উপর সালাম ; খূন -ই কারামের ( সম্মানিত মহানুভব ব্যক্তিবর্গের রক্ত ) উপর সালাম ।

তরবারির উপর রক্তের বিজয়ের মাস মুহাররমুল হারামের উপর সালাম ।

   মুহাররাম হচ্ছে ইসলামে ঐ অতি সম্মানিত মাস চতুষ্টয়ের অন্তর্ভুক্ত যে মাস গুলোয় যুদ্ধ হারাম ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে শরিয়তে । অথচ কমজাত কাফির ইয়াযীদ ,  বনী উমাইয়া , উবাইদুল্লাহ ইবনে মার্জানা , উমর ইবনে সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস , শিমার ইবনে যিল জওশন এই নিষিদ্ধ মাসেই সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ( সা:) সন্তান বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন ( আ:) ও রাসূলুল্লাহর (সা:) আহলুল বাইতের ( আ:) বিরুদ্ধে নাহক যুদ্ধ করে তাদেরকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছে । যেমন করে ভেড়াকে যবেহ করা হয় ঠিক সে ভাবেই ইমাম হুসাইনকে ( আ:) যবেহ করেছে এই ধর্মত্যাগী বদকার ইয়াযীদীরা । আর গোটা উম্মত এ জঘন্য অপরাধ বসে বসে প্রত্যক্ষ করেছে এবং মযলূম ইমাম হুসাইনকে (আ:) সাহায্য করা থেকে বিরত থেকেছে । তাই এই গাদ্দার উম্মত কিভাবে আশা করে কাল কিয়ামত দিবসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ আল মুস্তফার ( সা:) শাফায়াতের এবং ঐ বেহেশতে প্রবেশের যার অধিবাসী যুবকদের নেতৃদ্বয় হচ্ছেন নবীদৌহিত্রদ্বয় ইমাম হাসান ( আ:) ও ইমাম হুসাইন ( আ:) । সহীহ হাদীসে মহানবী ( সা :) হযরত আলীকে ( আ :) উম্মতের গাদ্দারির সংবাদ দিয়ে বলেছিলেন : নিশ্চয়ই এই উম্মত আমার পরে  তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও খিয়ানত (গাদ্দারী ) করবে ; অথচ তুমি জীবন যাপন করবে আমার  ধর্মের ( মিল্লাত ) উপর  এবং আমার সুন্নাহর উপর নিহত ( শহীদ ) হবে ; তোমাকে যে ভালোবাসবে সে আমাকেই ভালবাসবে এবং তোমাকে যে ঘৃণা করবে সে আমাকেই ঘৃণা করবে  ; আর এটা ( হযরত আলীর - আ: - মাথা থেকে তাঁর পবিত্র দাড়ী  ) রক্ত রঞ্জিত হয়ে যাবে ( অর্থাৎ তিনি গাদ্দার উম্মতের হাতে শাহাদাত বরণ করবেন ) ।

 

۴۷۶۶ - عَنْ حَیَّانِ الْأَسَدِيِّ سَمِعْتُ عَلِیَّاً یَقُوْلُ : قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللّٰهِ -ص-

«إِنَّ الْأُمَّةَ سَتَغْدُرُ بِکَ بَعْدِيْ وَ أَنْتَ تَعِیْشُ عَلَیٰ مِلَّتِيْ وَ تُقْتَلُ عَلَیٰ سُنَّتِيْ ، مَنْ أَحَبَّکَ أَحَبَّنِيْ ، وَ مَنْ أَبْغَضَکَ أَبْغَضَنِيْ ، وَ إِنَّ هٰذِهِ سَتُخْضَبُ مِنْ هٰذَا » یَعْنِيْ لِحْیَتَهُ مِنْ رَأْسِهٖ . صَحِیْحٌ

-(۴۷۴۴ )وافقه الذهبي في التلخیص : صحیح .

 

( দ্র : আল হাকিম আল নিশাপুরীর আল মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৫৩ , হাদীস নং ৪৭৪৪ ; আল হাকিম এ হাদীসটি সহীহ বলেছেন এবং আল্লামা যাহাবীও আত - তালখীস গ্রন্থে তাঁর সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন যে এ হাদীসটি সহীহ ) ।

আরেক সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে :

হযরত আলী (আ:) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা:) যে সব বিষয় আমাকে বলেছেন তন্মধ্যে এ বিষয়টিও আছে যে  তাঁর ( সা :) পরে উম্মত আমার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও খিয়ানত ( গাদ্দারী ) করবে ।  (আল - হাকিমের মতে) এ হাদীস সহীহুল ইসনাদ অথচ বুখারী ও মুসলিম তা

বর্ণনা করেন নি । আর আল্লামা যাহাবী আত তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( আল - হাকিম ) সাথে একমত পোষণ করেছেন : হাদীসটি সহীহ ।

( দ্র : আল - মুসতাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৫০ , হাদীস নং ৪৭৩৪ )

 

۴۷۳۴ . عن علي - ع - قال : إِنَّ مِمَّا عَهِدَ إِلَيَّ النَّبِيُّ - ص - أَنَّ الْأُمَّةَ سَتَغْدُرُ بِيْ بَعْدَهُ .

هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحُ الْإِسْنَادِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ .

(۴۷۳۴) . وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : صَحِيْحٌ .

  ৪৭৩৫ . ইবনে আব্বাস ( রা:) থেকে বর্ণিত : তিনি ( ইবনে আব্বাস ) বলেন : হযরত আলীকে রাসূলুল্লাহ সা:) বলেছেন : তবে তুমি আমার পরে পরিশ্রম , ক্লান্তি , কষ্ট ও যাতনার সম্মুখীন হবে । তখন আলী বললেন : এতে করে কি আমার দ্বীনের ( ধর্ম ) ক্ষেত্রে আমি নিরাপদ থাকব ? তখন তিনি ( সা: ) বললেন : তুমি তোমার দ্বীনের ( ধর্ম ) ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকবে ।

এই হাদীসটি শাইখাইনের ( বুখারী ও মুসলিম ) শর্তে সহীহ হাদীস এবং তাঁরা দুজন তা সনদ সহ বর্ণনা করেন নি ।

( ৪৭৩৫ ) আল্লামা যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( আল - হাকিম নিশাপুরী ) সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : বুখারী ও মুসলিমের শর্তে ( হাদীসটি সহীহ ) ।

( দ্র : আল - মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন , খ :৩ , পৃ : ৩৫০ - ৩৫১ )

 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ - رض - قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ - ص - لِعَلِيٍّ - ع - : (( أَمَّا أَنَّکَ سَتَلْقَیٰ بَعْدِيْ جَُهْدَاً )) ، قَالَ : (( فِيْ سَلَامَةٍ مِنْ دِيْنِيْ ؟ )) ، قَالَ : (( فِيْ سَلَامَةٍ مِنْ دِيْنِکَ . )) . هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ عَلَیٰ شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ وَ لَمْ يُخْرِجَاهُ .

(۴۷۳۵) . وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِيْصِ : عَلَیٰ شَرْطِ الْبُخَارِيِّ وَ مُسْلِمٍ .

 

   তাই মহানবীর ভাষায় যে উম্মত গাদ্দারি ও বিশ্বাসঘাতকতা করবে তাঁর ( সা:) পরে হযরত আলীর ( আ:) সাথে , সেই গাদ্দার উম্মতই তো তাঁর দৌহিত্র হযরত হুসাইনকে ( আ:) কতল ও তাঁর আহলুল বাইত (আ:) কে বন্দী করবে যার ভবিষ্যদ্বাণীও তিনি ( সা:) করেছিলেন । কারণ মহান আল্লাহ পাকই তাঁকে ( সা:) তাঁর পথভ্রষ্ট গাদ্দার উম্মতের হাতে কারবালা প্রান্তরে ইমাম হুসাইনের ( আ:) শাহাদাতের সংবাদ দিয়েছিলেন এবং হযরত জিবরাঈল ( আ:) ইমাম হুসাইনের (আ:) বধ্যভূমির মাটিও এনে দিয়েছিলেন তাঁর:( সা:) হাতে ।  ( মহানবী ( সা:) তখন ইমাম হুসাইনের ( আ:) শাহাদাতের সংবাদ শুনে ক্রন্দন করেছিলেন । ইমাম হুসাইনের (আ:) পিতা মাতা হযরত আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী ( আ:) ও বেহেশতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ:)ও ইমাম হুসাইনের ( আ: ) শাহাদাতের সংবাদ শুনে কেঁদেছিলেন । )

 

আমরা নীচে এতদ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস পেশ করছি :

 

১ম. হাদীস :

      নবীপত্নি উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামাহ ( রা: ) বলেন : আমার ঘরে রাসূলুল্লাহর ( সা:) সামনে হাসান ও হুসাইন - আলাইহিমাস সালাম - খেলছিলেন । তখন জিবরাঈল ( আ: ) অবতীর্ণ হয়ে হুসাইনের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন : " হে মুহাম্মাদ , আপনার উম্মত আপনার পরে আপনার এই সন্তানকে ( দৌহিত্র ) হত্যা করবে । " অত:পর রাসূলুল্লাহ (সা:) হুসাইনকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদলেন । এরপর রাসূলুল্লাহ ( সা:) বললেন : " আমি তোমার ( উম্মে সালামাহ ) কাছে এই মাটিটা রাখলাম । " অত:পর রাসূলুল্লাহ সা:) ঐ মাটিটার ঘ্রাণ নিলেন এবং বললেন : " ( কারবালা অথবা ) কার্ব ( কষ্ট ) ও বালার ( বিপদাপদ ) ঘ্রাণ । " এবং বললেন : " হে উম্মে সালামাহ , যখন এই মাটি রক্তে পরিণত হবে তখন জানবে যে আমার সন্তান ( দৌহিত্র হুসাইন ) নিহত হয়েছে । "

হযরত উম্মে সালামাহ ঐ মাটিটা একটা কাঁচের পাত্রে রেখে দিলেন এবং প্রতিদিন ঐ মাটির দিকে তাকিয়ে বলতেন :

  " (হে মাটি ) এক মহাবিপদের দিবসে ( ইমাম হুসাইন / আ : /যেদিন শাহাদাত বরণ করবেন সেদিন অর্থাৎ ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম ) তুমি রক্তে পরিণত হবে ।" আর এতদসংক্রান্ত এ অনুচ্ছেদে হযরত আয়েশা ( রা:) , হযরত যাইনব বিনতে জাহ্শ্ ( রা:) , হযলত উম্মে ফয্ল্ ( রা:) বিনতুল হারিস ( রা:) , হযরত আবূ উমামাহ ( রা:) , হযরত

আনাস ইবনুল হারিস ( রা:) এবং আরো অন্যান্যের থেকে ( অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ও ) বিদ্যমান আছে ( দ্র : ইবনে হাজর আল আস্কালানী প্রণীত তাহযীবুত তাহযীব , খ :২ , পৃ : ৩৪৭ ) ।

 

عَنْ عُمَر َبْنِ ثَابِتٍ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ شَقِيْقٍ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ : كَانَ الْحَسن و الحسين يلعبان بين يدي رسول الله صلّى الله عليه و آله و سلّم في بيتي فنزل جبريلُ فقال : يَا مُحَمَّدُ ، إِنَّ أُمَّتَكَ تَقْتُلُ ابْنَكَ هٰذَا مِنْ بَعْدِكَ وَ أَوْمَىٰ بِيَدِهٖ إِلَى الْحُسَيْنِ فَبَكَىٰ رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص) (وَ أَخَذَ التُّرَابَ عَنْ جَبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ) وَضَعْتُ عِنْدَكِ هٰذِهِ التُّرَابَ فَشَمَّهَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ( ص ) وَ قَالَ : رِيْحُ كَرْبٍ وَ بَلَاءٍ وَ قَالَ : يَا أُمَّ سَلَمَةَ إِذَا تَحَوَّلَتْ هٰذِهِ التُّرْبَةُ دَمَاً فَاعْلَمِيْ أَنَّ ابْنِيْ قَدْ قُتِلَ فَجَعَلَتْهَا أُمُّ سَلَمَةَ فِيْ قَارُوْرَةٍ ثُمَّ جَعَلَتْ تَنْظُرُ إِلَيْهَا كُلَّ يَوْمٍ وَ تَقُوْلُ : إِنَّ يَوْمَاً تَحُوْلِيْنَ دَمَاً لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ .

   وَ فِي الْبَابِ عَنْ عَائِشَةَ وَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ وَ أَبِيْ أُمَامَةَ وَ أَنَسِ بْنِ الْحَارِثِ وَ غَيْرِهِمْ .

 

   সুতরাং এ হাদীসটি মুতাওয়াতির , শক্তিশালী , নির্ভরযোগ্য সহীহ হাদীস । কারণ , এ হাদীসটি উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মে সালামাহ ( রা :) সহ ছয়ের অধিক সংখ্যক সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে । আর কোনো হাদীস মাত্র চার জন সাহাবা কর্তৃক বর্ণিত হলেই আহলুস সুন্নাহর অনেকেই তা মুতাওয়াতির বলে গণ্য করেন ।

 

২য় হাদীস :

  হযরত উম্মে সালামাহ ও কারবালার মাটি : হযরত উম্মে সালামাহ (রা:) বলেন : এক রাতে  রাসূলুল্লাহ ( সা:) গৃহের বাইরে চলে গেলেন । তিনি দীর্ঘ সময় পরে ফিরে এলেন । আমি তাঁর চুল বিক্ষিপ্ত ও ধূলিধূসরিত দেখলাম । আমি আরয করলাম : ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি আজ আপনাকে এ কি অবস্থায় দেখছি । তিনি বললেন : কুদরতের কর্মীরা আমাকে ইরাকে অবস্থিত এক জায়গায় নিয়ে গেল । সে জায়গাকে কারবালা বলা হয় । সেটাই হুসাইনের শাহাদাতের ভূমি । সেখানে আমি আমার আওলাদকে প্রত্যক্ষ করেছি এবং তাঁর রক্ত মাটি থেকে তুলে নিয়েছি , যা এখন আমার হাতে আছে । তুমি হেফাজতে রাখ । আমি মাটি হাতে নিয়ে দেখলাম সেটি লাল মাটি ছিল । এরপর আমি সেই রক্ত রঞ্জিত মাটি বোতলে রেখে দিলাম এবং বোতলের মুখ ভালো করে বেঁধে দিলাম । যখন হুসাইন ইরাক সফর শুরু করেন , তখন আমি প্রত্যহ এই বোতলটি বাইরে এনে দেখতাম । তাতে মাটি পূর্বাবস্থায় ছিল । কিন্তু যখন আমি আশুরার দিন এই মাটি দেখলাম , তখন তাতে রক্ত তাজা হয়ে গিয়েছিল । এতে আমি বুঝে নিলাম যে পাষণ্ডরা হযরত হুসাইন ( রা:) কে শহীদ করে দিয়েছে । আমি খুব কাঁদলাম । কিন্তু শত্রুদের হাসি - তামাশার ভয়ে আমি কান্নাকাটি প্রকাশ করলাম না । এরপর যখন শাহাদাতের খবর এল , তখন শাহাদাতের তারিখ সেটাই ছিল । হযরত হুসায়ন ( রা:) - এর শাহাদাত ৬১ হিজরীতে আশুরার দিনে হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫৭ বছর । ( শাওয়াহেদুন নবুয়ত , পৃ : ২৩২ , আল্লামা আব্দুর রহমান দামী প্রণীত ; অনুবাদ : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান )

 

৩য় হাদীস :

শাহাদাতের খবর : হযরত আয়েশা ( রা:) বলেন : একদিন রাসূলুল্লাহ সা:) হযরত জিবরাঈল ( আ:) - এর কাছে ছিলেন । ইত্যবসরে হযরত হুসায়ন ( রা:) তাঁর কাছে চলে আসেন । জিবরাঈল ( আ:) জিজ্ঞাসা করলেন : এ কে ? হুযুর ( সা:) বললেন : সে আমার সন্তান ( দৌহিত্র ) । এ কথা বলে তিনি হুসায়নকে কলে বসিয়ে দিলেন ।

হযরত জিবরাঈল ( আ:) বললেন : তাঁকে এক সময় শহীদ করে দেয়া হবে । রাসূলুল্লাহ ( সা:) জিজ্ঞাসা করলেন : তাঁকে কে শহীদ করবে ? জিবরাঈল বললেন : আপনার উম্মত । আপনি বললে সেই জায়গাও বলে দেই , যেখানে তাকে শহীদ করা হবে ।

এরপর জিবরাঈল ( আ:) কারবালার দিকে ইশারা করলেন এবং কিছু লালমাটি ধরে তাঁকে দেখালেন । তিনি বললেন : এই মাটি হুসায়নের শাহাদত ভূমির মাটি । ( প্রাগুক্ত : পৃ: ২৩৩:)

 

৪র্থ হাদীস :

আব্দুল্লাহ ইবনে নাজী স্বীয় পিতা নাজী থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি ( নাজী ) হযরত আলীর (আ:) তাহারত অর্থাৎ ওযূ , গোসল ও ইসতিনজার পানির ব্যবস্থাপক ছিলেন এবং সিফফীনের ( যুদ্ধ ক্ষেত্রের )  দিকে হযরত আলীর ( আ:) সাথে বের হলেন । যখন হযরত আলী ( আ:) নেইনাভার ( কারবালা ) নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি বলে উঠলেন : ফুরাত নদীর কুলে হে আবূ আব্দিল্লাহ ( ইমাম হুসাইনের - আ: - কুনিয়াহ বা উপাধি ) , ধৈর্য্য ধারণ করো ; হে আবূ আব্দিল্লাহ , ধৈর্য ধারণ করো । " আমি তখন বললাম : " কে  আবূ আব্দিল্লাহ ? " তখন তিনি ( আলী ) বললেন : " আমি একদা রাসূলুল্লাহর ( সা:) খেদমতে হাজির হলাম আর তখন তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল ।  আমি বললাম : হে আল্লাহর নবী , আপনাকে কেউ কি রাগম্বিত করেছে ? " তখন তিনি বললেন : একটু আগে আমার কাছ থেকে জিবরাঈল বিদায় নিয়েছেন । আমাকে তিনি বলেছেন যে হুসাইন ফুরাতের তীরে নিহত ( শহীদ ) হবে । " তিনি আমাকে বললেন : আমি কি আপনাকে তাঁর কবরের ( বধ্যভূমি ) মাটির ঘ্রাণ সুঙ্গাব ? " আমি বললাম : " হ্যাঁ । " তখন তিনি হাত প্রসারিত করে একমুঠো মাটি এনে আমাকে দিলে  আমি আর আমার চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না । " ( দ্র : তহযীবুত তাহযীব , খ : ২ , পৃ: ৩৪৭ )

 

৫ম হাদীস :

আম্মার আদ দুহনী বলেন : হযরত আলী ( আ:) একদা কা'বের পাশ দিয়ে গমণ করলেন। তখন তিনি ( কা'ব ) বললেন : এর ( আলী ) পুত্র সন্তানদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি একদল ( বন্ধুবান্ধব , ভাই , ভ্রাতুষ্পুত্র ও পিতৃব্য পুত্রদের ) সমেত নিহত ( শহীদ ) হবেন হযরত মুহাম্মাদের ( সা:) কাছে হাউযে কাওসারে যাদের উপনীত

হওয়া পর্যন্ত তাদের দেহের সিক্ততা ও ঘাম শুকাবে না (( অর্থাৎ শহীদ ( নিহত ) হওয়ার সাথে সাথেই ( অনতিবিলম্বেই ) তাঁরা সবাই রাসূলুল্লাহর ( সা:) সাথে মিলিত হবেন । )) । অত:পর তখন হাসান তার পাশ দিয়ে গমণ করলে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল : " এ ব্যক্তি ? " তিনি বললেন : " না ।" অত:পর হুসাইন গমণ করলে জিজ্ঞেস করা হল : " এ ব্যক্তি ? " তখন তিনি বললেন : " হ্যাঁ । " ( দ্র : তাহযীবুত তাহযীব , খ :২ , পৃ : ৩৪৭ - ৩৪৮ ) ।

 

৬ষ্ঠ হাদীস :

কারবালার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ : হযরত আলী ( রা:) কারবালার ঘটনার পূর্বেই হযরত বারা ইবনে আযেবকে ( রা:) বলেছিলেন : আমার কলিজার টুকরা হুসায়নকে লোকেরা তোমার চোখের সামনে শহীদ করবে । কিন্তু তুমি তার কোন সাহায্য করতে পারবে না । সে মতে যখন হযরত হুসায়ন ( রা:) কে শহীদ করা হয় , তখন বারা ইবনে আযেব ( রা:) বলে ওঠেন : আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী সত্য বলেছিলেন । হুসায়ন ( রা:) শহীদ হয়ে গেলেন ; অথচ আমি কোন সাহায্যই করতে পারলাম না । তিনি এ কথা বলে বলে অনুতাপ করতেন । ( শাওয়াহেদুন নবুয়ত , পৃ : ২১৮ - ২১৯ )

 

৭ম হাদীস :

  একবার হযরত আলী ( রা:) কারবালা ভূখণ্ডের উপর দিয়ে গমণ করেন । তিনি অশ্রুবর্ষণ করতে করতে এবং এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে স্থানটি অতিক্রম করেন । তিনি বলেন : আল্লাহর কসম , তাদের শাহাদাত এবং তাদের উট ! মরে যাওয়ার এটাই স্থান । তাঁর সহচররা জিজ্ঞাসা করল : এটা কোন্ জায়গা ? তিনি বললেন : এটা কারবালা । এখানে এমন এক দলকে শহীদ করা হবে , যারা বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফেরদাউসে দাখিল হবে । একথা বলে হযরত আলী ( রা:) সেখান থেকে চলে এলেন । হযরত হুসায়ন ( রা:) - এর শাহাদাতের ঘটনা সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ এ কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারে নি । ( দ্র : প্রাগুক্ত  , পৃ : ২১৯ )

 

৮ম হাদীস :

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস  ( রা: ) বলেন : আমরা সন্দেহ পোষণ করতাম না এবং ( রাসূলুল্লাহ সা: এর ) আহলুল বাইত (আ :)ও এ মতের উপর প্রতিষ্ঠিত ও সমবেত হয়েছিলেন ( অর্থাৎ তাঁরা সবাই একমত ছিলেন ) যে হুসাইন ইবনে আলী ( আ: ) তফ্ফে ( কারবালা - ই মুআল্লা ) নিহত ( শহীদ ) হবেন । ( দ্র : আল - মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৮৯ , হাদীস নং ৪৮৮৯ )

 

٤٨٨٩ - عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ( رض ) ، قَالَ : (( مَا كُنَّا نَشُكُّ وَ أَهْلُ الْبَيْتِ مُتَوَافِرُوْنَ أَنَّ الْحُسَيْنَ بْنَ عَلِيٍّ يُقْتَلُ بِالطَّفِّ .))

 

৯ ম. হাদীস :

হযরত উম্মুল ফযল ( রা:) বলেন : হুসাইন কে কোলে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ( সা:) আমাকে বলেছেন : " নিশ্চয়ই হযরত জিবরাঈল ( আ:) আমাকে জানিয়েছেন যে আমার উম্মত হুসাইন কে কতল ( হত্যা ) করবে । " ( দ্র : আল - মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৮৮ , হাদীস নং ৪৮৮৭ )

 

      عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ قَالَتْ : قَالَ لِيْ رَسـُوْلُ اللّٰهِ - ص - وَ الْحُسَیْنُ فِيْ حِجْرِهِ : إنّ جبریل (ع) أخبرني أنّ أمّتي تقتل الحسینَ .

 

১০ ম হাদীস :

আস'আস ইবনে সাহীম নিজ পিতা সাহীম থেকে , সাহীম হযরত আনাস ইবনুল হারিস আল - কাহিলী ( রা: ) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি ( আনাস ইবনুল হারিস - রা: - ) বলেন : তিনি মহানবীকে ( সা:) বলতে শুনেছেন :

" নিশ্চয়ই আমার এই পুত্র সন্তান ( দৌহিত্র অর্থাৎ হুসাইন ) ইরাকের এক স্থানে নিহত ( শহীদ ) হবে ; অত:পর যে তাঁকে ( হুসাইন ) পাবে ( যে সে - অর্থাৎ হুসাইন - যালিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে বের হয়েছে এবং এ জন্য সে সাহায্য চাচ্ছে ) তার উচিত তাঁকে ( হুসাইন ) সাহায্য করা । "

অত:পর তিনি ( হযরত আনাস ইবনুল হারিস রা: ) হুসাইনের - রাদিয়াল্লাহু আনহু - সাথে ( কারবালায় ) নিহত ( শহীদ ) হন ।

(( দ্র: ইবনুল আসীর আল জাযারী ( ৫৫৫ - ৬৩০ হি. ) প্রণীত উসদুল গাবাহ ফী মা'রিফাতিস সাহাবা , খ : ১ , পৃ : ১৭১ ) , প্রকাশক : দারুল ফিকর , বৈরুত , লেবানন , প্রকাশ কাল : ১৯৯২ খ্রী: ( ১৪১৪ হি. ) ))

 

أَنَسُ بْنُ الْحَارِثِ . عِدَادُهُ فِيْٓ أَهْلِ الْکُوْفَةِ ، رَوَیٰ حَدِيْثَهُ أَشْعَثُ بْنُ سحيمٍ ، عَنْ أَبِيْهِ عَنْهُ ( أَنَسِ بْنِ الْحَارِثِ - رض - ) أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ - ص - يَقُوْلُ : إِنَّ ابْنِيْ هٰذَا يُقْتَلُ بِأَرْضٍِ مِنْ أَرْضِ الْعِرَاقِ ، فَمَنْ أَدْرَکَهُ فَلْيَنْصُرْهُ ، فَقُتِلَ مَعَ الْحُسَيْنِ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُ .

 

শুধু তাই নয় শাহাদাতের দিন ( ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম ) অর্থাৎ যে সময় ইমাম হুসাইনকে ( আ:) শহীদ করা হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজে কারবালায় উপস্থিত ছিলেন ; তাঁর চুল ও দাড়ি মুবারক ছিল এলোমেলো ও ধূলাবালি মাখানো ( ধূলাধূসরিত ) এবং একটি কাঁচের শিশিতে ( ক্বারূরাহ ) নিজ হাতে ইমাম হুসাইন ( আ:) ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের রক্ত সংগ্রহ করেছেন আল্লাহ পাকের দরবারে ঐ সব জঘন্য পাপিষ্ঠ কাতিল ও ঘাতকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করার জন্য ।

 

১১শ হাদীস :

সহীহ তিরমিযী ( হাদীস নং ৩৭৮০, পৃ : ৯৮৯ ) , তাহযীবুত তাহযীব ( খ : ২ , পৃ : ৩৫৬ ) এবং উসদুল গাবায় ( খ : ১ , পৃ : ৫৭১ ) সালমা থেকে বর্ণিত : তিনি ( সালমা ) বলেন : আমি হযরত উম্মে সালামার (নবীপত্নি উম্মুল মু'মিনীন) ( রা:) কাছে প্রবেশ করি ঐ অবস্থায় যে তখন তিনি কাঁদছিলেন । আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম : আপনি কী কারণে কাঁদছেন ? তখন তিনি বললেন : আমি  ( স্বপ্নে ) মহানবীকে ( সা :) তাঁর মাথায় ও দাঁড়িতে মাটি মাখা অবস্থায় দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম : " হে রাসূলুল্লাহ , আপনার এ অবস্থা কেন ? " তিনি ( সা:) বললেন : " আমি এই কিছুক্ষণ আগে হুসাইনের শাহাদাত বরণ  প্রত্যক্ষ করেছি ।"

 

১২ শ হাদীস:

     হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : আমি দিনের বেলায় স্বপ্নে মহানবীকে ( সা:) দেখলাম যে তাঁর চুল ও দাড়ি মুবারক এলোমেলো ও ধূলাবালি মাখানো ( ধূলাধুসরিত ) এবং তাঁর হাতে আছে একটি কাঁচের শিশি যা রক্ত দিয়ে পূর্ণ । আমি তাঁকে বললাম :  " হে রাসূলুল্লাহ , আপনার জন্য আমার পিতা মাতা উৎসর্গ হোক ; এটা কী ? " তিনি বললেন : এটা হুসাইন ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের রক্ত । আজ থেকে আমি এই রক্ত সংগ্রহ করেই যাচ্ছি । " অত:পর ইবনে আব্বাস ( রা :) দিনটা হিসাব করে দেখলেন যে ঐ দিনই তিনি ( হুসাইন ) শহীদ হয়েছেন । ( দ্র : তাহযীবুত তাহযীব খ : ২ ,পৃ : ৩৫৫ ;

আল - ইস্তী'আব , খ: ১ , পৃ : ২৩৭ ; উসদুল গাবাহ , খ: ১ , পৃ : ৫৭১ ; আল বিদিয়াহ ওয়ান নিহায়াহ , খ : ৮ , পৃ: ২২০৬ ; তারীখুল খামীস , খ : ২ , পৃ: ৩০০  )

     

সুতরাং কারবালায় ইমাম হুসাইন ( আ:) ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের শাহাদাতের সময় এই পাপিষ্ঠ গাদ্দার উম্মত সবাই কূফা , মক্কা - মদীনা এবং ( ইসলামী বিশ্বের ) অন্যান্য শহর ও নগরে নির্বিকার বসে ছিল এবং মযলূম ইমাম হুসাইনকে ( আ:) সাহায্য করে নি । তাহলে এই গাদ্দার উম্মত কি ঐ বেহেশতে প্রবেশের আশা করেছে যার অধিবাসীরা যুবক হবে না বরং হবে বৃদ্ধ ও প্রৌঢ় !! এমন বেহেশত কি আছে ?! এটা কি বেহেশত না জাহান্নাম ? আসলে এ ধরণের গর্হিত ও ন্যাক্কার জনক কাজ করে ( অর্থাৎ ইমাম হুসাইন - আ : - কে সাহায্য করা থেকে বিরত থেকে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ) এই গাদ্দার উম্মত মহানবী ( সা:) ও তাঁর আহলুল বাইতের শাফায়াত পাওয়ার যোগ্যতাই হারিয়েছে । খুবই আশ্চর্য জনক বরং দু:খজনক হচ্ছে যে পবিত্র মদীনা ও মক্কাবাসীরা ইয়াযীদকে খলিফা হিসেবে মেনে নিয়েছিল ও বাইআত করেছিল বিধায় তারা ইমাম হুসাইন কে ( আ:) সাহায্য করেনি , ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়া খিলাফত ও প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বহিষ্কার অথবা বন্দী করেনি অথবা ইমাম হুসাইনের ( আ:) সাথে কূফায়ও যায় নি । অথচ তাদের থাকা উচিত ছিল বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইনের ( আ :)  সাথে ; তাঁকে সর্বতভাবে সাহায্য করা ছিল তাদের কর্তব্য ও শরয়ী দায়িত্ব ( ওয়াজিব )  । কূফার যারা ইমাম হুসাইন কে ( আ:) আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে যারা তাঁকে সাহায্য করে নি এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

করেছিল নি:সন্দেহে তারাও জঘন্য অন্যায় ও পাপ করেছিল এবং নিষ্ঠার সাথে তওবা করা ব্যতীত আহলুল বাইতের শাফায়াত পাওয়া ও বেহেশতে যাওয়ার যোগ্যতাই তারা হারিয়ে ফেলেছিল ।

((( পাঠক বর্গের অবগতির জন্য এখানে স্মর্তব্য যে কূফার অতি নগণ্য সংখ্যক অধিবাসীই শিয়া ছিল । কূফাবাসীদের মধ্য থেকে যারা ইমাম হুসাইন ( আ:) কে কূফায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়ে ছিল তাদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় : ১. হাবীব ইবনে মুযাহির আল আসাদী এবং মুসলিম ইবনে আওসাজাহর মতো অল্প সংখ্যক পত্রলেখক মুসলিম ইবনে আকীলের ক্বিয়াম ( ইবনে যিয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও অভ্যুত্থান ) দমন করা হলে কূফা থেকে পালিয়ে কারবালায় এসে ইমাম হুসাইনের সাথে মিলিত হন এবং কারবালায় শাহাদাত বরণ করেন , ২. সুলাইমান ইবনে সারদ খুযায়ীর মতো পত্র লেখকদের এক অংশ যাদেরকে , কূফার প্রভাবশালী ৪০০ শিআ নেতা যাদের মধ্যে মুখতার সাকাফীও ছিলেন তাদেরকে এবং আরও ১২০০০ অধিবাসীকে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ গ্রেফতার করে  কারাবন্দি করে এবং ৩. শাবাস ইবনে রেবয়ীর মতো পত্রলেখকরা ( যারা সম্ভবতঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে তারা ) ইমাম হুসাইন ( আ:)কে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করে এবং তাদের এক অংশ এমনকি যেমন : শাবাস ইবনে রেবয়ী ও আরো কিছু পত্রলেখক উবাইদুল্লাহ ইবনে রিয়াদের দলে যোগ দেয় এবং ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করে ।  ইমাম হুসাইনের ( আ:) খাঁটি অনুসারী শিআ - যারা ছিল আদর্শিক শিআ ও সংখ্যায় অতি মুষ্টিমেয় ও নগণ্য তারা - তাঁদের মধ্য থেকে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ( যেমন : হানি ইবনে উরওয়া , মাইসাম তাম্মারের মতো ব্যক্তিবর্গ ) ইমাম হুসাইনের ( আ:) শাহাদাতের আগেই মুসলিম ইবনে আকীলের সাথে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নির্দেশে হত্যা করা হয় । কতিপয় শিআ উবাইদুল্লাহর আরোপিত কূফার কঠোর নিরাপত্তা বলয় ও বেষ্টনী ভেদ করে এবং কার্ফু উপেক্ষা করে কূফা থেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং তাদের এক অংশ ইমাম হুসাইনের ( আ:) সাথে কারবালায় মিলিত হয় এবং আরেক অংশ পথ হারিয়ে ফেলায় ইমামের কাছে পৌঁছাতে পারে নি । আর একদল খাঁটি শিআ কূফার কঠোর নিরাপত্তা বলয় ও বেষ্টনী ভেদ করে কূফা থেকে বের হতে পারে নি । আর একদল খাঁটি শিআ কারাবন্দি হওয়ার কারণে ইমামকে সাহায্য করতে অপারগ হয় । তাই এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে খাঁটি মুখলিস শিআরা - কূফায় যারা ছিল  অতি নগণ্য সংখ্যক ও মুষ্টিমেয় তারা - ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথে কখনোই বিশ্বাস ঘাতকতা করে নি । বরং শিআ নামধারীরা যারা ছিল নিছক রাজনৈতিক শিআ তারা ছিল দোদুল্যমান এবং এরাই ইমাম হুসাইনকে (আ:) সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাহায্য করা থেকে বিরত থেকেছে । আর পত্রলেখক ও প্রেরকদের অধিকাংশই না ছিল খাঁটি শিআ আর না ছিল তারা রাজনৈতিক বা নামসর্বস্ব শিআ । বরং এদের অনেকেই ছিল শাবাস ইবনে রেবয়ীর মতো মুনাফিক ও দোদুল্যমান প্রকৃতির । আর কূফায় আহলুল বাইতের (আ:) খাঁটি মুখলিস শিআরা অত্যন্ত মুষ্টিমেয় ও নগণ্য হলেও তাদের সংখ্যার অনুরূপ  সংখ্যক খাঁটি মুখলিস শিআ হিজায বা তদানীন্তন মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র কোথাও ছিল না । হয়তো কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক শিয়া হিজায বা অন্যত্র থাকতে পারে যারা কূফার রাজনৈতিক শিআর মতো তেমন কোন কাজে আসে নি । আর কূফায় খাঁটি মুখলিস নিষ্ঠাবান অনুসারী থাকার কারণে এবং আরো নানাবিধ কৌশলগত কারণে ইমাম হুসাইন ( আ:) তাঁর আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে কূফাকে বেছে নিয়েছিলেন । আর আমরা এ কারণেই দেখতে পাই যে , ইমাম হুসাইন ( আ:) যখন পবিত্র মক্কা নগরী থেকে কূফার উদ্দেশ্যে রওনা হন তখন তাঁর সাথে অতি অল্প সংখ্যক লোক ( যাদের অধিকাংশই ছিলেন হাশেমীয় তারা ) ব্যতীত মক্কা মদীনার অধিবাসীরা বের হয় নি ( যদিও শুরুতে সুযোগসন্ধানী বেশ কিছু বেদুইন তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছিল যারা পরবর্তীতে প্রকৃত অবস্থা প্রকাশিত হলে ধীরে ধীরে ইমাম হুসাইনকে ( আ:) ত্যাগ করে এবং যেহেতু ইমামও চেয়েছিলেন এসব সুবিধা বাদী মরুচারী বেদুইন যাদের আদর্শ ও নীতি ছিল না তারা যেন তাঁকে ত্যাগ করে সেহেতু তিনি পথিমধ্যে মুসলিম ইবনে আকীলের শাহাদাতের খবর পেলে কূফার প্রকৃত অবস্থা ও তাদের পরিণতি যে শাহাদাত হবে তা তাদেরকে জানিয়ে দেন ) এবং ইমামকে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীমূলক হিতোপদেশ দান ছাড়া তারা আর কোনো সাহায্যই করেনি । অথচ তাদের উচিত ছিল ইমামের ( আ:) সাথে বের হওয়া এবং পাপিষ্ঠ মদ্যপ লম্পট ব্যভিচারী ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়ার দু:শাসন ও স্বৈরাচারী সরকার উৎখাতে ইমামকে সাহায্য করা । কিন্তু তারা তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করে নি । হয় আসলে তারা ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়ার নেতৃত্ব , কর্তৃত্ব , খেলাফত ও শাসন মেনে নিয়েছিল অথবা মেনে না নিলেও তারা মহানবীর ( সা : ) আহলুল বাইতের নেতৃত্ব ও শাসন কর্তৃত্ব বিরোধী ছিল  যেমন : আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ও তার সমর্থকগণ , খারিজীগণ ইত্যাদি অথবা এক দল ছিল যারা নিজেদেরকে নিরপেক্ষ বলত না তারা বনী উমাইয়ার পক্ষে আর না তারা ছিল আহলুল বাইত বা আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরের মতো  অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে ( বরং এ শ্রেণীটাই সম্ভবতঃ ছিল হিজাযসহ মুসলিম বিশ্বের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ) । তাই এ অবস্থা বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে মহানবীর আহলুল বাইতের ( আ:) খাঁটি মুখলিস অনুসারী সমর্থকরা ছিল সমগ্র মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত সংখ্যালঘু । বরং খারিজী , বনী উমাইয়া পন্থী নাসিবী ও অন্যান্য বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষই ছিল একাই আহলুল বাইতের (আ:) খাঁটি অনুসারীদের চেয়ে ঢেড় বেশি । আর এ কারণেই আমরা দেখতে পাই অতি নগণ্য সংখ্যক ব্যক্তি ( মাত্র ৭২ জন) ইমাম হুসাইনের ( আ:) সাথে কারবালায় দৃঢ়পদ থেকেছেন ( অর্থাৎ ইমামকে তারা ত্যাগ করেন নি ) এবং তাঁর সাথে শাহাদাত বরণ করেছেন যাদের মধ্যে ১৮ জন ছিলেন নবী বংশীয় ও হাশেমীয় এবং অবশিষ্টাংশের অধিকাংশই ছিলেন হয় কূফা থেকে আগত অথবা মহাবীর হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহীর মতো ইয়াযীদী বাহিনী ত্যাগ করে ইমাম হুসাইনের ( আ:) শিবিরে যোগদান কারী ।( এখানে প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে , ইমামের কতিপয় খাঁটি শিআ বা অনুসারী বাহ্যত: ইয়াযীদী সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কারবালায় এসে সুযোগ বুঝে ইমাম হুসাইনের ( আ:) পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন এবং শাহাদাত বরণও করেছিলেন । আর বেশ কিছু সংখ্যক যোদ্ধা ইমাম হুসাইন ( আ:) এবং তাঁর আসহাবের ( সঙ্গী সাথীদের ) বক্তব্য ও ভাষণে প্রকৃত সত্য বুঝতে পেরে ইয়াযীদী বাহিনী ছেড়ে ইমাম বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইমাম হুসাইনের (আ:) পক্ষে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন । তাই সেদিন ৬১ হিজরীর ১০ মুহাররম সত্যিকার অর্থে মুসলিম উম্মাহর মাঝে আহলুল বাইতের - আ: - খাঁটি অনুসারীদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য , স্বল্প সংখ্যক , সংখ্যালঘু ও মুষ্টিমেয় । এ জন্যই কারবালার মরুপ্রান্তরে সেদিন  আশুরার দিবসের অপরাহ্নে মুষ্টিমেয় বিশ্বস্ত সংগীসাথীদের সবাই শহীদ হয়ে গেলে আহলুল বাইতের (আ:) গুটিকতক নারী , শিশু এবং অসুস্থ পুত্রসন্তান ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ:) ব্যতীত সম্পূর্ণ একা ও নিঃসঙ্গ হয়ে যান বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ:) এবং এ অবস্থায় শত্রুদের হাতে অত্যন্ত নির্মম ভাবে শাহাদাত বরণ করেন । আর এ থেকে প্রমাণিত হয় যে মহানবীর  ( সা:) পরে তাঁর উম্মত যেমন হযরত আলী (আ:) - এর সাথে গাদ্দারী করেছিল ঠিক তেমনি তারা ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথেও গাদ্দারী করেছে এবং এ কারণে মহানবী ( সা :) একাধিক নির্ভরযোগ্য হাদীসে বলেছেন যে তাঁর পরে হুসাইনকে (আ:) তাঁর উম্মতই হত্যা করবে । আর এ জঘন্য অপরাধ , দুষ্কর্ম ও পাপ থেকে কেবল তখন ( ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম ) উম্মতের অতিনগণ্য সংখ্যক ব্যক্তিই মুক্ত থাকতে পেরেছিল । তবে যারা এর পরে কায়মন বাক্যে অর্থাৎ ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে তওবা  করে ইমাম হুসাইন ( আ :) ও মহান আহলুল বাইতের ( আ :) পথে ফিরে এসেছিল বা আসবে ও স্থিত হবে তাদের কথা হচ্ছে ভিন্ন । কারণ মহানবী ( সা : ) উম্মতের হিদায়তের উৎস্য হিসেবে দুটো  অতি ভারী ও মূল্যবান জিনিস (সাকালাইন) : পবিত্র কুরআন ও তাঁর অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর আহলুল বাইতকে (আ:) রেখে গেছেন যা অকাট্য মুতাওয়াতির হাদীস - ই সাকালাইনে বর্ণিত হয়েছে ।

 

হাদীসে সাকালাইন সংক্রান্ত কিছু তথ্য ও আলোচনা :

 

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ  বলেন : আমি রাসূলুল্লাহকে ( সা: ) বিদায় হজ্জে আরাফাতের দিবসে ( ৯ যিল হজ্জ ) কাসওয়া নাম্নী উষ্ট্রীর উপর উপবিষ্ট অবস্থায় ভাষণ দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছি : হে লোক সকল , নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে যা রেখে গেলাম তা যদি তোমরা ধরে রাখ তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না ; আর তা হচ্ছে : মহান আল্লাহর গ্রন্থ ( কিতাবুল্লাহ : আল - কুরআন ) এবং আমার অতিনিকট আত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ( ইতরাত ) আমার আহলুল বাইত । তিরমিযী বলেন : এ অনুচ্ছদে আবূ যর , আবূ সাঈদ , যাইদ ইবনে আরকাম এবং হুযাইফা ইবনে উসাইদ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে । স্মর্তব্য যে , এই হাদীস - ই সাকালাইন সহীহ , মুতাওয়াতির ও শিআ সুন্নী নির্বিশেষে সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত ( মকবূল ) হাদীস ।

 

عن جابر بن عبدالله قال : رأیتُ رسولَ اللّٰه - ص - في حجّته یومَ عرفةَ و هو علیٰ ناقته القصویٰ یخطب ، فسمعته یقولُ : یَا أَیُّهَا النَّاسُ إِنِّيْ قَدْ تَرَکْتُ فِیْکُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدِيْ : کِتَابَ اللّٰهِ وَ عِتْرَتِيْ أَهْلَ بَیْتِيْ .

قَالَ : وَ فِي الْبَابِ عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ وَ أَبِيْ سَعِیْدٍ وَ زَیْدِ بْنِ أَرْقَمَ وَ حُذَیْفَةَ بْنِ أُسَیْدٍ.

 

( দ্র : সহীহ সুনান আত - তিরমিযী , অধ্যায় ৩২ : রাসূলুল্লাহর - সা: - আহলুল বাইতের - আ: - মানাকিব , হাদীস নং ৩৭৯৪ , পৃ : ৯৯১ , প্রথম সংস্করণ , প্রকাশক : দার ইহয়াইত তুরাস আল আরাবী , বৈরুত লেবানন ).

যাইদ ইবনে আরকামের রিওয়ায়ত:

 

 

ইমাম হুসাইন ( আ:) বিশেষ অর্থে মহানবীর ( সা:) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ:) অন্তর্ভুক্ত  :

 

বিশেষ অর্থে ( - যা হচ্ছে পবিত্র কুরআনের পরিভাষা সেই পারিভাষিক অর্থে - ) মহানবীর ( সা:) পবিত্র আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত যে হযরত আলী ( আ: ) , হযরত ফাতিমা ( আ:) , ইমাম হাসান ( আ:) এবং ইমাম হুসাইন ( আ:) যাদেরকে মহান আল্লাহ পবিত্র করেছেন তা এবং নবীপত্নিরা যে এই বিশেষ অর্থে আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত নন  তা মুতাওয়াতির হাদীসে কিসায় ( চাদরের হাদীস ) বর্ণিত হয়েছে এবং মুবাহালার আয়াতের ( সূরা - ই আল - ই ইমরান : ৬১ ) শা'নে নুযূলে মহানবী (সা:) থেকে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো থেকে এ বিষয়টি অর্থাৎ মহানবীর আহলুল বাইত যে কেবল আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইন ( আ:) তা স্পষ্ট হয়ে যায়  :

 

উমর ইবনে আবী সালামাহ মহানবীর ( সা:) রাবীব  ( সপত্নি পুত্র , কারণ তিনি ছিলেন আবূ সালামাহ ও নবীপত্নি উম্মে সালামাহর পুত্র সন্তান ) বলেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক চান হে ( নবীর - সা: - ) আহলুল বাইত তোমাদের থেকে পাপ পঙ্কিলতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পবিত্র করার মত পবিত্র করতে ( সূরা - ই আহযাব : ৩৩ ) - এ আয়াতটি উম্মে সালামাহর ঘরে মহানবীর ( সা:) উপর অবতীর্ণ হয় । অত:পর মহানবী ( সা:) ফাতিমা , হাসান , হুসাইনকে ডেকে তাঁদেরকে একটি চাদর ( কিসা ) দিয়ে ঢেকে দেন ; আর আলী ছিলেন তাঁর পিছনে এবং তাঁকেও চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন । এরপর তিনি ( সা:) বললেন : " হে আল্লাহ , এরাই আমার আহলুল বাইত । অত:পর তাদের থেকে সব রিজস ( পাপ - পঙ্কিলতা , নাপাকী , মন্দ কাজ ,  অপকর্ম ,  নোংরামি , অপরিচ্ছন্নতা) দূর এবং তাদেরকে পবিত্র করার মতো ( অর্থাৎ সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করে দিন । " তখন উম্মে সালামাহ বললেন : " হে আল্লাহর নবী , আমিও কি এঁদের সাথে আছি ? " মহানবী ( সা:) বললেন : " তুমি তোমার স্থানে আছ

( অর্থাৎ তুমি এঁদের অন্তর্ভুক্ত নও বরং তুমি নবীপত্নিদের অন্তর্ভুক্ত ।) এবং তুমি আমার প্রতি ভালো ( তুমি আমার কাছে ভালো ) ।

তিরমিযী বলেন : এ অনুচ্ছদে উম্মে সালামাহ , মা'ক্বিল ইবনে ইয়াসার , আবুল হামরা এবং আনাস থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে । দ্র : সহীহ সুনান আত - তিরমিযী , ৩২ অধ্যায় : মহানবীর (সা:) আহলুল বাইতের ( আ:) মানাক্বিব সংক্রান্ত , কিতাবুল মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৯৬ , পৃ : ৯৯২ , প্রকাশক : দার ইহয়াইত তুরাস আল - আরাবী , বৈরুত , লেবানন , প্রথম সংস্করণ )

 

            হযরত উম্মে সালামাহ থেকে বর্ণিত যে মহানবী (সা:) হাসান , হুসাইন , আলী ও ফাতিমার উপর একটি চাদর ( কিসা ) টেনে দিয়ে বললেন : " হে আল্লাহ এরাই আমার আহলুল বাইত এবং অতি নিকটতম আত্মীয় , ঘনিষ্ঠ ও বিশিষ্ট ব্যক্তি ; তাঁদের থেকে সব রিজস ( নাপাকী , পাপ - পঙ্কিলতা , অপবিত্রতা ও নোংরামি ) দূর করে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করে দিন । " অত:পর

উম্মে সালামাহ বললেন : " হে রাসূলুল্লাহ ( সা :) , আর আমিও কি তাদের সাথে আছি ? " তখন তিনি ( সা:) বললেন : " নিশ্চয়ই  তুমি কল্যাণ ও মঙ্গলের মধ্যেই আছ ( তবে তুমি এদের অন্তর্ভুক্ত নও ) ।"

তিরমিযী বলেন : এ হাদীসটি হাসান এবং এতদসংক্রান্ত মত হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ( উত্তম অর্থাৎ হাসান ) । আর এই অনুচ্ছদে উমর ইবনে আবী সালামাহ , আনাস ইবনে মালেক , আবূল হামরা , মা'ক্বিল ইবনে ইয়াসার ও আয়েশা থেকেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।

(দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত - তিরমিযী , হাদীস নং ৩৮৭৯ , পৃ : ১০০৭ , হযরত ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ - সাল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম এর ফযীলত অধ্যায় , কিতাবুল মানাক্বিব )

 

    মহানবীর - সা: - রাবীব ( অর্থাৎ সপত্নিপুত্র যিনি নবীপত্নি হযরত উম্মে সালামাহর পুত্র ) উমর ইবনে আবী সালামাহ  বলেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান হে ( নবীর - সা: - ) আহলুল বাইত তোমাদের থেকে সব রিজস ( পাপ - পঙ্কিলতা , অপবিত্রতা , নোংরামি ) দূর করতে  এবং তোমাদেরকে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করতে ( সূরা - ই আহযাব : ৩৩ ) - এ আয়াতটি যখন উম্মে সালামাহর ঘরে মহানবীর ( সা:) উপর অবতীর্ণ হয় তখন তিনি ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনকে ডেকে তাদেরকে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। আর আলী ছিলেন তাঁর পিছনে এবং তাঁকেও চাদর দিয়ে ঢাকলেন । অত:পর তিনি বললেন : " হে আল্লাহ , এরাই আমার আহলুল বাইত । এদের থেকে সব রিজস ( নাপাকী, নোংরামি , পাপ- পঙ্কিলতা ও অপবিত্রতা ) দূর করে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করে দিন । " উম্মে সালামাহ বললেন : " ইয়া নবীয়াল্লাহ (হে আল্লাহর নবী ) , আর আমিও কি তাদের সাথে আছি ? " তিনি ( সা:) বললেন : " তুমি তোমার স্থানে আছ । তুমি কল্যাণের উপরই আছ । ( অর্থাৎ তুমি নবীপত্নিদের অন্তর্ভুক্ত ; তবে তুমি এদের - আহলুল বাইত - অন্তর্ভুক্ত নও । ) "

দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , পবিত্র কুরআনের তাফসির অধ্যায , অনুচ্ছেদ ৩৪ : সূরা- ই  আহযাব সংক্রান্ত , হাদীস নং ৩২০৫ , পৃ : ৮৫৪ - ৮৫৫ )

 

আর আল - আওযায়ী শাদ্দাদ ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি ( শাদ্দাদ ) বলেন : আমি সাহাবী হযরত ওয়াসিলাহ ইবনুল আসক্বা'কে বলতে শুনেছি ঐ অবস্থায় যখন ( ইমাম) হুসাইনের ( আ:) এর শির মুবারক আনা হয় ; তখন শামের অধিবাসী ( বাসিন্দা ) এক ব্যক্তি তাঁকে ( ইমাম হুসাইন ) এবং তাঁর পিতাকে ( হযরত আলী - আ: -) লানত ( অভিশাপ ) দিলে তিনি ( ওয়াসিলা )  বললেন : মহান আল্লাহর কসম , আমি আলীকে , হাসানকে , হুসাইনকে  এবং ফাতিমাকে এখনও ভালবাসি তখন থেকে যখন রাসূলুল্লাহকে ( সা:) তাঁদের ব্যাপারে যা বলেছিলেন তা শোনার পর । আমি একদিন হযরত উম্মে সালামাহর গৃহে নবী করিমের (সা:) কাছে যাই । অত:পর হাসান আসলে তাঁকে তিনি তাঁর গান উরুর উপর বসিয়ে চুম্বন করলেন ; এরপর হুসাইন আসলে তাঁকে বাম উরুর বসিয়ে চুম্বন করলেন ; এরপর ফাতিমা আসলে তাঁকে তিনি তাঁর সামনে বসালেন ; এরপর তিনি আলীকে ডেকে আনালেন  ও বললেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান তোমাদের থেকে হে আহলুল বাইত সব রিজস ( নাপাকী , অপবিত্রতা , পাপ- পঙ্কিলতা ও নোংরামি দূর করে তোমাদেরকে পবিত্র করার মতো ( পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করতে ( সূরা - আহযাব : ৩৩ ) । আমি ওয়াসিলাকে জিজ্ঞেস করলাম : রিজস কী ? তিনি বললেন : মহান আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহ - সংশয় পোষণ ।

  আবূ আহমদ আল - আস্কারী বলেন : বলা হয় যে আল - আওযায়ী ( আহলুল বাইত : আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনের ) ফাযায়েলে ( উন্নত ভালো মহৎ গুণাবলী ) এ হাদীসটি ছাড়া আর কিছুই বর্ণনা করেন নি , আর মহান আল্লাহই উত্তমরূপে জ্ঞাত আছেন । তিনি ( আল - আস্কারী ) বলেন : আর যুহরীও  (তাঁদের ) ফাযায়েল সংক্রান্ত কেবল একটি হাদীসই বর্ণনা করেছেন । কারণ তাঁরা দুজনই ( আল - আওযায়ী ও যুহরী ) বনী উমাইয়াকে ভয় করতেন । (( দ্র : ইবনুল আসীর আল - জাযারী (৫৫৫ - ৬৩০ হি ) প্রণীত উসদুল গাবাহ ফী মা'রিফাতিস সাহাবা , খ : ১ , পৃ : ৫৬৮ - ৫৬৯ , প্রকাশক : দারুল ফিকর , বৈরুত , লেবানন , প্রকাশ কাল : ১৯৯২ খ্রী: ( ১৪১৪ হি: ) ))

 

মুবাহালার আয়াতের ( আল -ই ইমরান : ৬১ ) শা'নে নুযূলে হাদীস :

 

আমির ইবনে সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস , স্বীয় পিতা সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ( রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি ( সা'দ ) বলেন :     " অত:পর এস , আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্র সন্তান দেরকে এবং (তোমরা আহ্বান কর ) তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে , আমাদের নারীগণকে ও তোমাদের নারীগণকে , আমাদের নিজ সত্তাদেরকে ও তোমাদের নিজ সত্ত্বাদেরকে ; অত:পর আমরা বিনীত ভাবে আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই  আল্লাহর লানত ( অভিশাপ) ( সূরা - ই আল- ই ইমরান : ৬১ ) । " ------ এ আয়াত টি যখন অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ ( সা:) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনকে ( আ :) ঠেকে আনলেন এবং বললেন : " হে আল্লাহ , এরাই আমার আহল ( অর্থাৎ আহলুল বাইত ) । " আবূ ঈসা বলেন : এই হাদীসটি হাসান  গরীব সহীহ । দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , পবিত্র কুরআনের তাফসির অধ্যায , অনুচ্ছেদ ৪ : সূরা- ই আল - ই ইমরান সংক্রান্ত , হাদীস নং ২৯৯৯ , পৃ : ৭৯৮ )

হযরত আনাস ইবনে মালেক ( রা:) বলেন যে রাসূলুল্লাহ ( সা:) যখন  ফজরের নামাজের জন্য বের হতেন তখন ৬ মাস হযরত ফাতিমার ( আ:) গৃহের দরজার পাশ দিয়ে গমণ করতেন আর ঐ অবস্থায় বলতে থাকতেন : হে আহলুল বাইত ( আ:) নামায : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান ( হে নবীর - সা: - ) আহলুল বাইত তোমাদের থেকে সব রিজস ( পাপ - পঙ্কিলতা , অপবিত্রতা নোংরামি ) দূর  এবং তোমাদেরকে পবিত্র করার মতো ( সম্পূর্ণ রূপে ) পবিত্র করতে  ( সূরা - ই আহযাব : ৩৩ ) । তিনি ( তিরমিযী ) বলেন : এটি হাসান হাদীস , গরীব .... । আর এই অনুচ্ছদে : আবূল হামরা , মা'ক্বিল ইবনে ইয়াসার ও উম্মে সালামাহ থেকেও অনুরূপ হাদীস বিদ্যমান আছে । ( প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , পবিত্র কুরআন তাফসীর অধ্যায় , অনুচ্ছদ ৩৪ : সূরা - ই আহযাব , হাদীস নং ৩২০৬ , পৃ : ৮৫৫ )

 

( প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে , বিচ্যুত জাহান্নামের কীট বনী উমাইয়া খিলাফত ও প্রশাসনের ভয়ে শুধু আল - আওযায়ী ও যুহরী নয় প্রায় সকল মুসলিম উম্মাহ এবং  সকল রাবী ও হাদীস বিশারদ ( মুহাদ্দিস ) হযরত আলী , হযরত ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনের (আলাইহিমুস সালাম) ফাযায়েলের হাদীস হয় একদম বর্ণনা করতেন না অথবা কালে ভদ্রে ( খুব কমই ) বর্ণনা করতেন । কারণ তাঁদের ফাযায়েলের হাদীস বর্ণনা করলে বর্ণনা কারীদেরকে বনী উমাইয়া খিলাফত ও প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করত এবং তাঁদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হত। আর মুহাদ্দিসগণ আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইন ব্যতীত অন্য যে কোনো সাহাবার ফযীলতের হাদীস বর্ণনা করলে তাদেরকে উৎসাহিত  বা পুরস্কৃত করা হত এবং তাদের সামাজিক মর্য্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেত । আর এ ভাবে মহানবীর আহলুল বাইতের ফাযায়েলের হাদীস আর জনসাধারণের মাঝে প্রচারিত হতো না এবং মুসলিম উম্মাহ তাঁদের ফাযায়েল সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায় । অবস্থার এতটাই অবণতি হয়েছিল যে বনী উমাইয়া খিলাফত ও প্রশাসন জনগণ অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহর অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ইমাম হুসাইনকে (আ:) কারবালায় শহীদ করতে সক্ষম হয় এবং এমনকি সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রচার করতে থাকে যে ইমাম হুসাইন ও তাঁর  সমর্থক অনুসারীরাই (  শিআরা ) ইসলাম থেকে বের ( খারিজ ) হয়ে গেছে ও বিচ্যুত হয়েছে ( নাঊযু বিল্লাহ ) এবং আহলুল বাইতকে প্রকাশ্যে মসজিদ সমূহে নামাজের পর গালি দেয়ার জঘন্য বিদআত  চালিয়ে যেতে থাকে যা প্রবর্তন করেছিল স্বয়ং মুআবিআ নিজেই । সহীহ তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে : আমির ইবনে আবী ওয়াক্কাস স্বীয় পিতা সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ( সাহাবী) থেকে বর্ণনা করেছেন : মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান সা'দকে আমীর নিযুক্ত করে বলল : আবূ তুরাবকে ( হযরত আলী - আ: - ) গালি দেয়া থেকে আপনাকে কোন্ জিনিস বিরত রেখেছে ? ( ( অর্থাৎ আপনি কেন আলীকে - আ: - গালি দেন না ? )) তখন সা'দ বললেন : যে তিনটি বিষয় ( ফাযায়েল ) রাসূলুল্লাহ ( সা:) ( হযরত আলীর - আ: - ব্যাপারে ) বলেছেন তা আমি যত দিন স্মরণ করব ততদিন আমি কখনোই তাঁকে

গালি দিব না ; আর এই তিন ফযীলতের যে কোনো একটিরও অধিকারী যদি আমি হই তাহলে তা আমার কাছে লাল কপাল ও ললাট বিশিষ্ট চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও অধিকার প্রিয় হবে । যখন আলীকে কোন এক গাযওয়ায় ( যে যুদ্ধ ও জিহাদে রাসূলুল্লাহ সা: নিজে উপস্থিত থাকতেন তা গাযওয়া বলে অভিহিত ) মদীনায় ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিযুক্ত করে রেখে যাচ্ছিলেন তখন  আলী তাঁকে  বললেন : " হে রাসূলুল্লাহ ( সা:) আপনি কি আমাকে  নারী ও শিশু দের মধ্যে রেখে যাচ্ছেন ?! আমি রাসূলুল্লাহকে  " ( হযরত আলীর এ কথার জবাবে ) বলতে শুনেছি । তিনি আলীকে বললেন : " তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে কেবল আমার পরে নুবুওয়ত ব্যতীত মূসার কাছে হারূন যেমন ছিলেন ঠিক তেমন তুমি আমার কাছে হবে ? " , খাইবর বিজয়ের দিন তাঁকে (মহানবী সা:) আমি বলতে শুনেছি : আমি অবশ্যই এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা অর্পণ করব যে মহান আল্লাহকে এবং তাঁর রাসূলকে ( সা:) ভালবাসে এবং যাঁকে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও ভালবাসেন । তিনি ( সা'দ ) বললেন : " অত:পর আমরা সবাই তা ( ঐ পতাকা ) পাওয়ার আশা করছিলাম । কিন্তু তিনি ( সা:) বললেন : " আমার কাছে আলীকে ডেকে আন । " অত :পর তাঁর কাছে আলী  আসলেন । কিন্তু তিনি চোখ ওঠার রোগে আক্রান্ত ছিলেন । মহানবী ( সা:) তাঁর চোখে থুথু লাগিয়ে দিয়ে ( এটা ছিল মহানবীর সা: মু'জিযা )

তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিলেন । আর মহান আল্লাহ তাঁর হাতে বিজয় দিলেন ( অর্থাৎ খাইবর দুর্গ বিজিত হল ) । অত:পর এসো , আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্র সন্তান দেরকে এবং (তোমরা আহ্বান কর ) তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে , আমাদের নারীগণকে ও তোমাদের নারীগণকে , আমাদের নিজ সত্তাদেরকে ও তোমাদের নিজ সত্ত্বাদেরকে ; অত:পর আমরা বিনীত ভাবে আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই  আল্লাহর লানত ( অভিশাপ) ( সূরা - ই আল - ই ইমরান : ৬১ )  ---- এ আয়াতটি ( যা মুবাহালার আয়াত নামে প্রসিদ্ধ তা ) নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ ( সা : ) আলী, ফাতিমা , হাসান ও হুসাইনকে ডেকে আনলেন এবং বললেন : " হে আল্লাহ এরাই আমার আহল ( আহলুল বাইত ) । " আবূ ঈসা ( ইমাম তিরমিযী ) বলেন : এ হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব .... । ( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , হযরত আলীর মানাক্বিব সংক্রান্ত অধ্যায় : ২১ , হাদীস নং ৩৭৩৩ , পৃ: ৯৮০ ) ।

   ইবনে সাবিত ( আব্দুর রহমান ) হযরত সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ( রা :) থেকে বলেছেন : কোনো এক হজ্জে মুয়াবিয়া আগমন করলে হযরত সাদ তার কাছে প্রবেশ করলেন । অত:পর সেখানে আলীর কথা স্মরণ করা হলে সে ( মুয়াবিয়া ) তাঁর নিন্দা , গীবৎ ، তিরস্কার ও কটূক্তি করল । আর এতে হযরত সাঈদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ( রা:) ক্রুদ্ধ ও রাগম্বিত হলেন এবং বললেন : তুমি এটা বলছ এমন এক ব্যক্তির ব্যাপারে যাঁর সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহকে (সা:) বলতে শুনেছি :  (( আমি যার মাওলা ( কর্তৃত্ব শীল , অভিভাবক , ওয়ালী  , পরিচালক , নেতা ইমাম ) আলী তার মাওলা )) , তাঁকে ( সা:) বলতে শুনেছি : (( হযরত মূসার ( আ: ) কাছে হযরত হারূন ( আ:) যেমন তুমিও ( আলী ) আমার কাছে ঠিক তেমন ; তবে আমার পরে কোনো নবী নেই )) এবং তাঁকে আমি বলতে  শুনেছি : (( আজ এমন এক ব্যক্তির হাতে আমি অবশ্যই ( সেনাবাহিনীর) পতাকা অর্পণ করব যে মহান আল্লাহকে ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে ।))

দ্র: সুনান ইবনে মাজাহ ( ২০২ - ২৭৫ হি ), হযরত আলীর ( রা: ) ফযীলত , হাদীস নং ১২১ , পৃ : ৩১ ,

প্রকাশক : দার ইহয়াইত তুরাস আল আরাবী বৈরুত লেবানন , প্রথম সংস্করণ , প্রকাশ কাল : ২০০০ খ্রী: ( ১৪২১ হি:)

 

عن ابن سابط و هو عبد الرحمن ، عن بعد بن أبي وقّاص ؛ قال : قدِم معاويةُ هي بعضی حَجّاته ، فدخل علیه سعدٌ ، فذکروا عليّاً . فنال منه . فَغَضِبَ سَعْدٌ ، و قال : تقولُ هذا لرجل سمعت رسول  ایله -ص- يقول : (( من کنت مولاه فعلی مولاه . )) و سمعته يقول : أنت منِّي بمنزلة هارون من موسیٰ إلّا أنّه لا نبيَّ بعدي . )) و سمعته يقول : (( لَأُعْطِيَنَّ الرّايةَ اليومَ رَجُلاً يُحِبُّ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهُ . ))     

 

হযরত ফাতিমা ( আ:) এবং হযরত আলী ( আ:) ছিলেন মহানবী ( সা:) এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় :

 

হযরত বুরাইদা ( রা:) বলেন : রাসূলুল্লাহর ( সা: ) কাছে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন হযরত ফাতিমা ( আ:) এবং পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন হযরত আলী ( আ:) । ইব্রাহীম ইবনে সাঈদ বলেন : অর্থাৎ তাঁর ( সা:) আহলুল বাইতের (আ:):মধ্য থেকে । আবূ ঈসা বলেন : এই হাদীস হাসান গরীব ... । ( দ্র: প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , হাদীস নং ৩৮৭৭ , পৃ : ১০০৬ - ১০০৭ )

 

   জুমাই ইবনে উমাইর আত তাইমী থেকে : তিনি বলেন : আমি আমার ফুফুর সাথে হযরত আয়েশার ( রা:) কাছে গেলাম । অত:পর তাকে ( হযরত আয়েশা ) জিজ্ঞেস করা হল যে রাসূলুল্লাহর ( সা:) কাছে কোন্ ব্যক্তি ছিলেন সবচেয়ে প্রিয় ? তখন তিনি ( হযরত আয়েশা ) বললেন : ফাতিমা । অত:পর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল : পুরুষ দের মধ্য থেকে ( কে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন ) ? তিনি ( হযরত আয়েশা ) বললেন : তাঁর স্বামী ( অর্থাৎ আলী ) । আমি যতদূর জানি যে তিনি ( আলী ) ছিলেন অত্যন্ত রোজাদার ও অত্যন্ত মুসাল্লী (নামায  আদায়কারী) । এই হাদীসটি হাসান গরীব ।

عن جُميعِ بنِ عُميرِ التيمي ، قالت : دخلتُ مع عمّتي علی عائشة فسُئِلت : أيّ الناس کان أحبَّ إلیٰ رسول اللّٰه -ص- ؟ قالت : فاطمةُ ، فقيل : من الرجال ؟ قالت : زوجُها ، إن کان ما علمتُ صوّامَاً قوّاماً . هذا حدیث حسن غریب .

( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ৬১ : ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ - সাল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম - এর ফযীলত , হাদীস নং ৩৮৮৩ , পৃ : ১০০৮ )

 

     আর মুয়াবিয়াই হযরত আলীকে ( আ: ) গালি দেয়ার কুপ্রথা ও বিদাতের প্রচলনকারী ও প্রবর্তক যা বনী উমাইয়ার ৯০ বছর খিলাফত ও রাজত্বকাল জুড়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত থেকেছে ; কেবল এই জঘণ্য বিদাত ও দুষ্কর্ম থেকে ব্যতিক্রম ছিল খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আযীযের আড়াই বছরের রাজত্ব কাল । তখন ( ৯০ বছর যাবৎ ) মুসলিম উম্মাহর সিংহভাগ জনগণ হয় হযরত আলীকে ( আ:) গালি গালাজ করত নতুবা নিশ্চুপ  থেকে এ জঘন্য অন্যায়ের বাধা দিত না অর্থাৎ তারা প্রকাশ্যে গালি না দিলেও তাদের সামনে প্রকাশ্যে গালি দেয়া হলেও তারা এ ব্যাপারে ছিল নির্বিকার । কেবল মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি এর প্রতিবাদ করত বা তারা গালি দেয়াটা অন্ততঃ মনে মনে অপছন্দ ও ঘৃণা করত । তাই এ থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে , মুসলিম উম্মাহর সিংহভাগ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ রাসূলুল্লাহর পরে তাঁর ( সা:) আহলুল বাইতের (আ:) সাথে বিশেষ করে আলীর ( আ:) সাথে কত বড় গাদ্দারী করেছে এবং এদের হাতেই তো ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ( আ:) নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছেন !!

অথচ হযরত আলীকে ইমাম হুসাইনকে ও আহলুল বাইতকে গালি দেয়া , ঘৃণা করা , তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ , তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তাঁদেরকে হত্যা করা মহানবীকে ( সা:) গালি দেয়া , ঘৃণা করা , তাঁর সাথে শত্রুতা পোষণ এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তাঁকে হত্যা করার নামান্তর যা মহানবীর ( সা:) হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ।

যেমন :

 

ইমাম আলী ( আ: ) মুমিনদের মাওলা ( কর্তৃত্বশীল অভিভাবক , নেতা , ইমাম , পরিচালক , তত্ত্বাবধায়ক  প্রশাসক সুলতান ) :

 

হযরত বারা ইবনে আযেব ( রা :) বলেন : বিদায় হজ্জ পালন করে  রাসূলুল্লাহর ( সা:) সাথে আমরা

রওয়ানা হই ( মদীনার উদ্দেশ্যে ) । অত:পর তিনি ( সা:) পথিমধ্যে এক স্থানে ( গাদীর - ই খুম নামক স্থানে )  যাত্রাবিরতি করেন । তিনি জামাতে নামায আদায়ের নির্দেশ দেন । অত:পর তিনি আলীর হাত ধরে বললেন : আমি কি মুমিনদের নিজেদের কাছে তাদের চেয়ে অধিক প্রাধান্যপ্রাপ্ত ও নিকটবর্তী ( আওলা )

নই ? তখন সবাই বলল : জী হ্যাঁ । তিনি বললেন : আমি কি প্রত্যেক মুমিনের কাছে তার চেয়ে অধিক প্রাধান্য প্রাপ্ত ও নিকটবর্তী ( আওলা ) নই ? তখন সবাই বলল : জী হ্যাঁ । তখন তিনি বললেন : এ ( আলী ) ঐ ব্যক্তির মাওলা যার আমি মাওলা । হে আল্লাহ , যে তাঁকে ( আলী ) ভালবাসে তাকে আপনি ভালবাসুন । যে তাঁর সাথে শত্রুতা করে তার সাথে আপনিও শত্রুতা করুন ।

( এ হাদীসটি সহীহ , দ্র : আলবানী কর্তৃক গবেষণা কৃত গ্রন্থ সহীহু সুনানি ইবনে মাজাহ  ; আর এটাই প্রসিদ্ধ মুতাওয়াতির এবং সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাব স্বীকৃত ও গৃহীত ( মকবূল) সন্দেহাতীত ও নিশ্চিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত গাদীর - ই খুমের হাদীস যা  মহানবীর (সা:) ১১০ এর অধিক সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে । )

দ্র : সুনান ইবনে মাজাহ , হযরত আলীর ( রা: ) ফযীলত , হাদীস নং ১১৬ , পৃ : ৪০ , প্রকাশক : দার ইহয়াইত তুরাস আল আরাবী , বৈরুত , লেবানন , ১ম সংস্করণ , প্রকাশ কাল :  ২০০০ খ্রী : ( ১৪২১ হি: )

একমাত্র নুবুওয়তের মাকাম ব্যতীত

হযরত মূসার ( আ:) কাছে হযরত হারূনের ( আ: ) যে মাকাম ও মর্যাদা রাসূলুল্লাহর ( সা:) কাছে হযরত আলী (আ:) সেই মাকাম ও মর্যাদার অধিকারী :

 

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ ( রা:) বলেন যে রাসূলুল্লাহ ( সা:) আলীকে বললেন : মূসার ( আ:) কাছে হারূনের মাকাম ও মর্যাদার মতো আমার কাছে তুমি ; তবে আমার পরে কোনো নবী নেই । আবূ ঈসা ( ইমাম তিরমিযী ) বলেন : এই সনদ সূত্রে এ হাদীসটি হাসান গরীব ।

আর এই অনুচ্ছদে সা'দ , যাইদ ইবনে আরকাম , আবূ হুরায়রা এবং উম্মে সালামাহ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।

( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অধ্যায় ২১ : হযরত আলীর (রা:) ফযীলত  , হাদীস নং ৩৭৩৯ , পৃ : ৯৮১ )

 

হযরত সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস বলেন যে রাসূলুল্লাহ ( সা:) আলী কে বললেন : মূসার কাছে হারূনের মাকাম ও মর্যাদার মতো আমার কাছে তুমি ( তোমার মাকাম ও মর্যাদা ) ; তবে আমার পরে কোনো নবী নেই । তিনি ( আবূ ঈসা ইমাম তিরমিযী ) বলেন : এটা হাসান সহীহ হাদীস । আর এ হাদীসটি মহানবী ( সা:) থেকে সা'দের মাধ্যমে একাধিক সনদ সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে ।

দ্র :  প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী  , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ২১ , হাদীস নং ৩৭৪০ , পৃ : ৯৮১ - ৯৮২ )

এই হাদীসটি হাদীস - ই মানযিলাত ( মাকাম ও মর্যাদার হাদীস ) নামে প্রসিদ্ধ যা সহীহ , মুতাওয়াতির , সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে স্বীকৃত ও গৃহীত , অকাট্য , সন্দেহাতীত ও নিশ্চিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হাদীস । 

 

মুনাফিক থেকে মুমিনকে পৃথক করার মাপকাঠি হযরত আলীকে ভালোবাসা :

 

হযরত আলী ( আ:) বলেন : আমাকে উম্মী নবী ( সা:) প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন যে মুমিন ব্যতীত কেউ তোমাকে ভালবাসে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তোমাকে ঘৃণা করে না ।

আবূ ঈসা বলেন : এটি হাসান সহীহ হাদীস ।

দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , হাদীস নং ৩৭৪৫ , পৃ : ৯৮২ 

এ হাদীসটি নি: সন্দেহে সহীহ , সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে স্বীকৃত , গৃহীত ও প্রতিষ্ঠিত হাদীস । 

 

আল - মুসাওয়ির আল - হিময়ারীর মাতা বলেন : আমি উম্মে সালামাহর (  রা :) প্রবেশ করলে তাঁকে বলতে শুনলাম : রাসূলুল্লাহ ( সা :) বলতেন : কোনো মুনাফিকই আলীকে ভালবাসে না এবং কোনো মুমিনই তাঁকে ঘৃণা করে না । তিনি ( ইমাম তিরমিযী ) বলেন : এ অনুচ্ছদে আলী থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং এ হাদীসটি হাসান গরীব । .....

( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , হাদীস নং ৩৭২৬ , পৃ : ৯৭৯ )

হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী বলেন : আমরা অর্থাৎ আনসারগণ  আলী ইবনে আবী তালিবের প্রতি তাদের ঘৃণা পোষণের কারণে মুনাফিকদেরকে চিনতাম ও শনাক্ত করতাম ।

( দ্র : সহীহ সুনান আত তিরমিযী , হাদীস নং ৩৭২৬ , পৃ : ৯৭৯ ) ।

 

হযরত আলীকে (আ:) গালি দেয়া

রাসূলুল্লাহকে (সা:) গালি দেয়া :

 

সহীহ রিওয়ায়তে আবূ আব্দিল্লাহ আল জাদালী থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : আমি হযরত উম্মে সালামাহর কাছে গেলে তিনি আমাকে বললেন : তোমাদের মধ্যে কি রাসূলুল্লাহকে(সা:) গালি দেয়া হয় ? তখন আমি বললাম : আল্লাহ পাকের কাছে আশ্রয় নিচ্ছি অথবা সুবহানাল্লাহ  অথবা এ ধরনের কোনো বাক‌্য । অত:পর তিনি বললেন :  আমি রাসূলুল্লাহকে ( সা:) বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আলীকে গালি দেয় সে আমাকেই গালি দেয় ।

আল - হাকিম বলেন : এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম তা রিওয়ায়ত করেন নি । আর আল্লামা যাহাবীও আত - তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( আল - হাকিম ) একমত পোষণ করে বলেছেন : সহীহ ।

( দ্র: প্রাগুক্ত আল্ মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন  , খ  : 3 , পৃ : ৩৩৪ , হাদীস নং ৪৬৭৩ )

 

আবূ মুলাইকা বলেন : ইবনে আব্বাসের কাছে শামদেশের এক ব্যক্তি এসে হরযত আলীকে ( আ:) গালমন্দ করল । তখন ইবনে আব্বাস তার সাথে ঝগড়া করলেন এবং বললেন : হে আল্লাহর দুশমন , তুমি রাসূলুল্লাহকে ( সা:) কষ্ট দিয়েছ এবং তাঁকে জ্বালাতন করেছ । " নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট ও যাতনা দেয় তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে লানৎ দেন এবং তাদের জন্য অত্যন্ত লাঞ্ছনাকর ( অপমানজনক ) শাস্তির ব্যবস্থা করেন । " যদি রাসূলুল্লাহ ( সা: ) জীবিত থাকতেন তাহলে তুমি তাঁকে অবশ্যই কষ্ট দিয়ে থাকতে ।

আল - হাকিম বলেন : এই হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম তা রিওয়ায়ত করেন নি । আর আল্লামা যাহাবী আত - তালখীস গ্রন্থে আল -হাকিমের সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : ( এ হাদীসটি )

সহীহ ।

( দ্র : প্রাগুক্ত আল্ মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ:৩ , পৃ : ৩৩৪ , হাদীস নং ৪৬৭৬ )

 

হযরত আলীকে (আ:) গালি দেয়া আসলে মহান আল্লাহকে গালি দেয়া :

তাব্রানী সহীহ সনদে সূত্রে নবীপত্নি হযরত উম্মে সালামাহ ( রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি ( রা:) বলেছেন : রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেন :

যে আলীকে ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসে এবং যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে সে মহান আল্লাহকেই ভালবাসে ; আর যে আলীকে ঘৃণা করে সে আমাকেই ঘৃণা করে এবং যে আমাকে ঘৃণা করে সে মহান আল্লাহকেই ঘৃণা করে ।

و أخرج الطبرانيّ بسند صحيح عن أمّ سلمة عن رسول الله - ص- ، قال : (( مَنْ أَحَبَّ عَلِیَّاً فَقَدْ أَحَبَّنِيْ ، وَ مَنْ أَحَبَّنِيْ فَقَدْ أَحَبَّ اللّٰهَ ، وَ مَنْ أَبْغَضَ عَلِیَّاً فَقَدْ أَبْغَضَنِيْ وَ مَنْ أَبْغَضَنِيْ فَقَدْ أَبْغَضَ اللّٰهَ . ))

( দ্র : আল্লামা সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা , পৃ : ১৭৩ , প্রকাশক : আশ শরীফ আর রাযী প্রকাশনী , ইরান , ১ম সংস্করণ , প্রকাশ কাল : ১৪১১ হি: )

পবিত্র কুরআনের আয়াত ও উল্লেখিত হাদীসসমূহের আলোকে প্রমাণিত হয় যে

হযরত আলীকে ( আ ) যারা ঐ সময় গালি দিত তারা ছিল নি:সন্দেহে  নরকের কীট । আর মুয়াবিয়া থেকে শুরু করে সকল উমাইয়া খলীফা হযরত আলীকে ( আ:) গালিগালাজ করত । কেবল খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয ছিলেন এর ব্যতিক্রম । আর অল্প কিছু ব্যক্তি ব্যতীত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এই জঘন্য অপরাধের সামনে নীরব থেকে ও এর প্রতিবাদ না করে এই ধরনের অন্যায় , পাপ ও অপকর্মে যালেম বনী উমাইয়া খলীফা দের দোসর ও অনুসারী এবং সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে । আর এভাবেই উম্মত তখন হযরত আলীর ( আ:) সাথে গাদ্দারী করেছে  ।

তাই এখান থেকে খুব ভালো ভাবেই বোধগম্য যে , এই বিচ্যুত উম্মতের একদল ইমাম হুসাইনকে পত্র লিখে দাওয়াত করে সাহায্য করা থেকে বিরত থেকেছে এবং উম্মতের অবশিষ্ট অংশ চুপচাপ বসে বসে ইমাম হুসাইনের (আ:) শহীদ হওয়া প্রত্যক্ষ করেছে । তাই অতি অল্প মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি ব্যতীত তদানীন্তন গোটা মুসলিম উম্মাহ ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথে গাদ্দারী করেছে । কেবল  মহানবীর ( সা:) আহলুল বাইতের ( আ:) অতি মুষ্টিমেয় খাঁটি মুখলিস অনুসারী  যারা ছিলেন অত্যন্ত সংখ্যালঘু তাঁদেরই একটা অংশ ইমাম হুসাইনের (আ:) সাথে কারবালায় নিজেদেরকে ইসলাম ও ইমামের জন্য উৎসর্গ ও এ পথে শাহাদাত বরণ করেছেন । প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে হুর ইবনে ইয়াযীদ এবং আরও ৩০ ব্যক্তি ইমাম হুসাইন ( আ:) ও তার সঙ্গী সাথীদের মযলূম অবস্থা ও বাণী বক্তব্যের দ্বারা প্রকৃত সত্য ( হক ) বুঝতে পেরে ইয়াযীদী বাহিনী ও শিবির ত্যাগ করে ইমাম হুসাইনের (আ:) যোগ দিয়ে এবং ইমাম হুসাইনের ( আ:) পথে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করে বাকি সব ইয়াযীদী বাহিনী ও হাত পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকা উম্মতের চোখের সামনে ইতমাম - ই হুজ্জত ( দলিল প্রমাণ পূর্ণ ) করেছেন এবং তাদের যে কোনো ধরনের  অজুহাত দেখানো ও ওজর পেশ করার পথ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিয়েছেন । এখানে থেকে বোঝা যায় যে তখন উম্মতের মাঝে সত্য পন্থী ও সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তির সংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য ও মুষ্টিমেয় ।  ( কেন এ অবস্থার উদ্ভব হল ? এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য স্বতন্ত্র , বিস্তারিত বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার প্রয়োজন । )

 

ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন - আলাইহিমাস সালাম বেহেশতের যুবকদের নেতা :

 

  হযরত আবূ সাঈদ আল খুদরী ( রা:) বলেন : রাসূলুল্লাহ সা:) বলেছেন : হাসান ও হুসাইন বেহেশতবাসী যুবকদের নেতা । আমাদেরকে সুফিয়ান ইবনে ওয়াকী' বলেছেন । আমাদেরকে জারীর ,  মুহাম্মদ ইবনে ফুযাইল ইয়াযীদ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন ।  আবূ ঈসা ( ইমাম তিরমিযী ) বলেন :  এটি হাসান সহীহ হাদীস ।

(( এ হাদীসটি সহীহ , মুতাওয়াতির এবং শিআ - সুন্নী নির্বিশেষে সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত ( মকবূল ) হাদীস । ))

( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ৩১ : হাসান ও হুসাইন আলাইহিমাস সালামের মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৭৭ , পৃ : ৯৮৮ )

 

  হযরত ইয়া'লা ইবনে মুররাহ বলেন : রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন :

হুসাইন আমার থেকে এবং আমিও হুসাইন থেকে । যে হুসাইনকে ভালোবাসে মহান আল্লাহ তাকে ভালোবাসুক । হুসাইন একজন দৌহিত্র । আবূ ঈসা বলেন : এটা একটা হাসান হাদীস । ( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ৩১ : হাসান ও হুসাইন আলাইহিমাস সালামের মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৮৪ , পৃ : ৯৯০ )

 

হযরত বারা ( রা :) বলেন : মহানবী ( সা:) হাসান ও হুসাইনের কে দেখে বললেন : হে আল্লাহ , আমি এদুজন কে ভালোবাসি অতএব আপনিও এ দুজনকে ভালোবাসুন । আবূ ঈসা বলেন : এটা হাসান সহীহ হাদীস । ( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ৩১ : হাসান ও হুসাইন আলাইহিমাস সালামের মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৯১ , পৃ : ৯৯১ )

হযরত আবূ হুরায়রা ( রা:) বলেন : ..... এক ব্যক্তি তাঁকে ( রাসূলুল্লাহ - সা : - ) জিজ্ঞেস করল : হে রাসূলুল্লাহ , আপনি কি এ দুজনকে ( হাসান ও হুসাইন ) ভালবাসেন ? তখন তিনি ( রাসূলুল্লাহ - সা: -) বললেন : যে এ দুজনকে ( হাসান ও হুসাইন ) ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসে এবং যে এ দুজনকে  ঘৃণা করে সে আমাকেই ঘৃণা করে । ( আল হাকিম বলেন : ) এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি । আর আত তালখীস গ্রন্থে আল্লামাহ যাহাবীও ( আল হাকিমের সাথে ) একমত পোষণ করে বলেছেন : ( এই হাদীসটি ) সহীহ ।

عن أبي هريرة - رض - قال له رجل : يا رسول الله إنک تحبُّهما ؟ فقال : نعمت ، من أحبّهما فقد أحبّني ، و من أبغضهما فقد أبغضني .

দ্র : আল মুস্তাদ্রাক আলাস সহীহাইন , খ : ৩ , পৃ : ৩৭৬ , হাদীস নং ৪৮৩৮ ।

আদী ইবনে সাবিত বলেন : আমি বারা ইবনে আযেব কে বলতে শুনেছি : আমি মহানবীকে ( সা:) দেখলাম যে তিনি হাসান ইবনে আলীকে কাঁধে বসিয়ে বলছেন : হে

আল্লাহ , নিশ্চয়ই আমি একে ভালোবাসি অতএব আপনিও তাকে ভালোবাসুন । আবূ ঈসা বলেন : এটা হাসান সহীহ হাদীস । আর এ হাদীসটি ফুযাইল ইবনে মারযূকের হাদীস থেকে অধিক সহীহ । ( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ৩১ : হাসান ও হুসাইন আলাইহিমাস সালামের মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৯২ , পৃ : ৯৯১ )

  ইবনে আব্বাস বলেন : রাসূলুল্লাহ ( সা :) বলেছেন : মহান আল্লাহর যে সব নেয়ামত তোমাদের কাছে আগমন করে সেগুলোর জন্য তাঁকে ( মহান আল্লাহ ) ভালোবাসো তোমরা , মহান আল্লাহকে ভালবাসার কারণে তোমরা আমাকে ভালোবাসো এবং আমার ভালোবাসার জন্য আমার আহলুল বাইতকে ( আ :) তোমরা ভালবাসো । আবূ ঈসা বলেন : এটা হাসান গরীব হাদীস ..... । ( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ৩২ : মহানবীর ( সা:) আহলুল বাইতের ( আ:) মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৯৮, পৃ : ৯৯২ )

 

হযরত আলী ( আ:) বলেন : রাসূলুল্লাহ ( সা:) হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বললেন : যে ব্যক্তি আমাকে , এ দুজনকে এবং এদের পিতা মাতাকে ভালোবাসে সে কিয়ামত দিবসে আমার সাথে আমার পর্যায়ে থাকবে ( অবস্থান করবে ) ।  আবূ ঈসা বলেন :  এটি হাসান গরীব হাদীস .... ।

( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ২১ : হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের ( রা:) মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৭৪২ , ৯৮২ )

 

হযরত আবূ হুরায়রা ( রা:) থেকে । তিনি ( আবূ হুরায়রা ) বলেন : আলী , হাসান , হুসাইন ও ফাতিমার ( আ:) দিকে তাকিয়ে বলেছেন : যে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়ে ( যুদ্ধ  কর ) তার বিরুদ্ধে আমিও লড়ি ( যুদ্ধ করি ) এবং তোমাদের সাথে যে সন্ধি ( ও শান্তি স্থাপন করে ) আমিও তার সাথে সন্ধি ( ও শান্তি স্থাপন করি ) ।

 

نظر رسول اللّٰه ( ص) إلی عليّ و الحسن و الحسن و فاطمة  فقال : أنا حرب امن حاربکم و سلم لمن سالمکم .

 

(( দ্র : ইবনুল আসীর আল জাযারী প্রণীত আল - বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ , খ: ৮ , পৃ : ২২০৯ , প্রকাশক : দার সাদির , বৈরুত , লেবানন , প্রথম সংস্করণ , ২০০৫ খ্রী: ( ১৪২৬ হি. ) ))

 

হযরত যাইদ ইবনে আরকাম বলেন যে রাসূলুল্লাহ (সা:) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হুসাইন কে বললেন : তোমারা যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর আমিও তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি এবং তোমরা যা র সাথে সন্ধি ( ও শান্তি স্থাপন ) কর আমিও তার সাথে সন্ধি ( ও শান্তি স্থাপন) করি ।

 

  1. عن زید بن أرقم أنّ رسول الله -ص- قالب ل علي و فاطمة و الحسن و الحسين : أنا حزب لمن حاربتم و سلم لمن سالمتم .

 

দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ সুনান আত তিরমিযী , কিতাবুল মানাক্বিব , অনুচ্ছদ ৬১ : ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ - সাল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম - এর ফযীলত , হাদীস নং ৩৮৭৯ , পৃ : ১০০৭ )

 

 

 

 

অপর দিকে , অন্য সকল সাহাবা এমনকি অখ্যাত হলেও খুব সহজে ও অনায়াসে তাদের ফাযায়েল বর্ণনা করা যেত এবং রাবীদেরকে ও মুহাদ্দিস গণকে প্রথম তিন খলীফা , মুহাজির , আনসার , আরবের বিভিন্ন গোত্র  (যেমন : আশ'আরী গোত্র ও এ গোত্রের আবূ মূসা আশ'আরী ) , যারা আহলুল বাইতের ( আ:) হযরত আলী ( আ:) , হযরত ফাতিমা ( আ:) , ইমাম হাসান ( আ:) ও ইমাম হুসাইনের ( আ:)  বিরোধী ছিল যেমন: বনী উমাইয়া এবং বিশেষ করে আবূ সুফিয়ান , মুআবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান , তাঁর মা হিন্দা , মারওয়ান , তালহা , যুবাইর , আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর , হযরত আয়েশা , হযরত হাফসা  তাদের ও বিভিন্ন সাহাবার ফযীলতের হাদীস বর্ণনা করতেই খিলাফত ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশি বেশি উৎসাহ প্রদান করা হত ।

একটা বিষয় যা বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন তা হচ্ছে হাদীস লিখন , পঠন , সংকলন ও বর্ণনা নিষিদ্ধ করন প্রসঙ্গ । প্রথম খলীফা হযরত আবূ বকরের ( রা:) সময় হাদীস সংকলন , লিপিবদ্ধ করেন ( লিখন ) , পঠন ও বর্ণনা নিষিদ্ধ করা হয় এ যুক্তিতে যে হাদীস চর্চা করা হলে তা পবিত্র কুরআনের সাথে মানুষ মিলিয়ে ও গুলিয়ে ফেলবে এবং তাতে পবিত্র কুরআনে বিকৃতি  দেখা দিবে !!!! হাদীস চর্চা ও বর্ণনা করলে নাকি নিজেদের অনেক কথা রাসূলুল্লাহর ( সা:) বাণী ও হাদীস বলে চালিয়ে দেবে বা রাসূলের বাণীর সাথে মিশিয়ে ফেলবে !!! হযরত আবূ বকর ( রা:) খলীফা হওয়ার পর তার নিজ সংকলিত মহানবীর ( সা :)৫০০ হাদীস পুড়িয়ে দেন এ সন্দেহে যে সেগুলোয় হয়তো এমন কিছু কথা থাকতে পারে যা রাসূলুল্লাহর ( সা: ) বাণী ( হাদীস ) নয় । নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে তিনি এ হাদীসগুলো পুড়িয়ে ফেলেন ।

হযরত উমর ( রা:) এ নিষেধাজ্ঞা খুব কঠোর ভাবে পালন করতেন । তিনি হাদীস বর্ণনা কারীকে প্রহার করেছেন ও আটকে ( বন্দী করে ) রেখেছেন । এমনকি তিনি জনগণ সংকলিত হাদীস সমূহ দেখতে চাইলে তারা তাঁর কাছে ঐ সব সংকলিত হাদীস উপস্থিত করে এ আশায় যে তিনি সেগুলো দেখে যে সব হাদীস নির্ভরযোগ্য সেগুলো চিহ্নিত করবেন ; কিন্তু সবার প্রত্যাশার বাইরে  খলীফা উমর হাদীস সমূহের সংকলন গুলো পুড়িয়ে ফেলেন এ যুক্তিতে যে ঠিক যেমন আসলে কিতাব কিতাবুল্লাহ বাদ দিয়ে শুধু রিওয়ায়ত চর্চা করত ঠিক তেমনি মুসলিম জনসাধারণও পবিত্র কুরআন বাদ দিয়ে শুধু হাদীস বর্ণনা ও চর্চায়  মত্ত হয়ে যাবে । খলীফা উমর হাদীস বর্ণনা করার জন্য হযরত আবূ হুরায়রা কে প্রহার করেছিলেন । তাযকিরাতুল হুফ্ফাযে আল্লামাহ যাহাবী উল্লেখ করেছেন যে  হযরত উমর ইবনে মাসউদ , আবুদ্দারদা ও আবূ মাসউদ আনসারীকে অন্তরীন করে বলেছিলেন : আপনারা রাসূলুল্লাহ ( সা:) অধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন । আবূ ইয়া'লা আল - খলীলীর কিতাবুল ইরশাদে বর্ণিত হয়েছে যে হযরত উমর কতিপয় ব্যক্তিকে আটক করেছিলেন যাদের মধ্যে হযরত আবূ হুরায়রাও ছিলেন । তাদেরকে লক্ষ্য করে তিনি বলেছিলেন : আপনারা রাসূলুল্লাহ ( সা: ) থেকে হাদীস কম বর্ণনা ( রিওয়ায়ত ) করবেন । আর ঐ ব্যক্তি গণ হযরত উমরের মৃত্যু পর্যন্ত অন্তরীন ছিলেন । খলীফা হযরত উসমানের ( রা:) খিলাফত কালেও হাদীস চর্চা , সংকলন , লিখনের নিষেধাজ্ঞা বহাল ও বলবত ছিল এবং হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি ও অব্যাহত ছিল । উল্লেখ্য যে বহু বড় বড় প্রবীণ সাহাবা হাদীস বর্ণনা ও চর্চা ত্যাগ করেছিলেন । বুখারী সায়েব ইবনে যাইদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি অনেক প্রবীন সাহাবার সাহচর্যে ছিলেন এবং তাদেরকে রাসূলুল্লাহর ( সা:) হাদীস বর্ণনা ও রিওয়ায়ত করতে শুনেন নি । তবে তিনি হযরত তালহাকে ( রা:) কেবল উহুদের যুদ্ধের দিন সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছেন !!!  আযওয়াউন আলাস সুন্নাতিল মুহাম্মাদীয়াহ গ্রন্থে শেখ মাহমূদ আবূ রাইয়া বলেন : " খুলাফা - ই রাশিদীন , প্রবীণ সাহাবা গণ এবং সাহাবাদের মধ্যে যারা ফতোয়া দেয়ার যোগ্যতা ছিল তারা  মহানবীর ( সা:) বর্ণনা করতে ভয় করতেন বরং তারা হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে  আগ্রহ দেখাতেন না । " আবার অনেক প্রবীণ সাহাবা রাসূলুল্লাহর হাদীসে হ্রাস বৃদ্ধির আশঙ্কায় হাদীস রিওয়ায়ত করতেন না । ( তবে রাসূলুল্লাহর আহলুল বাইত যেমন : হযরত আলী (আ:) সবসময় হাদীস চর্চার পক্ষে ছিলেন । )

কিছু নমুনা নীচে পেশ করা হল :

১. ক্বারাযা ইবনে কাব ( রা:) বলেন : হযরত উমর ( রা:) আমাদেরকে কূফায় পাঠালেন এবং  সিরার নামক স্থান পর্যন্ত আমাদের সাথে আসলেন । অত:পর তিনি বললেন : তোমরা জান কি আমি কেন তোমাদের সাথে হাঁটলাম ? ক্বারাযাহ বলেন : আমরা বললাম : রাসূলুল্লাহর (সা:) সাথে সাহচর্যের হক এবং আনসারদের হক আদায়ের জন্য । তিনি ( উমর ) বললেন : তবে আমি তোমাদেরকে যে কথা বলার ইচ্ছা করেছি তা বলার জন্য তোমাদের সাথে আমি হেঁটেছি । আমি চাই যে তোমাদের সাথে আমার হাঁটার জন্য তোমরা তা ( আমার কথাটা ) মনে রাখবে । তোমরা এমন এক জনগোষ্ঠীর কাছে গমণ করছ যাদের বক্ষদেশে পবিত্র কুরআনের জন্য ডেগের কড়কড় শব্দের ন্যায় কড়কড় ( শো শো ) শব্দ রয়েছে ( অর্থাৎ তারা টগবগে  ফুটন্ত ডেগের  শব্দের ন্যায় অনবরত শব্দ করে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকে )। অত:পর যখন তারা তোমাদেরকে দেখবে তখন তারা তোমাদের দিকে তাদের গ্রীবাদেশ  উঁচিয়ে ও প্রসারিত করে বলবে : এঁরা হযরত মুহাম্মদের (সা:) সাহাবা । অত:পর তোমরা হযরত মুহাম্মদ ( সা:) থেকে কম হাদীস রিওয়ায়ত করবে । এরপর আমি তোমাদের শরীক হব । ( আমার পরবর্তী নির্দেশ আসা পর্যন্ত মহানবীর (সা:) হাদীস কম  বর্ণনা করবে  । )

( দ্র : সুনান ইবনে মাজাহ , সংকলকের ভূমিকা , হাদীস নং ২৮ , পৃ : ১৫ ,  দার ইহয়াইত তুরাস আল আরাবী , বৈরুত , ১ম সংস্করণ , প্রকাশ কাল : ১৪২১ হি: ) 

এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে হযরত উমরের ( রা:) সরকারী প্রশাসনিক নীতি ছিল রাসূলুল্লাহর ( সা:) হাদীস কম বর্ণনা করা ( হাদীস চর্চা সীমিত করা ) । আর রাষ্ট্রীয় এ নীতির প্রভাব পড়েছিল সমাজে রাসূলুল্লাহর ( সা:) হাদীস চর্চার ক্ষেত্রে । যেমন :

সায়েব ইবনে ইয়াযীদ বলেন : আমি মদীনা থেকে মক্কা পর্যন্ত সাদ ইবনে মালিকের সাথে ছিলাম ।  আমি (এ দীর্ঘ পথে ) তাকে মহানবী ( সা:) থেকে একটা হাদীসও বর্ণনা করতে শুনিনি । ( দ্র : প্রাগুক্ত সুনান ইবনে মাজাহ , হাদীস নং ২৯ , পৃ : ১৫ )

আব্দুল্লাহ ইবনে আবিস সফর বলেন : আমি শা'বীকে বলতে শুনেছি : আমি ইবনে উমরের সাথে এক বছর উঠা বসা ( বৈঠক ) করেছি । ঐ এক বছরে তাঁকে রাসূলুল্লাহ ( সা:) থেকে একটা হাদীসও বর্ণনা করতে শুনিনি ।

( দ্র : প্রাগুক্ত সুনান ইবনে মাজাহ , হাদীস নং ২৬ , পৃ : ১৫ )

   আর হাদীস চর্চা কম করা এবং বৃদ্ধ হয়ে স্মরণ শক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে সাহাবাদের হাদীস বর্ণনায় বিভ্রাট , বিপত্তি  ও সন্দেহ :

যেমন :

আব্দুর রহমান ইবনে আবী লাইলা বলেন : আমি হযরত যাইদ ইবনে আরকামকে ( রা:) বললাম :

আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহর ( সা:) হাদীস বর্ণনা করুন । অত:পর তিনি বললেন : আমরা বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং ভুলেও গেছি । আর রাসূলুল্লাহর ( সা:)  হাদীস বর্ণনা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ ।

( দ্র : প্রাগুক্ত সুনান ইবনে মাজাহ , হাদীস নং ২৫ , পৃ : ১৫ )

মুহাম্মদ ইবনে সীরীন বলেন : যখন ই হযরত আনাস ইবনে মালেক ( রা:) রাসূলুল্লাহর (সা:) হাদীস বর্ণনা করা শেষ করতেন ঠিক তখনই বলতেন : অথবা রাসূলুল্লাহ (সা:) এ কথার মতো বা এতদ সদৃশ কিছু ( কোনো কথা )  বলেছেন ।

( প্রাগুক্ত সুনান ইবনে মাজাহ , হাদীস নং ২৪ , পৃ : ১৫ )

আমর ইবনে মাইমূন বলেন : আমি যে কোনো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে হযরত ইবনে মাসউদের ( রা : ) কাছে গেলে ই তিনি আমাকে চিনতে ভুল করতেন না । তিনি ( আমর ইবনে মাইমূন ) বলেন : আমি তাঁকে ( ইবনে মাসউদ ) কখনোই কোনো বিষয়ে বলতে শুনিনি যে রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন । অত:পর  একদা যখন  সন্ধ্যা রাত হল তখন তিনি ( রা:) বললেন :  রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন : ....।  আমর ইবনে মাইমূন বলেন : ( এ কথা বলার পর ) তিনি ( ইবনে মাসউদ ) লজ্জায় মাথা নামিয়ে রাখলেন । তিনি ( আমর ইবনে মাইমূন ) বলেন : অত:পর আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে তিনি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন যে তাঁর কামীসের বোতামগুলো সব খোলা । তাঁর দুই চোখ অশ্রুতে ভরে গেছে এবং গলার রোগগুলো ফুলে উঠেছে । আর তিনি ( ইবনে মাসউদ ) বলছিলেন : " অথবা ওটার নীচে অথবা ওটার উর্ধ্বৈ অথবা ওটার নিকটে অথবা ওটার সদৃশ । "!!!

( দ্র : প্রাগুক্ত সুনান ইবনে মাজাহ , হাদীস নং ২৩ , পৃ : ১৪ - ১৫ )

 

  পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ ( মহানবীর হাদীস , কাজ ও সম্মতি ) ইসলামী শরীয়ত ও বিধি বিধানের প্রধান মূল উৎস বলে পরিগণিত । সুন্নাহ ব্যতীত পবিত্র কুরআন একেবারেই অচল । অথচ হাদীস সংকলন , বর্ণনা ও চর্চার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার জন্য বানোয়াট , মিথ্যা , জাল ও দুর্বল হাদীসের পূর্ণ সুযোগ তৈরি হয়ে যায় মুসলিম বিশ্বে এবং তা উম্মতের বিচ্যুতি , ইসলামের দুশমন বনী উমাইয়ার ক্ষমতায়ন  এবং রাসূলুল্লাহর ( সা:) আহলুল বাইত কে ( আ:) সামাজিক, সাংস্কৃতিক ,রাজনৈতিক ,প্রশাসনিক সামরিক অর্থনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গন থেকে দূরে সরানোর মূল কারণে পর্যবসিত হয়েছে । স্মর্তব্য যে হিজরী ২য় শতাব্দীতে বনী উমাইয়া প্রশাসনের তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতায় হাদীস সংকলন শুরু হওয়া পর্যন্ত উক্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল । আর বনী উমাইয়া তাদের রাজনৈতিক স্বার্থেই হাদীস সংকলনের অনুমোদন দিয়েছিল । তাই হাদীস সংকলন ধারায় ঐ সব হাদীস সরকারী আনুকল্য ও প্রচার সুবিধা পেয়েছিল যেগুলোয় আহলুল বাইত ব্যতীত অন্য যে কোনো সাহাবার শা'ন ও ফযীলত এবং আহলুল বাইতের নেতৃত্ব নয় বরং যে কোনো ব্যক্তির নেতৃত্ব এমনকি বনী উমাইয়া ও অত্যাচারী যালিম শাসকদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে যদিও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুমোদন প্রাপ্ত এ সব হাদীস সংকলনে আহলুল বাইতের ফযীলত ও নেতৃত্ব সংক্রান্ত  অল্প কিছু হাদীস স্থান পেয়েছে যা একাই আহলুল বাইতের (আ: ) হক্কানীয়ত ,  সুমহান মর্যাদা , শ্রেষ্ঠত্ব , এবং নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা ও অধিকার প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ।

রাসূলুল্লাহর (সা:) ওফাতের পর হাদীস বর্ণনা ও চর্চায় নিষেধাজ্ঞা ও সীমাবদ্ধতা আরোপের কারণে গোটা মুসলিম উম্মাহ রাসূলুল্লাহর ( সা:) আহলুল বাইতের সঠিক পরিচিতি লাভ করতে পারে নি বরং ইসলামের সার্বিক বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায় এবং এ কারণে উম্মাহ সঠিক ইসলামী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করা থেকে বঞ্চিত থেকে যায় যার ফলশ্রুতিতে তারা হযরত আলীর বিরুদ্ধে গাদ্দারী করে এবং মহানবীর ওফাতের ৫০ বছর পরে ইমাম হুসাইন ( আ:)কে কারবালায় হত্যা ও শহীদ করে । অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছিল যে বনী উমাইয়ার ৯০ বছর শাসনামলে হযরত আলীকে  প্রকাশ্যে মসজিদ সমূহে গালিগালাজ করা হত ; বনী উমাইয়ার খিলাফত প্রকৃত ইসলামী শাসন ও খিলাফত  আহলুল বাইতকে ধর্মত্যাগী খারিজী বলে অভিহিত করা হত । অথচ সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে : রাসূলুল্লাহ ( সা :) বলেছেন : " কুরাইশী বংশীয় কিছু অল্প বয়স্ক যুবকের হাতে আমার উম্মতের ধ্বংস হবে । "

আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত সহীহ বুখারীর অপর এক হাদীসে : রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন : কুরাইশদের এই শাখাই ( মহল্লা : বনী উমাইয়া ) জনগণকে ( মুসলিম উম্মাহ) ধ্বংস করবে । তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল : তাহলে আপনি আমাদেরকে কী আদেশ করেন ? তখন তিনি বললেন : যদি জনগণ তাদেরকে বর্জন করত । ( দ্র : আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহীম ইবনে বার্দেযবাহ্ আল - বুখারী ( মৃ : ২৫৬ হি: ) কর্তৃক সংকলিত সহীহ আল বুখারী , কিতাবুল মানাক্বিব , হাদীস নং ৩৬০৪ , পৃ : ৮৮১ , প্রকাশক : দারুল ফিকর , বৈরুত , ১ম সংস্করণ , প্রকাশ কাল : ২০০৮ )

আর মুয়াবিয়াহ ইবনে আবূ সুফিয়ান তো জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা এবং হযরত আলীকে (আ:) গালি গালাজ দেয়ার ঘৃণ্য বিদ' আতের প্রবর্তক । অকাট্য , সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন : হায় আম্মার ( আম্মারের জন্য দু:খ ) ! তাঁকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হত্যা করবে ঐ অবস্থায় যে সে তাদেরকে বেহেশতের দিকে আহবান করবে এবং তারা ( ঘাতক বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ) তাকে ডাকবে দোযখের দিকে ।

 

وَیْحَ عَمَّارٍ ! تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِیَةُ یَدْعُوْهُمْ إِلَی الْجَنَّةِ وَ یَدْعُوْنَهُ إِلَی النّارِ .

 

( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহ আল বুখারী , কিতাবুস সালাত , হাদীস নং ৪৪৭ পৃ : ১২১ )

    মহানবীর (  সা:) সুন্নাহ ও হাদীস চর্চা নিষিদ্ধ করনের ভুল নীতি বলবৎ থাকায়ও বনী উমাইয়ার দু:শাসনে মুসলিম উম্মাহয় ঘৃণ্য বিদ'আত ও বিচ্যুতির সয়লাব হয়ে যাওয়ার কারণেই মুসলিম উম্মাহর ইসলাহ ( সংশোধন ) , দ্বীন - ই ইসলামের হেফাযত , অন্যায়ের প্রতিকার , আদল ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার জন্যই ইমাম হুসাইন ( আ: ) ক্বিয়াম করেছিলেন ।

 

-------------------------

(( প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে , সর্ব সাধারণ প্রচলিত ও শাব্দিক -আভিধানিক অর্থে এমনকি ফিকহী পারিভাষিক অর্থে কোনো ব্যক্তির আহলুল বাইত

হচ্ছে তার গৃহবাসীগণ যেমন : তাঁর স্ত্রী , পুত্র - কন্যা , পিতা - মাতা , ভাই বোন , চাকর - বাকর ; এমনকি তার গৃহপালিত পশুরাও আহলুল বাইত যাদের ভরণপোষণ ঐ ব্যক্তির উপর ন্যস্ত । ( দ্র : মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আন - নাজাফী প্রণীত জাওয়াহিরুল কালাম ফী শারহি শারায়েউল ইসলাম , প্রকাশক : আল - মাকতাবাতুল ইসলামীয়াহ , তেহরান , ইরান  , ৪র্থ সংস্করণ , প্রকাশ কাল : ১৩৮৪ ( ফার্সী ) ।) এ অর্থের সম্প্রসারণে ব্যক্তির অন্যান্য নিকটাত্মীয় ও জ্ঞাতি ( কওম ) এমনকি তার একান্ত ঘনিষ্ঠ আদর্শিক অনুসারীদেরও আহল ও আহলুল বাইত বলা হয় । আর এতদর্থেই মহানবী (সা:) হযরত সালমান ফার্সী সম্পর্কে বলেছেন : সালমান আমাদের আহলুল বাইতের অন্তর্ভুক্ত । তবে বিশেষ কুরআনী পারিভাষিক অর্থে সালমান মহানবীর (সা:) আহলুল বাইতের ( আ:) অন্তর্ভুক্ত নন । আর পবিত্র কুরআনে এই বিশেষ পারিভাষিক অর্থে আহলুল বাইতের  ব্যবহার ও উল্লেখ ছাড়াও সাধারণ প্রচলিত শাব্দিক আভিধানিক অর্থেও আহলুল বাইত ও আহল শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে । আর  সূরা - ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতের শানে নুযূলে আহলুস সুন্নাহর সনদ সূত্র সমূহে বর্ণিত ৭০ এর অধিক রেওয়ায়তে বর্ণিত মুতাওয়াতির হাদীস - ই কিসা ( চাদরের হাদীস ) পবিত্র কুরআনের সূরা - ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত মহানবীর আহলুল বাইত ( আ:) যে বিশেষ কুর'আনী পরিভাষা তার বলিষ্ঠ অকাট্য দলিল প্রমাণ । যখন মহানবী ( সা :) উক্ত আয়াতস্থ আহলুল বাইতের এই বিশেষ অর্থ করেছেন তখন মুসলিম উম্মাহকে তা মেনে নিতেই হবে । কারণ তিনি ( সা: ) পবিত্র কুরআন আনয়নকারী এবং তিনি পবিত্র কুরআনের  প্রামাণিক ব্যাখ্যাকারী যিনি নি:সন্দেহে নিজ থেকে কোনো কথা বলেন না বরং যা বলেন তা তাঁর প্রতি প্রেরিত ওহি । আর নি: সন্দেহে এই হাদীস - ই কিসা সহীহ মুতাওয়াতির , অকাট্য মুসাল্লাম ( সুনিশ্চিত সনদেহাতীত ) এবং শিয়া - সুন্নী নির্বিশেষে সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত ( মকবূল ) হাদীস । ))

 

  তাই পবিত্র কুরআনের সূরা - ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াত এবং উক্ত আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট সহীহ  মুতাওয়াতির এবং শিআ - সুন্নী নির্বিশেষে সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত হাদীস - ই - কিসার আলোকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সূরা - ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত মহানবীর ( সা:) আহলুল বাইত একটি বিশেষ অর্থের কুর'আনী পরিভাষা যা সাধারণ প্রচলিত ও শাব্দিক আভিধানিক অর্থে এমনকি ফিকহী পারিভাষিক  অর্থে আহলুল বাইত হতে ভিন্ন । এই বিশেষ কুআনী পারিভাষিক অর্থে আহলুল বাইত হচ্ছেন পবিত্র ( নিষ্পাপ মাসূম ) যাঁদের অন্তর্ভুক্ত হযরত আলী , হযরত ফাতিমা , ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ( আ:) এবং ইমাম হুসাইনের বংশধর ইমাম যাইনুল আবেদীন আ: থেকে দ্বাদশ ইমাম মাহদী ( আ:) পর্যন্ত  আরো ৯ জন নিষ্পাপ ইমাম । তাই বিশেষ কুরআনী পারিভাষিক অর্থে মহানবীর (সা:) পবিত্র মাসূম ( নিষ্পাপ ) আহলুল বাইত (আ:) হচ্ছেন মাত্র ১৪ মাসূম ব্যক্তি যাদের অন্তর্ভুক্ত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী খাতামুল আম্বিয়া ওয়ার রুসুল ( সর্বশেষ নবী ও রাসূল) হযরত মুহাম্মাদ (সা) , সর্বশ্রেষ্ঠা নারী ও বেহেশতেবাসী সকল নারীর নেত্রী হযরত ফাতিমা (আ) এবং বারো নিষ্পাপ মাসূম ইমাম (আ) । অকাট্য প্রামাণিক সূত্রে প্রতিষ্ঠিত ও সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত মকবূল বারো ইমামের হাদীস এবং নিশ্চিত ও সন্দেহাতীত ভাবে সকল ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত (মকবূল) যুগের ইমামের আনুগত্যের হাদীস, উলিল আমরের ( কর্তৃত্বকারীগণ  অর্থাৎ ইমাম ও নেতাগণ أُوْلُو الْأَمْرِْ ) আনুগত্যের আয়াত ও এ আয়াতের শানে নুযূলে মহানবী (সা) থেকে বিশ্বস্ত সহীহ ( বিশুদ্ধ ) প্রামাণিক সূত্রে প্রতিষ্ঠিত হাদীসসমূহ এবং পবিত্র কুরআনের আরো বহু আয়াত ও সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত , প্রতিষ্ঠিত সহীহ হাদীস সমূহের ( যেমন: মুতাওয়াতির হাদীসে সাকালাইন ) আলোকে প্রমাণিত হয় যে উম্মতের হিদায়তের জন্য মহানবীর (সা) আহলুল বাইত (আ) ও পবিত্র কুরআন কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবেন এবং এদুভয় কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।

---------

    সুতরাং পরকালে মুক্তি ( নাজাত ) ও বেহেশতবাসী যুবকদের নেতৃদ্বয় ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বের ছায়াতলে থাকতে হলে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতকে (আ) দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে ধরার আর কোনো বিকল্প ( বাদীল) নেই। তাই ইমাম হুসাইনের (আ) আহলুল বাইতের আ পথ ছাড়া যে কোনো পথে নাজাত ( মুক্তি ) নেই। অন্য যে কোনো পথ ই হচ্ছে গাদ্দারের পথ অর্থাৎ ভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতির পথ।

     ইব্রাহীম নাখয়ী বলেছেন: " যারা হুসাইনের (আ) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে আমি যদি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতাম এবং এরপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হত তাহলে আমি বেহেশতে রাসূলুল্লাহর (সা) দিকে তাকাতেই লজ্জা বোধ করতাম । " ( দ্র: ইবনে হাজার আস্কালানী প্রণীত তাহযীবুত তাহযীব , খ: ২, পৃ : ৩৫৫ )

      তাই গাদ্দারদের পথ পরিত্যাগ করে যারা পবিত্র কুরআন ও ইমাম হুসাইনের (আ) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহর আহলুল বাইতের (আ) পথে থাকবে তারাই পরকালে সফলকাম ( কামিয়াব ) হবে। কারণ পবিত্র কুরআন ও নূরনবীর ( সা ) পথই হচ্ছে তাঁর ইতরাৎ অর্থাৎ অতিনিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর আহলুল বাইতের (আ) পথ ও বিশেষ করে সাইয়েদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইনের (আ) পথ তা হচ্ছে সিরাত -ই মুস্তাকীম ( সরল সঠিক পথ ) অর্থাৎ হিদায়তের পথ । মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইমাম হুসাইন (আ) ও আহলুল বাইতের (আ) খাঁটি অনুসারী মুহিব্বীনের অন্তর্ভুক্ত এবং গাদ্দারদের থেকে পৃথক করে দিন ।

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
 
মুহররম, ১৪৪৪ হি.
captcha