IQNA

ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত: আমেরিকা ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক ফাটল ধরার গুঞ্জন

10:28 - October 11, 2022
সংবাদ: 3472624
তেহরান (ইকনা): আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে ওপেক প্লাস প্রতিদিন বিশ লাখ ব্যারেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন আমেরিকার ডেমোক্রেটিক দলের কয়েকজন আইন প্রণেতা।
তেলের উৎপাদন বাড়ানোর  জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা সত্ত্বেও ওপেক প্লাস ওই চুক্তিতে পৌছাতে সক্ষম হয় এবং এই সিদ্ধান্ত বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থাকে সীমিত করেছে এবং তেলের বাজারকে একটি শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। নিউ জার্সি রাজ্যের টম ম্যালিনোস্কি, ইলিনয় রাজ্যের সিন কাস্টেন এবং পেনসিলভানিয়া রাজ্যের সুসান ওয়াইল্ড সম্প্রতি একটি খসড়া আইনের প্রস্তাব করেছেন। এটি পাস হলে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের পাশাপাাশি প্যাট্রিয়ট এবং টিওডি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে মার্কিন সরকার বাধ্য হবে। 
 
ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতারা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ঘোষণা করেছেন, তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি আহ্বান সত্ত্বেও তেলের উৎপাদন হঠাৎ করে ব্যাপকভাবে হ্রাস করার সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি শত্রুতামূলক পদক্ষেপ এবং স্পষ্টতই এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে দেশদুটো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে।
 
মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতাদের পদক্ষেপটি আসলে ওপেক প্লাসকে ২ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উৎপাদন হ্রাস করা থেকে বিরত থাকার জন্য মার্কিন দাবির প্রতি রিয়াদ কর্ণপাত না করায় ওয়াশিংটনের ক্ষোভেরই বহিপ্রকাশ। কারণ সৌদি আরব এ সংস্থার অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য।
 
আগামী নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন কংগ্রেসে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।  ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকায় সব ধরনের জ্বালানীর দাম বিশেষ করে গ্যাসোলিনের দাম বেড়ে গেলে তা ডেমোক্রেট দল এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেট দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন স্বতন্ত্র সিনেটর এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের সাবেক মনোনয়নপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স সৌদি আরব থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে রিয়াদের কাছে সমস্ত অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
 
এখানে লক্ষণীয় যে সৌদি সরকার ওয়াশিংটন এবং রিয়াদের মধ্যে চলমান মতপার্থক্য এবং দুরত্বকে অত্যন্ত নগণ্য বিষয় এবং ক্ষণস্থায়ী হিসেবে প্রমাণ করার অনেক চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা আদেল আল-জুবায়ের ওপেক প্লাসের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সমালোচনার জবাবে এক বক্তৃতায় বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক কৌশলগত এবং তা পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও মৈত্রীর উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সৌদি আরব তেল উৎপাদন কমিয়ে আমেরিকার ক্ষতি করতে চায় বলে দেশটির কর্মকর্তারা যে দাবি করছেন তা মোটেও সত্য নয়।
 
যাইহোক তেলের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য জো বাইডেন প্রশাসন নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও বিশ্ব বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। এ বিষয়টি বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য কমার আরেকটি লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  পার্সটুডে
captcha