IQNA

ইসলামী বিশ্বের বিখ্যাত আলেমগণ /৩

শেখ য়ার্জুনের বয়ানে ইমাম আলীর (আ.) বীরত্বের বর্ণনা

9:37 - November 02, 2022
সংবাদ: 3472748
তেহরান (ইকনা): শেখ মোহাম্মদ সাদিক য়ার্জন "আমিরুল মু'মিনীন আলী বিন আবি তালিব: আল খিলাফাতুল মিছালী” (আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব; মডেল এবং আদর্শ খলিফা) নামে একটি বইল লিখেছেন। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি ইমাম আলী (আ.)-এর চরিত্র ও নৈতিক গুণাবলী এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন৷

এই কাজে, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম নীতি অনুষদের প্রাক্তন প্রধান শেখ মোহাম্মদ সাদিক যার্জুন, ইমাম আলী (আ.)-এর বৃদ্ধি ও লালন-পালনের বিষয়ে কথা বলেন। ইমাম আলীর শৈশবকালের প্রথম বছরে সংকট ও দুর্ভিক্ষ এবং সেই সময়ের ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে এবং শেষে তিনি রাসূল (সা.) এর পর ইমাম আলীর জীবন এবং তার সাথে সম্পর্কিত ঘটনাবলী আলোচনা করেছেন। এছাড়াও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তরসূরি বিষয়ে আলোকপাত করেছন।
লেখক ইমাম আলী (আ.)-এর বীরত্বের কথাও উল্লেখ করে উক্ত বইয়ে বর্ণনা করেছেন: উহুদের যুদ্ধে মৃতদের অর্ধেক ( যা ছিল সত্তর জন) তাদের রক্ত ইমাম আলী (আ.)-এর তরবারির কিনারা থেকে ঝরে পড়ে এবং উহুদের যুদ্ধে আল্লাহ মুসলমানদের পরীক্ষা করেছেন এবং উহুদের যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছন তারা বিপদের কারণে রসূলের (সা.) চারপাশে থেকে সড়ে গিয়েছেন। একমাত্র ব্যক্তি আলী (আ.), তিনি রাসূল (সা.)এর সাথে থেকে তার জীবন রক্ষা করেছেন এবং তিনি ছিলেন ইসলামের মহা নায়ক।
এখানেই আলী (আ.)-এর ভূমিকা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, কারণ আলী (আ.) অতুলনীয় সাহসিকতার সাথে নবীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং মুশরিকদের অসংখ্য দলের বারবার আক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁর পবিত্র অস্তিত্ব রক্ষা করেছিলেন।
খন্দকের যুদ্ধে (আজযাব) মুসলমানদের পরিবেষ্ট করা হয়েছিল এবং আরব বিশ্বের সাহসী যোদ্ধা "আমর বিন আবদুদ" নামক এক ব্যক্তি মুসলমানদের সামনে উপস্থিত হয়ে তার সাথে যুদ্ধের আহ্বান জানালো। সেই সময়, আলী (আ.) যুবক ছিলেন এবং আমর বিন আবদুদ, আরব বীর ও সাহসীদের একজন। আলী (আ.) তার সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাকে মাটিতে ছিটকে দেন এবং পরাজিত করেন।
আল্লাহ আলী (আঃ)-এর হাতে খাইবারের দুর্গ খুলে দিয়েছিলেন। এই যুদ্ধে নবী (সা.) ইমাম আলী (আ.)-কে বলেছেন:
 فَوَاللَّهِ لَأَنْ یهْدِی اللَّهُ بِک رَجُلًا وَاحِدًا، خَیرٌ لَک مِنْ أَنْ یکونَ لَک حُمْرُ النَّعَمِ 
খোদার কসম, আল্লাহ যদি কোনো ব্যক্তিকে তোমার হাতে হেদায়েতের পথ দেখান, তাহলে তা লাল কেশবিশিষ্ট উট থাকার চেয়ে উত্তম।
ইমাম আলী (আ.) শুধুমাত্র একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি এবং সেটি ছিল "তাবুক"-এর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সা.) তাকে যুদ্ধে যেতে নিষেধ করেছিলেন এবং মদীনায় তার স্থলে ইমাম আলী (আ.)-কে নিযুক্ত করেছিলেন। এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এজন্য নবী করিম (সা.) যে বানী বর্ণনা করেছিলেন তা “হাদীসে মনযিলাত” নামে প্রসিদ্ধ। তিনি বলেন: 
أنت مني بمنزلة هارون من موسى إلا أنه لا نبي بعدي
‘আমার সাথে তোমার সম্পর্ক হযরত মূসা (আ.)এর সাথে হারুন (আঃ)এর সম্পর্কের মতই, পার্থক্য শুধু এই যে আমার পরে আর কোন নবী প্রেরিত হবে না।
যখন মহানবী (সা.) গোপনে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তখন তিনি তার ভাই ইমাম আলী (আ.)-কে তার বিছানায় ঘুমানোর দায়িত্ব দেন। আলী (আ.) নবী (সা.)এর কাপড় পরিধান করেন এবং তার জায়গায় শোন এবং কুরাইশ যুবকরা যখন নবী (সা.) এর গৃহে পৌঁছায় তখন তারা মুহাম্মদ (সা.)এর পরিবর্তে তাকে দেখতে পায়।
আলী (আ.) সর্বদা যুবকের হৃদয়েরে মতো আনুগত্য ও বীরত্বের চেতনায় পরিপূর্ণ ছিল। সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্তে, তিনি মহানবী (সা.)-এর জায়গায় ঘুমাতেন এবং সবচেয়ে কঠিন সময়ে তিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল (সা.)-এর ভক্ত এবং তার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে এতটুকুও কৃপণতা বোধ করতেন না।
তিনি রাসুল (সা.)এর হাতে থাকা জিহাদের পতাকাকে সমর্থন করেছিলেন এবং অনেক সময় যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা কম বা বেশি হলে তিনি শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং মুসলমানদের অন্তরের ভয়কে শান্তি এবং নিরাপত্তায় পরিণত করেছিলেন। 
 
captcha