IQNA

কুরআন কি বলে/ ৪৭

ঈমানের ডাকে সাড়া দানকারীর দোয়া

0:03 - March 25, 2023
সংবাদ: 3473518
তেহরান (ইকনা): আহ্বানকারী আল্লাহর প্রতি ঈমানের আহবান করে, একদল নিজেকে হারিয়ে ফেলা মানুষ এই আওয়াজ শুনে এর পিছে পিছে ধাবিত হতে থাকে। এই সম্পর্ক মুমিনদের ঐক্যবদ্ধ থাকার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে তাদের চাওয়া একটি মৌলিক দাবি।

ঈমানের ডাকে সাড়া দানকারীর দোয়াকুরআনের কতিপয় আয়াতে এমন কিছু দোয়া বর্ণিত হয়েছে যা নবী বা পরহেজগার ব্যক্তিদের মুখনিঃসৃত। যেগুলো «ربنا» (হে আমার রব) শব্দ দ্বারা শুরু হয় এবং এই দোয়াগুলোতে ইমানদারদের মুখ থেকে তাদের রবের নিকট অনুরোধ বা চাওয়া প্রকাশ পায়।
এর মধ্যে একটি আয়াত এমন এক ব্যক্তির যিনি ঈমানের বাণী শুনে ঈমান এনেছেন। "শ্রবণ করা" মানুষের হেদায়েত প্রাপ্তির অন্যতম ও কার্যকর মাধ্যম। কতিপয় তাফসীর কারক এটিকে দেখা ও পড়ার চেয়েও বেশি কার্যকরী পথ বলে মনে করেন।
رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দুর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে। [সূরা আলে ইমরান: ১৯৩]
মুফাসসিরগণ ঈমানের প্রতি আহ্বানকারীর ব্যাখ্যায় কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন:
১) অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এই আহ্বানকারী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
২) এর অর্থ মহিমান্বিত আল-কুরআন, কারণ অনেক মানুষ নবীর উপস্থিতিতে তার আহবান শোনার সুযোগ পায়নি, কিন্তু কুরআন শুনে সেই আহবান জানতে পেরেছে।
তাফসীরে নমুনায় দেখতে পাই: বিবেকবানেরা যখন সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে জানকে পারে এটিও উপলব্ধি করে যে, এই সমৃদ্ধ ও বন্ধুর পথ কখনোই কোন পথ প্রদর্শক ব্যতীত অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আর তাই তারা সর্বদা ঈমানের প্রতি আহ্বানকারীর আহবান শোনার অপেক্ষায় থাকে। যাতে প্রথম ডাকেই তারা দ্রুত সাড়া দিতে পারে এবং ঈমান আনতে পারে। আর তখন তারা আল্লাহর দরবারে বলে: "হে আল্লাহ! আমরা তৌহিদের পথে আহ্বানকারীর ডাক শুনেছি, যিনি আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি।
এই ঈমানের দাওয়াত কবুলকারী বিবেকবান লোক ছাড়াও এমনও কিছু লোক রয়েছে যারা দাওয়াতের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে। কিয়ামতের দিবসে তারা আফসোস করে বলবে:
«لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ ما كُنَّا فِي أَصْحابِ السَّعِيرِ»
যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নাম বাসীদের মধ্যে থাকতাম না। [সূরা মুলক: ১০]
তাফসীরে নূরে বর্ণিত এই আয়াতের বার্তাসমূহ:
১) জ্ঞানী ও বিবেকবানেরা সত্যকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে। তারা সহজাতের ডাকে সাড়া দেওয়ার পাশাপাশি নবী, আলেম ও শহীদদের আহ্বানে সাড়া দেয়। «إِنَّنا سَمِعْنا مُنادِياً يُنادِي لِلْإِيمانِ ...»
২) ক্ষমা এবং গোনাহের স্বীকারোক্তি জ্ঞান ও বিবেকের লক্ষণ।
৩) দোয়া করার আদব যা আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক, আল্লাহর প্রতিপালনের বৈশিষ্ট্যের প্রতি মনোনিবেশ ঘটায়। .«رَبَّنا فَاغْفِرْ لَنا»
৪) আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার ভিত্তি হল ঈমান। «فَآمَنَّا، فَاغْفِرْ لَنا»
৫) নিজের দোয়ার মধ্যে অন্যকে স্মরণ করা। «فَاغْفِرْ لَنا»
৬) পর্দা করা আল্লাহর প্রতিপালনের অন্যতম দিক ও পদ্ধতি। «رَبَّنا ... كَفِّرْ عَنَّا»
৭) মানুষের মৃত্যু আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। «تَوَفَّنا»
৮) বুদ্ধিমান ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা সৎমানুষের সাথে মৃত্যু কামনা করে। «تَوَفَّنا مَعَ الْأَبْرارِ»
৯) সৎ ব্যক্তিদের এমন মর্যাদা রয়েছে যা জ্ঞানীরা কামনা করে।«لِأُولِي الْأَلْبابِ ... تَوَفَّنا مَعَ الْأَبْرارِ»

ট্যাগ্সসমূহ: কুরআন কি বলে
captcha