ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ঢেপা নদীর তীরে অবস্থিত। ১.১৫ বিঘা জমির ওপর মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। মসজিদের প্রবেশপথে স্থাপিত শিলালিপি অনুসারে নয়াবাদ মসজিদ ২ জ্যৈষ্ঠ ১২০০ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়।
তখন মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্বকাল।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, দিনাজপুরের তৎকালীন শাসক জমিদার প্রাণনাথ রায় তাঁর শেষ বয়সে কান্তনগর মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পরে শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পোষ্যপুত্র রাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। তখন মন্দির নির্মাণের জন্য আরব দেশ থেকে নির্মাণ শ্রমিক ও কারিগরদের নিয়ে আসা হয়।
কারিগররা তাদের বসবাস ও নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ নির্মাণের জায়গা চাইলে রাজা পার্শ্ববর্তী নয়াবাদে জায়গা দান করেন। মুসলিম কারিগররা সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে মসজিদ ও মন্দিরের নির্মাণকালের ভিন্নতা (প্রায় ৫০ বছরের পার্থক্য) এই জনশ্রুতির সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
জনশ্রুতি অনুসারে মন্দিরের নির্মাণকাজ শেষে আরব নির্মাণ শ্রমিক ও কারিগরদের বেশির ভাগ দেশে ফিরে গেলেও প্রধান কারিগর নেওয়াজ ওরফে কালুয়া ও তাঁর ভাই সবুজ-শ্যামল এই দেশে থেকে যান। তাঁরাই নয়াবাদ মসজিদ পরিচালনা করতেন।
বংশপরম্পরায় তাঁদের সন্তানরাই এখনো মসজিদটি পরিচালনা করে আসছেন। আরব কারিগরদের মাধ্যমে এখানে নতুন বসতি গড়ে ওঠে এবং তার নাম দেওয়া হয় মিস্ত্রিপাড়া। নয়াবাদ মসজিদসংলগ্ন এলাকায় নেওয়াজ ও তাঁর ভাইকে দাফন করা হয়। তাঁদের কবর এখনো সংরক্ষিত।
আয়তাকার নয়াবাদ মসজিদ তিন গম্বুজবিশিষ্ট। মসজিদের বাইরের দিক থেকে এর দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫.৫ মিটার। দেয়ালের প্রশস্ততা ১.১০ মিটার। এর চার কোনায় আছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার। মসজিদের পূর্ব দিকের প্রবেশপথে আছে তিনটি খিলান। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দুটি জানালা রয়েছে। প্রবেশদ্বার ও জানালার খিলান বহুখাঁজযুক্ত। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। দুই পাশের মিহরাব দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদের তিনটি অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজের মধ্যে মাঝেরটি অন্য দুটির তুলনায় কিছুটা বড়। গম্বুজের অবস্থান্তর পর্যায়ে পেনডেন্টিভ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের কার্নিশ ও প্যারাপেট সমান্তরাল।
মসজিদের চার কোণের কর্নার টাওয়ারের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম কোণের দুটিতে কুপলা আছে। বাকি দুটির ওপরে ছোট গম্বুজ। কর্নার টাওয়ারগুলো সাদামাটা ইট ও পলেস্তারা দিয়ে তৈরি। টাওয়ারগুলো ক্রমশ সরু, ওপরে ছোট গম্বুজ বাতিদানের মতো ছত্রী দেখা যায়। সমস্ত দেয়ালজুড়ে আয়তাকার পোড়ামাটির বহু ফলক রয়েছে। পোড়ামাটির নকশাগুলো বহু জায়গায় খুলে পড়েছে। ফলকগুলোর মধ্যে লতাপাতা ও ফুলের নকশা আছে।
তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া, বাংলানিউজ ও উইকিপিডিয়া