
১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ সভার ২৮তম অধিবেশনে ৩১৯০ নম্বর সিদ্ধান্তে আরবিকে ষষ্ঠ দাপ্তরিক ভাষারূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর ১৯০তম অধিবেশনে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালন করা হয়।
সাহিত্য ও শৈল্পিক বিচারে আরবি ভাষা বিশুদ্ধ, ব্যাপক অর্থবোধক, অলংকারসমৃদ্ধ ও সুবিন্যস্ত এক ভাষা। এই ভাষায় অনন্য ও অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিচে এ ভাষার কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ও নান্দনিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. ইরাব বা স্বরচিহ্ন
বাক্যে প্রতি শব্দের শেষ হরফের স্বরচিহ্ন হলো ইরাব। এ স্বরচিহ্ন পরিবর্তনশীল।
অবস্থার পরিবর্তনভেদে একটি শব্দের শেষ হরফ পেশ বা জবর বা জের বা সুকুন গ্রহণ করতে পারে, যেমন শব্দটি কর্তা (ফায়িল) হলে পেশ গ্রহণ করে, কর্ম (মফউল) হলে জবর গ্রহণ করে ইত্যাদি। পৃথিবীতে এ ধরনের স্বরচিহ্ন বর্তমানে আরবি ছাড়া হাবশি ও জার্মান ভাষায় কিছুটা আছে। স্বরচিহ্ন প্রাচীন সভ্যতার একটি নিদর্শন।
২. শব্দপ্রাচুর্য
শব্দের প্রাচুর্যে এ ভাষা অতি সমৃদ্ধ ও সুন্দর।
বর্ণনা ও প্রকাশভঙ্গি অতি সূক্ষ্ম। প্রতিটি অর্থ প্রকাশার্থে ভিন্ন শব্দ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ দিনের প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা শব্দ আছে। তেমনি চন্দ্র মাসের প্রতিটি রাতের জন্য, মাথার চুলের ও চোখের প্রতিটি অংশের জন্য, দাঁতের জন্য, দেখার, চলার, বসার, শোয়ার প্রতিটি ভঙ্গির জন্য ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে। এ ভাষায় একটি মাত্র ক্রিয়া দ্বারা অনেক অর্থের প্রকাশ সম্ভব।
অন্য ভাষায় এসব অর্থ প্রকাশের জন্য কয়েকটি ক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
৩. সর্বমর্মী বচন
এ ভাষায় অল্প কথায় বা বাক্যে অনেক অর্থ প্রকাশ করা যায়। শব্দ বা উচ্চারণের দিক থেকে অল্প, কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক তাকেই সর্বমর্মী বচন বলা হয়। পবিত্র কোরআন-হাদিস ও আরবি সাহিত্যে সর্বমর্মী বচনের অনেক দৃষ্টান্ত মেলে।
৪. সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দের আধিক্য
সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দের অত্যধিক সমাবেশ এই ভাষায় পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বছরের জন্য ২৪, আলোর জন্য ২১, অন্ধকারের জন্য ৫২, সূর্যের জন্য ২৯, বৃষ্টির জন্য ৬৪, পানির জন্য ১৭০, উটের জন্য ২৫৫, সিংহের জন্য ৩৫০টি শব্দ আছে। এমন শত-সহস্র শব্দে আরবি সমৃদ্ধ হয়ে আছে। বিপরীতার্থক শব্দেরও কমতি নেই এই ভাষায়।
৫. শব্দের অর্থের আধিক্য
একটি শব্দের বহু অর্থ হয়, এমন সব শব্দ আরবিতে অধিক হারে পাওয়া যায়। এমন শত শত শব্দ আছে, যাদের তিন, চার অথবা পাঁচটি অর্থ আছে।
৬. আওয়াজের অনুকরণে শব্দ
পাখির সুমিষ্ট স্বর ও জীবজন্তুর নানা আওয়াজের অনুকরণে আরবি ভাষায় বিভিন্ন শব্দ রয়েছে। যেমন বৃষ্টি বর্ষণের রিমঝিম, মেঘ গর্জনের গুরগুর, স্রোতের কলকল ধ্বনি ইত্যাদির জন্য তাদের ভাষায় বহু শব্দ আছে। হমহমা, করকরা, বরবরা, জরজরা ইত্যাদি শব্দ উদাহরণস্বরূপ পেশ করা যায়।
৭. প্রবাদ বাক্য
প্রবাদ বাক্যের জন্য আরবি বিখ্যাত। তাদের অভিজ্ঞতার ফলে এসব প্রবাদ বাক্য সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোকে হিকমাতুল আরব অর্থাৎ আরবদের প্রজ্ঞা নামে অভিহিত করা হয়। আরবে ভালো কবিদের অনেক কবিতা প্রবাদ বাক্য হিসেবে সবার মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে যেত।
লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক