IQNA

জরথুস্ত্র ধর্মের শিক্ষা

19:07 - April 18, 2025
সংবাদ: 3477226
ইকনা- জরথুস্ত্র ৪০ বছর বয়সে দ্বৈববাণী বা প্রত্যাদেশ লাভ করেন বলে নিজেই দাবি করেন। (আল-শাহরাস্তানি, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৪৭)
কিন্তু তাঁর এ দাবি কত দূর সত্য তা বলা মুশকিল। কেউ কেউ বলেন, ২০ বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে এক পর্বতের গুহায় সাত বছর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। এ ধ্যান-মগ্নতার মধ্য দিয়ে তিনি ঈশ্বর আহুরামাজদার প্রকৃতি অনুধাবনে নিজকে আলোকিত করে তোলেন।
 
 
এক সত্য সুন্দর জ্ঞানদানের মাধ্যমে তিনি জনসাধারণকে ঈশ্বরের পথে চলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। এভাবে জরথুস্ত্রের প্রচারিত মতবাদটি ধীরে ধীরে তৎকালীন জনসমাজে ব্যাপকতা লাভ করে। কাল-পরিক্রমায় ধর্মটি পারস্যে সাসানীদের আমলে রাষ্ট্রধর্মের রূপ পরিগ্রহ করে। অন্যান্য ধর্মের মতো এ ধর্মেরও অনেক নৈতিক শিক্ষা রয়েছে।
 
সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষা হলো নিম্নরূপ—
চরিত্রগত শিক্ষা : জরথুস্ত্রের মতে, চরিত্র হলো মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাই ব্যক্তি চরিত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জন করা, সিশক্ষা লাভ করা, গুরুজন ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হওয়া আবশ্যক। বৃদ্ধ, শিশু, মহিলাসহ সব অসহায়ের সহায় হওয়া, অন্নহীনদের অন্ন জোগাড় করে দেওয়া, পশুপাখির আশ্রয় ও আহার জোগাড় করা, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেওয়া, পথহারাদের সঠিক পথ দেখানো প্রভৃতি কাজে আত্মনিয়োগ করা উন্নত নৈতিক চরিত্রের অংশ। (ইবরাহিম খলিল, বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম, পৃষ্ঠা-১৭৩)
 
এ প্রসঙ্গে সাদিক আর-রিকাবি জরথুস্ত্রের তিনটি অমূল্য বাণী উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন মানুষের জন্য তিনটি অসম্ভব কাজকে বাস্তবে রূপায়ণ করা অপরিহার্য।
 
 
শত্রুকে বন্ধু বানানো, অসৎ লোককে সৎ লোকে পরিণত করা এবং অশিক্ষিত লোককে শিক্ষিত লোকে রূপান্তর করা।’
ব্যক্তিগত শিক্ষা : এ ধর্মে ব্যক্তিশিক্ষার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়ে পুণ্যের কাজে আত্মনিয়োগ করবে। অধ্যবসায়, প্রতিশ্রুতি পূরণ, সর্বদা সত্য কথা বলা, সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন, ভালো কাজে আনুগত্য করা, লোভ-লালসা পরিহার ইত্যাদি পুণ্যের কাজ। অন্যদিকে ব্যভিচার, গর্ভপাত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি, মিথ্যাচারিতা ইত্যাদি গর্হিত অপরাধ হিসেবে এ ধর্মে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
 
 
মানবসমাজকে শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ও কল্যাণময় করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে জরথুস্ত্র ধর্মে অনিবার্য বিষয় হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
পারিবারিক শিক্ষা : সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য এ ধর্মে বিবাহের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। বৈরাগ্য ও সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধর্মে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা পারিবারিক শিক্ষার মূল কথা। জরথুস্ত্র শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনের জন্য বিবাহের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। (লামহাত আন আদইয়ানিল আলাম, পৃষ্ঠা-২৮৭)
 
এ ধর্ম নির্দেশ করে যে সন্তান জন্ম দিতে হবে। তাদের সুশিক্ষিত করতে হবে এবং নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত করতে হবে। (Ismail Ragi Al-Faruqi. Historical Atlas of the Religions of the World (New York: MacMillan Publishing Co.), p. 135.)
 
আধ্যাত্মিক শিক্ষা : জরথুস্ত্র ছিলেন পরকালে বিশ্বাসী একজন সাধক পুরুষ। তাঁর মতে, দুনিয়ায় একটি জীবন ও ভবিষ্যতে আরেকটি জীবন আছে। এ জীবন শুরু হবে মানুষের পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে। (লামহাত আন আদইয়ানিল আলাম, পৃষ্ঠা-২৮২)
 
তাই দুনিয়ার এ জীবনে শত নির্যাতন সহ্য করে সত্যকে আঁকড়ে থাকতে হবে। শেষ বিচারের দিনে পুণ্যের পাল্লা যদি ভারী হয় তাহলে তাকে স্বর্গরাজ্যের পথ দেখানো হবে। সে চলে যাবে অনন্ত সুখরাজ্যে। যদি পাপের পাল্লা ভারী হয় সে হবে নরকবাসী। আর যদি পাপ ও পুণ্যের হিসাব সমান হয় তাহলে তাকে ছায়ারাজ্যে অবস্থান করতে হবে। এই পারলৌকিক বা আধ্যাত্মিক শিক্ষা দ্বারা জরথুস্ত্র মানবতার উৎকর্ষ সাধনে ছিলেন সদাব্রত। (Historical Atlas of the World, op.cit., p. 135)
 
ধর্মগ্রন্থ
 
জেন্দাবেস্তা হলো জরথুস্ত্র ধর্মের ধর্মগ্রন্থ। এ ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী ৪০ বছর বয়সে জরথুস্ত্র ঈশ্বর আহুরামাজদার নিকট থেকে মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে পবিত্র জেন্দাবেস্তা লাভ করেন। জেন্দ শব্দের অর্থ ভাষ্য আর আবেস্তার অর্থ হলো মূল গ্রন্থ। ইউরোপে গ্রন্থটি জেন্দু-আবেস্তা নামে পরিচিত। পারসিকরা জেন্দু বলতে পাহলভী ভাষায় রচিত আবেস্তার ব্যাখ্যা ও টীকাকে বুঝে থাকে।
 
এই ধর্ম মতে, ঈশ্বর আহুরামাজদা হলেন কল্যাণের প্রতিনিধি আর আহিরমান হলেন অকল্যাণের প্রতিনিধি। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হলেন জরথুস্ত্র। তিনি আনুমানিক ৬৫০ খ্রিস্ট আগে তৎকালীন মেডিয়া সাম্রাজ্যের রাঘানগরে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমান ইরানের রাঈ শহরে)। ৫৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বর্তমান আফগানিস্তানের বলখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
captcha