"ইউরোপীয় পরিচয়" ইনস্টিটিউট ভবনে অনুষ্ঠিত "ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর আধ্যাত্মিকতা এবং মডেল; সমসাময়িক রাজনীতির পুনরুজ্জীবন" শীর্ষক বিশেষ সেমিনারের অবকাশে একটি সাক্ষাৎকার দেন অ্যাডলফো মরগান্তি। মঙ্গলবার ইরনাকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে, ইরানি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে তাদের সহযোগিতার ইতিহাস সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডলফো মরগান্তি আরও বলেন: "আমাদের প্রকাশনা সংস্থাটি বিশ বছর ধরে রোমে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক সেন্টারের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। এই সহযোগিতা ২০০৬ সালে ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর "ইসলামী সরকার বা বেলায়াতে ফকিহ" শীর্ষক গ্রন্থের ইতালীয় অনুবাদ প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এছাড়াও, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, আমরা " ইউরোপীয় পরিচয়" সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছি এবং আমরা ইসলাম ও ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ জোরদার করার চেষ্টা করেছি।
"ইউরোপীয় পরিচয়" সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের প্রধান বলেছেন: পাঁচ বছর আগে, কোমের ধর্ম ও মাজহাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং "আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক" বিষয়ক একটি উচ্চ শিক্ষা কোর্স পাঠদানের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই চুক্তি আমার এবং অধ্যাপক ফ্রাঙ্কো কার্ডিনির সহযোগিতায় ডিজাইন করা হয়। কোর্সটি এখন সান মারিনো বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানো হয় এবং "ইনস্টিটিউট ফর রিলিজিয়াস স্টাডিজ এ. মরভেল্লি" ও স্থানীয় ক্যাথলিক চার্চের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।
"ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?" এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন: "ইসলামী বিপ্লব ছিল ১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা অচলাবস্থা এবং পূর্ব ও পশ্চিম-দুই ব্লকে বিভক্ত বিশ্বভাবনার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া। এই বিপ্লব ছিল একটি সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক নবজাগরণ।
মরগান্তি আরও বলেন: আমাদের মধ্যে যারা ইউরোপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের শিকারে পরিণত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাদের জন্য ইসলামী বিপ্লব দেখিয়ে দিয়েছে যে আমাদের কেবল ক্ষমতার আধিপত্য থেকে মুক্ত হলেই চলবে না বরং এই বিপ্লবের পথটিও দৃঢ়তার সাথে অনুসরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন: ইরানের ইসলামী বিপ্লব কোনও আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ থেকে উদ্ভূত হয়নি বরং এটি কয়েক শতাব্দী আগের শিয়া ঐতিহ্যের গভীর শেকড়ে নিহিত ছিল। এই বৈশিষ্ট্যটিই বিপ্লবের স্বতন্ত্র বিন্দু এবং আমরা ধর্ম ও রাজনীতির ঐশ্বরিক অর্থে একীকরণের উদাহরণ হিসাবে এর প্রশংসা করি।
'ইউরোপীয় পরিচয়' সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের প্রধান আরও বলেন: আমাদের মধ্যে যারা ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের দুই হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকি, ইসলামী বিপ্লব তাদেরকে দেখিয়েছে যে ধর্মের কেবল একটি ব্যক্তিগত মাত্রা নয় বরং সমাজ গঠন করার দায়িত্ব রয়েছে। এটা সেই দৃষ্টিভঙ্গি যা আজকের সমাজের পরিচয় সংকট থেকে মুক্ত করতে পারে।
তিনি ফিলিস্তিনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে আরও বলেন: নিঃসন্দেহে আজ পবিত্র ভূমিতে আমরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের সাথে পাশাপাশি বসবাসকারী মানুষদের ধ্বংস করার জন্য জায়নবাদী মৌলবাদের প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করছি। এই অপরাধ ধর্মীয় ব্যক্তিদের সম্মান ও মর্যাদাকে আহত করেছে। এ প্রসঙ্গে মরগান্তি স্পষ্ট করে বলেন যে কেবলমাত্র ইসলামী ও খ্রিস্টান বিশ্বের মধ্যে ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা এই মানবিক বিপর্যয়কে প্রতিরোধ করতে পারি এবং রুখে দাঁড়াতে পারি।#
পার্সটুডে