আল-শোহাদা সেন্টারে তাঁর গ্রামের বাড়ির সামনে যখন তাঁকে ঘিরে জড়ো হয় নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজন, তখন পরিবেশে আনন্দ, আকাঙ্ক্ষা ও তৃপ্তির এক অপূর্ব সম্মিলন ঘটে। ৬৪ বছর বয়সী হাসানাইন মাহমুদ মক্কা ও মদিনায় কয়েক দিন কাটিয়ে সম্প্রতি নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। হজের এই অভিজ্ঞতা নিয়ে আলজাজিরা মুবাশ্বেরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, যদি কেউ প্রতিবছর হজে যেতে পারত, নিজের পাপ মোচন করতে পারত, আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারত এবং আমাদের প্রিয় নবীর রওজা জিয়ারত করতে পারত।’ নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে হাসিমুখে তিনি আরো বলেন, ‘এই পবিত্র স্থানগুলোতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের যে সৌন্দর্য, তাতে কখনো ক্লান্তি আসে না।’এই প্রথম স্থলপথে ফিরলেন হাজিরামিসরের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, হাসানাইন মাহমুদের হজযাত্রা ছিল একটি বিশেষ অভিযানের অংশ, যা ছিল মিসরের প্রথম ‘স্থলপথে হজফেরত হাজিদের কনভয়’।এই কনভয়ের মাধ্যমে ১১ জুন হাজিরা সৌদি আরব থেকে জর্দান হয়ে নুয়েইবা বন্দর দিয়ে মিসরে ফিরতে শুরু করেন। নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল এই যাত্রার মাধ্যমে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে মিসরীয় হজ ব্যবস্থাপনায়।মিসরের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি কম্পানিগুলো আয়োজিত পর্যটন হজ আরো সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। লটারির মাধ্যমে বা এনজিওর মাধ্যমে যাদের যাত্রা হয়, তাদের তুলনায় এই পর্যটনের মাধ্যমে হাজিরা দ্রুত দেশে ফিরে আসেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানভাড়া বাদে এ বছর পর্যটক হজের খরচ ছিল দুই লাখ ২০ হাজার থেকে চার লাখ মিসরীয় পাউন্ডের মধ্যে।ঐতিহ্যবাহী অভ্যর্থনামিসরের গ্রামাঞ্চলে হাজিদের ফিরে আসাকে কেবল একটি পারিবারিক আয়োজন নয়, বরং এক ধরনের উৎসব হিসেবেই দেখা হয়।পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-পড়শিকে নিয়ে সবাই আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে।এমনই এক দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে আল-শোহাদা সেন্টারে হাসানাইন মাহমুদের গ্রামের বাড়ি। হজফেরত দাদাকে ঘিরে অনুভূতি জানাতে গিয়ে তাঁর ২১ বছর বয়সী নাতি ইয়াসের বলেন, ‘অতীতে মানুষ তাঁদের ঘর সাজাত, দেয়ালে কাবা ও বিমানের ছবি আঁকত। এখন সব কিছু একটু সহজ হয়েছে। আমরা পরিবার-পরিজন মিলে একত্র হই, ধর্মীয় গান গাই, আর ছোট ছোট উপহার দিয়ে আনন্দ ভাগ করে নিই।’হজফেরত হাসানাইন মাহমুদের বাড়িতে ছিল উপহারের উচ্ছ্বাস। তাঁর ছোট নাতনি আমানিয়া দাদুকে স্বাগত জানানোর পর পেয়েছে তার মায়ের দেওয়া প্রতিশ্রুত উপহার। ১০ বছর বয়সী এই মেয়েটি বন্ধুদের সঙ্গে বসে গাইছিল একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গান।‘কোথায় যাচ্ছো, মখমলের শাল পরা মহিলা? আমি নবী মুহাম্মদ (সা.) ও পবিত্র কাবা শরিফ দেখতে যাচ্ছি।’আনন্দে ভরা চোখে আমানিয়া বলল, ‘আমি খুশি যে আমার দাদু নিরাপদে ফিরে এসেছেন, আর আমার জন্য একটি তাসবিহ এনেছেন।’