
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের মেহার গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি, যা এলাকাবাসীর কাছে তিন গম্বজ মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটির ভেতর ও বাইরে আছে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন কারুকাজ। চীনামাটির ভাঙা প্লেটের টুকরা দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনে মসজিদ নির্মাণ করা হয়; মসজিদটির চারপাশের দেয়াল তিন ফুট পুরু।
যে কারণে শীতকালে মসজিদের ভেতর গরম আর গরমকালে ঠাণ্ডা অনুভূতি হয়। পুরো মসজিদটি চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ভেতরের মিম্বারটিতে আছে সুনিপুণ হাতে নির্মিত অপূর্ব কারুকাজ। একবার দেখলে মন ভরে যায় সৌন্দর্যের কারণে।
মসজিদের দেয়ালে নির্মাণ সন লেখা আছে ১৩৩১ বাংলা ও ১৯২৫ সাল। তৎকালীন সময়ে জমিদারি প্রথা চালু থাকার কারণে উপজেলার মহিচাইল গ্রামের জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহের অনুমতি নিয়ে মেহার গ্রামের প্রভাবশালী দানবীর ব্যক্তি হাজি নজর মামুদ ১০ শতাংশ জায়গায় এ মসজিদ নির্মাণ করেন। হাজি নজর মামুদের নাতি হাজি রমিজ, হাজি আব্দুল খালেক বলেন, মসজিদটি নির্মাণের সময় জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ হাতিতে চড়ে এসে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। জমিদার শ্রী ভৈরব চন্দ্র সিংহ তখন একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন।
যার জমিদারির অধীন ছিল চান্দিনা, বরুড়া, দেবীদ্বার ও দাউদকান্দি এলাকা নিয়ে। তৎসময়ে জমিদারি প্রথা চালু থাকার কারণে জমিদারের নির্দেশ মোতাবেক সব কাজ হতো। মসজিদটি নির্মাণের পর এর নাম দেন—মেহার নজর মামুদ হাজী বাড়ি জামে মসজিদ, যা বর্তমানে চান্দিনা উপজেলার সরকারি ওয়েবসাইটে মেহার মধ্যপাড়া হাজী বাড়ি জামে মসজিদ নামে উল্লেখ আছে। আর উপজেলার ৯ নম্বর মাইজখার ইউনিয়নের সরকারি ওয়েবসাইটে আছে মেহার রমিজ হাজী বাড়ির জামে মসজিদ নামে। মূলত মসজিদের নাম হলো নজর মামুদ হাজী বাড়ি জামে মসজিদ।
সে সময়ে হাজি নজর মামুদ হেঁটে মক্কা শরিফ গিয়ে হজ করেছেন। তৎসময়ে এলাকায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো মসজিদ ছিল না। তাই তিনি এলাকার মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য নিজ উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির সামনে রেখেছেন মুসল্লিদের বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা করার জন্য বসার স্থান। মসজিদটির দক্ষিণ পাশে মুসল্লিদের অজু-গোসল করার জন্য তিনি ১২০ শতক জায়গায় একটি পুকুর খনন করেন। এই পুকুরে পাকা ঘাট আছে। তিনি মসজিদটি নির্মাণ করে ভবিষ্যতে মসজিদ পরিচালনার জন্য, প্রতি রমজান মাসের কদরের রাতে মুসল্লিদের খাবার, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের খরচসহ অন্য ব্যয়ভার বহন করার জন্য মসজিদের নামে ২৬৪ শতক জায়গা ওয়াক্ফ করেন।