
পাণ্ডুলিপিগুলো এখন ধ্বংসের মুখে। বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সংগ্রহশালার দেয়াল থেকে আসা স্যাঁতসেঁতে বাতাস, উইপোকা ও উইভিল পোকার সম্মিলিত আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের কারণে জাদুঘর বিধ্বস্ত হয়েছে এবং প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠাগুলো আরো বেশি কুঁকড়ে যাচ্ছে। জাদুঘরের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন সংগ্রহশালার কক্ষগুলোর অবস্থা সুবিধাজনক নয়।
অবহেলা, স্বল্প অর্থ বরাদ্দ ও সময়ের পরিক্রমা এর অবকাঠামো ক্ষতির সম্মুখীন করেছে।
তায়িজ জাতীয় সংগ্রহশালার উপ-প্রধান আহমদ জাসসার বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আমাদের এখানে ৪৫ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এর ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। আর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে সংঘাতকালীন লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও চুরির কারণে।
এক দশকের সংঘাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইয়েমেনের জাদুঘর ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো চরম হুমকির মুখে পড়েছে। সংঘাতের বাইরে ইয়েমেনের তাপমাত্রা, আকস্মিক বন্যা ও বালুঝড় ক্রমেই বাড়ছে, যা দেশটির তিন হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা করা কঠিন করে তুলেছে। ‘দ্য জাপান কনজার্টিয়াম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অন কালচারাল হেরিটেইজ’-এর ২০১০ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বন্যার কারণে ইয়েমেনের একাধিক জাদুঘর ভবনের ক্ষতি হয়। উদাহরণস্বরূপ হাদারামাউতের আল মুকাল্লা প্রাসাদ, যা একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ২০০৮ সালের বন্যার কারণে এর সিলিংয়ে ফাটল এবং দেয়াল অস্বাভাবিক আর্দ্রতা দেখা দেয়।
ফলে জাদুঘরটি বন্ধ করে দিতে হয়।
এডেনে বৃষ্টির মৌসুম এলে এডেনের জেনারেল অথরিটি ফর এনটিকস অ্যান্ড মিউজিয়ামস-এর মহাপরিচালক মুহাম্মদ আল সাফাক-এর দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। কেননা জাদুঘর ভবনের ফাটা দেয়াল চুইয়ে পানি প্রবেশ করে এবং প্রদর্শনী হলের মেঝে ভেসে যায়। তখন আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায়, দেয়াল খসে পড়তে থাকে এবং সর্বত্র লোনা স্ফীত হয়।
ইয়েমেনের প্রাচীনতম জাদুঘরের একটি এডেন জাতীয় জাদুঘর। এটা এখন উইপোকা ও ইঁদুরের বসতিতে পরিণত হয়েছে, যা প্রাচীন কাপড় ও পাণ্ডুলিপি ধ্বংস করছে। ২০০৯ সাল থেকে জাদুঘরটির ক্রমাবনতি হচ্ছে। এখানে চার হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু আছে। এর মধ্যে ১২ ডজনের বেশি ব্রোঞ্জের নিদর্শনে ক্ষয় দেখা দিয়েছে, ৫০০ পাথরের নিদর্শন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং বেশ কিছু প্রাচীন শিলালিপি পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে গেছে। মুহাম্মদ সাফাক জানান, বছরের পর বছর ধরে ভবনগুলো সংস্কার করা হয়নি।
ইয়েমেনের সংকট শুধু জাদুঘরে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভারি বর্ষণ দেশটির অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যার মধ্যে আছে হাদারামাউতের কাঁচা ইটের তৈরি শিবাম ভবন থেকে তায়িজের কায়রো দুর্গ পর্যন্ত। এ ছাড়া সানা, জাবিদ ও তারিমে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে থাকা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থাপনাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালুঝড়ে চাপাপড়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোও খননের কোনো উদ্যোগ নেই। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ইয়েমেনের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার হারও কমেছে। তবে সম্প্রতি ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশের দাতব্য সংস্থা ইয়েমেনের জাদুঘরগুলো সংরক্ষণে এগিয়েছে, যা দেশটির প্রত্নতাত্ত্বিকদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও লাঘব করছে।
সূত্র : দ্য নিউ আরব