IQNA

ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা: ইতিহাসের আধুনিক তাগুতের মুখ

0:07 - November 15, 2025
সংবাদ: 3478437
ইকনা- আজকের বিশ্বে ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা শুধু ইসলামি বিশ্বের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও এক গভীর হুমকি। কোরআন, বুদ্ধিবোধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এই অবৈধ শাসনব্যবস্থার সমাপ্তি অবধারিত — এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সময় আজ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিকটবর্তী।

গবেষক আলী মারুফি আরানি, যিনি জায়নবাদী   ইহুদিয়াত বিষয়ে গবেষণা করেন, ইকনা-কে প্রদত্ত তাঁর প্রবন্ধ ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা: ইতিহাসের আধুনিক তাগুতিক রূপ এই বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী এবং বনিইসরাইলের পরিণতি

কোরআন মজিদ আল্লাহর অনন্ত মুজিজা, যা শুধু মানবতার হিদায়াতের গ্রন্থই নয়, বরং অতীত ভবিষ্যতের মানবসমাজ সম্পর্কে বহু অদৃশ্য সংবাদ নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী ধারণ করে। সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মধ্যে বনিইসরাইল এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে কারণ ইতিহাস জুড়ে তাদের ধারাবাহিক নফরমানি, বর্বরতা, সন্ত্রাস এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ কোরআনের বহু আয়াতে নিন্দিত হয়েছে।

কোরআন ঘোষণা করেছে যে, যেমন একদিন তাদের শক্তি আধিপত্য পবিত্র ভূমিতে ভেঙে ধুলিসাৎ হয়েছিল, তেমনই ভবিষ্যতেও তারা আবার পরাজিত হবে এবং এবার আল্লাহর বান্দাদের হাতে

আর আমরা বইতে বনিইসরাইলকে বলে দিয়েছিলাম যে, তোমরা অবশ্যই পৃথিবীতে দুই বার বিপুল ফেতনা ফেসাদ সৃষ্টি করবে এবং অবশ্যই সীমানাহীন অহংকারে লিপ্ত হবে। (সূরা আলইসরা, আয়াত )

অতঃপর যখন প্রথম ওয়াদা পূরণের সময় এল, তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রভাবশালী শক্তিশালী বান্দাদের পাঠালাম যারা তোমাদের ঘরবাড়ির ভেতর পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করল। এবং এটি ছিল এক অবধারিত ঘোষণা। (সূরা আলইসরা, আয়াত )

গবেষকের মতে, কোরআনের সবচেয়ে মহান মুজিজাগুলোর একটি হলো ভবিষ্যতের ঘটনা সম্পর্কে এর সুনির্দিষ্ট সংবাদ প্রদান। কোরআনের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ইসলাম পূর্ব যুগের বিষয়ে, আবার কিছু ইসলাম আগমনের পরের সময় সম্পর্কে যেগুলোর বড় অংশই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বাকিগুলো ইনশাআল্লাহ নিকট ভবিষ্যতে বাস্তবে রূপ নেবে।

 ইসরাইল: একটি দখলদার কাঠামো

ইসরাইল নামক রাষ্ট্র কোনো প্রাকৃতিক ভূখণ্ড, জাতি বা ন্যায্য অধিকার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়; বরং একটি জাতির অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে তাদের ভূমি জবরদখল করেই এই কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই কারণেই ইসরাইল শুধু মুসলিম দেশগুলোর নিরাপত্তার বিরুদ্ধে নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তির বিরুদ্ধেও একটি বড় হুমকি।

 নির্বাচন করে যুদ্ধ চাপানোর প্রবণতা

গবেষকের মূল্যায়নে দেখা যায় বিশ্বে যেখানেই আগ্রাসন, যুদ্ধ, গৃহহিংসা, দখলদারিত্ব কিংবা অস্থিতিশীলতা দেখা যায়, সেখানেই জায়নবাদী লবির ছাপ স্পষ্ট। গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, মিয়ানমারসহ বিশ্বের বহু দেশে নিরীহ মানুষের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞ তার উদাহরণ।

একদিকে তারা সামরিক আগ্রাসন চালায়, অপরদিকে বিশ্বের মিডিয়া প্রযুক্তিগত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনৈতিকতা, পরিবারবিভক্তি, যৌনবিকৃতি, মানসিক দাসত্ব সাংস্কৃতিক ধ্বংস ছড়িয়ে দেয়। এর উদাহরণ হিসেবে গবেষক রুপার্ট মারডকএর নাম উল্লেখ করেন, যিনি ইহুদি জায়নবাদী এবং যাঁর নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম অশ্লীলতার প্ল্যাটফর্ম পরিচালিত হয়।

ইসলামি শিক্ষা নৈতিক দায়িত্ব

কোরআনের দৃষ্টিতে, জুলুমে পক্ষে এবং মজলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান করা কঠোরভাবে নিন্দিত। গবেষক হজরত আলী (.)এর বিখ্যাত ভাষণ (নাহজুল বালাগা পত্র ৪৭) উল্লেখ করে বলেন:

সবসময় জুলুমে শত্রু হও এবং মজলুমের সহায়ক হও।

এছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)এর দুটি হাদিস উদ্ধৃত করা হয়: যে ব্যক্তি কোনো মজলুমের হক আদায় না হওয়া পর্যন্ত তার পাশে দাঁড়ায়, আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাকে দৃঢ়ভাবে স্থিত রাখবেন। যে ব্যক্তি জুলুমে কাছ থেকে মজলুমের অধিকার আদায় করে দেয় সে জান্নাতে রাসুল (সা.)এর সঙ্গ লাভ করবে।

আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ

গবেষকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী

কনভেনশন অব মঁতোভিডিও (১৯৩৩) অনুসারে রাষ্ট্র হওয়ার জন্য চারটি শর্ত আছে:
1
. স্থায়ী জনসংখ্যা
2
.  নির্দিষ্ট ভূখণ্ড
3
.  স্বাধীন সরকার
4
. অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা (সার্বভৌমত্ব)

ইসরাইল এসব শর্ত পূরণ করে না, কারণ: ইহুদি জনসংখ্যার বড় অংশ প্যালেস্টাইনের স্থায়ী অধিবাসী ছিল না, তাদের জোরপূর্বক বিভিন্ন দেশ থেকে এনে বসানো হয়েছে, জনসংখ্যাগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো জাতিগত বা সাংস্কৃতিক ঐক্য নেইফলে আন্তর্জাতিক আইনের ভাষাতেও এটি একটি অবৈধ রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা

ইরানের প্রস্তাবিত সমাধান

গবেষক জোর দিয়ে বলেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান শুধু ইসরাইল-বিরোধী অবস্থান নেয়নি, বরং বিশ্বজনগণের কাছে সর্বাধিক যৌক্তিক আন্তর্জাতিক আইনসম্মত সমাধানও দিয়েছে: প্যালেস্টাইনের মূল অধিবাসীদের (মুসলিম, খ্রিস্টান ইহুদি) ফিরে আসা,  একটি বহুদলীয় স্বাধীন গণভোট (রেফারেন্ডাম) এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ভবিষ্যতের রাষ্ট্র কাঠামো নির্ধারণ করবে

 সব প্যালেস্টিনিদের অংশগ্রহণে নির্বাচনই সমাধান। বিশ্ব জানে গণভোট মানে এই অবৈধ শাসনব্যবস্থার পতন। এবং এই নিশ্চুপতা সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক কারণ এই জুলুম মানুষদের ওপর চিরকাল চাপিয়ে দেওয়া যায় না।

চূড়ান্ত বিশ্লেষণ

গবেষকের উপসংহার:

·         আল্লাহর سنت সত্যের বিজয় এবং মিথ্যার পতন; ظالم যত শক্তিশালীই হোক স্থায়ী নয়

·         ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা বনিইসরাইলের ইতিহাসের আজকের রূপান্তরিত চেহারা

·         এর শেষ হবে আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের হাতে

·         মুসলমান মানবিক বিবেকসম্পন্ন মানুষের নীরব থাকা অপরাধ বিশ্বাসঘাতকতা

·         ভবিষ্যৎ সত্যপ্রত্যাশীদের এবং পৃথিবীর উত্তরাধিকার হবে সালেহ বান্দাদের

গবেষকের ভাষায়: সিয়োনিজমের পতন কোনো অদূর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয় বরং তা বাস্তবে রূপ নেওয়ার লক্ষণ প্রতিদিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।” 4314189#

 

captcha