আল কোরআনের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّـهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّـهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, ইবাদতকারী পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও নারী, খোদাভীরুপুরুষ ও নারী, ছদকা দানকারী পুরুষ ও নারী, রোযাদার পুরুষ ও নারিগণ এবং যে সকল পুরুষ ও নারী তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং যে সকল পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের সকলের জন্যেই আল্লাহ তা’য়ালার কাছে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।(সূরা আহযাব- ৩৫।)
এই পবিত্র আয়াতে, পুরুষ ও নারীকে পাশা-পাশি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’য়ালা পুরস্কার দান ও ক্ষমা করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
হে মানব সকল! আমরা তোমাদের সকলকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি এ কারণে যে, তোমরা যেন একে অপরকে চিনতে পার (এবং বুঝতে পার বংশ ও গোত্র কোন গর্বের বিষয় নয়)। তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম যে অন্যের থেকে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং মানুষের ভাল ও মন্দ কাজের বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন।(হুজুরাত- ১৩।)
এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা’য়ালা পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য তাঁর ও একক, পবিত্র সত্তাকে উত্তমরূপে জানা বলে উল্লেখ করেছেন। আর বংশ, ক্ষমতা, ধন-দৌলত, জ্ঞান, রং, ভাষা ও ভৌগলিকতার (আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ইত্যাদি) ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষের মর্যাদাকে নির্ধারণ করেন নি বরং আল্লাহর কাছে উত্তম বস্তু হচ্ছে তাকওয়া, আর তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে মেনে চলা।
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
পুরুষ ও নারীদের মধ্য থেকে যারাই ঈমান আনবে এবং উত্তম কাজ আঞ্জাম দিবে, তাদেরকে আমরা পবিত্র জীবন দান করবো এবং তাদের কাজের তুলনায় উত্তম পুরস্কার দান করব।(নাহল- ৯৭।)
এই আয়াতেও আল্লাহ্ তা’য়ালা উত্তম কাজের বিনিময় স্বরূপ পুরস্কার ও সওয়াব দানের অঙ্গীকার করেছেন, আর সৎকর্ম সম্পাদনকারী পুরুষই হোক অথবা নারী হোক কোন পার্থক্য করেন নি বরং যে কোন বান্দাই এই ভাল কাজ আঞ্জাম দিবে আল্লাহ তা’য়ালা তাকেই এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আল্লাহ্ তা’য়ালার নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে যে, তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সহধর্মিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তাদের সান্নিধ্যে প্রশান্তি অনুভব করতে পার, আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও রহমতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ সব কিছুই হচ্ছে নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে।(রূম- ২১।)
এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা’য়ালা নারী সৃষ্টিকে তাঁর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নারীরা হচ্ছে ভালবাসা, রহমত ও প্রশান্তির কারণ। বিশিষ্ট মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবাই (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, পুরুষ ও নারী এমনই এক সৃষ্টি একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে যারা উভয়ই পূর্ণতা অর্জন করে এবং এ দু’য়ের মিলনের মাধ্যমে মানব জাতির বংশ বিস্তার ঘটে থাকে, আর তারা একজন অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ।
আল্লাহ্ তা’য়ালা এই আয়াতের শেষে বলছেন : এই বিষয়টি তাদের জন্য নিদর্শন যারা চিন্তা করে বা যারা বিবেক সম্পন্ন। তারা এর মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে, পুরুষ ও নারী একে অপরের পরিপূরক। আর নারীই একটি পরিবারকে সতেজ ও উদ্যমী করে রাখে এবং এর সদস্যদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। যে কারণে পুরুষ ও নারী শুভ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত ভালবাসা ও রহমত। শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার কারণেই তারা এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না।
কিন্তু পুরুষ ও নারীর বন্ধনের মধ্যে দু’টি দিক বিদ্যমান। তার একটি হচ্ছে ঐশী ও ভালবাসার দিক অপরটি হচ্ছে পাশবিক দিক। তবে মানুষ তার ঐ ঐশী ও ভালবাসার বোধের মাধ্যমেই পূর্ণতায় পৌঁছে থাকে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছি তা হচ্ছে, অনেক মুফাসসির উল্লিখিত আয়াত ও এ ধরনের আরো কিছু আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, নারী পুরুষের শরীরের অংশ। কেননা তাদেরকে পুরুষের শরীরের অংশ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই ধরনের তফসিরের ফলে অনেক সুবিধাবাদী পুরুষ, নারীদেরকে তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের মনে করে থাকেন যা নারীর জন্যে একটি অপমান জনক বিষয়। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আয়াতসমূহকে তারা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন :
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
হে মানব সকল! তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা থেকে তার সহধর্মিণীকেও এবং ঐ দু’জন থেকে অনেক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন।(নিসা- ১।)