বার্তা সংস্থা ইকনা: ইন্দোনেশিয়া অবস্থিত ইরানী কালচারাল সেন্টার "ইন্দোনেশিয়ায় পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতর" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ইকনাকে দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে: অনেক পূর্ব থেকে বিশ্বের মুসলমানেরা পবিত্র রমজানের বিশেষ সংস্কৃতি পালন করে আসছে। প্রতি দেশের মুসলমানেরা নিজ সংস্কৃতিতে এই অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানেরা বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানেরা আলোড়নপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশের মুসলমানেরা নিজ সংস্কৃতিতে এই অনুষ্ঠান পালন করেছে।
জাভায় নিদারান (Nyadran or Nyekar) সংস্কৃতি
নিদারান সংস্কৃতি অতি প্রাচীন একটি সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার জাভার মুসলমানেরা পবিত্র রমজান মাসকে সাদরে গ্রহণ করে। পবিত্র রমজান মাস শুরুর কয়েক দিন পূর্ব থেকে মুসলমানেরা নিজেদের মরহুম আত্মীয়-স্বজনকে কবরে উপস্থিত হয় এবং কবর পরিষ্কার ও ধৌত করার পর কবরের উপর ফুল ও সেখানে কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও নামাজ আদায় করে।
সেন্ট্রাল জাভার ডুঘডাড়ান (Dugderan) সংস্কৃতি
ডুঘডাড়ান সংস্কৃতি ১৮৮১ সালে থেকে শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যারা যে সকল যুবক যুবতীরা নতুন রোজা রাখে তাদের স্বাগত জানানো হয় এবং তাদের স্বাগত জানানোর জন্য পশু জবাই করা হয়। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে দীর্ঘ কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করা হয়। কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানটি Warak Ngendog নামে প্রসিদ্ধ। Warak Ngendog একটি ড্রাগনের নাম।
আচের মিউঙ্গাং (Meugang) সংস্কৃতি
সুলতান ইস্কান্দার মুদা'র সময় থেকে মিউঙ্গাং বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অচের মুসলমানেরা বিভিন্ন ধরণের পশু জবাই করে তা জনগণের মধ্যে বিতরণ করে। মিউঙ্গাং অনুষ্ঠানটি বছরে ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর এবং পবিত্র রমজান মাসের পূর্বে মোট তিনবার অনুষ্ঠিত হয়। এই সংস্কৃতিতে আচের মুসলমানেরা একটি ছাগল অথবা গরু জাবাই করে।
পশ্চিম সুমাত্রায় বালিমাও মিনাঙ্গকাবু (Balimau-Minangkabau) সংস্কৃতি
বালিমাও এমন একটি সুন্নত যার মাধ্যমে সুমাত্রার মুসলমানেরা চুনা পাথরের পানি দিয়ে গোসল করে। সাধারণত এই অনুষ্ঠান সেই সকল স্থানে অনুষ্ঠিত হয়, যে সকল স্থানের নদীতে স্রোত প্রবাহিত হয়। বালিমাও শব্দের অর্থ হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসের পূর্বে মানুষের আত্মা ও শরীরকে পবিত্র করা।
বিটাভি উপজতিদের জন্য নিউরোগ (Nyyorog) সংস্কৃতি
এই সংস্কৃতিটি বিটাভি উপজাতীয়রা পালন করে থাকে। এই সংস্কৃতির মাধ্যমে মুসলমানেরা নিজেদের পরিবারের গুরুজন ও প্রবীণ সদস্য বিশেষ করে দাদা-দাদী, নানা-নানী, পিতা-মাতাদের সাথে দেখা করেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উপহার দেয়। পূর্বে খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রান্না করা সবজি ও মাস থাকত। তবে বর্তমানে বিস্কুট, ইনস্ট্যান্ট কফি, চিনি, শরবত এবং চা সহ অন্যান্য উপহার থাকে।
বালি শহরে মাঘিবাঙ্গ (Megibung) সংস্কৃতি
মাঘিবাঙ্গ সংস্কৃতি পালনের মাধ্যমে বালির মুসলমানেরা পবিত্র রমজান মাসকে স্বাগত জানায়। মাঘিবাঙ্গ শব্দটি (ইন্দোনেশিয়ার) ঘিবাঙ্গ থেকে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ভাগ করা, গোল হয়ে পাশাপাশি বাস এবং একত্রে খাবার খাওয়া। এই অনুষ্ঠান ১০, ২০ এবং ৩০ রমজানের বালির পূর্বাঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। এই সংস্কৃতিটি ১৭ শতাব্দীর তৎকালীন রাজার আমল থেকে প্রচলিত হয়েছে।
পূর্ব জাভার মিঘিনঙ্গান (Megengan) সংস্কৃতি
পূর্ব জাভার মুসলমানেরা বিশেষ করে টুবান, মালাঙ্গ ও সুরআবায় অঞ্চলের মুসলমানেরা পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে এই অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। মিঘিনঙ্গান শব্দটি মিগাঙ্গ শব্দ থেক গৃহীত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে "অনুষ্ঠান উদযাপন করা"। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলমানেরা পবিত্র রমাজানের আগমনকে স্মরণ করে এবং গুনাহ থেকে দুরে থাকে। এসময়ে মুসলমানেরা মসজিদে একত্রিত হয় এবং সেখানে একত্রে ইবাদত ও দোয়া পাঠ করে। নিজেদের মরহুম স্বজনদের কবর জিয়ারত করে। অতঃপর তার একত্রে খাবার খাই। প্রাচীন এই সংস্কৃতির ফলে পূর্ব জাভায় ইসলাম ধর্মের বিস্তার ঘটে।
পশ্চিম সুমাত্রায় মালামাঙ্গ সংস্কৃতি
মালামাঙ্গ শব্দের অর্থ হচ্ছে কাচা বাঁশের মধ্যে ভাত রান্না করা। এই সংস্কৃতির মাধ্যমে পশ্চিম সুমাত্রার মুসলমানেরা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বাঁশের মধ্যে ভাত ও বারবিকিউ রান্না করে।
ইন্দোনেশিয়ার সর্বশের উৎসব অনুষ্ঠান হচ্ছে ঈদুল ফিতর
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল ফিতরের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রমজানের উৎসব শেখ হয়। এই অনুষ্ঠানটি সেদেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানেরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঈদুল ফিতর পালন করে।
এই দিনে মুসলমানেরা ঈদের দুই রাকাত নামাজ এবং নিজেদের আত্মীয়দের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া সহ অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।