IQNA

অন্ধকার জগতকে নুরান্বীত করতেই নবী করিম (সা:) ও তাঁর আহলে বাইতের (আ:) আগমন

20:07 - October 25, 2021
সংবাদ: 3470868
তেহরান (ইকনা): আজ ১৭ রবীউল আওওয়াল আহলুল বাইতের (আঃ) প্রসিদ্ধ অভিমত অনুসারে মহানবী (সা:) এবং তাঁর বংশধর পবিত্র আহলুল বাইতের বারো ইমামের ষষ্ঠ মাসূম ইমাম হযরত জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক (আঃ)-এর শুভ জন্মদিন । তাই এ শুভ দিন উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন , শুভেচ্ছা ও মুবারক বাদ ।

হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা ) আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ ( উস্ওয়াতুন্ হাসানাহ্ ) । তাঁর সকল কথা , কাজ - কর্ম ও অনুমোদন ( তাকরীর ও ইমযা ) অর্থাৎ তাঁর গোটা জীবনই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ । তাই আমাদের উচিত

তাঁর ( সা .) চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্য ( আখলাক ও সীরাত ) , অমিয় বাণী , শিক্ষা ও আদর্শ আমাদের নিজেদের জীবনে  বাস্তবায়ন করা যার কোনো বিকল্প নেই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন অর্থাৎ মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে হযরত রাসূলুল্লাহকে ( সা.) নি:শর্ত অনুসরণ । পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেন :

قُلْ إِنْ کُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنيْ یُحْبِبْکُمُ اللّٰهُ وَ یَغْفِرْ لَکُمْ ذُنُوْبَکُمْ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ .

আপনি বলে দিন : যদি তোমরা মহান আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার ( মহানবী ) অনুসরণ কর তোমরা , (আর আমার অনুসরণ করলে ) মহান আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিবেন ; আর মহান আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু । ( সূরা - ই আল্ - ই ইমরান : ৩১ ) । মহানবীকে ( সা.) অনুসরণ করার অর্থই হচ্ছে তাঁর সকল আদেশ নিষেধ ( أوامر و نواهي ) পালন । আর তাঁর (মহানবী) আদেশ নিষেধ , কথা - বাণী , কর্মকাণ্ড কোনো কিছুই রিপু ও প্রবৃত্তি প্রসূত ( মনগড়া ) নয় বরং তাঁর প্রতি প্রেরিত ওহি স্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেন : তোমাদের সংগী ( মহানবী ) বিভ্রান্ত নন , বিপথগামীও নন এবং তিনি ( সা:) কোনো কিছু নিজ প্রবৃত্তির তাড়নায় ( অর্থাৎ মনগড়া কথা) বলেন না । আর এটা ( তাঁর কথা ও আদেশ নিষেধ সব কিছুই আসলে ) হচ্ছে ওহি স্বরূপ যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয় ( সূরা - ই নাজম : ২ - ৪ ) ।

مَا ضَلَّ صَاحِبُکُمْ وَ مَا غَوَیٰ وَ مَا یَنْطِقُ عَنِ الْهَوَیٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ یُوْحَیٰ .

  মহানবী ( সা.) স্বীয় উম্মৎকে বহুবার ও বিভিন্ন উপলক্ষ্যে পবিত্র কুরআন ও তাঁর আহলুল বাইতকে (আ.) আঁকড়ে ধরে রাখার আদেশ দিয়েছেন যা মুতাওয়াতির হাদীস - হাদীসে সাক্বালাইনে বর্ণিত হয়েছে । যেমন : 

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী বলেন : আমি বিদায় হজ্জে আরাফাতের দিবসে ( ৯ যিল্ হজ্জ ) মহানবীকে ( সা .) তাঁর কাসওয়া উষ্ট্রীর উপর উপবিষ্ট অবস্থায় বক্তৃতায় বলতে শুনেছি : হে জনগণ !  নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে যা রেখে গেলাম তা অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার অতিনিকট আত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ( ইতরাত ) : আমার আহলুল বাইতকে যদি তোমরা আঁকড়ে ধরে রাখো তাহলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ হবে না । তিরমিযী বলেছেন : এ অনুচ্ছেদে আবূ যার , আবূ সাঈদ , যাইদ ইবনে আরকাম ও হুযাইফা ইবনে উসাইদ ( রা:) থেকেও  হাদীস বিদ্যমান । ( দ্র : সুনান আত তিরমিযী , হাদীস নং ৩৭৯৪ , পৃ : ৯৯১ )

হযরত যাইদ ইবনে আরকাম ( রা .) বলেন : রাসূলুল্লাহ ( সা.) বলেছেন : আমি তোমাদের মাঝে দুটো অতি মূল্যবান ভারী জিনিস ( সাকালাইন ) : আল্লাহর কিতাব ( পবিত্র কুরআন ) এবং আমার আহলুল বাইতকে রেখে যাচ্ছি এবং এ দুটো ( পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ) আমার কাছে হাওযে কাওসারে উপনীত হওয়া পর্যন্ত কখনোই পরস্পর পৃথক ও বিচ্ছিন্ন হবে না । হাকিম নিশাপুরী বলেছেন : এ হাদীসটি শাইখাইনের ( বুখারী ও মুসলিম ) শর্তে সহীহুল ইসনাদ হাদীস এবং তাঁরা দুজন ( বুখারী ও মুসলিম ) তা রিওয়ায়ত করেন নি । আর আল্লামা যাহাবী আত্ - তালখীস গ্রন্থে তাঁর ( হাকিম নিশাপুরী ) সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : উক্ত হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ্ ( সত্য , শুদ্ধ ও সঠিক ) । ( দ্র : আল - মুস্তাদরাক , খ : ৩ , পৃ: ৩৫৯ )

عَنْ زَیْدِ بْنِ أَرْقَم - رض - قَالَ : قَالَ رَسُوْلِ اللّٰهِ ( ص) : « إِنِّيْ تَارِکٌ فِیْکُمُ الثَّقَلَیْنِ کِتَابَ اللّٰهِ وَ أَهْلَ بَیْتِيْ وَ أَنَّهُمَا لَنْ یَتَفَرَّقَا حَتَّیٰ یَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ . » هٰذا حَدِیْثٌ صَحِیْحُ الإِسْنَادِ عَلَیٰ شَرْطِ الشَّیْخَیْنِ وَ لَمْ یُخْرِجَاهُ .

وَافَقَهُ الذَّهَبِيُّ فِي التَّلْخِیْصِ : عَلَیٰ شَرْطِ الْبُخَارِيِّ وَ مُسْلِمٍ .

অতএব মুসলিম উম্মাহকে মহানবীর ( সা:) এ নির্দেশ অবশ্যই মানতে ও পালন করতেই হবে । আর এর অর্থ হচ্ছে যে মুসলিম উম্মাহ রাসূলুল্লাহর ( সা .) পরে পবিত্র কুরআন ও মহানবীর আহলুল বাইতকে (আ.) অনুসরণ ( ইত্তিবা ) করবে । তাঁদের হিদয়তের পথে চলতে ও বহাল থাকতে হবে মুসলিম উম্মাহকে । কারণ , পবিত্র কুরআন এবং রাসূলুল্লাহর ( সা .) আহলুল বাইত (আ.)ই আসলে সিরাত - ই মুস্তাকীম ( সরল সঠিক সোজা পথ ) এবং যেহেতু পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের (আঃ) মধ্যকার বন্ধন চির অটুট ও অবিচ্ছেদ্য সেহেতু সাকালাইনকে ( পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে অর্থাৎ অনুসরণ করলে উম্মত কখনোই পথভ্রষ্ট , বিচ্যুত ও গোমরাহ হবে না । যেহেতু পবিত্র কুরআন সকল মিথ্যা ও বাতিল থেকে পবিত্র পরম সত্য ঐশী গ্রন্থ অর্থাৎ মা'সূম এবং পবিত্র এ গ্রন্থের সাথে আহলুল বাইতের সহবিদ্যমানতা চিরন্তন ও চিরস্থায়ী যা উপরিউক্ত সহীহ , প্রতিষ্ঠিত , সর্বজন স্বীকৃত মুসাল্লাম হাদীসেও বর্ণিত ও উদ্ধৃত হয়েছে , পবিত্র কুরআনের সূরা - ই আহযাবের ৩৩ নং আয়াত ও এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুতাওয়াতির হাদীস - ই কিসায় ( চাদরের হাদীস ) এবং সূরা - ই আল - ই ইমরানের ৬১ নং আয়াত ( মুবাহালার আয়াত ) এবং এ আয়াতের শানে নুযূলে বর্ণিত সহীহ ( বিশুদ্ধ ) প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) ও সকল ইসলামী মাযহাব ও ফির্কার কাছে গৃহীত ও স্বীকৃত ( মুসাল্লাম ) হাদীস অনুযায়ী  মহানবীর আহলুল বাইত (আ.) পবিত্র ও মাসূম এবং তাঁরা  মহানবীর (সা.) জীবদ্দশায়  হযরত ফাতিমা , ইমাম আলী , ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ( আলাইহিমুস সালাম ) - এই ৪ জন মাসূম ব্যক্তি এবং তাঁদের পরে আরও ৯ জন নিষ্পাপ ( মাসূম ) ব্যক্তি যারা হচ্ছেন ইমাম হুসাইনের ( আ.) বংশধর নয়জন মাসূম ইমাম ; কারণ সহীহ ( শুদ্ধ ) , প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) এবং সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাবের কাছে গৃহীত ও স্বীকৃত ( মুসাল্লাম ) হাদীস মুতাবেক মহানবীর (সা.) পরে কিয়ামত পর্যন্ত এ উম্মতের খলীফা , আমীর , নেতা ও ইমাম হবেন মাত্র বারো জন ব্যক্তি যাদের মাধ্যমে ইসলাম শক্তিশালী ও দুর্ভেদ্য ( সুরক্ষিত ) থাকবে এবং যাঁদের সবাই হবেন কুরাইশ বংশীয় ; আর স্বয়ং রাসূল নিজে ও তাঁর আহলুল বাইতের ( আ .) সবাই খাঁটি  কুরাইশ বংশীয় ; আর যেহতু সত্য ( সহীহ ) প্রতিষ্ঠিত ( সাবিত ) ও সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাব তথা মুসলিম উম্মাহর কাছে গৃহীত ও স্বীকৃত (মুসাল্লাম ও মুত্তাফাকুন আলাহি ) হাদীস সমূহের আলোকে কিয়ামত পর্যন্ত

প্রতিটি যুগেই পবিত্র কুরআন ও রাসূলুল্লাহর পবিত্র ও মাসূম আহলুল বাইত ( আ. ) বিদ্যমান থাকবেন যাঁদেরকে  দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও নি:শর্ত অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন উম্মৎকে রাসূলুল্লাহ (সা .) স্বয়ং নিজে , কিয়ামত পর্যন্ত কোনো যুগই ইমাম ( সৃষ্টি জগতের উপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত অর্থাৎ প্রামাণিক দলিল ) বিহীন হবে না এবং যুগের ইমামকে না চিনে ও তাঁর আনুগত্য না করে মৃত্যু বরণ হচ্ছে জাহিলিয়াতের মৃত্যু সেহেতু স্পষ্ট  প্রমাণিত হয়ে যায় যে উক্ত বারো ইমাম অবশ্যই রাসূলুল্লাহর আহলুল বাইতের (আ ) অন্তর্ভুক্ত হবেন যাদের প্রথম ইমাম হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ( আ.) এবং সর্বশেষ ইমাম অর্থাৎ দ্বাদশ ইমাম হচ্ছেন মাহদী ( আ .) । আর এই হাদীস - ই সাকালাইন থেকে প্রমাণিত হয় যে পবিত্র কুরআনের সঠিক ও প্রকৃত ব্যাখ্যাকারী এবং রাসূলের ( সা .) খাঁটি ও প্রকৃত সুন্নাহর সংরক্ষণকারী তাঁর আহলুল বাইত ( আ.) । সুতরাং আহলুল বাইত ( আ.) সকল ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান ও মহানবীর সুন্নাহর খাঁটি প্রামাণিক উৎস্য ও কর্তৃপক্ষ এবং সেগুলোর প্রকৃত ব্যাখ্যা ও বর্ণনাকারী । ইসলামী শরিয়তের বিধিবিধান , যাবতীয় শিক্ষা ও নিয়মনীতি আহলুল বাইতের কাছ থেকে গ্রহণ করতে হবে উম্মতকে । তা না হলে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত যে কিয়ামত পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না এবং এদুভয়কে আঁকড়ে ধরলে যে উম্মত কখনোই পথভ্রষ্ট, গোমরাহ ও বিচ্যুত হবে না তা সম্পূর্ণ নিরর্থক ( অর্থহীন ও অসার ) হয়ে যাবে ।

সুতরাং মহানবীর অতি মূল্যবান এ দুই মীরাস ( উম্মাহর মাঝে রেখে যাওয়া তাঁর ঐতিহ্যবাহী দুই উত্তরাধিকার ) পবিত্র কুরআন ও তাঁর পবিত্র ইতরাত ( অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ) আহলুল বাইতের ( আ.)  - যথাযথ অনুসরণ উম্মাহকে পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী থেকে রক্ষা এবং তাদেরকে প্রকৃত ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করবে । আর এ দুটো কে ছেড়ে দিলে এ উম্মতের অনৈক্য , বিচ্যুতি ও ধ্বংস অনিবার্য ।

   হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা .) গোটা বিশ্ব জগতের রহমত , রহমতের ইমাম ( ইমামুর রহমাহ্ ) সকল নবী রাসূলের নেতা ( ইমামুল মুরসালীন ওয়া সাইয়েদুল আম্বিয়া ) , সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল ( খাতামুন নাবীয়ীন ও খাতামুল আম্বিয়া ওয়ার রুসুল ) । তিনি ( সা.) , নবী ও জনগণের ইমাম ( নেতা ) হযরত ইব্রাহীমের ( আ. ) চেয়েও বড় ইমাম । মহান আল্লাহ তাঁর জলীলুল কদর নবী হযরত ইব্রাহীমকে ( আ .) বেশ কিছু কঠিন ঐশী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মানবজাতির ইমাম ( নেতা ) নিযুক্ত করলে তিনি ( আ. ) মহান আল্লাহর কাছে তাঁর বংশধারায় ( যুর্রিয়াহ্ ) কিয়ামত পর্যন্ত ইমামত জারী রাখার দরখাস্ত ( আবেদন ) করেন । মহান আল্লাহ তাঁর দরখাস্ত ও দুআ কবুল করে বলেছিলেন : আমার এ ঐশী প্রতিজ্ঞা অর্থাৎ ইমামত ( জনগণকে নেতৃত্ব দান ) ( তোমার বংশধরদের মধ্যে ) যালিমদের কাছে পৌঁছাবে না ( অর্থাৎ নবী ও ইমাম ইব্রাহীমের যে সব বংশধরের জীবনে পাপ ও যুলুমের বিন্দুমাত্র লেশ থাকবে তারা কখনই ইমামত লাভ করবে না । হযরত ইব্রাহীমের ( আ )  মতো কেবল তাঁর নিষ্পাপ ( মাসূম ) বংশধররাই জনগণের ইমাম হবেন কিয়ামত পর্যন্ত । হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা. ) জন্মগ্রহণ করলে নুবুওয়াত ও ইমামতের ধারা ইসহাকের বংশধারা বনী ইসরাইল থেকে বনী ইসমাঈলে অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সা ) ও তাঁর পবিত্র ইতরাত ( অতি নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ) আহলুল বাইতে ( আ .) স্থানান্তরিত হয় । তবে মহানবীর ( সা ) মাধ্যমে নুবুওয়াত ও রিসালতের পূর্ণ পরিসমাপ্তি ( খতম ) ঘটে কিন্তু ইমামতের ধারা মহানবী ( সা .) থেকে তাঁর পবিত্র ইতরাত আহলুল বাইতের ( আ.) কাছে হস্তান্তর হয় যারা হলেন তারপরে কিয়ামত পর্যন্ত বারোজন মাসূম (নিষ্পাপ) ইমাম : যাদের প্রথম ইমাম হযরত আলী ইবনে আবী তালিব ( আ ) যিনি রাসূলুল্লাহর ( সা. ) অতি নিকটাত্মীয় অর্থাৎ আপন পিতৃব্যপুত্র ও জামাতা , দ্বিতীয় ইমাম হাসান ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব , তৃতীয় ইমাম হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব , ৪র্থ ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীন , ৫ম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল - বাক্বির , ৬ষ্ঠ ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস - সাদিক , ৭ম ইমাম মূসা ইবনে জাফর আল - কাযিম , ৮ম ইমাম আলী ইবনে মূসা আর - রিযা , ৯ম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আত - তাকী আল - জাওয়াদ , ১০ম ইমাম আলী ইবনে মুহাম্মাদ আল - হাদী আন - নাকী আল - আস্কারী , ১১শ ইমাম হাসান ইবনে আলী আল - আস্কারী এবং ১২. দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল - ক্বায়েম আল - হুজ্জাহ আল - মাহদী ( আ. ) । হযরত ইব্রাহীমের ( আ .) পবিত্র বংশধারা ও যুর্রিয়ায় ( আল - ই ইব্রাহীম ও যুর্রিয়া - ই ইব্রাহীম ) কিয়ামত পর্যন্ত ইমামতের পবিত্র ধারা বিদ্যমান ( থাকবে ) । পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :

( মহান আল্লাহ ) আদমকে , নূহ্কে ও ইব্রাহীমের বংশধর ( আল - ই ইব্রাহীম : হযরত মুহাম্মাদ ( সা ) ও আল -ই মুহাম্মাদ ) এবং ইমরানের বংশধরকে ( আল - ই ইমরান ) জগৎ সমূহের উপর মনোনীত করেছেন ।

এরা একে অপরের বংশধর । মহান আল্লাহ সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞ  ( সূরা - ই আল - ই ইমরান : ৩৩ - ৩৪ ) ।

এ দুই আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে যে যে সব বংশধারাকে জগৎ সমূহের উপর মনোনীত করা হয়েছে তাদের মধ্যকার আল - ই ইব্রাহীম ( ইব্রাহীমের বংশধরগণ ) হচ্ছেন  হযরত মুহাম্মদ ( সা.) ও আল - ই মুহাম্মদ ( আ )। কারণ আল - ই ইমরান ও আল - ই মুহাম্মাদ আসলে আল -ই ইব্রাহীম । কিন্তু সূরা -ই আল -ই ইমরানের ৩৩ নং আয়াতে আল - ই ইব্রাহীম থেকে আল - ই ইমরানকে বের করে আনা হয়েছে । তাহলে আল - ই ইব্রাহীমে কেবল হযরত মুহাম্মাদ ( সা. ) ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) বিদ্যমান রয়েছেন । আল - ই ইমরানকে ৩৩ নং আয়াতে আল - ই ইব্রাহীম থেকে বের করে এনে স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার মানেই হয় না যে আল - ই ইব্রাহীম হচ্ছে আল - ই ইমরান ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) । অতএব স্পষ্ট হয়ে যায় যে আল - ই ইব্রাহীম হযরত মুহাম্মাদ  ( সা .) ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) । যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে শুধু আল - ই ইব্রাহীম হযরত মুহাম্মাদ ( সা .) ও আল - ই মুহাম্মাদ ( আ .) নয় বরং হযরত ইসমাইল ও আল - ই

ইসমাঈল ( কারণ আয়াতে স্বতন্ত্রভাবে আল - ই ইমরান উল্লেখিত হওয়ার পর পুনরায় আল - ই ইমরানকে আল - ই মুহাম্মাদের পাশাপাশি আল - ই ইব্রাহীমের অন্তর্ভুক্ত করার কোনো অর্থই হয় না ) তহলেও পরিণতিতে আল - ই ইসমাঈল চূড়ান্ত পর্যায়ে হযরত মুহাম্মাদ ( সা .) ও আল -ই মুহাম্মাদ ; কারণ নি:সন্দেহে আল -ই ইসমাঈলে হযরত মুহাম্মাদ ( সা.) ও আল - ই মুহাম্মাদ (( হযরত ফাতিমা আ - যিনি জগৎ সমূহের নারীদের নেত্রী ও মাসূম  এবং ১২ মাসূম ইমাম যারা হলেন হযরত আলী এবং তাঁর ও হযরত ফাতিমার ( আ ) ১১ জন সন্তান ও বংশধর : ইমাম হাসান ( আ .) , ইমাম হুসাইন ( আ ) ও ইমাম হুসাইনের ( আ ) নয় জন বংশধর ))ই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তারা ব্যতীত আর কেউ হতে পারে না । আর এটা অত্যন্ত স্পষ্ট ও বোধগম্য বিষয় । কারণ নবী হযরত ইসমাইলের বংশধারায় কেবল সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ হচ্ছেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ও আল - ই মুহাম্মাদ ; কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সা ) সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব , সৃষ্টির সেরা , সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল এবং সর্বশেষ নবী ( খাতামুন নাবীয়ীন ) ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম এবং তাঁর (সা) ইমামত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইমামত ; আর এ কারণেই তাঁর নুবুওয়াত সর্বশ্রেষ্ঠ নুবুওয়াত ও রিসালত যা নুবুওয়াত - ই খাস্সাহ্ নামেও পরিচিত ও প্রসিদ্ধ , ইসলাম ধর্ম ও শরিয়ত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ধর্ম ও শরিয়ত , পবিত্র কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী কিতাব , তাঁর উম্মত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ উম্মত ; আর তাঁর আলই ( বংশধরগণ )  হবেন হযরত ইব্রাহীমের সমগ্র বংশধারায় ( যুর্রিয়া ) সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ইমামতের ধারা ও সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ইমামদের পরম্পরা ; কারণ তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী - রাসূল ও সর্বশ্রষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদের ( সা ) অস্তিত্বের টুকরা ও অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং মুহাম্মাদী আহমাদী নূর ( النورالمحمدي الأحمدي ) থেকে উৎসারিত । হযরত মুহাম্মাদের পরে আল - ই মুহাম্মাদ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ ধর্ম ও শরিয়ত ইসলাম , সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল - কুরআন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ সুন্নাহর ( সুন্নাত - ই মুহাম্মাদী ) ধারক ও বাহক হওয়ার জন্য নি:সন্দেহে তাঁরা মহানবীর ( সা .) পরে স্রষ্টা ও সৃষ্টি তত্ত্ব এবং শরয়ী জ্ঞান ও মারেফাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অধিকারী হওয়ার কারণে তাঁরা আধ্যাত্মিক পূর্ণতার শীর্ষে বিদ্যমান বলেই সৃষ্টির সেরা অর্থাৎ মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি । আর এ কারণেই তাঁরা উম্মত - ই ওয়াসাত ( মধ্যম বা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি ) , পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর ঐশ্বরিক সাক্ষী ( শুহাদা ) , খাইরু উম্মাহ্ ( শ্রেষ্ঠ উম্মত ) ঠিক হযরত ইব্রাহীমের (আ.) মত যিনি আগে নুবুওয়াত লাভ করেও বহু কঠিন ঐশী পরীক্ষার সম্মুখীন হন এবং সেগুলোয় উত্তীর্ণ হয়ে কামাল বা পূর্ণতার শীর্ষে পৌঁছান ( খলীলুর রহমান হন ) , জনগণের ইমাম (নেতা ) মনোনীত হন এবং মহান আল্লাহ তাঁকে একাই এক উম্মত , অনুগত ( উম্মত , কানেত্ , হানীফ) এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে আখ্যায়িত করেছেন ( সূরা -ই নাহল : ১২০ )। তাই আল - ই মুহাম্মদ অর্থাৎ আহলুল বাইতের বারো ইমাম ( আ ) যে উম্মত - ই ওয়াসাত ( সর্বোত্তম সর্বশ্রেষ্ঠ  উম্মত ) , খাইরু উম্মাহ ( সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত ) ও পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর খোদায়ী ( ঐশ্বরিক ) সাক্ষী হওয়ায় মোটেও আশ্চর্য্যের কিছু নেই । বরং মহান আল্লাহর ঐশ্বরিক পরিকল্পনায় এটা একান্ত বাস্তব সত্য বিষয় । এখানে প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে মহানবী ( সা) পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর সাক্ষীগণের উপর মহাসাক্ষী । আর এ ভাবে স্পষ্ট হয়ে যায় রাসূলুল্লাহর ( সা ) দেহের টুকরা ও অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ ( বিদআতুর রাসূল ِبِضْعَةُ الرَّسُوْل ) হযরত ফাতিমা বাতূল ( আ ) আহলুল বাইতের মাসূম ইমামদের উপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত ( প্রামাণিক দলিল ও উত্তম আদর্শ ) এবং তাঁরা ( ইমামগণ ) সমগ্র সৃষ্টি কুলের উপর মহান আল্লাহর হুজ্জাত ।

মহানবী ( সা ) বলেছেন : ফাতিমা আমার অংশ , যে তাঁকে ক্রুদ্ধ করে সে আমাকেই ক্রুদ্ধ করে ( দ্র : সহীহ আল - বুখারী , হাদীস নং ৩৭১৪ , পৃ : ৯১০ , প্রথম সংস্করণ , ২০০৮ খ্রি , প্রকাশক : দার সাদির , বৈরুত , লেবানন ) । 

হযরত ইব্রাহীমের ইমামত সম্পর্কে

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন :

     এবং স্মরণ কর যখন ইব্রাহীম কে তাঁর প্রতিপালক কয়েকটি কথা দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল , আল্লাহ বললেন : আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা ( ইমাম ) করছি । সে বলল : আমার বংশধরদের ( যুর্রিয়া ) মধ্য থেকেও ? আল্লাহ বললেন : আমার প্রতিশ্রুতি ( আহ্দ্ ) যালিম( পাপী ও সীমালংঘনকারী )দের প্রতি প্রযোজ্য নয় ( সূরা -ই বাকারাহ : ১২৪ ) ।

আর হযরত ইব্রাহীমের ( আ ) ইমামত যা তাঁর দরখাস্তে তার বংশধারায় ( যুর্রিয়া ) মহান আল্লাহ এ শর্তে জারী রাখেন যে তাঁর এ প্রতিজ্ঞা  যারা যালিম ( পাপী সীমালংঘনকারী ) তাদের জন্য প্রযোজ্য নয় অর্থাৎ কেবল তাঁর বংশধরদের মধ্যে যারা মাসূম তাদের জন্য এ প্রতিজ্ঞা ( ইমামত ) প্রযোজ্য । আর হযরত ইব্রাহীমের ( আ ) বংশধর সর্বশ্রষ্ঠ মহামানব সর্বশ্রষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ ( সা ) নি:সন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম এবং যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা) শেষ নবী ও রাসূল হওয়ায় নুবুওয়াত ও রিসালতের পরিসমাপ্তি (খতম) হয়েছে সেহেতু ইমামত ( মানবজাতিকে সুপথপ্রদর্শনের নেতৃত্ব ) তাঁর বংশধারায় জারী হয়েছে । কারণ মহান আল্লাহ আল -ই মুহাম্মাদকে জগৎ সমূহের উপর মনোনীত করেছেন ( সূরা -ই আল -ই ইমরান : ৩৩ ) ।

আমরা হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা.)  অতি মূল্যবান বাণী ও হাদীস সমূহ থেকে কয়েকটি অমিয় বাণী ও হাদীস শুভ এ দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধেয় পাঠকবর্গের খেদমতে পেশ করছি :

১. আখেরাতের গুরুত্ব :

মহানবী ( সা :)বলেছেন: সব সময় (সকাল-সন্ধ্যা প্রতিনিয়ত ) যার মুখ্য (প্রধান) চিন্তাই  হচ্ছে আখেরাত ( পরকাল) মহান আল্লাহ পাক তার অন্তরে প্রাচুর্য ও অভাব শূন্যতার অনুভূতি দান করবেন , তার যাবতীয় বিষয় গুছিয়ে পরিপাটি ও ঠিকঠাক করে দেবেন এবং রুজি ও জীবিকা পূর্ণ করে দেয়া পর্যন্ত এ দুনিয়া থেকে তাকে বের করবেন না ( অর্থাৎ তার মৃত্যু ঘটাবেন না ) । আর যে ব্যক্তির সার্বক্ষণিক  মূখ্য চিন্তা ভাবনা ই হচ্ছে দুনিয়া ( পার্থিব জগৎ ) মহান আল্লাহ তার দু চোখের সামনে তার দারিদ্র স্থায়ী করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিষয় ও কাজ কারবার অগোছালো ও বিক্ষিপ্ত (বিশৃঙ্খল) করে দেবেন ; আর সে দুনিয়া থেকে ঠিক ততটুকু পাবে যতটুকু তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ।

(দ্র: বিহারুল আনোয়ার , খ: ৭৭ পৃ: ১৫১ , হাদীস নং ১০৪)

 

২. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

স্বীয় দুনিয়ার জন্য এমনভাবে কাজ করতে থাক যেন তুমি এ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকবে এবং স্বীয় আখেরাতের জন্য তুমি এমনভাবে কাজ করে যাও যে তুমি আগামীকালই মৃত্যু বরণ করবে  । ( তাম্বীহুল খাওয়াতির , খ:২, পৃ: ২৩৪)

 

৩. মহানবী ( সা:) বলেছেন :

আমি তোমাদেরকে মহান আল্লাহ কে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছি এবং তোমাদের ( মঙ্গল ও কল্যাণের) ব্যাপারে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি -- আমি তোমাদের কাছে  স্পষ্ট ভাষী ভয় প্রদর্শন কারী রাসূল ( প্রেরিত পুরুষ) --  মহান আল্লাহর কাছে তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে এবং  দেশ ও বাসস্থান নিয়ে  গর্ব ও অহংকার করো না ; কারণ , তিনি  ( মহান আল্লাহ )  আমাকে ও তোমাদেরকে বলেছেন : এই  আখেরাত  বা পরকাল  ঐ সব ব্যক্তির জন্য আমরা স্থাপন করেছি  যারা ধরণীর বুকে না অহংকার ও গর্ব  করার ইচ্ছা করে আর না বিশৃঙ্খলা ( ফিতনা ফাসাদ) সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে ( সূরা -ই ক্বাসাস : ৮৩) ।

৪. মহানবী ( সা:) বলেছেন  :

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞাত ও বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কে পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন

অথচ আখেরাত সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে ঘৃণা করেন । দ্র: কানযুল উম্মাল , হাদীস নং ২৮৯৮২ )

 

৫. মহানবী ( সা: ) বলেছেন:

তৃষ্ণার্ত হৃদয় যেমন শীতল পানি পান করে তৃপ্ত ও শান্ত হয় ( প্রশান্তি লাভ করে ) ঠিক তেমনি এক মুমিন অপর মুমিনের কাছে সুখ ও শান্তি লাভ করে । ( রাভান্দী প্রণীত আন - নাওয়াদির , পৃ : ৮)।

৬. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

যে ব্যক্তি তার নিজের জন্য একজন নতুন দ্বীনী ভাইকে খুঁজে পাবে , মহান আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করে দিবেন । ( আল- ই'তিসাম :২২৮)

৭. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

তোমরা নিজেদের মু'মিন ভাইদের সংখ্যা বৃদ্ধি করো ; কারণ কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক মু'মিনের শাফায়াত করার অধিকার থাকবে । ( দ্র: কানযুল উম্মাল , হাদীস নং : ২৪৬৪২)

৮. মহানবী ( সা: )বলেছেন:

তোমরা জেনে রাখ যে ঈমানের এক অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মু'মিনকে ভালোবাসা । ( বিহারুল আনোয়ার , খ:৭, পৃ:২৮১)

৯. মহানবী (সা:)বলেছেন:

যে দ্বীনী ভাইকে তুমি আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে ভলোবাস তার দিকে তাকানো হচ্ছে ইবাদৎ । ( বিহারুল আনোয়ার , খ:৩৫, পৃ: ৩৩৪)

১০. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

সর্বোত্তম (দ্বীনী) ভাই হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে আখেরাতের ( পারলৌকিক) আমল ও কর্মের ক্ষেত্রে তার নিজ দ্বীনী ভাইকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে । ( দ্র: তান্বীহুল খাওয়াতির , খ:২, পৃ: ১২৩)

১১. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

তোমাদের সর্বোত্তম দ্বীনী ভাই হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে তোমাদের দোষক্রটি তোমাদের কাছে ব্যক্ত করে ( অর্থাৎ স়ংশোধনের জন্য তোমাদেরকে তোমাদের দোষ ক্রটি দেখিয়ে দেয় এবং সে সম্পর্কে তোমাদেরকে সরাসরি অবহিত করে এবং অন্যদের কাছে তা প্রচার করে না ও বলে বেড়ায় না । ) । ( তান্বীহুল খাওয়াতির , খ:২, পৃ:১২৩)

১২. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

    তুমি তোমার যে দ্বীনী ভাই-এর মধ্যে এ তিনটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণ প্রত্যক্ষ করবে ( খুঁজে পাবে )  তাকে তুমি কামনা করবে ও চাইবে । আর উক্ত তিন গুণ হচ্ছে : ১. লজ্জা ( হায়া ও শালীনতা বোধ) , ২. বিশ্বস্ততা (আমানতকারী) এবং ৩. সত্যবাদিতা । আর এই তিন গুণ যদি তার মধ্যে না পাও তাহলে তাকে কামনা করবে না ও চাইবে না । ( কানযুল উম্মাল , হাদীস নং : ২৪৭৫৫)

১৩. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

স্বীয় দ্বীনী ভাইএর  সাথে সহাস্যবদনে দেখা - সাক্ষাৎ করবে ও মিলিত হবে । ( বিহারুল আনোয়ার , খ:৭৪, পৃ: ৩১৬, হাদীস নং ৭৩)

১৪. মহানবী (সা:) বলেছেন :

তোমার সর্বোত্তম ভাই হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে  মহান আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে তোমাকে সহায়তা করে , মহান আল্লাহর নাফরমানি করা থেকে তোমাকে বিরত রাখে এবং তোমাকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের  আদেশ দেয় । ( তান্বীহুল খাওয়াতির , খ:২, পৃ: ১২৩ )

১৫. মহানবী ( সা:) বলেছেন :

তোমরা জেনে রাখ যে যখন দুই মু'মিন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসবে এবং পরস্পর মুসাফা ( করমর্দন ) করবে  তখন তারা দুজন এক দেহ সত্ত্বায় পরিণত হবে ; যদি তাদের একজন তার দেহের যে অঙ্গে ব্যাথা অনুভব করবে তাহলে অপর জনও তার দেহের ঠিক সেই অঙ্গেই  ব্যাথা অনুভব করবে ( মুমিন অপর মুমিন ভাইয়ের দু:খকষ্টকে নিজের দু:খকষ্ট বলে মনে করবে ) । ( দ্র: বিহারুল আনোয়ার : ৭৪/২৮১/৭)

১৬. মহানবী (সা:) বলেছেন:

তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিরা হচ্ছে তারাই যারা তোমাদের মধ্যে  সবচেয়ে সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী  যারা ( মানুষকে) ভালোবাসে এবং ( মানুষের) ভালোবাসাও পায়। ( দ্র: তুহাফুল উকূল , পৃ:৪৫)

১৭. মহানবী (সা:) বলেছেন:

    সর্বোত্তম মু'মিন হচ্ছে সে ব্যক্তি মু'মিনদের সাথে যার সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং ঐ ব্যক্তির মাঝে কোনো কল্যাণ নেই  যে মু'মিনদেরকে ভালোবাসা , সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে না এবং সে নিজেও মু'মিনদের ভালোবাসা পায় না ।

( দ্র: বিহারুল আনোয়ার , খ:৭৫ , পৃ: ২৬৫, হাদীস নং ৯)

১৮. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

    কিয়ামত দিবসের ময়দানে তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী  হবে ..…... যে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং জনগণের  সবচেয়ে নিকটবর্তী । ( বিহারুল আনোয়ার , খ: ৭৭ , পৃ: ১৫০ , হাদীস নং ৮৩)

১৯. মহানবী (সা:) বলেছেন:

   যারা অনাহারে থাকার জন্য মনস্থির করেছে , ক্ষুধার্ত থেকেছে এবং ধৈর্য্য ধারণ করেছে  তাদের জন্য শুভ সংবাদ ; কারণ কিয়ামত দিবসে এরাই পরিতৃপ্ত থাকবে । ( দ্র: আল-ওয়াসাইল , খ:৭, পৃ: ২৯৯ , হাদীস নং ২)

২০. মহানবী সা বলেছেন:

   যার আহার কম ( পরকালে) তার হিসাব নিকাশও  কম ( হবে) । ( দ্র্ঃ আল-মুসতাদরাক আলাল ওয়াসায়িল , ১৬/ ২২১/১৯৬৫১)

২১. মহানবী ( সা ) বলেছেন:

  যার খাওয়া দাওয়া কম ( অর্থাৎ পরিমিত ও পর্যাপ্ত ) হবে তার পেট ভালো থাকবে এবং তার অন্তর ( হৃদয় ও ক্বলব ) হবে স্বচ্ছ ও নির্মল । আর যার খাওয়া দাওয়া বেশি তার পেট হবে অসুস্থ এবং তার হৃদয় হবে পাষাণ ও কঠিন ।

( দ্র: তান্বীহুল খাওয়াতির , ১/ ৪৬)

২২. তাফসীরে নূরুস সাকালাইন হযরত আয়েশা ( রা: ) থেকে :

মহানবী ( সা:) এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া ( মৃত্যু বরণ করা) পর্যন্ত কখনোই পরপর তিন দিন

পরিতৃপ্তির সাথে আহার করেন নি । যদি তিনি চাইতেন তাহলে খেয়ে দেয়ে পরিতৃপ্ত হতে পারতেন । কিন্তু তিনি অন্যদেরকে নিজের উপর প্রাধান্য দিতেন ( আর এ কারণে তিনি অল্প পানাহার করতেন ) ।

 

[ এ হাদীস থেকে স্বৈরাচারী অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী ও রাজা - বাদশাহের সাথে ন্যায়পরায়ণ ( আদিল ) ধর্মীয় ঐশ্বরিক নেতৃবৃন্দ ও শাসন কর্তাদের মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায় । মহান আল্লাহর নবী - রাসূল , ইমাম , ওয়ালী ও খলীফা গণ  অথবা তাঁদের নিযুক্ত শাসন কর্তা গণ দেশ ও সমাজে ন্যায় ও সুবিচার ( আদল ও ক্বিস্ত্ ) এবং তৌহীদ ( সত্য ধর্ম ) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন এবং এ জন্য তাঁরা ও তাদের অনুসারীরা সব সময় প্রাণান্তকর সংগ্রাম করেছেন । সমাজ ও দেশের জনগণের সার্বিক আর্থিক অবস্থা উন্নতি হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সমাজ ও জাতির সবচেয়ে দুর্বল দরিদ্র ব্যক্তি ও শ্রেণীর ন্যায় জীবন যাপন করতেন । আর অবস্থার উন্নতি হলেও তাঁরা জীবন যাত্রায় কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ তো করতেন না বরং সবসময় ন্যূনতম খরচ দিয়ে জীবন যাপন করতেন । কারণ পার্থিব ধন - সম্পদের মোহ ও লিপ্সা এবং ভোগবাদিতা তাঁদের মধ্যে ছিল না । তাঁরা কঠোর ত্যাগ , তপস্যা , সাধনা ( যুহ্দ ) এবং নিজের উপর অন্যদের প্রাধান্য দিতেন । মহানবী ( সা.) এদের সবার নেতা ও প্রধান । তাই তাঁর জীবন তো এমন কৃচ্ছতা  সাধনা পূর্ণ এবং জনগণের জন্য উৎসর্গিত হবেই।  মুসলিম দেশগুলোর রাজাবাদশাহ ও শাসকচক্র কি  রাসূলুল্লাহর (সা) এই জীবনাদর্শ মেনে চলে ? একটা বিষয় স্পষ্ট

হওয়া দরকার । আর তা হলো যে হযরত আলী ও হযরত ইমাম হাসানের পর আমীর মুয়াবিয়া কর্তৃক খিলাফত ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবর দখলের পর মুসলিম বিশ্ব ও উম্মার উপর পারস্যের শাহান শাহী ও রোমক রাজতন্ত্রের আদলে খিলাফত শিরোনামে বনী উমাইয়ার ( উমাভী ) রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত এবং মহানবীর ( সা.) আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয় । অত্যাচারী উমাভী খলীফাদের ( আসলে তাদেরকে রাজা বাদশাহ ও সম্রাট বলাই শ্রেয় ) সাথে নমরূদ , শাদ্দাদ , ফিরআওন ও হামানদের কোনো পার্থক্য ছিল ।  উমাভী সাম্রাজ্যের পতনের পর আব্বাসীয় খিলাফত ( আসলে রাজতন্ত্র ) প্রতিষ্ঠিত হলেও আব্বাসীয় খলিফারাও উমাভী খলিফাদের স্বভাব , রীতিনীতি ও রাজনীতি অব্যাহত রাখে । আর এ অবস্থা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে যদিও ইতিহাসে কিছু কিছু প্রজাবৎস্যল  রাজা - বাদশাহও ক্ষমতা গ্রহণ করেছে । আর ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয় ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি রাসূলুল্লাহ ( সা ) , হযরত আলী ( আ.) ও ইমাম হাসানের ( আ.) শাসন আদর্শ

অনুসরণ করেছেন এবং তাঁর ওফাতের পর আয়াতুল্লাহ খামেনেঈ  তা অব্যাহত রেখেছেন ।]

 

( তান্বীহুল খাওয়াতির 

১/ ১৭২ ও ১৭৩)

২৩. মহানবী (সা:) বলেছেন:

  যার তাসবীহ ও তামজীদ পাঠ বেশি ( যে ব্যক্তি বেশি বেশি মহান আল্লাহর তাসবীহ পাঠ  ও গুণকীর্তন করবে ) , এবং পানাহার ও নিদ্রা কম হবে তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ফেরেশতারা উদগ্রীব থাকবে ও অধীর ভাবে  আকাঙ্ক্ষা ও কামনা করবে । ( দ্র: তান্বীহুল খাওয়াতির , ২/১১৬)

২৪. মহানবী ( সা: )বলেছেন:

যখন মহান আল্লাহ কোনো বান্দার মঙ্গল ও কল্যাণ চান তখন তিনি ঐ বান্দাকে কম কথা বলা , কম আহার করা ও কম ঘুমানোর ব্যাপারে  অনুপ্রাণিত ( ও উৎসাহিত ) করেন।

( দ্র: মুস্তাদরাকুল ওয়াসাইল : ১৬/ ২১৩/ ১৯৬৩৪)

২৫. মহানবী ( সা :) বলেছেন:

স্বল্প আহার ( খাদ্যাভ্যাস) হচ্ছে সচ্চরিত্রতা ( শুদ্ধতা) ও শালীনতার অন্তর্গত এবং অধিক আহার হচ্ছে অপচয়ের ( ইসরাফ) অন্তর্ভুক্ত । ( দ্র: মুস্তাদ্রাকুল ওয়াসাইল : ১৬/২১৩)

২৬. মহানবী ( সা :) বলেছেন:

তোমাদেরকে পেটপূজা ( পেটপুরে পানাহার ) থেকে সাবধান ও সতর্ক করে দিচ্ছি । কারণ এটা দেহের ধ্বংস সাধন করে , রোগ - ব্যাধি সৃষ্টি করে এবং ইবাদত - বন্দেগীতে  শিথিলতা ও আলস্য আনয়ন করে । ( বিহারুল আনোয়ার : ৬২/ ২৬৬/৪১)

২৭. মহানবী ( সা :)বলেছেন:

   পেট যখন খালি থাকে (অর্থাৎ খাদ্য দিয়ে ভরা ও ঠাসা থাকে না) তখন অন্তর প্রজ্ঞা ( হিকমত ) ধারণ করতে সক্ষম হয় ; আর  পেট ভরা থাকলে অন্তর প্রজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করে । ( তান্বীহুল খাওয়াতির : ২/২১৯/৪১)

২৮. মহানবী ( সা :)বলেছেন:

    ( খাবার খেয়ে) ভরা ঠাসা পেটের চেয়ে আর কোনো কিছুই মহান আল্লাহর কাছে অধিক ঘৃণ্য

নয়। ( মুস্তাদরাকুল ওয়াসাইল : ১৬/২১২/ ১৯৬২৯)

২৯. মহানবী ( সা:) বলেছেন:

  যে ব্যক্তি স্বীয় উদর পূর্তি করে সে আসমান ও জমিনের মালাকূতে ( ঐশ্বরিক মহিমার জগৎ , রাজত্ব ও রাজ্যে ) প্রবেশ করবে না । ( তান্বীহুল খাওয়াতির : ২/১০০)

৩০. মহানবী ( সা: ) বলেছেন:

মানুষ তার নিজের পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট আর কোনো পাত্রই পূর্ণ করে নি ও ভরে নি ।

( তান্বীহুল খাওয়াতির , ২ )

 

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

১৭ রবীউল আওওয়াল , ১৪৪৩ হি.

captcha