IQNA

কিয়ামতের আলামত

মধ্যপ্রাচ্য তৃণভূমিতে পরিণত হবে

11:54 - January 19, 2022
সংবাদ: 3471305
তেহরান (ইকনা): যত দিন যাচ্ছে ততই পৃথিবীতে উন্নতির হাওয়া বইছে। গোটা পৃথিবীর রং বদলে যাচ্ছে। মানুষ এখন ভিন্ন গ্রহে আবাসন গড়ার স্বপ্ন দেখছে। কৃত্রিম মেঘমালা দিয়ে মরু অঞ্চলে কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়ে আনছে। প্রতিদিন যেন বিশ্বকে নতুনভাবে চিনতে হচ্ছে।
পৃথিবীর এই দ্রুত পরিবর্তন মূলত পৃথিবীকে কিয়ামতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেদিন মহান আল্লাহর হুকুমে কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন সব আয়োজন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে তার আগে মহান আল্লাহ মানুষকে দুনিয়াবি উন্নতির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাবেন। কিয়ামতের আগে মানুষের ধন-সম্পদও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। ধনী লোকের সংখ্যা এত ব্যাপকহারে বাড়বে যে জাকাত গ্রহণ করার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি কিয়ামতের আগে পৃথিবীর চিত্র এতটাই বদলে যাবে যে চির শুষ্ক আরবের মরুভূমি পরিণত হবে সবুজ শ্যামল চারণভূমিতে। যে অঞ্চলে এখন মাইলের পর মাইল খুরে পানি পাওয়া যায় না, সেখানে পানির অসংখ্য উৎস সৃষ্টি হবে।
 
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত সম্পদের প্রাচুর্য না আসবে। এমনকি কোনো ব্যক্তি সম্পদের জাকাত নিয়ে ঘুরবে কিন্তু নেওয়ার মতো লোক পাবে না। আরবের মাঠ-ঘাট তখন চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২২৯)
 
উল্লেখ্য, মহানবী (সা.)-এর হাদিস দ্বারা শুধু বর্তমান সৌদি আরব উদ্দেশ্য নয়। কোরআন-হাদিসের ভাষায় আরব বলে গোটা আরব উপদ্বীপকে বোঝায়। শুধু সৌদ রাষ্ট্রকে নয়। আরব উপদ্বীপকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ নিয়ে গঠিত ছিল, যা পরবর্তী সময়ে আলাদা আলাদা দেশে বিভক্ত হয়েছে। আরব উপদ্বীপের দেশগুলো হলো, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত (আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন আবুধাবি, আজমান, দুবাই, আল ফুজাইরাহ, রাআস আল খাইমাহ, আশ শারজাহ এবং উম্ম আল-কাইওয়াইন। আবুধাবি শহর ফেডারেশনের রাজধানী ও দুবাই দেশের বৃহত্তম শহর), ইয়েমেন ও ওমান।
 
এরই মধ্যে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। মরু অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য আস্তে আস্তে সবুজ হতে শুরু করেছে। 
 
সমপ্রতি ‘সৌদি সবুজায়ন’ ও ‘মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন’ নামে দুটি বিশাল কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এই কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ১৩০ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ কমানো, ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা, ৪০ মিলিয়ন হেক্টর অবক্ষয়যোগ্য জমি পুনর্বাসন করা এবং ১০ বিলিয়ন গাছ লাগানো।
 
এরই মধ্যে বৃহৎ এই প্রকল্প নিয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কাতার, ইরান, সুদান, কুয়েত ও বাহরাইন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন।
 
ধারণা করা যায়, এর মাধ্যমে ব্যাপক আকারে আরবদ্বীপ সবুজায়নের ধারার সূচনা হলো। তবে অনেক আগে থেকেই আরবদ্বীপে বিভিন্ন কৃষ্টি খামার গড়ে উঠেছে। যেগুলোতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক শাক-সবজি চাষ হয়েছে। কিছু অঞ্চল আগের চেয়ে অনেক বেশি সবুজ হয়েছে।
 
মজার বিষয় হলো, আরব উপদ্বীপের মরুর বুকে এখন মাছ চাষও করা হচ্ছে, যা একসময় অসম্ভব ছিল। এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, সৌদি আরবের ধু ধু মরুভূমির বুকে মাছের বিশাল খামার। সব প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ দেখিয়েছেন এমন বিরল দৃষ্টান্ত। এরপর সৌদি মালিকের অধীনে গড়ে তোলেন খামার। বর্তমানে (২০১৭ সালে) প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩৪৫টি পুকুরে চলছে মাছ চাষ। সৌদি আরবে ব্যাপক চাহিদা আছে এসব মাছের।
 
এ ছাড়া বাংলাদেশিদের কৃষি খাতে অভিজ্ঞতা বেশি থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষি খামারগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদাই বেশি। বলা যায় বাংলাদেশের সোনার মানুষগুলোর কঠোর পরিশ্রমে আরব উপদ্বীপে সবুজ সোনার ফসল ফলছে।
 
 
captcha