
প্রতিবছর রমজান মাসে শায়খ আবদুর রশিদ কোথায় নামাজ পড়াবেন সেই খোঁজে থাকেন কোরআনপ্রেমিক মুসল্লিরা। নিজের পছন্দের ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে মনে তৃপ্তি খুঁজে পান তাঁরা। ফলে যে মসজিদে শায়খ আবদুর রশিদ ইমাম থাকেন সেই মসজিদে থাকে প্রচণ্ড ভিড়। মসজিদ যত বড়ই হোক না কেন তাঁর পেছনে নামাজ পড়তে ভরে যায় পুরো মসজিদ।
কাতারের রাজধানীর দোহার সেন্ট্রাল মার্কেট মসজিদে রমজান মাসে তিনি নামাজ পড়াতেন। এরপর বারওয়া সিটি মসজিদে নামাজ পড়িয়েছেন। গত রমজান মাসে তিনি লুসাইল সিটি মসজিদে নামাজ পড়িয়েছেন। কিন্তু যেখানেই তিনি নামাজ পড়িয়েছেন সেখানেই মুসল্লিদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। রমজানের প্রতিদিন পবিত্র কোরআনের এক পারা পড়তেন। নামাজে কোরআন তিলাওয়াতে দীর্ঘ সময় লাগলেও তাঁর পেছনে ছিল মসজিদভর্তি মুসল্লি।
কাতারে বসবাসরত নানা দেশের মুসল্লিরাই তাঁর পেছনে নামাজ পড়তে ভিড় করেন। শুধু আরবই নয়; বরং এশিয়া ও ইউরোপের অনারব মুসল্লিদের সংখ্যাও অনেক। অনেকে পবিত্র কোরআনের মর্মার্থ উপলব্ধি করে তাঁর পেছনে নামাজ পড়েন। অনেকে তাঁর সুললিত কণ্ঠে তিলাওয়াত শুনে নিবিষ্ট মনে নামাজ পড়েন।
জন্ম ও পড়াশোনা : শায়খ আবদুর রশিদ সুফি ১৯৬৪ সালে সোমালিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলী আবদুর রহমান ছিলেন সোমালিয়ার বিশিষ্ট মুফতি ও কিরাআত শাস্ত্রের গুরুজন। মূলত তাঁর হাত ধরেই তাজবিদ ও কিরাআত শাস্ত্রের ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। বাবার কাছেই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও কিরাআতের পাঠ গ্রহণ করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। ১৯৮১ সালে ২০ বছর বয়সে ১০ পদ্ধতিতে কিরাআত শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে মিসর গমন করেন। সেখানে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত কারি মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আল-হামজানির কাছে কোরআন পাঠ করেন। তাঁর কাছে তিনি ‘আল-শাতেবিয়্যাহ’ ও ‘আল-তাইবাহ’ পদ্ধতিতে অনুমতি লাভ করেন।
পাঠদান ও ইমামতি : শায়খ আবদুর রশিদ উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু শহরে পিতার মসজিদের ইমামতি করেন। পাশাপাশি তিনি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত একটি ইসলামিক কলেজের উলুমুল কোরআন বিষয়ে পাঠদান করতেন। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে তিনি কাতার এসে সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। দেশটির আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ইমাম ও খতিব হিসেবে বিভিন্ন মসজিদে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এসবের পাশাপাশি দাওয়াহ ও ইসলামী শিক্ষামূলক তাঁর বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত সেমিনারে তিনি আলোচনা রাখছেন।
Sh.Abd Al rashid sofi নামে ইউটিউবে একটি চ্যানেল আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাঁর একটি তিলাওয়াত খুবই মুগ্ধ করে সব শ্রোতাকে। সেখানে তিনি কোরআনের একটি আয়াত পড়ছিলেন যার অর্থ হলো, ‘তোমরা জেনে রাখো, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহমিকা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই নয়, এর উপমা হলো বৃষ্টি যা দিয়ে উৎপন্ন শস্য কৃষকদের মুগ্ধ করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, আপনি তা হলদে বর্ণের দেখবেন, অতঃপর তা খড়কুটায় পরিণত হয়। ’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২০)