IQNA

আহলুল বাইতের (আ.) শিক্ষার আলোকে সূরা আলে ইমরানের আয়াতসমূহের ভাবব্যাখ্যা 

20:02 - June 11, 2025
সংবাদ: 3477545
ইকনা- আহলুল বাইতের (আ.) আলোকোজ্জ্বল ব্যাখ্যায় সূরা আলে ইমরানের আয়াতসমূহ পরিপূর্ণ হয় এক গহিন আধ্যাত্মিক তাৎপর্যে—যেখানে প্রতিফলিত হয় ঈমানের দুঃসাহসিক অভিযাত্রা, পরিশুদ্ধির তীব্র জ্বলন, ও ঈশ্বরপ্রেমিকদের নির্বাচনের এক চিরন্তন নীতি।

আহলুল বাইতের (আ.) আলোকোজ্জ্বল ব্যাখ্যায় সূরা আলে ইমরানের আয়াতসমূহ পরিপূর্ণ হয় এক গহিন আধ্যাত্মিক তাৎপর্যে—যেখানে প্রতিফলিত হয় ঈমানের দুঃসাহসিক অভিযাত্রা, পরিশুদ্ধির তীব্র জ্বলন, ও ঈশ্বরপ্রেমিকদের নির্বাচনের এক চিরন্তন নীতি। এ আয়াতসমূহে ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনের প্রস্তুতি যেমন প্রতিফলিত হয়, তেমনি ইমাম মাহদীর (আ.জ.) যুগান্তকারী আবির্ভাবের পটভূমিও পরিপূর্ণভাবে নির্মিত হয়। নিচে তিনটি বিশিষ্ট আয়াত আলোচনা করা হলো মাহদিয় ও ওলাইয়াতমূলক প্রেক্ষাপটে:

 

প্রথম আয়াত (৩:১৪১):

 

وَلِيُمَحِّصَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ آمَنُوا۟ وَيَمْحَقَ ٱلْكَـٰفِرِينَ

তর্জমা:

“যাতে আল্লাহ মুমিনদের পরিশোধিত করেন, আর কাফিরদের সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেন।”

রাসূলুল্লাহর (সা.) বাণী, ইবনে আব্বাসের সূত্রে:

"কায়েম (আ.জ.)-এর গায়বত কি সত্য?"

তিনি বললেন, “আল্লাহর শপথ! এই গায়বত মুমিনদের খাঁটি করে তোলার এবং কাফিরদের ধ্বংসের এক মহাপরিকল্পনা।” এরপর তিনি এই আয়াত তিলাওত করেন।

মাহদীয় ব্যাখ্যা:

ইমাম মাহদীর (আ.জ.) দীর্ঘ গায়বত হল এক ঐশী চালনা, যেখানে সত্য ও মিথ্যার ব্যবধান স্পষ্ট হয়। যে গায়বতের ধূসর কুয়াশায় বিশ্বাসীরা কখনো সংকটে, কখনো নিঃসঙ্গতায়, আবার কখনো আত্মোপলব্ধির আলোকছায়ায় অনুশীলিত হয়। এই পরীক্ষাই গড়ে তোলে এক বিশুদ্ধ, অটুট ও ঈমাননিষ্ঠ বাহিনী—যারা ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে ন্যায়ের পতাকা তুলে ধরবে।

 

দ্বিতীয় আয়াত (৩:১৪২):

 

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَـٰهَدُوا۟ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ ٱلصَّـٰبِرِينَ

 তর্জমা:

“তোমরা কি ভেবেছো যে, সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্যকার মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদের?”

ইমাম মূসা কাজিম (আ.) বলেন:

“আল্লাহর কসম! যেটির প্রতীক্ষা করছো (ইমামের উদয়), তা আসবে না তীব্র ছাঁটাই ও নির্মম পরীক্ষার পর। এতটাই কঠোর হবে সে প্রক্রিয়া, যে গুটিকয়েক আত্মা ছাড়া কেউই টিকবে না।” এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন।

 

মাহদীয় ব্যাখ্যা:

ইমাম মাহদীর (আ.জ.) অধীনে গড়ে উঠবে এক ধরাপার জান্নাতস্বরূপ ন্যায়সমাজ, কিন্তু সে সমাজে প্রবেশাধিকার অর্জন সহজ নয়। এটি নির্ভর করবে ধৈর্য ও সংগ্রামের তপস্যায় কৃতকার্য হওয়ার ওপর। গায়বতের অন্তরালে যারা সত্যিকারভাবে ঈমানের পরিখায় দাঁড়াতে শিখেছে—তারাই সেই শোভাযাত্রায় থাকবে, বাকিরা হবে ইতিহাসের উপাখ্যান।

 

তৃতীয় আয়াত (৩:১৪৪):

 

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌۭ...

তর্জমা:

“মুহাম্মদ তো একজন রাসূল মাত্র; তাঁর পূর্বেও বহু রাসূল এসেছেন ও পাড়ি দিয়েছেন। তবে কি তিনি মৃত্যুবরণ করলে অথবা নিহত হলে, তোমরা ফিরে যাবে? যে ফিরে যায়, সে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি করে না; বরং আল্লাহ কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করেন।”

 ইমাম আলী (আ.)-এর বর্ণনা:

নবীজির ইন্তেকালের পর ইবলিসের কাছে তার শয়তানরা উদ্বিগ্ন হয়ে আসে—"নবী কি উত্তরাধিকার রেখে গেছেন?"

ইবলিস হেসে জবাব দেয়: “চিন্তা কোরো না। তারা তাঁর ওসিয়ত অস্বীকার করবে, আহলুল বাইতের ওপর অত্যাচার চালাবে এবং দুনিয়ার মোহে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে...”

ওলাইয়াতমূলক ব্যাখ্যা:

এই আয়াত উচ্চারণ করে একটি গভীর সতর্কতা—নবীজির ইন্তেকালের পর প্রকৃত ইমতিহান শুরু হয়। সেই ইমতিহানের নাম ওলাইয়াতের আনুগত্য। প্রকৃত উত্তরসূরি ছিলেন ইমাম আলী (আ.) এবং তাঁর বংশধরেরা। যাঁরা তাঁদেরকে অস্বীকার করেছে, তারা আদতে হিদায়তের পথ থেকে সরে গিয়ে জাহেলিয়ার অন্ধকারে পতিত হয়েছে।

 

উপসংহার:

এই তিনটি আয়াত—যেন এক ঐশী ক্যালিগ্রাফি, যা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় খোদাই করে তরফদারদের নির্বাচনের শাশ্বত নীতি। নবুয়তের যুগে শুরু হওয়া এই দীক্ষার ধারা আজও বহমান ইমাম মাহদীর (আ.জ.) গায়বতের কালে। যে কেউ এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাইলে তাকে আত্মস্থ করতে হবে জিহাদ, ধৈর্য ও ওলাইয়াতের প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য। কেননা সেই অগ্রহায়ণের সেনাবাহিনীর সদস্য হবেন তাঁরাই—যাঁরা রাত্রির আঁধারে আলোর পথ চিনে নিতে সক্ষম হয়েছে।

@rahyafte_en

captcha