IQNA

হামাসের প্রাথমিক শর্তসমূহে অবিচল থাকার কারণ

8:48 - July 15, 2025
সংবাদ: 3477708
ইকনা- ইরানের সমর্থনে সরাসরি ইসরায়েলের দখলীকৃত ভূখণ্ডে তিনটি সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ ও যুদ্ধক্ষেত্র সম্প্রসারণের ফলে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা ও হুতি আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যে তাদের শক্তি ভাগ করতে হয়েছে। এই কৌশলগত সুবিধার ফলে হামাসের পক্ষে হামলা অব্যাহত রাখা ও তাদের মূল শর্তে অটল থাকা সম্ভব হয়েছে।
ইরানের সমর্থনে সরাসরি ইসরায়েলের দখলীকৃত ভূখণ্ডে তিনটি সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ ও যুদ্ধক্ষেত্র সম্প্রসারণের ফলে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা ও হুতি আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যে তাদের শক্তি ভাগ করতে হয়েছে। এই কৌশলগত সুবিধার ফলে হামাসের পক্ষে হামলা অব্যাহত রাখা ও তাদের মূল শর্তে অটল থাকা সম্ভব হয়েছে।
মাহমুদ আল-হাশেমি, স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ইউনিটি সেন্টারের পরিচালক, "ইকনা"কে দেয়া "ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে প্রাথমিক শর্তে হামাসের অটল থাকার গোপন রহস্য" নামক এক বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধে লিখেছেন: ৬৫০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা ‘তুফান আল-আকসা’ অভিযানে প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরে ও দক্ষিণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে—এমনটা জানিয়েছেন আবু ওবাইদা, কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র। একই সময়ে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছেন এবং স্বীকার করেছেন যে এই যুদ্ধ তাদের জন্য অনেক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে হামাস নেতা ইজ্জত আল-রিশক বলেছেন:
“নেতানিয়াহুর বক্তব্য তার মানসিক পরাজয়ের প্রতিফলন, বাস্তবতার নয়। গাজা কখনও আত্মসমর্পণ করবে না। প্রতিরোধই শর্ত ও পরিস্থিতি নির্ধারণ করে।”
 
তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়:
যুদ্ধ, ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয় সত্ত্বেও হামাস কেন তাদের পুরনো শর্তে এতটা অনড়?
এর জবাব নিচের পয়েন্টগুলোতে পাওয়া যায়:
১. গাজার জনগণ প্রতিরোধের জাতি—তারা ইসরায়েলকে দখলদার বলেই মানে।
২. ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ছয়টি যুদ্ধে ইসরায়েল কখনো প্রকৃত বিজয় পায়নি, সবই আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
৩. হামাস নেতারা হিব্রু ভাষায় পারদর্শী, শত্রুর কৌশল ও দুর্বলতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত।
৪. নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ গাজার জন্য নতুন কিছু নয়—তারা এগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত।
৫. তারা জানে ইহুদিবাদ ও তার ইতিহাস, মিথ্যাচার ও দখলদারির প্রকৃতি সম্পর্কে।
৬. তাদের লক্ষ্য কেবল গাজা নয়, বরং সমগ্র ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনি জাতির স্বাধীনতা।
৭. ৫০০ বর্গকিলোমিটারের নিচের শহর নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে কারখানা, টানেল, যুদ্ধ ও যোগাযোগ কেন্দ্র রয়েছে।
৮. নিজস্ব প্রযুক্তিতে অস্ত্র উৎপাদন করে ও মিত্রদের সহায়তা পায়—বহির্ভরশীল নয়।
৯. গাজার জনগণের মধ্যে কেউ প্রতিরোধকে দায়ী করছে না, বরং সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
১০. এই যুদ্ধ প্রথমবার বহুমুখী সহায়তা পেয়েছে—লেবানন, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরান।
১১. নেতারা শহীদ হয়েছেন, কিন্তু প্রতিরোধ দুর্বল হয়নি।
১২. ইরান সরাসরি তিনটি অভিযানে অংশ নিয়েছে, যা ইসরায়েলের শক্তি বিভক্ত করেছে।
১৩. বিশ্বজুড়ে ইসরায়েল বিরোধী মতামতের উত্থান ঘটছে; ফিলিস্তিনি বার্তা জয়ী হচ্ছে।
১৪. ইসরায়েল আর বিশ্ব ইহুদি সম্প্রদায়ের একমাত্র প্রতিনিধি নয়, এটি এখন স্পষ্ট।
১৫. ইহুদিদের ধর্মীয় বিশ্বাসেও বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র ৮০ বছরের বেশি টেকে না—এই ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে।
১৬. ইসরায়েলি সেনাদের মনোবল ভেঙে পড়ছে, পালানোর ঘটনা বাড়ছে।
১৭. নতুন প্রজন্মের তরুণরা প্রতিরোধে যোগ দিচ্ছে, যা হামাসের শক্তি বাড়াচ্ছে।
১৮. ৭ অক্টোবর যুদ্ধের শুরু হয়েছিল কয়েকজন সেনাকে বন্দি করার মাধ্যমে, এখনও তারা একই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।
১৯. সমঝোতা চাওয়া, পরাজিত ও বিশ্বাসঘাতকদের কথায় কান দিচ্ছে না; ইতিহাস তাদের অগ্রযাত্রা থামাতে পারেনি।
 
হামাস জানে তারা কেবল গাজার নয়, পুরো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধি। তাই তারা কোনো আপোষে রাজি নয় যতক্ষণ না তাদের ন্যায্য শর্ত পূরণ হয়।
 
captcha