IQNA

বিশ্বনবী (স) সম্পর্কে ইমাম খোমেনী (র) ও আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী'র নির্বাচিত মন্তব্য (২)

22:39 - June 01, 2016
সংবাদ: 2600885
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনী বলেছেন, ইসলাম এতই মহান ও এতই প্রিয় যে ইসলামের নবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ও এই মহামানবের পবিত্র আহলে বাইত তাঁদের অস্তিত্ব এবং তাঁদের সব কিছুই ইসলামের পথে উৎসর্গ করেছেন।


পার্সটুডের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ইমাম খোমেনী(রহ) বলেছেন, ‘বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম রাজনীতিকে ধর্মের ভিত্তিমূলে স্থাপন করেছিলেন। তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতির নানা কাঠামো ও কেন্দ্র।’

মরহুম ইমাম খোমেনী আরও বলেছেন, যত কঠিন সমস্যা ও সংকটের মোকাবেলা করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তত কঠিন সমস্যা ও সংকটের শিকার আর কেউই হয়নি, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি শেষ পর্যন্ত সুদৃঢ় থেকে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে এক মুহূর্তের জন্যও হতাশ বা হতোদ্যম হননি। তিনি খুব জোরালোভাবে সর্বশক্তি দিয়ে ইসলামী সমাজকে এগিয়ে নেন এবং এই সমাজকে সম্মান ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেন। তাঁরই গড়ে তোলা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা তাঁর অবিচলতা ও দৃঢ়তার সুবাদেই পরবর্তী বছরগুলোতে যুদ্ধ ও দাওয়াতের ময়দানে বিশ্বের এক নম্বর শক্তিতে পরিণত হয়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন গণমুখী চরিত্রের ও মানব-প্রেমিক। তিনি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন এবং তা করতে ভুলেননি। তিনি নিজেও সাধারণ মানুষের মতই মানুষের মধ্যে জীবন-যাপন করতেন। তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন ও মিশতেন। দাস ও নিম্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা রাখতেন। তিনি তাদের সঙ্গে বসতেন ও খাবার খেতেন। তাদের ভালবাসতেন ও তাদের প্রতি কোমল ছিলেন। ক্ষমতা তাঁকে বদলে দেয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও বায়তুল মাল তথা জাতীয় সম্পদের অভিভাবক হয়েও তিনি বদলে যাননি। কঠিন নানা সংকট ও কষ্টের সময় এবং এইসব সংকট ও কষ্ট কেটে যাওয়ার পরও তার আচরণে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সব সময়ই আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল ছিলেন গণমুখী ও মানবপ্রেমিক। তিনি সব সময়ই মানুষকে ভালবাসতেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে ও তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট ছিলেন। খন্দকের যুদ্ধ বা আহজাবের যুদ্ধের সময় তিনি নিজে শত্রুদের মোকাবেলার জন খন্দক গর্ত করার কাজে অংশ নিয়েছেন মানুষের সঙ্গে এবং অন্য সবার সঙ্গে তিনিও ক্ষুধার্ত থেকেছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল ও সর্বকালের সেরা মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম  দাসদের সঙ্গে উঠতেন ও বসতেন এবং তাদের সঙ্গে খাবার খেতেন। তিনি একবার মাটিতে বসেছিলেন এবং একদল দরিদ্র মানুষের সঙ্গে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। এক বেদুইন নারী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই নারী সবিস্ময়ে প্রশ্ন করল: হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বান্দা বা সাধারণ মানুষের মতই খাবার খান? মুহাম্মাদ সা. মুচকি হাসি হাসলেন ও বললেন, আমার চেয়েও বেশি সাধারণ মানুষ কেউ কী আছে? তিনি খুবই সাদাসিধে পোশাক পরতেন। তাঁর সামনে যে খাবারই পাওয়া যেত ও তৈরি করা হত তা তিনি খেতেন। বিশেষ খাবারের প্রত্যাশা করতেন না ও অপছন্দের খাবার বলে প্রত্যাখ্যান করতেন না। পুরো মানবজাতির ইতিহাসে এইসবই হল নজিরবিহীন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও লেনদেন সত্ত্বেও মহানবী বাহ্যিক ও আত্মিক পরিচ্ছন্নতা আর পবিত্রতার দিক থেকেও ছিলেন সর্বোত্তম তথা পূর্ণতার আদর্শ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেছেন, তাঁর চেয়েও বেশি দানশীল আর সাহায্যকারী, বেশি সাহসী ও বেশি প্রোজ্জ্বল কাউকে দেখিনি।–মানুষের সঙ্গে এই ছিল তাঁর আচরণ! তাঁর সামাজিকতা ছিল মানবীয় ও সুন্দর এবং তা ছিল সাধারণ মানুষের মতই দম্ভ, শক্তিমত্ততা আর আভিজাত্যবিহীন।

ইসলামী ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনী বলেছেন, মহানবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ও এই মহামানবের পবিত্র আহলে বাইত ছিলেন নিম্নবিত্ত সমাজের তথা সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর অংশ। আর সাধারণ মানুষের সমাজ থেকেই তারা বিপ্লব বা আন্দোলন শুরু করেছেন। সাহাবিরাও ছিলেন সমাজের সাধারণ শ্রেণীর তথা তৃতীয় শ্রেণীর অংশ। আর ওপরের শ্রেণীর লোকেরা ছিল মহানবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ও এই মহামানবের পবিত্র আহলে বাইতের বিরোধী। নিম্নবিত্ত সমাজের তথা সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর অংশ হওয়া সত্ত্বেও মহানবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন একজন ঐশী ব্যক্তিত্ব। এরপরও তিনি প্রতিদিন ৭০ বার ইস্তিগফার তথা তওবা করতেন। মানুষের কল্যাণের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদত, এমনকি কাফিরদের ব্যাপারেও যখন তিনি দেখতেন যে তারা মুসলমান হচ্ছে না, তিনি কষ্ট পেতেন এই ভেবে যে এরা মুসলমান না হওয়ায় দোযখের এতসব কঠিন যন্ত্রণায় কষ্ট পাবে!

ইসলামী ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনী বলেছেন, মহানবীর চেহারার সঙ্গে অন্যান্য মানুষের বাহ্যিক চেহারায় কোনো পার্থক্য ছিল না। আর এ জন্যই যখন তিনি একদল মানুষের মধ্যে মিশে থাকতেন তখন তাঁর সাক্ষাৎ-প্রত্যাশী অপরিচিত কোনো কোনো আরব এই বলে প্রশ্ন করত: আপনাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি হলেন নবী? মহানবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ও এই মহামানবের পবিত্র আহলে বাইতকে যে বিষয়টি বিশিষ্টতা দিয়েছে তা হল তাঁদের মহান, উন্নত ও কোমল এবং শক্তিশালী আত্মা। মহানবীর শ্রেষ্ঠত্ব উনার পবিত্র শরীরের জন্য ঘটেনি। (চলবে) #

captcha