IQNA

কাশ্মীরের বিক্ষোভ; শিয়া, সুন্নি নাকি জগণের?

21:45 - July 19, 2016
সংবাদ: 2601226
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাশ্মীরে প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ মুসলমান। সম্প্রতি সময়ে কাশ্মীরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার ফলে বেশ কয়েকজন আহত ও নিহত হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা ইকনা: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক কয়েক দিনে প্রায় ৪০ জনের অধিক মুসলমান ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত ও সহস্রাধিক আহত হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের গণমাধ্যম এই নৃশংস দমন অভিযানের দিকে তেমন একটা নজর দিচ্ছে না।  
ভারত সরকারের তীব্র চাপের কারণে কাশ্মীরের সহিংসতা তেমন ভাবে মিডিয়ায় প্রকাশ হচ্ছে না। কাশ্মীরের জনগণ মিডিয়ার সাথে যাতে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য পূর্বে থেকে কাশ্মীরের ইন্টারনেট ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে আন্তর্জাতিক সমাজের সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বর্তমানে কাশ্মীরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

কাশ্মীর কোথায়?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকায় কাশ্মীরের অবস্থান। বিগত ৭০ বছর ধরে এই দুই দেশের রাজনৈতিক সমস্যা ও বিরোধের স্বীকার হচ্ছে কাশ্মীরের জনগণ। ঠিক যখন পাকিস্তান ভারত থেকে আলাদা হয়ে গেল এবং মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ'র পক্ষ থেকে দেশ নিবন্ধন হল, তখন থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলমানদের ভোগান্তি শুরু হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান একাধিক বার কাশ্মীরের সন্ধির ব্যাপারে আলোচনা করেছে; কিন্তু কাশ্মীরের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি।

মুসলিম যুবককে হত্যা; বিক্ষোভের সূত্রপাত
কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদিন (আহলে সুন্নতের) দলের নেতা বোরহান মোজাফ্ফার ওয়ানির মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং তার লাশ দাফনের পর কাশ্মীরে বিক্ষোভের সূচনা হয়।
ভারতের পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে বোরহান মোজাফ্ফার ওয়ানি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অনন্তনাগ এলাকার একটি মসজিদে শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই এলাকা ঘেরাও করে এবং ওয়ানি ও তার দুই সঙ্গীকে হত্যা করে। হিজবুল মুজাহিদিন নামক দলের এই নেতাকে গ্রেফতারের জন্য ভারতীয় পুলিশ ১৫ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে ওয়ানির ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা গেছে।
২২ বছরের বোরহান ১৪ বছর বয়স থেকে কাশ্মীর স্বাধীন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং আস্তে আস্তে একটি স্বাধীন দেশ গঠনের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখে। অবশেষে তার এই ব্যস্ততা শাহাদাতের মাধ্যমে শেষ হয়। মোজাফ্ফার ওয়ানির শাহাদাতের ফলে কাশ্মীরের সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য বিক্ষোভ শুরু করেছে।

৯০ শতাংশ জনগণ মুসলমান
কাশ্মীরে প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ মুসলমান; যার মধ্যে ৭০ শতাংশ সুন্নি এবং ২০ শতাংশ শিয়া মুসলমান। আর বাকী ১০ শতাংশ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। বর্তমানে কাশ্মীরে যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে একটি প্রশ্ন উঠে আসে। প্রশ্নটি হচ্ছে, বর্তমানে কাশ্মীরের বিক্ষোভ শিয়া মুসলমানদের, নাকি সুন্নি মুসলমানদের, নাকি ইসলামী? বিভিন্ন মাযহাবের অনুসারীরা কাশ্মীরে বসবাস করে এবং দেশ স্বাধীনের জন্য তারা সকলে একত্রিত হয়েছে।

একনিষ্ঠ স্বাধীনতা
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সকল ব্যক্তি দেশ স্বাধীনতার জন্য বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করছেন। এ ঘটনাটি শুধুমাত্র শিয়া অথবা সুন্নি মাযহাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটিতে কাশ্মীরের সকল জনগণ অন্তর্ভুক্ত। দেশ স্বাধীনতার জন্য সকলেই সমান ভূমিকা পালন করে আসছে। তাও আবার সম্পূর্ণ একক ভাবে। কোন দেশের সহায়তা ছাড়াই, এমনকি পাকিস্তানের সাহায্য ছাড়াও।
কাশ্মীরের ১৯ বছরের যুবক আফনান আলিম এ ব্যাপারে বলেন: এই বিক্ষোভ শুধুমাত্র আমাদের স্বাধীনতার কারণে করছি। এমনকি আমরা ভবিষ্যতে পাকিস্তানের কোন অংশ হতে চাই না। আমরা স্বাধীন দেশ গঠন এবং শান্তি স্থাপনের যোগ্য। বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের ধ্বনি পৌছায় না। কাশ্মীরের যুবকদেরকে জবাই করা হচ্ছে।
গত ৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অনেকই নিহত ও আহত হয়েছে। আহতদের বেশিরভাগই চোখের কাছে জখম হয়েছে ভারতীয় হামলায়। অন্তত ৮০ জন আহত  কাশ্মীরি যুবকের চোখে অস্ত্রোপচারের পর তাদের রেটিনায় ক্ষুদ্র স্টিল বুলেট পাওয়া গেছে। ক্ষুদ্র বুলেট অপসারণের জন্য এক সপ্তায় প্রতিবাদী কাশ্মীরি যুবকদের ১৫০ টি  চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই দৃষ্টি শক্তি হারাবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। একজন ডাক্তার বললেন, এদের অবস্থা মৃত্যুর চেয়েও খারাপ।  
একই সময়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরে বন্ধ করে দিয়েছে বহু সংবাদপত্র এবং সংবাদ প্রকাশের ওপর আরোপ করেছে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা। এ ছাড়াও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরে কারফিউ বা সান্ধ্য আইনও জারি করে রেখেছে এক সপ্তারও বেশি সময় ধরে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালা, ইন্টারনেট ও টেলিফোন নেটওয়ার্ক। কাশ্মীরে নৃশংস দমন অভিযানের খবর প্রচার করা হলে সেখানে গণ-বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
iqna


captcha