IQNA

ইমাম মাহদীর জন্ম হয়েছে এ বিষয়ে উভয় মাজহাবের ঐকমত্য রয়েছে

22:54 - July 19, 2016
1
সংবাদ: 2601228
ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্ম সম্পর্কে ঐ সময়ের মুসলমানরা এমনকি শাসকরা পর্যন্ত জানতো যে, ইমাম আসকারী (আ.) এর ঔরসে এক মহামানব জন্ম গ্রহণ করবেন। যিনি সমস্ত অন্যায়, অবিচার জুলুম অত্যাচারকে সমূলে উপড়ে ফেলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। এই কারণে তারা ইমামের উপর বিভিন্ন কঠোরতা, অবরোধ আরোপ করে। যেন তাকে নিঃশেষ করে ইমাম মাহদী (আ.) এর জন্ম ও ইমামতের ধারাকে রুখতে পারে। (শেখ তুসি, কিতাবুল গেইবাত, পৃ. ২৩১।)

বিশ্ব মুক্তিদাতা ইমাম মাহদীর (আ.) অস্তিত্বে বিশ্বাস করা কুরআনের আয়াত দ্বারা স্বীকৃত। এটি ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোর অন্যতম এবং এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলিও নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসেছে। অবশ্য অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও তাদের নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী বিশ্ব ত্রাণকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। যদিও ঐশী গ্রন্থ ও হাদিস ছাড়া ইমাম মাহদীর (আ.) সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়।

হাদিসে বিশ্ব মুক্তিদাতাকে ‘মাহদী ও ‘যুগের ইমাম’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম মাহদীর (আ.) সম্পর্কে বহু সংখ্যক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইমাম মাহদী (আ.)’র জন্ম সম্পর্কিত বহু হাদিস রয়েছে। এসব হাদিসের মধ্যে আমরা দু’একটি উল্লেখ করছি:

‘মোন্তাখাবুল আসর’ গ্রন্থটির লেখক ইমাম মাহদী (আ.)এর জন্ম সম্পর্কে ২১৪টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এসবের মধ্যে এমন ১৪৬টি হাদিস রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে তিনি ইমাম হাসান আসকারী (আ.)এর সন্তান। সেই সঙ্গে এই গ্রন্থে এমন ৩১৮টি হাদিস রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ইমাম মেহদী (আ.) দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হবেন। এ ছাড়া, ‘মোন্তাখাবুল আসর’ গ্রন্থে বর্ণিত ৯১টি হাদিসে বলা হয়েছে, ইমাম মেহদী (আ.) দীর্ঘকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকবেন।

যেসব ঐতিহাসিক ইসলামের ইতিহাস রচনা করেছেন তারাও ইমাম মাহদী (আ.)-এর জন্মের কথা লিখে যেতে ভোলেননি। তারা লিখেছেন, ২৫৫ হিজরিতে ইমাম মেহদী (আ.) বর্তমান ইরাকের সামেরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) শাহাদাতের পাঁচ বছর আগে এই মহান ইমামের জন্ম হয়।

পরিশেষে বলা যায়, ইমাম মাহদীর (আ.) জন্ম এবং তার বিশাল জীবন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং পবিত্র কুরআন ও হাদিস দ্বারা স্বীকৃত। নিষ্পাপ ইমামগণও এ সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে হাদিস বর্ণনা করেছেন। এমনকি ঐতিহাসিকরাও তাঁর জন্মের কথা স্থান ও কাল উল্লেখপূর্বক বর্ণনা করেছেন।

ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও মহামানব রাসূল (সা.) এর সাথে ইমাম মাহদীর বেশ কিছু বিষয়ে চমৎকার মিল পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) যেমন সর্বশেষ নবী তেমনি ইমাম মাহদী ও সর্বশেষ ইমাম। মহানবী (সা.) এর শুভাগমন সম্পর্কে যেমন পূর্ববর্তী নবী বা রাসূলগণ ভবিষ্যৎ বাণী করে গেছেন, তেমনি ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমন সম্পর্কেও মহানবী (সা.) এবং পূর্ববর্তী ইমামগণ বাণী রেখে গেছেন।

প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদীকে সাধারণত : ‘ইমামুল আসর’ বা নির্দিষ্ট সময়ের ইমাম এবং সাহিবুজ্জামান বা জামানার নেতা বলা হয়। জন্মের পর মহানবী (সা.) এর নামেই তার নাম রাখা হয়। তিনি জন্মের পর থেকে তার শ্রদ্ধেয় পিতা ইমাম আসকারী (আ.) এর প্রত্যক্ষ ও বিশেষ তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

স্বৈরশাসকের হুমকির কারণে ইমামে মাহদীর (আ.) জন্মের খবর গোপন রাখা হয়েছিল। কারণ আব্বাসীয় শাসকরা ইমামের বংশ ধারকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে খুঁজে বের করার জন্য ওরা গোপন ঘাতক বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিল। তাই স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা শিশু ইমামকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা ও সুরক্ষিত রেখেছিলেন।

সূত্র: ১) কুরআন, সুরা কেসাস ৫, ফাতাহ ২৮, সাফ ৯, নূর ৫৫

২)  ইবনে হাজার আসকালানি, তাহজিব আততাহজিব হায়দ্রাবাদ প্রকাশনা, খ:৯, পৃ:১৪৪

৩) সাফি গুলপায়গানি, মোন্তাখাবুল আসর

৪) মাসউদি, মুরুজুজ জাহাব,খ:৪, পৃ:১১২
ট্যাগ্সসমূহ: ইমাম ، কুরআন ، মুসলমান ، মাহদী
প্রকাশিত: 1
পর্যালোচনা করা হচ্ছে: 2
প্রকাশযোগ্য নয়: 0
ফাহিম
0
0
Kisu nai
captcha