ইসলামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ও এ ধর্মকে সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলাসহ সার্বিক ক্ষতিকর দিক থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করার দরকার তার সবই তিনি করেছিলেন। ৩৪ বছর ধরে মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দেয়ার পর ১৪৭ হিজরির ২৫ শে শাওয়াল শাহাদত বরণ করেন। আব্বাসিয় শাসক মানসুর দাওয়ানিকি বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে।
এক ব্যক্তি ইমাম জাফর আস সাদিকের(আ.) কাছে প্রশ্ন করেন যে সুরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ, রাসূল এবং উলিল আমরের আনুগত্যের যে কথা বলা হয়েছে, এর অর্থ কী? উত্তরে ইমাম বলেছেন, এখানে উলিল আমর বলতে আল্লাহ আমাদের তথা আহলে বাইতকে বুঝিয়েছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তাঁর কাছে আরো প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন পবিত্র কুরআনে হযরত আলী (আ.) ও আহলে বাইতের নাম আসেনি?
উত্তরে ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.) বলেছেন, আল্লাহ কুরআনে নামাজের কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি তো এটা বলে দেননি যে কয় রাকাত নামাজ পড়তে হবে, তিন রাকাত না চার রাকাত। কিন্তু রাসূল (সা.) নামাজ সংক্রান্ত আয়াতের তাফসিরে রাকাতের সংখ্যা বলেছেন। তদ্রূপ রাসূলই (সা.)হজ ও যাকাতের বিধানগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন, হজে সাতবার কাবা প্রদক্ষিণ বা তাওয়াফ করা। ঠিক একইভাবে রাসূলে (সা.) দেয়া ব্যাখ্যা বা তাফসির অনুযায়ী সুরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে উলিল আমর বলতে আলী এবং হাসান ও হুসাইনকে বোঝানো হয়েছে, যদিও তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এরপর বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, আমি যাদের মাওলা বা নেতা আলীও তাদের মাওলা বা নেতা। তিনি মুসলমানদের আরো বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কুরআন ও আহলে বাইতের ব্যাপারে নসিহত করছি, কারণ, আমি আল্লাহর কাছে চেয়েছি এই দুই যেন একে-অপর থেকে বিচ্ছিন্ন না থাকে যে পর্যন্ত তারা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে মিলিত হয়। আর আল্লাহ আমার এই দোয়া কবুল করেছেন।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেছেন, তোমরা আহলে বাইতকে কিছু শেখাতে যেও না। কারণ, তাঁরা তোমাদের চেয়ে জ্ঞানী, তাঁরা তোমাদেরকে হেদায়াতের পথ বা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করবেন না ও বিভ্রান্ত করবেন না।
বিশ্বনবী (সা.) যদি আহলে বাইতের পরিচয় ও মর্যাদা সম্পর্কে নীরব থাকতেন ও স্পষ্ট করে না বলতেন যে কারা তাঁর আহলে বাইত, তাহলে অন্যরা নিজেদের আহলে বাইত বলে দাবি করত। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.) তা স্পষ্টভাবে বলে গেছেন এবং মহান আল্লাহও পবিত্র কুরআনে আহলে বাইতের (তাঁদের সবার প্রতি অশেষ সালাম ও দরুদ বর্ষিত হোক) প্রতি স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন,
হযরত ইমাম বাকের (আ.) ও হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)বিশেষ করে হযরত ইমাম জাফর সাদিক(আ.)বারংবার এ কথা বলেছেন যে, আমাদের হতে বর্ণিত হাদীস সমূহ মহানবীর (স.) হাদীস ও সুন্নত এবং আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে কিছুই বলি না।
সুন্নি মাযহাবের বড় বড় ব্যক্তিগণ হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর দরস (ক্লাস)-এ অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্ম ও মাযহাবের সাহিত্যিক, মুহাদ্দিস, মুফাসসিরগণও তাঁর (আ.) দরসে অংশগ্রহণ করতেন। এ ধরণের কাজ হযরত আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) বা হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) এর যুগে সম্ভব ছিল না। কিন্তু ইমাম সাদিক (আ.) এর যুগে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করত তখন সে দেখতে পেত যে, লোকেরা দলে দলে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে বসে আছে এবং বলছে: হাদ্দাসানী জাফার ইবনে মুহাম্মাদ (অর্থাৎ জাফর ইবনে মুহাম্মাদ বলেছেন)
অতএব, যেহেতু ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) ও ইমাম মুহাম্মাদ সাদিক (আ.)-এর যুগে মহানবীর (স.) সুন্নত এবং হাদীস লিপিবদ্ধ করার উপর হতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় এবং তৎকালীন যুগে সাহাবীরাও উপস্থিত ছিলেন না যে, তাদের নিকট হতে সুন্নিরা হাদীস সংগ্রহ করতে পারে, সুতরাং তারাও এ দুই ইমামের শরণাপন্ন হয়। আর তারাও এ সুযোগকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগায়।