IQNA

মুসলিম শিশুদের কুরআন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন হিন্দু নারী

16:16 - September 06, 2016
সংবাদ: 2601527
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বর্তমানে অনেকেই ধর্মের অজুহাত দেখিয়ে একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। আর ঠিক তখনই মুসলিম শিশুদের কুরআন প্রশিক্ষণ দিতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন ভারতের ১৮ বছরের হিন্দু মেয়ে পূজা কুশয়াহার।


বার্তা সংস্থা ইকনা: পূজা কুশয়াহারের বাবা যদিও মুসলমান, তবে তার মা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ১৮ বছরের এই নারী প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার সঞ্জয় নগর  মন্দিরের মাঠে কুরআন শিক্ষার আসর বসেন। এই পদক্ষেপের মধ্যমে পূজা শান্তিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত ফুটিয়ে তুলেছেন।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পূজা নিকট বর্তমানে ৩৫টি শিশু কুরআন পড়া শিখছেন। অমুসলিম হয়েও কঠিন অনবদ্য আরবি উচ্চারণ ও বিভিন্ন সিলেবাস অনুযায়ী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কুরআন শিক্ষা দিচ্ছেন। আর এর কারণে তিনি ওই এলাকার সবার কাছে জনপ্রিয় শিক্ষিকা।
আরবি শেখার ব্যাপারে তিনি বলেন: আমি শৈশবেই আরবি শিক্ষা অর্জন করেছি। আরবি বর্ণমালার সঠিক উচ্চারণও শুদ্ধভাবে করতে পারি। আমার নিকটে যেসকল শিশুরা কুরআন শেখে তারা সকলেই আমাকে অনেক ভালোবাসে।
পূজার এক শিক্ষার্থীর মা রেশমা বেগম বলেন, পূজা কুশয়াহারের এতো কম বয়সে এতো সুন্দর অর্জন দেখে আমরা অবাক। আমাদের সন্তানদের শিক্ষক হিসেবে তাকে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন: পূজার ধর্মের বিষয়টি আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। এটিকে আমি সর্বশেষ ধাপ মনে করি। আমার মনে হয় আমার মতো অন্যরাও তার বিষয়ে একই মনোভাব রাখে।
পূজা বলেন: কয়েক বছর পূর্বে আমাদের এলাকায় মিশ্র বিশ্বাসী সঙ্গীতা বেগম নামের এক শিক্ষিকা শিশুদের কুরআন শিক্ষা দিতেন। সঙ্গীতা বেগমেরও বাবা মুসলিম ও মা ছিলেন হিন্দু ধর্মের অনুসারী। তখন থেকে কুরআন নিয়ে আমার আগ্রহ জন্মে। পবিত্র গ্রন্থ কুরআন সম্পর্কে আমার আগ্রহ থাকায় তার ক্লাসে অংশগ্রহণ করি। কিছু দিনের মধ্যেই অন্যদের থেকে আমি অনেক এগিয়ে যাই।
পূজা আরও বলেন, কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় সঙ্গীতা বেগম আর কুরআনের ক্লাস নিতে পারেননি। তিনি আমাকে ক্লাসকে জীবিত রাখার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আমাকে খুব ভালোভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনের গুরুত্ব সম্পর্কে আমাকে শিখিয়েছেন। একই সঙ্গে ভাগাভাগির মধ্যে দিয়ে জ্ঞান ও মেধা বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়ে আমাকে আমার শিক্ষা, কাজে লাগানোর কথা বলেন। সেই থেকে পূজা শিশুদের কুরআন শেখান।
পূজা বলেন, অধিকাংশ শিশুর পরিবার দরিদ্র হওয়ার কারণে আমি বিনা পরিশ্রমেই এই কাজটি করতে থাকি।
আগ্রার মুসলিম ধর্মীয় নেতা  'জালাল উদ্দিন কোরেইসি বলেন, এটি খুবই হৃদয় স্পন্দিত ও বিরল উদাহরণ। বিশ্বে এমন উদার মনের মানুষ খুবই কম রয়েছে। আমাদের শহরে সাম্প্রদায়িক বন্ধনের বিষয়টি পূজার কুরআন শিখানোর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষককে শিক্ষক হিসেবে মূল্যায়ন করা উচিৎ। তার ধর্ম এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়, শিক্ষা প্রদানের জন্য তার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। যে কেউ আরবি শিখতে পারবে। কুরআন পড়তে পারবে এখানে ইসলামের কোনো বাধা নেই।
iqna



captcha