বার্তা সংস্থা ইকনা: মুহররম মাসের ১০ তারিখ গোটা মুসলিম বিশ্বের কাছে পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত। আশুরা ও মুহররম শব্দদ্বয় শ্রবণের সাথে সাথে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে এক ভয়ংকর, বীভৎস, নিষ্ঠুর, নির্মম ও ইসলামের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নয়নের পুতুলী, কলিজার টুকরা, খাতুনে জান্নাত নবীনন্দিনী হযরত ফাতিমা (আ.) এর আদরের দুলাল হযরত হুসাইনের কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতের মর্মন্তুদ ঘটনা; যা এ পৃথিবীর এক করুণ ইতিহাস।
বিশ্বের সকল মুসলিম নরনারী আজও ধর্মীয় রীতিনীতির মাধ্যমে দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করে । হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ওফাতের মাত্র পঞ্চাশ বছর পর ফোরাতের তীরে কারবালার কংকরময় প্রান্তরে মুহাম্মদ (সা:) এর অন্যতম প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) স্ব-পরিবারে তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে মুয়াবিয়া পুত্র ইয়াজিদের হাতে শাহাদাৎ বরণ করেন । এ অধ্যায়কে ইসলামের ইতিহাস আজও বেদনার রক্তদিয়ে লেখা রয়েছে । তবে কারবালার এ করুন ট্র্যাজেডির পরেই ইসলাম নবরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে বলেই ইসলামী স্কলারদের বিশ্বাস । তাদের মতে কারবালার ত্যাগের পরেই ইসলাম জিন্দা হয়েছে।
কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনায় মুসলমানদের জন্য ব্যাপক শিক্ষা রয়েছে । (ক) কারবালার ঘটনা মুসলমানদেরকে মিথ্যার সাথে আপস না করা এবং সত্যের পতাকাকে সমুন্নত রাখার চেতনাকে জাগ্রত রাখার শিক্ষা প্রদান করে । মহানবী (সা:) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (আ.) এর আহলে বাইত ফোরাত নদীর উপকূলে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতের ঐতিহাসিক ঘটনার প্রথম শিক্ষা হচ্ছে একজন প্রকৃত সত্যাশ্রয়ী নিষ্ঠাবান খাঁটি মু’মিন ও মর্দে মুজাহিদ কখনও অন্যায়ের সাথে আপস করে না । প্রিয় নবী (সা:) এর চিরন্তন বানী, "আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সকল অবস্থায় সত্য কথা বলা আর সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন নির্যাতন ও অপবাদকারীর অপবাদ ও নির্যাতনের ভয় না করা। ইমাম হোসাইন (আ.) কারবালা প্রান্তরে নিজের জীবন ও স্বল্প দুধের শিশু আব্দুল্লাহ (আজগর) কে এবং কিশোর কাসেমসহ ৭২ জন আইলে বাইতের কারবালার কংকরময় প্রান্তরে তাজা খুনে রঞ্জিত করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহের সত্যের পতাকাকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে আল্লাহ পরিপূর্ণ দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ও রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার চেতনার ও প্রেরণাকে চির জাগ্রত রেখে গেছেন । (খ) কারবালার ঘটনা পরিপূর্ণ দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত জিহাদের শিক্ষা দেয় । (গ) অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চেতনা জাগ্রত করে (ঘ) কারবালার অন্যতম শিক্ষা হল, অসৎ নেতৃত্বের পরিবর্তে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ঈমানের দাবী । ইমাম হোসাইন (আ.) কারবালার নির্মম শাহাদাৎ মূলত অসৎ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নিছক রাজনৈতিক আন্দোলন বা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আলোচনা নয় বরং প্রতিটি মুসলিম উম্মাহের জন্য ঈমানের অপরিহার্য দাবী, এ সত্যের মহান শিক্ষা ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রেখে গেছেন । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদে আল্লাহর পরিপূর্ণ দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও ইমানদার, মুত্তাকী, সৎ কর্মশীল ও যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকে নিজেদের শাসক ও নেতা হিসাবে নির্বাচিত করা মুসলিম উম্মাহের জন্য নামায ও রোজার মতো ফরযে আইন; এ মহান চেতনা হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এবং আহলে বাইত নিজেদের জীবন বিলিয়ে জাগ্রত রেখেছেন।