ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবাদমুখর ছিলেন। সর্বোচ্চ নেতার আহ্বানে ইরান সরকার এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিনিধিদল পাঠিয়েও মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে।
সর্বোচ্চ নেতার মিয়ানমার অঞ্চল বিষয়ক প্রতিনিধিও এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরপরও মিয়ানমার সরকারের মদদে রাখাইন রাজ্যে মুসলিম নিধন থেমে নেই। বতর্মান প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিভঙ্গির দিকে আরেকবার নজর দেয়া যাক। সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই ইরানের এ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এর আগে এক বক্তৃতায় বলেছেন-আপনারা আজই দেখুন, পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলমান নিহত হচ্ছে এবং তাদের হত্যা করা হচ্ছে অজ্ঞতা ও বিদ্বেষের কারণে। এ ঘটনায় কোনো কোনো শক্তির রাজনৈতিক হাত থাকার কথা না উল্লেখ করেও যদি ধরে নিই যে, যেমনটি দাবি করা হচ্ছে, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কারণেই এই গণহত্যা ঘটছে, তা সত্ত্বেও মানবাধিকারের ভুয়া সমর্থকরা মুখ খুলছেন না। অথচ এদেরই অন্তর নাকি জীব-জন্তু ও পশুর জন্য কাঁদে! অন্যদিকে যেসব দেশ তাদের অধীনতা থেকে মুক্ত বা স্বাধীনচেতা এবং তাদের ধামাধরা নয়, সেসব দেশে ক্ষুদ্রতম অজুহাতও দেখতে পেলে তারা তা শতগুণ বড় করে তুলে ধরে। অথচ মিয়ানমারে নিরপরাধ, নিরস্ত্র এবং অসহায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যার ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ হয়ে আছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো অবশ্য এ ব্যাপারে সাফাইও গাইছে! এই হলো তাদের মানবাধিকারের অবস্থা! তাদের মানবাধিকার নৈতিকতা, খোদা ও আধ্যাত্মিকতাবিহীন। পশ্চিমাদের নৈতিকতা এবং মানবাধিকারের দাবি যে মিথ্যা বড়াই ছাড়া আর কিছুই নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে মিয়ানমারের হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যার বিষয়ে তাদের নীরবতার মধ্য দিয়ে।
তিনি আরও বলেছেন, ওরা বলছে, রোহিঙ্গা মুসলমানরা নাকি মিয়ানমারের নাগরিক নয়। ধরে নিলাম তা ঠিক, তাই বলে কি তাদেরকে অবশ্যই নিহত হতে হবে? অবশ্য, তাদের এ দাবি মিথ্যা কারণ, শত শত বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। পশ্চিমারা বিশেষ করে ইংরেজরা তাদের ঔপনিবেশিক শাসনামলে মিয়ানমারে এবং তার আশেপাশের দেশগুলোর জনগণের ওপর ঠিক এমন অবস্থায়ই চাপিয়ে দিয়েছিল। তারা সেখানকার জনগণের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছিল। ইংরেজরা যেখানেই পা রেখেছে সেখানেই দুর্নীতি বা আরাজকতার রাজত্ব কায়েম করেছে এবং বংশ নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে। কুরআন যেমনটি বলে-এসব কাজ ছাড়া অন্য কিছু তারা করেনি।
সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে পবিত্র কুরআন ও ঐশী হেদায়াত থেকে উৎসারিত আধ্যাত্মিকতা-ভিত্তিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা শূন্য জড়বাদী পশ্চিমা সভ্যতা মানুষকে শোষণ করছে। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নৈতিকতা ও মানবাধিকার সম্পর্কে পাশ্চাত্যের দাবিগুলো মিথ্যা; আর এর উজ্জ্বল প্রমাণ হল, মিয়ানমারে হাজার হাজার মুসলমান হত্যার বিষয়ে পশ্চিমা সমাজের নীরবতা। পার্সটুডে