IQNA

রোহিঙ্গাদের ওপর হামলায় উস্কানিদাতা বৌদ্ধভিক্ষু ৭ দিনের রিমান্ডে

15:46 - October 03, 2017
সংবাদ: 2603972
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপর হামলা চালাতে চরমপন্থী বৌদ্ধদের উষ্কানি দেয়ার অভিযোগে একজন বৌদ্ধভিক্ষুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।


বার্তা সংস্থা ইকনা: সোমবার তাকে গ্রেপ্তারের পর স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। মাউন্ট লভিনিয়া’র ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন সিংহল রাভয়া’র সদস্য ভিক্ষু আকমিমনা দয়ারত্নে থেরোকে এক সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে পাঠায়।
কলম্বো ক্রাইমস ডিভিশনে (সিসিডি) সোমবার সকালে ওই হামলার ঘটনা নিয়ে তিনি বিবৃতি দেন।
রোহিঙ্গাদের উপর হামলা চালাতে জনতাকে উষ্কানি দেয়ার জন্য আরেক বৌদ্ধভিক্ষু রত্নেসারা থেরোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়। তবে তাকে এখনো আদালতে হাজির করা যায়নি।
গত সপ্তাহে এই দুই ভিক্ষু এবং তাদের সমর্থকরা জাতিসংঘের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বাসভবনে হামলা চালায়। এতে সেখানে দায়িত্বপালনকারী দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে একই সময়ে বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আক্রমণকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল বলে জানা যায়।
সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য চিহ্নিত কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্তের অধীনে আনা হবে।
ওই হামলায় জড়িত অভিযোগে এ পর্যন্ত পাঁচ জন পুরুষ ও একজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলার শিকার হওয়া ১৬ শিশু ও ৭ মহিলাসহ ৩১ জন শরণার্থীকে এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গালের কাছাকাছি একটি পুরনো ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
২০০৯ সালে তামিল টাইগার জঙ্গিদের ধ্বংস করার পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কায় উগ্র জাতীয়তাবাদী একটি ধারা তৈরি হয়। দেশটির সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলমানদের প্রতি ওই উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বৈরিতাপূর্ণ আচরণ দিন দিন বাড়ছে।
চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কিছু বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মায়ানমারের জঙ্গি বৌদ্ধভিক্ষুদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। তাই এই সন্ন্যাসীদের অপপ্রচারের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি ‘মানবিক ইস্যু’ করার বদলে শ্রীলংকার সংখ্যাগরিষ্ঠ (মোট জনসংখ্যার ৭৫%) বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু (মোট জনসংখ্যার ১০%) মুসলিমদের বিরুদ্ধে উষ্কে দেয়ার কাজে লাগানো হচ্ছে।
এদিকে, নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিলক মারাপোনা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা সিংহলী বৌদ্ধদের নেতৃত্বে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এর জন্য দায়ী সিংহলী বৌদ্ধদের দল ‘সিংহলী জ্যোতিকা বালামুলুভা’ চরমপন্থী বৌদ্ধ সংগঠনের সর্বশেষ সংস্করণ যা কুখ্যাত বধু বেলা সেনা (বিবিএস) – এর পথ অনুসরণ করছে। ২০১৪ সালের শ্রীলংকার দক্ষিণে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার জন্য দায়ী এই বিবিএস।
এক ভিডিও বার্তায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মাউন্ট লাভিনিয়া শহরতলীতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে থাকা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের উপর ‘গেরুয়া গুন্ডাদলের’ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমি কেবল মন্ত্রী হিসেবেই এর নিন্দা করি না বরং একজন ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ হিসাবেও এর নিন্দা জানাই, বৌদ্ধ ধর্ম অহিংস ও সমবেদনার একটি ধর্ম এবং তা নিয়ে আমি খুবই গর্বিত।’
তার এই কড়া ভাষার নিন্দা এমন একসময় আসে যখন প্রধানমন্ত্রী রাণিল বিক্রমাসিঙ্ঘে এবং প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনার নীরবতা বেশ লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
২০১৩ সালে শ্রীলংকা নৌবাহিনী দেশের পূর্ব উপকূলে সমুদ্রে ভাসমান একটি নৌকা থেকে এসব রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই ধরনের উদ্বাস্তুদের শ্রীলংকায় সাময়িক আশ্রয় দানের ঘটনা এটাই নয়। ২০০৮ সালের মার্চে শ্রীলংকা নৌবাহিনী সমুদ্রে ভাসতে থাকা একটি ছোট নৌকা থেকে মৃতপ্রায় কিছু মানুষ উদ্ধার করে। ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত করার আগ পর্যন্ত তাদেরকে শ্রীলঙ্কাতেই রাখা হয়েছিল।’ আরটিএনএন
captcha