IQNA

মুহম্মদ মুহসিন;

বীর যোদ্ধা তিতুমীর ।। পর্ব-৬

22:04 - October 09, 2020
সংবাদ: 2611613
তেহরান (ইকনা): ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেবের মুত্যুর পরে ভারতীয় মুসলমানদের ওপর ত্রিমুখী বিপদ আপতিত হয়। মারাঠারা, শিখরা এবং ইংরেজরা তিন দিক দিয়ে মুসলমানদের জীবন-যাত্রা বিপর্যস্ত করে তোলে। এই সব বিপদ ও অনৈসলামিক অনুষঙ্গ মুসলমানদের আত্মপরিচয় বিপন্ন করে তোলে এবং মুসলমানরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে হীনমন্য এক সম্প্রদায়ে পরিণত হতে থাকে।

তারা ধর্মাচারের শুদ্ধি হারিয়ে অপর ধর্মাদির সাথে লীন হতে শুরু করে। এই অবস্থা থেকে মুসলমানদেরকে জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত করতে যাঁর আবির্ভাব হয়েছিল তিনি ছিলেন শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভি। তাঁর জন্ম হয়েছিল আত্তরঙ্গজেবের মুত্যুর চার বছর পূর্বে ১৭০৪ সালে। শাহ ওয়ালীউল্লাহর পিতা আব্দুর রহীম ছিলেন আওরঙ্গজেবের বিখ্যাত গ্রন্থ ফতওয়ায়ে আলমগীরির অন্যতম সংকলক। শাহ ওয়ালীউল্লাহ পরবর্তী জীবনে মুঘলদের পতনকালে ক্ষয়িষ্ণু ও দুর্দশাগ্রস্ত মুসলমানদেরকে জাগ্রত করে তোলা ও এক মঞ্চে দাঁড় করানোর প্রয়াসে তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া নামে একটি সংস্কার আন্দোলনে মুসলমানদেরকে সম্পৃক্ত করতে ব্রতী হন। তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া ছিল অনেকটাই আরবের পণ্ডিত ও সংস্কারক মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাবের সংস্কার কার্যক্রমের অনুরূপ। শাহ ওয়ালীউল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর এই আন্দোলনের হাল ধরেন তাঁর পুত্র শাহ আবদুল আজিজ। শাহ আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর এ আন্দোলনের ঝাণ্ডা চলে আসে যাঁর হাতে তিনিই হলেন সৈয়দ আহমদ বেরেলভী, শহীদে বালাকোট।
১৮২০ সালে সৈয়দ আহমদ বেরেলভী গিয়েছিলেন হজ্জ করতে। তিনিও চার বছর মক্কায় অবস্থান করেছিলেন। এই সময়ই তিতুমীরের সাথে মক্কায় দেখা হলো সৈয়দ আহমদ বেরেলভির। মক্কায় সৈয়দ আহমদের সাথে দীর্ঘ সান্নিধ্যে তিতুমীর দীক্ষিত হন সৈয়দ আহমদের সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনায়। মক্কা থেকে সৈয়দ আহমদ ১৮২৪ সনে দেশে ফেরেন আর তিতুমীর ফেরেন ১৮২৭ সালে। কিন্তু দুজনই ফেরেন একই উদ্দেশ্যে, মুসলমানদেরকে উজ্জীবিত করতে হবে অধীনতা থেকে মুক্তির সংগ্রামে।
তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া প্রচারে আত্মনিয়োগের শুরু থেকেই সৈয়দ আহমদের পরিকল্পনা ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের। এ লক্ষ্যে তিনি ১৮১১ সালে টংকের নবাব আমীর খান পিন্ডারির সেনাবাহিনীতে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮১৬ সালে আমীর খান ইংরেজের সাথে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হলে তিনি আমীর খানের সেনাবাহিনী থেকে প্রশিক্ষণ ছেড়ে দিল্লী ফেরেন। ১৮২৪ সালে হজ্জ থেকে ফিরে তিনি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যে, তিনি ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে দুর্ধর্ষ উপজাতীয় মুজাহিদদেরকে সাথে নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করবেন। সেখান থেকে শুরু করে বিজয়ের ঝাণ্ডা নিয়ে তিনি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে দাঁড়াবেন ইংরেজ রাজশক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু সে অগ্রসর হওয়ার পথে তাঁর প্রথম বাঁধাই শিখ রাজ্য পাঞ্জাব। তাই তাঁর প্রথম যুদ্ধ ছিল পাঞ্জাবরাজ দুর্ধর্ষ রণজিৎ সিং এর বিরুদ্ধে।
রণজিৎ এর সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর সহযোদ্ধা মুজাহিদরা শুধু উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের উপজাতিরা ছিল না, বরং তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার অনুসারী সারা ভারতের হাজার হাজার ভক্তের অনেকেও সেখানে যোদ্ধা ছিল। বিশেষ করে তাঁর সহযোদ্ধা ছিল শত শত বাঙালি। আবার তাঁর সকল ভক্তের প্রতি নির্দেশ ছিল না উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গিয়ে তাঁর সাথে শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। বরং শত শত তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার ভক্ত ও মুজাহিদকে তিনি দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন ভারতের বিভিন্ন স্থানে নিজ নিজ এলাকায় তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার পক্ষে মানুষকে একত্রিতকরণের এবং মুসলিম-বিরোধী শক্তি বিশেষ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের। সৈয়দ আহমদের এই শেষোক্ত দায়িত্বের ভক্ত ও মুজাহিদদের একজন ছিলেন তিতুমীর। তাঁর দায়িত্ব ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে না গিয়ে বাংলায় তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার ভক্তগণকে একত্রিতকরণ ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে এবং মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা।
তিতুমীরের প্রচারিত তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার দিকে মানুষ দলে দলে ঝুঁকলো এ কারণে নয় যে, তদবধি প্রচারিত অন্য চারটি তরিকা অর্থাৎ কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দীয়া ও মোজাদ্দেদিয়া তরিকার চেয়ে ইসলামের সাধনায় এটি যোগ্যতর কোনো তরিকা ছিল; বরং এই তরিকার প্রতি গরিব-মেহনতি মুসলমানরা দলে দলে এই কারণে ঝুঁকলো যে এই তরিকার অধীনে একত্রিত হয়ে তারা নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে আত্মরক্ষার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। এই তরিকা শুধু এবাদাতের ধরন বাৎলালো না, বরং একতাবদ্ধ হয়ে নিপীড়ক শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তালকিন দিলো। বিশেষ করে জমিদারি নিপীড়ন-নির্যাতন রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানে অজস্র মানুষ তিতুমীরের ভক্ত হয়ে উঠলো। বোঝাই যায়, সেই ভক্তদের মধ্যে বীরোচিত একজন ছিলেন মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাস। তিনি চাইলেন রুখে দাঁড়ানোর এই শক্তি বিপ্লবে রূপান্তরিত হোক। সেই বাসনায় জীবনের ঝুঁকি জেনেও তিনি তিতুমীরকে আহ্বান করলেন নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য এবং তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার কার্যক্রমের জন্য তার বাড়িতে এর সদরদপ্তর পুনঃনির্মাণের। তদনুযায়ী তিতুমীর মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাসের বাড়িতে নির্মাণ করলেন তাঁর প্রতিরোধশক্তির দুর্গ, বাঁশের কেল্লা। আমি তখন সেই মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাসের বাড়িতে দাঁড়িয়ে। ইতিহাসের অনেক ট্রাজিক ও রোমাঞ্চকর ঘটনার সাক্ষী এই মাটিতে দাঁড়িয়ে ভিতরে এক কাঁপন অনুভব করলাম। এ ধরনের আবেগের কম্পনে নিজেকে প্রায় নিশ্চল ও নির্বাক অনুভব করলাম। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ভদ্রলোককে জিগ্যেস করলাম আপনি কি এই বাড়ির অর্থাৎ আপনি কি আব্দুল কাদের বিশ্বাস? লোকটি হাঁ-সুচক মাথা নাড়লো।
জিগ্যেস করলাম- আপনি কি মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাসের নাম জানেন? পাশের পাড়ার এক মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাসকে তিনি চেনেন বললেন; তবে তিনি তখন বাড়ি ছিলেন না বলেও জানালেন। আমার তখন হাসির পরিবর্তে বরং একটু হলেও দুঃখই লাগছিলো। মনে হলো কত সার্থক ছিল ইংরেজদের পরিকল্পনা! তারা এমন ব্যবস্থা করে যেতে পেরেছে যে এই মাটিতে জন্মেনি আর কোনো তিতুমীর কিংবা মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাস এবং এমনকি এই মাটি থেকে তারা ভুলিয়ে দিতে পেরেছে তিতুমীর কিংবা মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাসের নাম। ইতিহাসের এই সকল গল্প মনে করতে করতেই মনে পড়লো কী ঘটেছিল তিতুমীরের মৃতদেহের ওপর। তাঁকে সহ ৫০ জন সশস্ত্র সংগ্রামীর দেহ তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল যাতে তিতুমীরকে স্মরণের জন্য কবরটিও আর না থাকে। এই কাহিনি মনে পড়ার সাথে সাথে নিজেকে নিয়ে ভিতরে ভিতরে একচোট রঙ তামাশাই হয়ে গেল- ‘বাহ্, কী কায়দা! যার লাশই ছিল না আমি পুরো দুপুর জুড়ে তার মাজার খোঁজায় ব্যস্ত’।
পাশাপাশি দুটি মসজিদ কেন তা বুঝতে না পারায় আব্দুল কাদের বিশ্বাস আমার উপর যে-বিরক্তি প্রকাশ করেছিল, সে-বিরক্তি এখন আমার নিজের ওপরই হতে শুরু করলো। আমার বুদ্ধিশুদ্ধি কম সে ঠিক আছে, কিন্তু যেটুকু আছে তাতেই তো বোঝা উচিত ছিল যে, বিশ্বাস বাড়ির মসজিদ তো শুধু বিশ্বাস বাড়ির জন্যই কারণ এ মসজিদ সুন্নী রীতির এবং এ বাড়ির মানুষেরা তো মুঈজ উদ্দীনের বংশধর হিসেবে সুন্নী রীতিরই ছিল। মুঈজ উদ্দীন তো তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার লোক ছিল। তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার লোকদের শিয়া হওয়া তো স্বাভাবিক নয়। সুতরাং পাশের শিয়া মসজিদ তো তাদের মসজিদ হতে পারে না। তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া ধর্মীয় সংস্কারে যা যা বন্ধ করছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল মহররম অনুষ্ঠান তথা মহররমের তাজিয়া ও মাতম। ফলে এতদঞ্চলে তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়া শিয়ারীতির বিরুদ্ধে ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজ সাহায্যে হোক কিংবা স্থানীয়দের আগ্রহে হোক তিতুমীরের মুহাম্মাদীয়া তরিকা থেকে এতদঞ্চল শিয়া মতে পুরোপুরি ফিরে যায়। তবে মুঈজ উদ্দীন বিশ্বাসের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়ার মসজিদটি সুন্নী বা তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ায়ই রয়ে গেছে। এতিমের মতো সেই মসজিদ এখন এটুকুই জানান দিচ্ছে যে এই বাড়িতে একসময় ছিল তরিকায়ে মুহাম্মাদীয়ার মূল ঘাঁটি, তিতুমীরের ধর্মীয় সংস্কার কার্যক্রমর এককালীন সদরদপ্তর।

স্মৃতি ঝাঁকিয়ে যেটুকু ইতিহাস বের হলো তা দিয়ে এই পর্যন্ত বুঝে-সুঝে শুরু করলাম ফেরত যাত্রা। পথে একজনকে জিজ্ঞস করলাম এখানকার বাঁশের কেল্লা বিষয়ক ইতিহাস ভালো বলতে পারবে এমন কোনো মুরুব্বি পর্যায়ের কেউ আছেন কিনা। তিনি এক স্কুল শিক্ষকের কথা বললেন এবং বলে দিলেন ফিরতি পথেই স্কুলটি পড়বে। সেই আশায় হাঁটতে শুরু করলাম ফিরতি পথে। কিছুদূর এগিয়ে একটি গ্রাম্য চায়ের দোকান বা রেস্টুরেন্টের মতো খাবার ঘর পেলাম। রেস্টুরেন্টটি মূলত মালিকের মূল বসতঘরের সাথে লাগোয়া একটি খোলা বারান্দা। অনেকটা ঘরের ভিতরে রান্না করে বারান্দায় বসে মেহমান খাওয়াচ্ছে এমন আয়োজন। বেলা দুপুর। সকালের নাস্তা হয়নি। ভাবলাম ওটার মধ্যে গিয়ে কিছু খাবার-দাবার পাওয়া যায় কিনা দেখা যাক। কাছে যেতেই এক মহিলা উৎসুকভাবে জানতে চাইলেন, ‘আপনি, কাউকে খুঁজছেন?’ বললাম-‘আমি তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার ওখানে এসেছিলাম, বাঁশের কেল্লার ইতিহাসাদি ভালো জানেন এমন একজন মানুষ খুঁজছি।’ উনি অমনি একটি অল্প বয়সী লোককে ডাক দিয়ে থামালেন। লোকটি একটি সাইকেলে কোথাও যাচ্ছিলেন। লোকটি মহিলার কাছ থেকে আমার আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে শুনে সাইকেল থেকে নেমে দোকানে ঢুকে বসলেন। এদিকে আমি জানতে চাইলাম নাস্তা আকারে কিছু খাওয়ার আছে কিনা। কেটলিতে চা বানাচ্ছেন এমন একজন মাঝ বয়সী লোক জানালেন ডিম রুটি দিয়ে বোম্বে টোস্ট করে দিতে পারেন। অর্ডার দিলাম বোম্বে টোস্টের। সাইকেল থেকে নামা লোকটি আমার পরিচয় নিলেন। তাপর তিনি জানালেন তিনি এখানে একজন মোবাল্লেগ এবং তাঁর নাম মদত আলী। তিনি লেখাপড়া করেছেন বাংলাদেশে খুলনায়। কিছুদিন আগে তিনি মোবাল্লেগ হিসেবে ইরানে ট্রেনিংও দিয়ে এসেছেন। তাঁর বয়স চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ হবে মনে হলো। এ দোকানের লোকটিকে তিনি বললেন- ‘ডিমটি না ভেঙে থাকলে তুমি টোস্ট বানাইও না। ভাইকে আমি নিয়ে যাই। উনি আমার বাসার মেহমান হবেন।’আমি এমন অতিথেয়তায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম এবং জোর করলাম যাতে টোস্ট বানানো হয় এবং মনে মনে চাইলাম যাতে ওনার বাড়িতে আমার মেহমান না হতে হয়।
এর মধ্যে আমরা যেখানে বসেছি তার পাশেই দুটো মুরগি ফৎ করে অনেকখানি পায়খানা করে দিলো। মহিলা এক টুকরা কাগজ দিয়ে সেই পায়খানা পরিষ্কার করতে গেল। সে দৃশ্য দেখে ওখানে বসে কিছু খাওয়া কেমনে সম্ভব হবে তাই নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। পরবর্তী ঘটনা আরো করুণ। টোস্ট যখন দিয়ে গেল তখন পাশের জগটা থেকে গ্লাসে একটু পানি দিয়ে অল্প-পানির ঝটকায় হাতটা বেঞ্চির নিচেই একটু ধুতে গিয়ে দেখি আমার পায়ের পাশেই মুরগির দীর্ঘ তরল একখানা পায়খানা। প্রায় বমি এসে যাচ্ছিলো। তারপরও সামলে নিলাম। শুধু সামলেই নিলাম না। ঐখানে বসেই খেতে শুরু করলাম বোম্বে টোস্ট। বিশাল সাইজের দু’টুকরো পাউরুটির মাঝে প্রায় রাজহাঁসের ডিমের সাইজের একখানা হাঁসের ডিমের অমলেট। এতে কেমনে স্যান্ডউইচ না হয়ে বোম্বে টোস্ট হলো তাও পুরো বুঝলাম না। তবে বুঝলাম যে এ টোস্টের অর্ধেকও সাবাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি খাচ্ছি পাশে বসে মদত আলী সাহেব বলে যাচ্ছেন তাঁর পেশাগত কাজ বিষয়ে এবং এতদাঞ্চলের শিয়া মুসলমানদের আমল আখলাক বিষয়ে। ওনার কথাবার্তা থেকেই জানতে পারলাম যে নারিকেলবেড়িয়ায় চার-পাঁচশো ঘর মুসলমানের বাস। তার মধ্যে দশ-বারোখানা ঘর সুন্নী আর বাকী সব শিয়া। মাত্র একটি পাড়া আছে হিন্দুদের। তবে এখানে শিয়াসুন্নী হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন নেই বলে তিনি গুরুত্বের সাথে জানালেন। তিনি পাশে বসে আর যা-কিছু বলছেন তা সবই বলছেন বর্তমান সময়ের শিয়া-সুন্নীদের আচার-আচরণ বিষয়ে। কিন্তু যে তিতুমীর সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর পাশে আমার বসা সে নিয়ে তিনি কিছুই বলছেন না।
(চলবে)...
সূত্র: banglatribune

captcha