আল-জাজিরার বরাতে আইকিউএনএ জানায়, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর গাজা উপত্যকায় প্রাণঘাতী হামলা টানা ২২তম মাসে গড়িয়েছে। গাজার স্থানীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭০০ জনের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছে।
গাজার শহীদদের সর্বশেষ সংখ্যা
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ জন শহীদের মরদেহ এবং ৬০৩ জন আহতকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বহু নিহত এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বা সড়কে পড়ে আছে, কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।
এই মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে মোট শহীদ সংখ্যা ৬১,২৫৮ এবং আহতের সংখ্যা ১,৫২,০৪৫-এ পৌঁছেছে। শুধু চলতি বছরের ১৮ মার্চ (২৬ এসফন্দ ১৪০৩) থেকে হামলা বৃদ্ধির পর থেকে শহীদ হয়েছে ৯,৭৫২ জন এবং আহত হয়েছে ৪০,০০৪ জন।
মানবিক সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করাকালে এবং সহায়তা কেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫১ জনের মরদেহ ও ২৩০ জন আহত হাসপাতালে নেওয়ার পর, এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৭০৬ শহীদ এবং ১২,০৩০ আহত।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার হাসপাতালে ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত কারণে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে, ফলে এই কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৭, যার মধ্যে ৯৬ জন শিশু।
বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার ইসরায়েলি অপরাধে ব্রিটেনের স্বীকারোক্তি
প্রথমবারের মতো, ব্রিটিশ সরকারের অভ্যন্তরীণ প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে লক্ষ্যবস্তু করার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, “ক্যাবিনেট ইভেন্টস হাব” নামে একটি সরকারি প্ল্যাটফর্মে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহর কাছে একটি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের নিকটে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের লক্ষ্য করেছে।
এটি নজিরবিহীন, কারণ কোনো লেবার পার্টির মন্ত্রী এতদিন প্রকাশ্যে ইসরায়েলি সেনাদের এমন অভিযুক্ত করেনি, যা স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।
তবে পরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, এই প্রতিবেদন সঠিক নয় এবং এটি শুধুমাত্র ওপেন সোর্স তথ্যের প্রতিফলন, সরকারের আনুষ্ঠানিক মতামত নয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত তিন মাসে অন্তত ৮৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই সহায়তা সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে।
নেতানিয়াহুর গাজার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তারা গাজা উপত্যকা দখল করবে না, বরং এটিকে একটি “অস্থায়ী প্রশাসনিক সংস্থা”-র কাছে হস্তান্তর করবে। তিনি বলেন, হামাসের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি এবং সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তিই তাদের লক্ষ্য।
নেতানিয়াহু দাবি করেন, হামাস যদি অস্ত্র ফেলে দেয় এবং বন্দিদের মুক্তি দেয়, তাহলে এই সংঘাত দ্রুত শেষ হতে পারে।
মানবিক সহায়তায় ইসরায়েলি বাধা
দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা গাজায় মানবিক সহায়তা বহনকারী ট্রাকগুলোর পথ আটকে দিয়েছে। জর্ডান জানিয়েছে, ৩০টি ট্রাকবাহী এই কাফেলার প্রবেশ ইসরায়েলের চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে বিলম্বিত হয়েছে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া
হামাস বলেছে: গাজা কোনো বিনোদনের জায়গা নয়; দখলদারদের জন্য এটি ব্যয়বহুল ও কঠিন হবে। তারা নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে আলোচনার পথে স্পষ্ট অভ্যুত্থান হিসেবে দেখছে এবং বলছে, গাজা দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হবে।