IQNA

হযরত আলীর ( আ.) আগে ও পরে কোনো ব্যক্তিই পবিত্র কা'বায় জন্ম গ্রহণ করেন নি

20:51 - February 14, 2022
সংবাদ: 3471427
তেহরান (ইকনা): ১৩ রজব মহানবীর ( সা.) পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ.) বারো নিষ্পাপ ইমামের প্রথম ইমাম হক ও আদালতের ( সত্য ও ন্যায় ) মুর্ত্য প্রতীক  হযরত আমীরুল মুমিন আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ.) শুভ জন্মদিন।

মহানবীর ( সা.) জন্ম গ্রহণের ৩০ বছর পরে হযরত আলী ( আ.) পবিত্র মক্কা নগরীর পবিত্র কাবা গৃহের অভ্যন্তরে জন্ম গ্রহণ করেন । আর হযরত আলীর ( আ.) আগে ও পরে কোনো ব্যক্তিই পবিত্র কা'বায় জন্ম গ্রহণ করেন নি এবং ভবিষ্যতেও কেউ সেখানে জন্ম গ্রহণ করবে না । আর এটা হচ্ছে মওলাল মুওয়াহ্হিদীন হযরত আলীর ( আ.) এক অতি বিরল ও অত্যন্ত মহান ফযীলত যা সৃষ্টি কুলের কারো নসীব হয় নি । আমরা  তাঁর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে এ সুমহান ইমাম - ই হুমামের কিছু জ্ঞান গর্ভমূলক বাণী ও হাদীসের বঙ্গানুবাদ নীচে পেশ করলাম :

وَ قَالَ (علیه السلام) لِكُمَيْلِ بْنِ زِيَادٍ النَّخَعِيِّ: يَا كُمَيْلُ مُرْ أَهْلَكَ أَنْ يَرُوحُوا فِي كَسْبِ الْمَكَارِمِ، وَ يُدْلِجُوا فِي حَاجَةِ مَنْ هُوَ نَائِمٌ؛ فَوَالَّذِي وَسِعَ سَمْعُهُ الْأَصْوَاتَ، مَا مِنْ أَحَدٍ أَوْدَعَ قَلْباً سُرُوراً إِلَّا وَ خَلَقَ اللَّهُ لَهُ مِنْ ذَلِكَ السُّرُورِ لُطْفاً؛ فَإِذَا نَزَلَتْ بِهِ نَائِبَةٌ جَرَى إِلَيْهَا كَالْمَاءِ فِي انْحِدَارِهِ حَتَّى يَطْرُدَهَا عَنْهُ، كَمَا تُطْرَدُ غَرِيبَةُ الْإِبِلِ.

حکمت 257 نهج البلاغه

হযরত আলী ( আ.) কুমাইল ইবনে যিয়াদকে ( রা.) বলেন :

হে কুমাইল ! তোমার পরিবারকে দিবাভাগে উৎকৃষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী অর্জন এবং রাতের বেলা ঘুমন্ত ( অভাবগ্রস্ত ) ব্যক্তিদের অভাব ও প্রয়োজন মেটানোর আদেশ দাও ; ঐ সত্ত্বার কসম যিনি সকল শব্দ ও কথাবার্তা শোনেন যে কোনো ব্যক্তি কোনো (অভাবী দু:খী ) হৃদয়কে সুখী ও খুশি ( সন্তুষ্ট ) করবে মহান আল্লাহ্ ঐ আনন্দ দান ও খুশি করার কারণে তার জন্য একটি অনুগ্রহ ( দয়া ,লুতফ ) সৃষ্টি করবেন যা তার উপর কোন বিপদাপদ  আপতিত হলে ঐ বিপদাপদের দিকে পানির মতো ধাবিত ও প্রবাহিত হবে ( ও ছুটে যাবে ) এবং ঠিক যেমনভাবে অচেনা ( অপরের ) উট চারণ ক্ষেত্র থেকে তাড়িয়ে ও বের করে দেওয়া হয় ঠিক তেমনি তা ( ঐ আপতিত বিপদাপদ ) তার থেকে দূর করে দিবে ।

( নাহজুল বালাগা , সংক্ষিপ্ত জ্ঞানগর্ভমূলক বাণী : ২৫৭ )

الامام علی (ع) : طُوْبَیٰ لِمَنْ أَحْسَنَ إِلَی الْعِبَادِ وَ تَزَوَّدَ لِلْمَعَادِ .

ইমাম আলী ( আ. ) বলেন :

ঐ ব্যক্তির জন্য অভিনন্দন ও সাধুবাদ ( তূবা / মুবারক ) যে ( মহান আল্লাহর ) বান্দাদের প্রতি দয়া ও উপকার সাধন ( ইহসান ) করে এবং আখেরাতের ( মাআদ : পরকাল ) জন্য পাথেয় সঞ্চয় করে ( ও প্রস্তুত হয় ) । ( দ্র : গুরারুল হিকাম ওয়া দুরারুল কালিম , হাদীস নং ৫৯৫৫ )

وَ قَالَ (علیه السلام): لَا يَسْتَقِيمُ قَضَاءُ الْحَوَائِجِ إِلَّا بِثَلَاثٍ: بِاسْتِصْغَارِهَا لِتَعْظُمَ، وَ بِاسْتِكْتَامِهَا لِتَظْهَرَ، وَ بِتَعْجِيلِهَا لِتَهْنُؤَ.

حکمت 101 نهج البلاغه

( জনগণের ) প্রয়োজন ও অভাব দূর করার বিষয়টি কখনো সুদৃঢ় ( অর্থাৎ সুসম্পন্ন করা সম্ভব ) হবে না কেবল তিন বিষয় ব্যতীত :

১. ( মহান আল্লাহ কর্তৃক ) বড় করে দেখানো পর্যন্ত ( জনগণের ) প্রয়োজন ও অভাব সমূহ বিমোচনের ( জন্য প্রদত্ত ) খেদমত ও সেবাকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করা ( অর্থাৎ সেটা যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত মনে না করা  ),

২. ( মহান আল্লাহ কর্তৃক ) প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত ( জনগণের অভাব ও দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রয়োজনাদি পূরণের ) এ খেদমত ও সেবা  গোপন রাখা এবং

৩. সুখ দায়ক ও মধুর হওয়ার জন্য ( অভাবীদের ) প্রয়োজনাদি পূরণ ও অভাব দূর করার ক্ষেত্রে ত্বরা করা (( অর্থাৎ ইচ্ছা করে বিলম্ব না করা ; আর এ ক্ষেত্রে বিলম্ব করা বৈধ ও জায়েয হবে না । তাই এ ক্ষেত্রে ত্বরা করলে অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিরা অভাব ও প্রয়োজন মিটে যাওয়ার কারণে সন্তুষ্ট ও সুখী হবে এবং অভাব দূর কারী ব্যক্তিও এরফলে আত্মিক ও মানসিক তৃপ্তি , প্রশান্তি ও আনন্দ লাভ করবে )) ।

( নাহজুল বালাগা , সংক্ষিপ্ত জ্ঞানগর্ভমূলক বাণী নং ১০১ )

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মুমিনের লক্ষণ ও চিহ্ন সমূহ :

ইমাম আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী ইবনে আলী তালিব ( আ:) বলেন :

اَلْمُؤْمِنُ يَرْغَبُ فِيْمَا يَبْقَىٰ وَ يَزْهَدُ فِيْمَا يَفْنَىٰ يَمْزَجُ الْحِلْمَ بِالْعِلْمِ وَ الْعِلْمَ بِالْفِعْلِ بَعِيْدٌ كَسَلُهُ دَائِمٌ نِشَاطُهُ قَرِيْبٌ أَمَلُهُ حَيٌّ قَلْبُهُ ذَاكِرٌ لِسَانُهُ .

 

মু'মিনের লক্ষণ ও চিহ্ন সমূহ :

 

১. মু'মিন ঐ সব বিষয়ে আগ্রহী যেগুলো স্থায়ী ( বাক্বী ) ও বিদ্যমান থাকে এবং

২. যে সব বিষয় নশ্বর ( ফানী ) ও ধ্বংসশীল ( অর্থাৎ ফানা হয়ে যায় এবং টিকে না ) সেগুলোর প্রতি সে ( মু'মিন ) অনাগ্রহী ( এবং সেগুলো ত্যাগ ও বর্জন করে ) ;

৩. সে ( মু'মিন ) জ্ঞানের সাথে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতাকে ( হিল্ম্ ) এবং কর্মের সাথে জ্ঞানকে সংমিশ্রিত করে ;

৪. তার ( মু'মিন ) অলস হওয়া দূরবর্তী বিষয় অর্থাৎ অসম্ভব ( মু'মিন অলস ও কর্ম বিমুখ হতে পারে না ) ;

৫. সে সর্বদা প্রফুল্ল ও কর্মতৎপর ( কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর ) ;

৬. তার আশা সংক্ষিপ্ত ও নাতি দীর্ঘ

( মু'মিন পার্থিব দুনিয়াবী উচ্চাশা ও দীর্ঘ অভিলাষ পোষণ করে না ) ;

৭. তার ক্বলব ( হৃদয় ) সর্বদা জীবিত ও প্রাণবন্ত ( যিন্দা ) ( মু'মিনের হৃদয় সর্বদা যিন্দা ও প্রাণবন্ত বিধায় সে সর্বদা ভালো (নেক সালেহ ) কাজ কর্ম আঞ্জাম দেয় এবং খারাব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে ) ;

৮. তার কণ্ঠ মহান আল্লাহর যিকর ও স্মরণে লিপ্ত ।

সূত্র : মীযানুল হিকমাহ , খ : ১১ , পৃ : ৫১৮৪

লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওলায় মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

captcha