IQNA

তথাকথিত উন্নয়নমূলক কলম্বো প্ল্যানের কার্যকরিতা ও শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া হওয়ার রহস্য

20:38 - March 24, 2022
সংবাদ: 3471603
তেহরান (ইকনা): শ্রীলঙ্কার আর্থিক ও মানবিক সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। আমদানি করা পণ্যের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি জনজীবনকে পর্যদুস্ত করে দিচ্ছে। পুরো ব্যবস্থা ধসের আশঙ্কায় 'অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা' জারি করা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে দেশটি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে শ্রীলঙ্কার উপনীত হওয়ার কারণ সমূহ :

ভয়ঙ্কর ধরনের মুদ্রস্ফীতি , বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির পর্যায় অর্থাৎ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া , সরকারের উচ্চ ব্যায় এবং কর হ্রাস করা , রাজস্ব কমে যাওয়া , খাদ্য আমদানি করতে না পারা , রাসায়নিক সার বাদ দিয়ে কেবল অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য কৃষি পণ্য ও শস্য উৎপাদনের হ্রাস --- চরম খাদ্য ঘাটতি ও খাদ্য সংকট, চীন , ভারত ও জাপান প্রভৃতি দেশের কাছ থেকে বিশাল অংকের ঋণ এবং কোভিড মহামারীর কারণে শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্পে ধ্বস এবং এর ফলে সে দেশটিতে পর্যটন শিল্পের সাথেই জড়িত ও সংশ্লিষ্ট ৫০০,০০০ এর অধিক মানুষের বেকার হয়ে পড়া --- এ সব কারণেই আজ শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার দ্বার প্রান্তে ।

 

এই শ্রী লঙ্কা ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেলেও ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্য দেশটির ওপর বহাল ও বলবৎ ছিল । ১৯৭০ এর দশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য কালে যেমন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ৫০ বছর পরে বর্তমানেও দেশটিতে ঠিক তেমন দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করছে!

 

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন , শিক্ষা , কারিগরি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা মূলক কলম্বো পরিকল্পনা নামক সংস্থার প্রবর্তন করে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫০ সালে এবং তখন থেকে এর সচিবালয় শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় স্থাপিত হয় । এ সংস্থার বর্তমান সদস্য দেশের সংখ্যা ২৭।

 

কলম্বো প্ল্যানে সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছিল যে উক্ত সংস্থার ধনী ও উন্নত সদস্য দেশ সমূহ স্বল্পোন্নত ও অনুন্নত সদস্য দেশ গুলোকে প্রয়োজনীয় সাহায্য , সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করবে। কিন্তু ৭২ বছর গত হয়ে যাওয়ার পরও তা ( কলম্বো পরিকল্পনায় প্রদত্ত ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ) যে যথার্থ ভাবে বাস্তবায়িত হয় নি তার প্রমাণ স্বয়ং শ্রীলঙ্কার  বর্তমানে  অর্থনৈতিক সংকট । অর্থনৈতিক সংকট এতটাই তীব্র ও ভয়াবহ যে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে এবং কাগজ কলমের অভাবে দেশটির ছাত্র ছাত্রীরা পরীক্ষাও দিতে পারছে না !!

তাহলে ৭২ বছর ধরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় কলম্বো প্ল্যানের সচিবালয় স্থাপিত থেকেও এ দেশটি ( শ্রীলঙ্কা) কী ফায়দা পেল এই কলম্বো প্ল্যান থেকে ?!! কলম্বো প্ল্যান  শ্রী লঙ্কার বর্তমান সংকট এবং দেশটিতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ও শাসনামল থেকে  আজ পর্যন্ত বিদ্যমান দারিদ্র্য ও অনুন্নত অবস্থা কেন ঘুচাতে ও দূর করতে পারে নি ?

আসলে পাশ্চাত্য বিশেষ করে ব্রিটেন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ইত্যাদি চায়  না এ সব দেশ ( সাবেক উপনিবেশ সমূহ ) যথার্থ উন্নতি লাভ করুক ।

কলম্বোয় বিদ্যমান কলম্বো প্ল্যান নামক সংস্থাটিই শ্রী লঙ্কার ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর এ  সংকট নিরসনে কাজে আসে নি!

তাই পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবর্তিত ও প্রতিষ্ঠিত সংস্থা সমূহে আস্থা রাখা ও নির্ভর করা আদৌ সম্ভব ?!!

 

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওলায় মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

captcha