IQNA

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের সমালোচনায় ইমরান খান

20:35 - March 31, 2022
সংবাদ: 3471642
তেহরান (ইকনা): পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশটির ৩শ’ ৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা-অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর গতকাল বিতর্ক হয়েছে। পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাব এড়াতে নিম্নকক্ষের অধিবেশন আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। 
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অঙ্গীকার করেছেন যে ‘যে পরিস্থিতিই আসুক’ তিনি পদত্যাগ করবেন না এবং জাতীয় পরিষদে তার বিরুদ্ধে যৌথ বিরোধী দলের দায়ের করা অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হবেন। গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, আগামী রোববার অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট হবে... সেদিনই সিদ্ধান্ত হবে দেশ কোন দিকে যাবে। ‘আমি পদত্যাগ করব না এবং শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করব’ তিনি যোগ করেন।
 
এ পরিস্থিতি এশিয়ার দ্বিতীয়-দ্রæততম মুদ্রাস্ফীতির পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম পূর্ণ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইমরান খানের সম্ভাবনাকে বিপণœ করে তুলেছে। এ সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট একটি ঐক্যবদ্ধ ইমরানবিরোধী শিবির আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অনাস্থা ভোটে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে। ইমরানের বিরুদ্ধে এ অনাস্থা-প্রস্তাবের নাটকটি শুরু হয় চার মাস আগে, যখন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুমকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তত্ত¡াবধানকারী ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই-এর নেতৃত্বে নিয়োগ দেয়া নিয়ে ইমরানের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
 
যদিও পাকিস্তানের আইনে বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনী, বিরোধী ও দলের সুপারিশে আইএসআই প্রধানকে নিয়োগ করবেন। কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনীর পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায়ে জেনারেলদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বাজওয়া এবং অন্যান্য জেনারেলরা নিয়মিত শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং নীতিনির্ধারকদের সাথে ব্যক্তিগত বৈঠক করে থাকেন। কিন্তু ইমরান তাদের পাশ কাটিয়ে ইমরান তখন তার নিয়োগ বিলম্বিত করেন এবং সেই পদের জন্য জেনারেল ফয়েজ হামিদের সমর্থনে সোচ্চার হন, যাকে ইমরানের মিত্র হিসেবে দেখা হয়। পাকিস্তানে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এ সুযোগে ইমরান খানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য এবং এক বছর পরে নির্বাচন দেয়ার জন্য হামিদকে অভিযুক্ত করেন। ইমরানের সাথে সেনাবাহিনীর সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে যখন তিনি একটি জনসভায় সেনাপ্রধানের সাথে একান্ত আলোচনার কথা উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর নিষেধাজ্ঞাও ভাঙেন, যা সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার দাবিকে খÐন করে। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন প্রধান শায়েস্তা তাবাসসুম বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ফোরামে প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর নাম নেয়া এই সরকার করা সবচেয়ে বড় ভুল।’
 
ইমরানের সাথে সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরো অবনতি হতে শুরু করে, যখন ইমরান যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করে তিক্ততা তৈরি করেন এবং আরো ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে একসময় মার্কিন অস্ত্রের শীর্ষ খদ্দের পাকিস্তান অস্ত্রের জন্য চীনের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীল হতে শুরু করে। এছাড়াও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের মাত্র কয়েক দিন পরে যখন পাকিস্তানের একটি আদালত ২০০২ সালের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ব্যুরো প্রধান ড্যানিয়েল পার্লকে শিরñেদে দোষী সাব্যস্ত চার আসামীকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়, যা হোয়াইট হাউসে খানের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়, যেখানে বাইডেন বারাক ওবামার সাথে বসে ক্যামরাতে নেভি সিলদের গোপনে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করে ওসামা বিন লাদেনকে করা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
 
গতকাল জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অঙ্গীকার করেছেন, ‘যে পরিস্থিতিই আসুক’ তিনি পদত্যাগ করবেন না এবং জাতীয় পরিষদে তার বিরুদ্ধে যৌথ বিরোধী দলের দায়ের করা অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হবেন। গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, আগামী রোববার অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট হবে... সেদিনই সিদ্ধান্ত হবে দেশ কোন দিকে যাবে।
‘আমি পদত্যাগ করব না এবং শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করব’ তিনি যোগ করেন।
 
প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা পদক্ষেপকে তার সরকার পতনের জন্য ‘বিদেশী-সমর্থিত ষড়যন্ত্র’ হিসাবে অভিহিত করে বলেন যে, সংসদের নিম্নকক্ষে তার বিরুদ্ধে ভোট দেবেন এমন আইন প্রণেতাদের জাতি ক্ষমা করবে না।
 
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান তার ইতিহাসে একটি ‘সংজ্ঞায়িত মুহূর্তে’ পৌঁছেছে যেখানে তার কাছে কেবল দুটি বিকল্প রয়েছে, তিনি যোগ করেছেন যে, জাতিকে এখন কোন পথ বেছে নিতে হবে। ‘তবে তার আগে, আমি জাতিকে বলতে চাই কেন আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি’। তিনি বলেন, তিনি তার ক্যারিয়ার পছন্দের কারণগুলো উল্লেখ করতে চানন।
 
‘আমি ইতোমধ্যেই খ্যাতি উপভোগ করেছি এবং আল্লাহর প্রতি আমার বিশ্বাসের কারণে অর্থ ছিল এবং আমি এমন একটি প্রজন্মের অংশ ছিলাম যে, আমার পিতামাতার বিপরীতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছিলাম’। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাকে কৃতজ্ঞ হতে বলতেন, কারণ আমি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি এবং ব্রিটিশদের শাসনের সাক্ষী হতে হয়নি’।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের আদর্শের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন এবং তার ইশতেহারে তিনটি জিনিস অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন - ন্যায়বিচার, মানবতা এবং আত্মনির্ভরতা। তিনি বলেন, যৌবনকালে তিনি দেখেছেন দেশ সাফল্য ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
 
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ কারণে পাকিস্তানিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই, প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তিনি যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তিনি একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির জন্য আকাক্সক্ষা করেছিলেন।
 
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘এটা কি আমাদের অবস্থান? আমরা ২২ কোটির একটি শক্তিশালী জাতি’। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, চিঠিতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি এবং শুধুমাত্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশী দেশগুলো কি তাদের দেশে এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় চাইবে? তারা এ ধরনের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের মেনে নিতে প্রস্তুত, কিন্তু আমি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নই’। iqna
captcha