IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র – ৩

হযরত আদম (আ.) : নির্দোষ না অপরাধী?

0:03 - July 17, 2022
সংবাদ: 3472139
তেহরান (ইকনা): ইসলামে বলা হয়েছে যে সকল নবীই নির্দোষ এবং যেকোনো ধরনের পাপ ও ত্রুটি থেকে মুক্ত। যদি তাই হয়, তাহলে তিনি যে মহান আল্লাহর আদেশের অবাধ্যতা করেছেন, তার অর্থ কী এবং কীভাবে এটি ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?

হযরত আদম (আ.) ও হাওয়ার (আ.) সৃষ্টির পর তারা মহান আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতে বসবাস করেছেন। আল্লাহ তাদেরকে বলেছেন যে, তোমরা এখানে যে সকল নেয়ামত রয়েছে, সেগুলো ভক্ষণ করতে পার, শুধুমাত্র ঐ নিষিদ্ধ গাছের কাছে যেও না। কিন্তু শয়তান তাদের সাথে প্রতারণা করে এবং তারা সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খায় এবং এই অবাধ্যতার কারণে তারা জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে প্রেরিত হয়।
 
পবিত্র কুরআন আদমের এই কর্মকে " অবাধ্য" হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে: 
 
وَعَصَىٰ آدَمُ رَبَّهُ فَغَوَى
 
এবং আদম তাঁর প্রতিপালকের নির্দেশ অমান্য করল এবং (আল্লাহর বিশেষ রহমত হতে) নিরাশ হয়ে গেল। সূরা তাহা, আয়াত: ১২১।
 
হযরত আদম (আ.) ছিলেন প্রথম নবী এবং শিয়া মাযহাবের বিশ্বাস অনুসারে, নবীরা যে কোন ধরনের পাপ ও ত্রুটি থেকে নির্দোষ। তাহলে হযরত আদমের (আ.) বিদ্রোহের অর্থ কী এবং কীভাবে এটি ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?
 
শিয়া মাযহাবের অন্তর্গত বিভিন্ন তাফসিরে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে পাঁচটির মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে:
 
১। হযরত আদম (আ.), হযরত ইউসুফ (আ.), হযরত ইউনুস (আ.) সহ প্রভৃতি নবীদের থেকে উদ্ধৃত ত্রুটি "তারকে উলা" (অর্থাৎ উত্তমতম কাজ ত্যাগ করে, উত্তম কাজ করা) এবং এসকল ত্রুটি গুনাহ হিসাবে বিবেচিত হয় না। পবিত্র কুরআনে “এসিয়ান” শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর অর্থ অবাধ্য। সাধারণত এর অর্থ ফরজ ত্যাগ করা এবং হারাম কাজ করাকে বুঝায় না। বরং এর অর্থ হল মুস্তাহাব ত্যাগ করা এবং মাকরুহ কাজ করাকে বুঝায়। অতএব, হযরত আদম (আ.)-এর অবাধ্যতা কোন প্রকার হারাম কাজকে করা বুঝায় না। বরং এটি এক ধরণের মাকরুহ কাজ। যেহেতু আল্লাহর কাছে নবীদের অবস্থান অনেক উঁচুতে এবং তাদের কাছ থেকে মাকরুহ কাজ করার আশাও করা হয় না এবং তারা এ ধরনের কাজ করলে, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর হবেন এবং শাস্তি দেবেন। মহান ব্যক্তিদের জন্য কিছু কাজ করা ঠিক নয়, তবে সাধারণ মানুষ যদি তা করে, তবে তা গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে না এবং তার জন্য কোন শাস্তিও নেই। হযরত আদম (আ.) মহান ব্যক্তি ছিলেন এবং তার জন্য মহান আল্লাহ তাকে শাস্তি হিসেবে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।
 
২। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, সেই নির্দিষ্ট গাছের ফল খাওয়ার জন্য আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র আদম (আ.)কে এর প্রাকৃতিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। 
 
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে: রোগীর প্রতি ডাক্তারের আদেশের মতো, অর্থাৎ ডাক্তারের আদেশ অমান্য করলে রোগীকে পরকালে কোন প্রকার চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে হবে না, তবে এর জন্য তাকে ভুগতে হবে এবং যন্ত্রণা পেতে হবে। এটাও 
কুরআনে উল্লেখ আছে যে আল্লাহ তা’য়ালা হযরত আদম (আ.)-কে সতর্ক করেছিলেন: 
 
فَقُلْنَا يَا آدَمُ إِنَّ هَٰذَا عَدُوٌّ لَكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقَىٰ
 
অতঃপর আমরা বললাম, ‘হে আদম! নিশ্চয় সে তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু; সুতরাং সে যেন তোমাদের উভয়কে জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত না করে, পরিণতিতে তোমরা ক্লেশে পতিত হবে।
 
৩। কোন কোন মুফাসসির এও বলেছেন যে, নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার নিষেধ কোন আদেশ বা কর্তব্য ছিল না, বরং সুপারিশ ছিল। অর্থাৎ এটা এমন একটি মুস্তাহাব কাজ ছিল যে, তা বর্জন করে তিনি নিজেকে অধিক সওয়াব থেকে বঞ্চিত করেছেন।
 
৪। কেউ কেউ বলেছেন যে, হযরত আদম (আ.) এবং তাঁর অবাধ্যতার কাহিনী একটি রহস্যমূলক কাহিনী এবং এই কাহিনীতে তাকে উদাহরণস্বরূপ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ এই কাহিনীতে হযরত আদম (আ.)এর ব্যক্তির কথা বলা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে তিনি এই গল্পে মানুষের প্রতীক।  
 
৫। কিছু মুফাস্সিরগণ হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, হযরত আদম (আ.)-এর অবাধ্যতা তাঁর মিশনের আগে ছিল এবং তাঁর নবুয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।
 
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha