IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র – ৪

আদম (আ.) আপেল খেয়েছিলেন নাকি গম?!

20:15 - July 31, 2022
সংবাদ: 3472210
তেহরান (ইকনা): নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার শাস্তি ছিল বেহেস্ত থেকে বহিষ্কার এবং পৃথিবীতে অবতরণ। তবে প্রশ্ন হল নিষিদ্ধ গাছ কি ছিল এবং হযরত আদম (আ.) সেখান থেকে কি খেয়েছিলেন? গম, আঙ্গুর নাকি আপেল?!

আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি এবং জান্নাতে তাদের বসবাসের পরে, মহান আল্লাহ তাদের বলেছিলেন যে, সেখানকার সকল নেয়ামত তারা ভোগ করতে পারবে, শুধুমাত্র একটি গাছকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন  যে, তারা যেন ঐ গাছের নিকটে না যায় এবং ঐ গাছের ফল আহরণ না করে। 
«... وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ»
এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না; অন্যথায় তোমরা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
সূরা বাকারা, আয়াত: ৩৫।
কিন্তু শয়তান তাদের প্রতারণা করে এবং তারা সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছিল এবং এই অবাধ্যতার কারণে তারা বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীতে বসবাস করার জন্য পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এই আয়াতটি ছাড়াও পবিত্র কুরআনের আরও দুটি আয়াতে এই গাছের কথা বলা হয়েছে। সূরা আ’রাফের ১৯ নম্বর আয়াত এবং সূরা তাহা’র ১২০ নম্বর আয়াতে এই গাছের কথা বলা হয়েছে।
এই গাছটি কী ছিল এবং কী কী ফল ছিল তা কুরআনে উল্লেখ নেই। তবে হাদিস ও ব্যাখ্যায় এ বিষয়ে দুটি প্রধান মত রয়েছে:
১। প্রত্যক্ষ দৃষ্টি: একদল মুফাসসির বৃক্ষের আপাত অর্থ বিবেচনা করেছেন এবং কিছু বর্ণনা অনুসারে তাদের প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ গাছটিকে গম, আঙ্গুর, ডুমুর, খেজুর, বারগামোট, কর্পূর এবং জুজুবের গাছ বলে মনে করেছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, কেন কোন কোন মুফাসসির কিছু ব্যাখ্যায় সেই গাছকে গম বলে বিবেচনা করেছেন, গম কি গাছ? উত্তর হল, পবিত্র কুরআনে ‘গাছ’কে গাছ ছাড়াও ‘ঝোপ’ এবং ‘উদ্ভিদ’ বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হযরত ইউনুস (আ.)-এর কাহিনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে: 
وَأَنْبَتْنَا عَلَيْهِ شَجَرَةً مِنْ يَقْطِينٍ
এবং আমরা তার জন্য এক লাউ গাছ উৎপন্ন করলাম।
সূরা সাফ্ফাত, আয়াত: ১৪৬। 
অতএব, কিছু রেওয়ায়েতে "বৃক্ষ" বলতে গমকে যদি বোঝানো হয় তাহলে সেক্ষেত্রে  কোন ভুল নেই।
সম্প্রতি, মানুষের লোকসংস্কৃতিতে, আপেলকে কখনও কখনও নিষিদ্ধ ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।এই বিশ্বাসটি পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে কেউ কেউ আপেলকে আদমের প্রলোভন এবং তার প্রথম পাপের প্রতীক বলে মনে করেন। ইসলামিক ঐতিহ্য ও ব্যাখ্যায় সেই নিষিদ্ধ ফলটিকে আপেল বলে মনে করা হয়নি। অবশ্য ইমামদের (আ.) কিছু হাদিসে এটা উল্লেখ করা হয়েছে যারা জিজ্ঞেস করেছিল এই গাছটি কী? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে: বিচারের দিনে, সবকিছুই মুমিনের এখতিয়ারে থাকবে। বেহেশতের ফল পৃথিবীর ফলের মতো নয়। পৃথিবীর ফলের গাছের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি গাছ থেকে বিশেষ এক ধরণের ফল সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু বেহেস্তে একটি গাছ বা ঝোপ থেকে বিভিন্ন ধরণের ফল সংগ্রহ করা যাবে।
২। পরোক্ষ দৃষ্টি: পবিত্র কুরআনে ঐ বৃক্ষকে পরোক্ষ মানে করা হয়েছে:
الشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ 
অভিশপ্ত বৃক্ষ 
সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৬০। 
কিছু মুফাসসির কিছু রেওয়ায়তের উপর ভিত্তি করে নিষিদ্ধ গাছটিকে এর পরোক্ষ বা অপ্রকাশ্য অর্থে ব্যাখ্যাও করেছেন। এই ব্যাখ্যাগুলোয় বলা হয়েছ, নিষিদ্ধ গাছ হল "ঈর্ষার গাছ" এবং এক ধরণের প্রতিযোগিতা বা অনুরূপ কিছু যার সাথে হযরত আদম (আ.) জড়িয়ে পরেছেন। তবে এই ঈর্ষা বা হিংসা ঐ পরিমাণের হিংসা না যা গুনাহের মধ্যে সামিল হবে। আদম (আ.) সুদূর ভবিষ্যতে তাঁর সন্তানদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হন এবং তাদের মধ্যে তিনি তাঁর চেয়ে উচ্চতর মহান নবী ও অলীদের দেখেছিলেন। সে সময়ে, তিনি কামনা করেছিলেন যে তাদের অবস্থান তার থেকে যেন হয় এবং এই "ইচ্ছা" বা “কামনা”র জন্য  তাকে বেহেস্ত থেকে দূরে সরে যেতে হয় এবং এটি তার নিষিদ্ধ গাছ।
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha