IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র – ১১

মুশরিকদের হেদায়েতের জন্য হযরত সালেহ নবী (আ.)এর ১২০ বছরের প্রচেষ্টা

19:08 - October 09, 2022
সংবাদ: 3472613
তেহরান (ইকনা): নবীদের সম্পর্কে যেসব গল্প বলা হয়েছে তার মধ্যে সালেহ নবী (আ.)-এর কাহিনী উল্লেখযোগ্য; একজন নবী যিনি ১৬ বছর বয়সে নবুয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছেন এবং প্রায় ১২০ বছর ধরে তার গোত্রের লোকদের হেদায়েত তথা পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক লোক তাঁর ঐশ্বরিক বাণী গ্রহণ করেছেন এবং বাকীরা তাঁর ঐশ্বরিক বাণী গ্রহণ করেনি এবং তারা ঐশ্বরিক শাস্তিতে নিমজ্জিত হয়েছিল।

হযরত সালেহ (আ.) ছিলেন আরবের নবীদের একজন এবং সাম বিন নূহের অন্যতম পুত্র। পবিত্র কুরআনে নূহ (আ.) এবং হুদ (আ.) এর পরে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে যে, হযরত সালেহ (আ.) এবং তাঁর পূর্ববর্তী নবী অর্থাৎ হজরত হুদ (আ.)-এর মধ্যে একশত বছরের ব্যবধান ছিল। সালেহ (আ.) হলেন তৃতীয় নবী যিনি মানুষকে মূর্তিপূজা থেকে একেশ্বরবাদের দিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
কুরআনের বিভিন্ন সূরায় হযরত সালেহের (আ.) নাম মোট ৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য ধর্মীয় বইয়ে তার নাম উল্লেখ নেই।
তিনি ১৬ বছর বয়সে নবুয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছেন এবং ১২০ বছর ধরে তাঁর গোত্রের লোকদের একেশ্বরবাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। হযরত সালেহকে (আ.) সামুদ জাতির নবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়; সামুদ জাতি হল মদীনার উত্তরে বসবাসকারী এক সম্প্রদায়। তাদের ৭০টি মূর্তি ছিল এবং তাদের উপাসনা করত যতক্ষণ না আল্লাহ তাদের মধ্যে থেকে হযরত সালেহকে (আ.) একেশ্বরবাদের দিকে পরিচালিত করার জন্য একজন নবী হিসাবে বেছে নেন।
সালেহ, যিনি বুদ্ধি, কৌশল এবং পরিপূর্ণতার দিক থেকে অত্যন্ত বিশিষ্ট ছিলেন, তার গোত্রের লোকদেরকে একেশ্বরবাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করিয়েছিলেন এবং মহান আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাঁর নবুওয়াত অস্বীকার করেছিল।
হযরত সালেহ (আ.) মূর্তিগুলির অকার্যকরতা প্রমাণ করার এবং তার লোকদের একেশ্বরবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বছরের পর বছর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি সফল হননি। অবশেষে, সালেহ (আ.) তাদের দেবতাদের কাছে কিছু পূরণ করার জন্য জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন এবং তারপর তারা হযরত  সালেহ (আ.)এর খোদার কাছে কিছু চাইতে বলেন।
সালেহ (আ.) মূর্তিগুলোর কাছে তার অনুরোধ করে। তিনি তাদের নাম বলতে বলেন কিন্তু কোন উত্তর পান না। অন্যদিকে, মুশরিকরা সালেহকে (আ.) বলে যে, তার আল্লাহর যেন পাহাড় থেকে একটি উট বের করে আনে এবং যা ঘটে। একটি লাল উট পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসে।
সালেহ (আ.) তার সম্প্রদায়কে উটকে সম্মান করতে বলেন, কিন্তু কিছু লোক উটটিকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরিশেষে হত্যা করে। প্রকাশ্য সত্যকে সরাসরি অস্বীকার কারার কারণে  সামুদ সম্প্রদায়ের উপর আসমানী শাস্তি অবতীর্ণ হয় এবং মুশরিকরা ধ্বংস হয়।
হযরত সালেহ (আ.) এবং কিছু ঈমানদার ব্যক্তি ঐশী শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকেন। এ ঘটনার পর তারা মক্কা, রামলা, সামারিয়া ও গাজা শহরে হিজরত করেন। বর্তমানে ফিলিস্তিনে হযরত সালেহ (আ.) নবীর নামে বহু স্থানের অস্তিত্ব ফিলিস্তিনে সামুদ সম্প্রদায়ের জীবিতদের বসতি স্থাপনের কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়। হযরত  সালেহ (আ.) ২৮০ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তার রওজা মুবারক ইরাকের ধর্মীয় নগরী নাজাফের ওয়াদি আল-সালাম কবরস্থানে রয়েছে।
 
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha