IQNA

ঢাকা ও চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক রুমি সম্মেলন

বিশ্বসভ্যতার অমূল্য সম্পদ আল্লামা রুমি

0:01 - September 06, 2022
সংবাদ: 3472413
তেহরান (ইকনা): আল্লামা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি আনুমানিক ১২০৭ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের বলখ শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান তুরস্কের কোনিয়ায় ইন্তেকাল করেন। আল্লামা রুমি একই সঙ্গে একজন কবি, দার্শনিক, ইসলামী আইনজ্ঞ ও সুফি সাধক। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি ও দার্শনিকদের একজন। আল্লামা রুমি একজন সুন্নি মুসলিম হলেও বিগত সাত শ বছর ধরে সব ধর্মাবলম্বী মানুষকে প্রভাবিত করে আসছেন।
এখনো ইউরোপ-আমেরিকায় রুমি পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করে আছেন। তিনি প্রধানত ফারসি ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও আরবি, তুর্কি ও গ্রিক ভাষায়ও সাহিত্যচর্চা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। মাসনবি আল্লামা রুমির শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম। পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ভাষায় অমর এই গ্রন্থটি অনূদিত হয়েছে।
 
 
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামে শেষ হলো আন্তর্জাতিক রুমি সম্মেলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং আল্লামা রুমি সোসাইটি বাংলাদেশ যৌথভাবে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের আয়োজন করে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের একাধিক ভেন্যুতে তা সম্পন্ন হয়। ভারত, ইরান, তুরস্কসহ সাতটি দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ২৪ জন গবেষক আটটি একাডেমিক সেশনে তাদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শতবর্ষপূর্তি এবং আল্লামা সৈয়দ আহমদুল হকের একাদশ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
 
আন্তর্জাতিক রুমি সম্মেলনের আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুমিত আল-রশিদ। তিনি সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমি সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত। মানুষের আত্মমুখী জীবন, সামাজিক দূরত্ব ও আদর্শিক দ্বন্দ্ব রুমিকে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলছে। মানুষকে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার দিকে ফেরাতেই আমাদের এই আয়োজন। পশ্চিমা বিশ্বের লোকেরা প্রেমকে শুধু জাগতিক বিষয় মনে করত। কিন্তু রুমিকে পাঠ করার পর তারা বুঝতে পেরেছে প্রেম অপার্থিব এবং স্বার্থের সীমা ছাড়িয়ে বহু ঊর্ধ্বে। তাই তারা রুমির প্রতি মনোযোগী হয়েছে। বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকায় অসংখ্য রুমি ক্লাব আছে। রুমির অনুবাদগুলোও তুমুল জনপ্রিয়। ’
 
অন্যদিকে তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশে আল্লামা রুমির চর্চা অনেকটাই খণ্ডিত ও অসম্পূর্ণ। বর্তমানে যারা রুমিকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করছে তারা আল্লামা রুমিকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি এবং তাদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে প্রচারিত তত্ত্বকথার মিল নেই। রুমি সাম্য ও মনুষ্যত্বের যে জয়গান গেয়েছেন তা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। ’
 
তরুণদের কাছে ঠিক কোন বার্তাটি তারা পৌঁছাতে চান—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তরুণদের প্রতি আল্লামা রুমির বার্তা হলো জীবনকে উপভোগ করা। উপভোগ ভোগ-বিলাসিতার অর্থে নয়; বরং পূর্ণ মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা। যে কাজ সে করবে তা মন দিয়ে করবে। আমরা নিজের কাজগুলো উপভোগ করতে পারি না বলে কোনো কাজই ঠিকমতো হয় না। ’
 
সম্মেলন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও রুমিভক্তদের বিপুল উৎসাহ ও উদ্যোম তৈরি হয়। তরুণরাও মুগ্ধতার সঙ্গে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের ছাত্র ও রুমি সম্মেলনের স্বেচ্ছাসেবক মো. গাজী ইমরান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যথা নিয়মে সকাল ৯টায় রেজিস্ট্রেশন শুরু হয় এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই আসন পূর্ণ হয়ে যায়। বিজ্ঞ বক্তাদের আলোচনায় আল্লামা রুমির কবিতা ও দর্শনে মানুষ, মানবতা, মনুষ্যত্ব, ঈশ্বর ও ঈশ্বরপ্রেমের নানা অনুষঙ্গ উঠে এসেছে। যা রুমি অনুরাগীদের আল্লামা রুমি নতুনভাবে চিনতে এবং সমকালে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি। ’
 
আল্লামা রুমি যখন ইউরোপ-আমেরিকায় বিপুলভাবে সমাদৃত হচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে রুমি কি কিছুটা উপেক্ষিত? উত্তরে ড. মুহাম্মদ মুমিত আল-রশিদ বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব হোক বা ভিন্ন কোনো কারণে হোক বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশের মানুষের ভেতর পশ্চিমাপ্রীতি এখনো বিদ্যমান। তারা পশ্চিমা পণ্য ব্যবহার করাকে গৌরবময় মনে করেন। একইভাবে কবি-সাহিত্যিকরাও শেক্সপিয়রদের উদ্ধৃত করাকে বেশি গর্বের মনে করেন। আশার কথা হলো, তরুণ লেখকদের ভেতর রুমির ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে। আমাদের দায়িত্ব হবে তাদের হাতে উপযুক্ত উৎসগুলো তুলে দেওয়া। ’
 
তিনি মনে করেন, ‘স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রুমিকে ছোট ছোট আকারে হলেও পাঠ্যভুক্ত করা যেতে পারে। তাঁর ধর্ম-পরিচয় এড়িয়েও তা সম্ভব। আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমি সোসাইটির এই ক্ষেত্রে আরো অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। ’
 
গত শনিবার ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং তাতে সভাপতিত্ব করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
captcha